জিগাতলার হাঁটু পানিতে সাইকেল চালানোর সময় পাশে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ী এসে থামে। দূর্গন্ধ সহ্য করতে পারে না নাক। চোখ আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজে পায় বিলবোর্ডের সুন্দরী নারীকে।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মতো মনটাকেও উত্তর-দক্ষিণ দু ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ আজকাল।
চাকরির বিজ্ঞাপনে পিএ চাইছে শালারা। হতে হবে নারী, হতে হবে অবিবাহিত, উচ্চতা অন্তত পাঁচ ফুট পাঁচ আর ওজন বেঁধে দিয়েছে পঞ্চান্ন কেজিতে। পাবলিক গাল দিচ্ছে কোম্পানিকে। শালারা সুন্দর খুঁজে? বাহিরের সৌন্দর্য দিয়ে কী হয়? যোগ্যতা দেখ শালারা, স্কিল দেখ। নিজেও গাল দিলাম কয়েকটা।
এদিকে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় কোন এক সুন্দরী জয়ী হয়। দিনে দিনে তার ফলোয়ার বেড়ে হয়ে যায় লাখ, আমিও শুনে ফলো দিয়ে আসলাম। শালার পাবলিক!
কোনো দেখতে খারাপ মেয়েকে তো কোনদিন শুনলাম না তার ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতার শক্তিতে মিস বাংলাদেশ, কিংবা লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার হল! সুন্দরী তাহলে যোগ্যতায় নয়- চেহারায় হয়? দেহে হয়? স্বীকার করতে বাধ্য হই আমি।
সবাই নিজেকে সুন্দর দেখতে চায়। একশ ছবির মাঝে বেছে বেছে সবচাইতে সুন্দর ছবিটাই আমরা ফেসবুকে দেই। সৌন্দর্যের জন্যে পৃথিবীবাসী খরচ করে কোটি কোটি টাকা। বুড়িয়ে গেলে দেখতে খারাপ লাগে, তাই বয়স কমিয়ে রাখার জন্যে পন্ডস এজ মিরাকেল! দোষের কিছু বলছি না। কিন্তু আমরাইযে আবার স্বীকার করতে চাই না আমরা সুন্দরকে ভালবাসি।
আমাদের মাঝে দেখতে খারাপ কে হতে চায় বলুন?
দেখতে খারাপ আবার কী জিনিস? শুনেননি কোনদিনও। সৌন্দর্য দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে? এক একজনের কাছে সৌন্দর্য এক এক রকম?
মাফ চাইছি। আমি তো দেখতে পাই সবার পার্সপেক্টিভ মিলে জায়গায় এক জায়গায়ই। ক্যাটরিনা/ এমাকে দেখতে বাজে বলে এমন মা কা লাডলা তো দেখলাম না।
এক রমণীর সাথে কথা হচ্ছিল সেদিন, দেখতে সুন্দর তিনি। তবে তার সৌন্দর্যের কারণে তাকে বিয়ে করবে এমন কাউকে নাকি তিনি বিয়ে করবেন না। খুবই প্রশংসনীয়!
জিজ্ঞেস করলাম- প্রচণ্ড ব্যাক্তিত্ব, প্রচন্ড যোগ্যতা সম্পন্ন কোনো কালো, ভোটকা, টাকলাকে বিয়ে করবেন? অবাক হলাম তার উত্তরে, তিনি নাকি করবেন না। একটা মিনিমাম সৌন্দর্য তো লাগে নাকি? এই মিনিমাম ব্যাপারটাই শালার ঝামেলা। কার মিনিমাম কতদূর কে জানে?
অনেককে দেখি সবার সামনে দেহসৌন্দর্যকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে। কিন্তু আড্ডা দেবার সময় ঠিকই সুন্দর চেহারা-চুল-ফিগারওয়ালা রমণীদের নিয়ে কথা বলে। আমিও দুধে ধোয়া তুলসী পাতা নয়, ওমনই আমি।
তারপরও আমরা বাইরে বাইরে বলি দেহ-সৌন্দর্য কিছু নয়, এটা কোন কিছু বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না। আর ভেতরে ভেতরে চাই সুন্দরকে, সুন্দর কাউকে। উত্তর-দক্ষিণ এ দুটি ভাগ তাই গুরুত্বপূর্ণ বলছিলাম। বাইরে যে কোনমতেই প্রকাশ হতে দেওয়া যাবে না!
কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল জানি না। শুধু জানি সিটি কর্পোরেশনের মতো দু ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়াটাই সত্য। বাকী সবই হয়তো মিথ্যা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৪