প্রিয়তমা,
জানি ভাল আছ, আমার সাথে নেই তো কি হয়েছে? তুমি যেখানেই থাকবে যার সাথে থাকবে ভালই থাকবে, আমি প্রথম থেকেই জানতাম আমি তোমাকে পাবার মত যোগ্য নই। সে যাই হোক, আমি এই চিঠিটা আমি তোমাকে পোস্ট করবনা, কারণ আমি জানি আমার চিঠি তুমি পড়ে দেখবেনা, আর তুমি নাকি তোমার বাসা পাল্টেছ, তাই তোমার বর্তমান ঠিকানাটাও আমি জানিনা!
ব্রহ্মপুত্রের পানিও নাকি একদিন পরিস্কার ছিল, তারপর নাকি অনেকদিন ধরে ময়লা জমতে জমতে, মানুষের অবহেলায় সেটা কালো,ময়লা, বিষাক্ত হয়ে গেল, আগে না এটা শুনলে আমি বিশ্বাস করতে চাইতামনা, আজ যখন নিজের দিকে তাকাই, চোখ বুজে বিশ্বাস হয়ে যায়।
তোমার কথা আমার যখন মনে পড়ে, তোমার না একদম সে প্রথম দিনটার চেহারার কথা মনে পড়ে, প্রথম যেভাবে তোমাকে দেখেছিলাম আমি, সেই লাজুক চেহারা, মোটা করে কাজল দিয়ে আসা চোখ দুটো প্রয়োজনের চাইতেও বেশি মায়াবী দেখানো, আর তোমার সেই চুল, এত কালো কি করে হয় একজন মানুষের চুল আমি ভাবতাম! আমার জগৎ এখন যতটা কাল তার চাইতেও বেশি কাল ছিল তোমার চুল। এখনও সব একই আছে জানি, বোধহয় শুধু তুমি সে একই নেই।
মাঝেমাঝে ভাবি বেঁচে থাকে কি করব আমি আর? এর চেয়ে ভাল আমি মরে যাই। পরে আবার ভাবি, মরব কি করে? বেঁচেই বা আছি কোথায় আমি? সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনা আমি।
হ্যাঁ, তোমাকে দরকার আমার, তোমাকে দরকার! কারণ তোমার শরীরের চাইতেও বেশি কিছুর প্রয়োজন আমার, প্রয়োজন তোমার মন।
জানো? তুমি চলে যাবার পরও কিন্তু মনটা বসে ছিলনা, তোমাকে এতও ভালবাসি ভাববার কোন কারণ নেই,আমার মন অনেক জায়গায় আশ্রয় খুঁজেছে, কোথায় আশ্রয় পাইনি সেটাও বলবনা, কিন্তু সে আশ্রয়ে তার পোষায়নি।
তাই মাঝেমাঝে অবাক হই, এভাবে মরে গিয়েও কেউ বেঁচে থাকতে পারে? আয়নায় নিজেকে না দেখলে বিশ্বাস হতনা।
তাই ভাবি আমি বেঁচে আছি কেন? এভাবে মরে গিয়ে?
তুমি আবার আমার এ চিঠিকে সুইসাইড নোট ভেবে ভুল করে বসনা, বিষ খাবনা আমি, যে বিষ তুমি দিয়ে গেছ তাতেই মারা যাব জানি একদিন আমি............
তুমি আবার এ ও ভেবে বসনা যেন, তোমাকে হারিয়ে আমি মদ-গাঁজার আসর বসিয়ে বসে আছি, নেশা আমাকে দিয়ে আর হয়না। হবে কি করে? যে নেশা তুমি ধরিয়ে গেছ তার ওপরে কি আর নেশা আছে?
এ ও ভাবার কোন কারণ নেই তোমার জন্যে আমি আর্টেসেলের দুঃখ বিলাস, কিংবা নতুন ক্রেজ এশেজের কি আর হবে গান শুনে শুনে সিগারেট হাতে নিয়ে দিবারাত্রি যাপণ করছি। সুরগুলো তুমি চলে যাবার পর থেকে কেমন যেন কেটে গেছে, যে গানই শুনি আর ভাল লাগেনা............
আমি না আমার জীবনে দুবার কেঁদেছিলাম, একবার আমার দাদু মারা যাবার পর, তিনি আমাকে অনেক ভালবাসতেন জানো? তিনি যখন হসপিটালে ছিলেন কেবল নাকি আমার নাম ধরে ডাকতেন কাকে যেন, সে সময় তিনি প্রায় সময় অচেতনই থাকতেন, কাউকে নাকি চিনতে পারতেন না, অথচ কী কাণ্ড দেখ! আমি যখন উনাকে দেখতে গেলাম, উনি ঠিকই আমাকে চিনতে পারল!
আরেকবার আমি হাঁপুস নয়নে কেঁদেছিলাম তুমি চলে যাবার পর, কি নিষ্ঠুর তুমি একবার ফিরেও তাকালেনা। চলে গেলে তো গেলেই, একটা ম্যাসেজ নেই, ফোন নেই, ফেসবুকে ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ দেই, কোন রিপ্লাই নেই! এত কি অপরাধ ছিল আমার? নিজের ওপর আজকাল ঘেন্না হয় আমার। নিশ্চই আমার কোন দোষ ছিল, নাহয় তুমি এভাবে চলে যেতেনা। আমি তোমাকে আটকাতে পারলামনা কেন? একবার চেষ্টা পর্যন্ত করলামনা।
জানি আমাকে ছেঁড়ে চলে যাবার সময় তোমার একটু কষ্ট হয়নি, কষ্ট হবে কি করে? ব্লাড ক্যান্সারে ভুগে ভুগে শেষ পর্যন্ত নিজেই তো কষ্ট করে গেল। আমার জন্যে কষ্ট হবার সুযোগটাই যে ছিলনা।
ইতি,
কেউ নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৬ রাত ১:১৮