এই সেই ভিটামিন সি, যাকে আপনারা চিনেন, যার বস্তাপচা লেখা আপনারা পড়েন, যাকে দুই একটা কমেন্ট করে উৎসাহিত করেন কিন্তু এই ভিটামিন সিকে জীবনেও দেখেন নি। আজকে আরো বস্তাপচা লেখা নিয়ে আপনাদের মনিটরের সামনে হাজির হলাম আমি জংলী ভিটামিন সি।
আজকের লেখার বিষয় বাই সাইকেল। ছবিতে যে মেয়েটিকে দেখতেছেন, তিনি আমার স্বর্ণাপু। উনার সম্পর্কে পরে বলবো, আগে অবতারণাটা করে নিই, কি বলেন?
আজীব ঘটনা - ১। আমাদের গ্রামের বাড়ির পশ্চিম পাশে খাল। খালের এ পাড়ে বাড়ি, ওপাড়ে মাটির গ্রামীন কাঁচা রাস্তা। কোন এক রমজানের ঈদের আগের বিকেল। চাঁদ দেখার জন্য আমরা গুড়া (বাচ্চা পুলাপাইন আর কি) কয়েকটা আর আমাদের আপারা (আন্জু আপা, লেতা (রেখা) আপা, রেনু আপা, কুইন্না (কোহিনুর) আপা এবং আফরোজা (ভাস্তি) এক সাথে বসে আছি আকাশের দিকে চেয়ে যে চাঁদ দেখা যায় কিনা এই আশায়। এমন সময় ওই রাস্তা দিয়ে এক পথিক যুবা বাই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল আর আমাদের দিকে বিশেষ করে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ছিল। এহেন পরিস্থিতিতে আমি ভিটামিন সি বলিয়া উঠিলাম, "ওই মিয়া রাস্তার দিকে চায়া সাইকেল চালাইন। নাইলে কিন্তু খালে পইরা যাইবাইন"। লোকটা আমার কথা শুনতে শুনতেই আমরা দেখলাম উনি সাইকেল নিয়ে খালের পানিতে.....
কী কন, আজিব না?
ভিটামিন সি'র সাইকেল চালানো শেখাঃ-১ আমি যে ছুড়ুকালে কি পরিমান ইতর আছিলাম তা আর বলে প্রকাশ করতে হবে না। সবাই যার যার মতো করে বোঝে নিন। আমার জন্য বাড়িতে কোন ঘড়ি, রেডিও অক্ষত থাকতো না। কারণ ঘড়ি কেমনে ঘুরে আর রেডিও কেমনে বাজে তা প্রত্যক্ষ করার দুর্দমণীয় বাসনাই এরা আমার হাতে প্রাণ হারাতো। তো সাইকেলও ছিল সেই অভাগার কাতারে। ৯১ বা ৯২ এর দিকে, আমরা নানাবাড়িতে। আব্বা একটা সাইকেল নিয়ে আমাদের দেখতে গেছে। কোনমতে চাবিটা হস্তগত করেই নানা বাড়ির উজার ভিটার উচু জায়গা থেকে সাইকেলে চড়ে নিচের দিকে চালিয়ে দিয়ে বসে থাকি। যতক্ষন চলে আরকি। তো সেইভাবে চালাতেই একবার ভিটার/টিলার নিচের নতুন লাগানো বোরো ধান েক্ষতে পড়ে গিয়ে মাথা কাদা মাটির নিচে, দুই পা উপরে, তারও উপরে সাইকেল। পরে কাছাকাছি থাকা মামাতো ভাই টেনে তুলে আগে মাথা ধোয়ায়।
ভিটামিন সি'র সাইকেল চালানো শেখাঃ-২ তারপর একদিন আমার খালাতো ভাই আসলো আমাদের বাড়িতে বেড়াতে তার সদ্য নতুন কেনা ফনিক্স বাই সাইকেল নিয়ে। যথারীতি সে নাস্তা খাওয়ার সময় চাবি হস্তগত করে সাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হলাম। তখনো উপর দিয়ে ভালো করে চালাতে পারি না। নিচ দিয়ে চালাতে চালাতে একসময় বস্তার মতো পড়ে গেলাম এক ছোট চারা তালগাছের উপর। ভাগ্যিস, তালগাছটা আমার উপর রাগে নাই। রাগলে তালগাছের ডাটার করাতে আমার হাত-পা ছুলে যেত। আমি অক্ষত অবস্থায় চুপচাপ সাইকেলটা নিয়ে যথাস্থানে রেখে যথেষ্ট ভালো মানুষ সেজে বাড়িতে ঘুরে বেড়াই। খালাতো ভাই যখন তার সাইকেল চালাতে যায় তখন সে টের পায় যে তার সাইকেলে হামলা হয়েছিল।
ভিটামিন সি'র সাইকেল চালানো শেখাঃ-৩ ১৯৯৫ সাল। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ি। আমার চাচাতো ভাই ও ওই স্কুলে এইটে পড়ে। ডাকপিয়ন এসেছে চিঠি দিতে স্কুলে নতুন এ্কটা লাল রঙ এর সাইকেল নিয়ে। ভাই সেটা চালাচ্ছে স্কুল মাঠে। আমি লাফ দিয়ে পিছনের ক্যারিয়ারে উঠে বসতেই খট খট করে একটু শব্দ হলো। সাইকেল থেমে গেল, আমি আবিস্কার করলাম যে পায়ে ব্যাথা পেয়েছি। আমার পা পিছনের চাকার ভিতরে ঢুকে যায়, ফলে ৬টা স্পোক ছিড়ে যায়, আমার পা মচকে যায়। ৭ দিন রেস্টে থেকে ভালো হই। ওই পিয়ন ব্যাটা পরে কিভাবে সাইকেল নিয়ে যায় সেটা আর জানি না।
ভিটামিন সি'র সাইকেল চালানো শেখাঃ-৪ আমার বড় আপার ছেলে (বয়স ৫ হবে) আমাদের বাড়িতে এসে আমার সাইকেল নিয়ে সেই কাঁচা রাস্তায় যায় চালানো শিখতে।(তখন আমি কলেজে পড়ি)। সে মনে করেছে আমি বাড়িতে নেই, এই সুযোগে সে চালাবে। আমি পাশের বাড়িতে বসেছিলাম তাকে দেখতেছিরাম যে সাইকেল চালাইতেছে। আমি দেখেও কিছু বলি নাই যে এখন না শিখলে শিখবে কখন। হাত-পা না ভেঙ্গে তো আর সাইকেল চালানো শেখা যায় না, যা ভাংগার ছোটবেলায় ভাংগুক। তাড়া তাড়ি ভালো হয়ে যাবে। এমন ভাবতে ভাবতেই দেখি সে এক যুবকের সাথে পাল্লা দিয়ে রাস্তার দুই পাশে দুইজনে চালাইতেছে। ভাইগ্না চালায় ফ্রেমের ভিতরে পা দিয়ে, নিচ দিয়ে আর যুবক তো আরামে বসেই চালাচ্ছে। তো এমন সময় একটু শব্দ হলো, তাকিয়ে দেখি যুবক ধান ক্ষেতে আর আমার মহাশয় ওই লোকের আর একটু সামনে সেও সাইকেল নিয়ে ধানক্ষেতে। ঘটনা ছিল, মহাশয় সাইকেল নিয়ে যুবকের দিকে চেপে যায় আর যুবক একেবারে রাস্তার কিনারে অবশেষে পতিত। যুবক ওঠার আগেই মহাশয় নিজেই উঠে গিয়ে আবার সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে হাজির।
ভিটামিন সি'র সাইকেল চালানো শেখাঃ-৫ সব শেষে স্বর্ণাপুর গল্প। স্বর্ণাপু আমাদের বাড়ির ৩ বাড়ি পরের বাড়ির মেয়ে কিন্তু সেটা আরেক গ্রাম। আমার বড় আপার এক ক্লাশ উপরে পড়ে মানে বড় আপা ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার, স্বর্ণাপু সেকেন্ড ইয়ার। আর আমি সদ্য উপর দিয়ে সাইকেল চালাতে শেখা কিশোর। তো সেদিন আমি রাস্তায় সাইকেল চালাচ্ছি, পুরো প্যাডল ঘুরাতে পারি না, যাষ্ট টেনে টেনে, এমন সময় স্বর্ণাপু কলেজে যাচ্ছে। আমি ও সে সামনা-সামনি। আমি ডানে যাই স্বর্ণাপুও ডানে যায়, আমি বামে যাই - স্বর্ণাপুও বামে যায়। এ রকম করতে করতে আমি আর সাইকেল থামাতে পারলাম না, সাইকেল সোজা স্বর্ণাপুর উপর তুলে দিলাম (দু পায়ের ফাঁকে সামনের চাকা চলে গেল) তারপর দুজনেই রাস্তার পাশে চিৎপটাং। সেদিন আর স্বর্ণাপুর কলেজে যাওয়া হয়নি।
সাইকেল সর্ম্পকে আরো গল্প আছে। পরে দিবোনে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০৮