বর্নালী নাম টা তাকে দিয়েছে গেলবারের ফরেস্ট অফিসার হাসান সাহেব। তার মতে বর্নালী এই পুরো জংগলের রানী, তার ছোপ ছোপ শরীর দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার, একমাত্র বনের সাদা লেজের হরিনরাই আগে ভাগে টের পায় বর্নালী আশেপাশে আছে, ওত পেতে, শিকারের গলা কামরে ধরার অপেক্ষায়।
বর্নালী একটা চিতা। দক্ষিন ভারতীয় জংগলের সবথেকে বড়, ক্ষিপ্ত আর অসাধারন রুপবতী শিকারী।
বর্নালীর সংগী পুরুষ চিতাটার কোন নাম দেয়া হয় নি। একবার এক গাছ থেকে পড়ে যেয়ে তার পিছনের বাম পায়ে আঘাত পাওয়ার পরে তার শিকারে দক্ষতা কমে যাওয়ায় কিভাবে জানি মানুষখেকো হয়ে পড়েছিলো সে। আকারে বর্নালীর থেকেও বড় ছিলো, পুরো বন সমীহ করে চলতো তাকে, অথচ একটা পা হারিয়েই কি করুন অবস্থাই না হয়েছিলো বেচারার। পরে বাধ্য হয়েই একদিন এক মানব কিশোরীকে একা পেয়ে আক্রমন করে বসে সে, অবাক হয়ে লক্ষ্য করে এই প্রানীটার প্রতিরোধের কোন ক্ষমতাই নেই চিৎকার করা ছাড়া। দৌড়ে পালাবার চেষ্টাও করেছিলো মেয়েটা, চিতার গতির কাছে যা এক অর্থে হাস্যকর।
সেই প্রথম মানব মাংশের স্বাদ , এরপর আরো ১১ জন মানুষ মারা পড়ে বর্নালীর সংগীর হাতে, এবং ১২ নাম্বার শিকার করতে যেয়ে ফাদে পড়ে। জীবিত অবস্থায় ই তাকে ঝুলিয়ে গ্রামে নিয়ে যায় পালকির মত করে কজন মানুষ, তারপর সবাই মিলে বল্লম দিয়ে খুচিয়ে তীলে তীলে হত্যা করে চামরা ছরিয়ে ফেলে পরদিন সকাল নাগাদ।
খুব বেশী দূর না, ধরুন এক দেরশো মিটার দূরে একটা গাছের ডালে পাতার ফাকে নিজেকে লুকিয়ে লেজ ঝুলিয়ে বসে পুরো দৃশ্য টা দেখে বর্নালী। তার চোখে পানি ছিলো কিনা আমি জানি না , সম্ভবত চিতারা কাদতে অক্ষম। হাহাকার করে কাদতে পারে একমাত্র মানুষ, এবং এই কান্না অতি শক্তিশালী, ভয়াবহ একটা অস্ত্র, যেটা আবার বর্নালীর জানা নাই।
- শিমুল, রাত ১০.৪৯ , ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫৫