১।।
-দোস্ত, শুনছস কাহিনী?
-কি?
-নুসরাত ফারিয়া তো ছাইড়া দিছে
-কি ছাড়ছে? তাড়াতাড়ি ফেসবুকে শেয়ার দে, লিংক সহ
২।।
-দোস্ত, সাবিলা নুর তো বলছে ডীক্যাপ্রিও অস্কার পাওয়ার যোগ্য না।
-কি কইলি এইডা? তাড়াতাড়ি নিউজের লিংক দে। ডিক্যাপ্রিওরে এইডা কইছে, বেটির শাস্তি হওয়া উচিত।
৩।।
-দোস্ত, চীনা হ্যাকাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮১০কোটি টাকা চুরি কইরা নিয়া গেছে
-ও, তাই নাকি?
-হ
-ও আচ্ছা
“বাংলাদেশের প্রগতিশীল যুবসমাজ নুসরাত ফারিয়ার পায়ুপথে বায়ু নির্গত হলে অনেক বেশি উদ্বলিত হয় যতটা না কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার, ৮১০ কোটি টাকা চুরি হয়ে গেলে হয়।“
সবচেয়ে মজার ব্যপার হল তাদের জাতীয়তাবোধ, কেউ দেশকে নিয়ে কিছু বললে একদম সহ্য হয়না তাদের, যেন একেবারে খুন করলে তবে আত্মা শান্তি পায়। কিন্তু দেশের কোন সমস্যা নিয়ে তারা আবার উদ্গ্রীবও নয়। জাতীয়তাবাদ প্রচন্ড তাদের, কিন্তু দেশপ্রেম আবার বড়ই মলিন।
তাদের কেবল একটা ব্যপারেই প্রচণ্ড রকম দেশ প্রেম, ক্রিকেট। এই ক্রিকেট ছাড়া বাংলাদেশের যেন কোন পরিচয় নেই। আর তাদের মতিগতিতে মনে হয়না কোন পরিচয় আদৌ আমরা আর পাব।
কিন্তু ব্যপারটা হচ্ছে, কেন আমাদের এরূপ উদাস দৃষ্টিভংগি দেশের সমস্যাগুলোর ব্যপারে। আমরা প্রতিক্রিয়াশীল নয় কেন? দুঃখিত ভুল বলে ফেললাম, আমরা প্রচন্ডরকম প্রতিক্রিয়াশীল। নুসরাত ফারিয়ার পায়ুপথের নির্গত বায়ুর গন্ধে আমার নিউজফিড ভরে গিয়েছিল যতদূর মনে পরে।
“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।“
এমন ফাঁকাবুলি আওড়ানোর মানুষের অভাব বোধকরি কম নেই আজকে। তবে কবিতা কেবল তাদের চিত্তে বিনোদনই সঞ্চার করল, কবিতার রস আস্বাদন করা হয়ে গেছে তবে অন্তরে ধারণ করতে গেলে “মক্কা বহুদূর”।
ইন্ডিয়া-পাকিস্তান নিয়ে বেশ গাল পাড়ি। পাকিস্তানিরা কখনও আমাদের দেশের মংগল চায়না। তাই? আপনি নিজে আপনার দেশের কতটুকু মংগল চান? আপনার আর পাকিস্তানীদের মাঝে ফারাক থাকল কি তবে?
যাইহোক, আসল কথায় আসা যাক, আমাদের দেশে এতবড় এত ঘটনা ঘটে গেল, আমরা তবুও এত চুপচাপ কেন? টাকা চুরির খবর শুনে হয়ত নিজের মানিব্যাগে কেউ হাত দিল, কিন্তু না, মানিব্যাগের টাকা তো ঠিকই আছে, তাহলে আর চিন্তার কারণ নেই, তাইত? টংগের দোকানে গিয়ে একটা চা নিয়ে বিড়িতে দম নিয়ে টান দিতে আপত্তি কোথায়? সে নির্বিকার কেন? টাকাটা তার নয়? তবে প্রশ্ন করি দেশটা কি তার? দেশ তার হলে টাকাটা তার হওয়া উচিত। আর দেশ তার না হলে, কোথাও চলে যাক। আর দেশ তার হলে সে এত নির্বিকার কেন?
এশিয়া কাপ জিতলে কি করবে, এটা নিয়ে এত ইভেন্ট হল, এতকিছু হল। কিন্তু এত টাকা চুরি যাবার পরও মানুষের কোন হুঁশ নেই, যেন কোন মশা মারা গেছে।
তাসকিনের বোলিং একশানে সমস্যা তাতের দেশের ক্ষতি হয়ে গেল, কিন্তু এত টাকা চুরি গেল, এটা যেন কিছুই না।
দু-তিনটা ভারত-পাকিস্তান সমর্থক খুঁজে বের করে ফেসবুকে স্ক্রীণশট দিয়ে, তাদের আর ভারত-পাকিস্তানকে কয়েকটা গালি দিতে পারলেই প্রমাণিত হয়ে যায় যে তারা দেশপ্রেমিক। এই অবস্থা আজকাল।
আমার মনে হয় বাংলাদেশ যদি কোনদিন ওয়ার্ল্ডকাপ জিতে আর সেদিন বাংলাদেশ পুরোটাকেই লুটেপুটে কেউ খায় তারপরও কোন বিকার হবেনা তাদের।
সাংবাদিক সহ সবাই আবার এর সুযোগ নিচ্ছে প্রচন্ড। ক্রিকেট নিয়ে নিউজ ছাপতে হচ্ছে তাদের, কাটতি বাড়াতে। ৮০০ কোটি টাকা জলে যাক, রামপুরায় যে মা তাদের সন্তান মারল সে জলে যাক। গোটা বাংলাদেশ জলে যাক। এই ক্রিকেট নিয়ে, যার নুসরাত ফারিয়া আর সাবিলা নুর নিয়ে কিছু বিতর্কিত খবর ছাপতে পারলেই বিনোদনভোগী তরুণসমাজের ক্ষুধা মিটে যায়, সাথে তাদের পেটের ক্ষুধাও।
আমাকে হয়ত বলবেন, আরে ভাই, দেশপ্রেম অনুভূতির ব্যপার। কারও অনুভূতি এত শক্ত নয়। হু তাদের অনুভূতি কম? রাতের বেলা তো বেশ অনেককিছু কল্পনা করে এত অনুভূত হত যে রসস্খলন প্রচন্ড হয়ে যায়। দেশপ্রেম ওভাবে অনুভূত হয়না কেন?
“ষোল কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ ক্রিকেটপ্রেমী করে, দেশপ্রেমিক করনি।“
তাদের এ অবস্থার পেছনে আসলে কারণ কি?
#জিজ্ঞাসা_৪
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৬