সবাই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, অসহায়, মারাত্বক আহত হিরাম ( যিনি ছিলেন একজন বিধবার ছেলে, খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারান) চিৎকার করে উঠেন ” বিধবার ছেলেকে সাহায্য করার জন্য কেউ ই কি নেই? ”
[ গল্পে এখানে মারাত্বক টুইস্ট আছে। ফ্রিম্যাসনারী, সো কলড ইলুমিনাটি, সিক্রেট সোসাইটি সবকিছুর শুরু এই মুহুর্ত থেকে ]
এই গল্পটা পৃথিবীর অতি গুরত্বপুর্ন এবং প্রাচীন গল্পগুলোর একটা। কিছু মৌখিক মিথের পাশাপাশি এর লিখিত বর্ননা প্রথম বাইবেলে, যেটাকে ইহুদীরা তোরাহ এবং মুসলিম রা তৌরাত বলে থাকেন, সেই মহাগ্রন্থে পাওয়া যায়।
রাজা সলোমন ছিলেন রাজা (এরাবিয়ান উচ্চারন নবী সোলায়মান) এবং নবী ডেভিড (যেটাকে এরাবিয়ান রা বলছে দাঊদ) এর ছেলে। সলোমনের রাজত্বকাল ছিলো ৯৭০ BCE থেকে ৯৩১ BCE । ঠিক কবে কিভাবে তিনি নবী বা পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেন আমার জানা নাই, তবে তিনি অতি ক্ষমতাধর ছিলেন তা বলা যায়। তার রাজত্বকালে উন্নতির বর্ননাই বেশী, কেননা সলোমন শাসক হিসাবেও বেশ কঠোর ছিলেন।
The Judgment of Solomon, 1617 by Peter Paul Rubens ( Open Source )
অন্যদিকে ধর্মগ্রন্থগুলোর দাবী তিনি বায়ুর ও শাসক ছিলেন, মানে বাতাস কন্ট্রোল করতে পারতেন, এবং বাতাসের মাধ্যমেই নিজের সিংহাসন এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় নিয়ে যেতে পারতেন। তার বর্ননা এখানেই রাখা যাক, মুল গল্পে আসি।
একদিন রাতে যখন রাজা সলোমন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন তিনি এক স্বপ্ন দেখেন। যেখানে সয়ং স্রষ্টা তাকে একটি মন্দির বা উপাসনালয় বানাতে নির্দেশ দেন। তাকে মন্দির টা দেখতে ঠিক কেমন হবে সেই বিষয়েও ধারনা দেয়া হয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে চিন্তিত রাজার বিসন্ন চেহারা মনোযোগ কারে বিস্বস্ত সেবক এবং রাজ্যের প্রধান আর্কিটেক্ট হিরাম আবিফ এর। এই ভদ্রলোক ইতিহাসে খুবি ইম্পর্টেন্ট, তার গল্প পরে বলবো। হিরাম রাজাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে রাজা তার স্বপ্নের কথা খুলে বলেন, এবং হিরাম কে জিগেস করেন এমন কিছু আদৌ বানানো সম্ভব কিনা?
মন্দির টার নকশা খুবি যে জটিল ছিলো, ঠিক তাও না, তবে সেটাকে হতে হবে একদম দেখতে স্বপ্নের মত। হিরাম কদিন সময় নেন, এবং প্রতিদিন উপাসনায় বসে এ বিষয়ে প্রার্থনা করতে থাকেন। এবং একদিন তিনি যেন চোখের সামনে দালান টাকে দেখতে পান। ব্যাপার টা এমন, সয়ং স্রষ্টা তাকে এই গোপন নকশা টা দিয়েছেন। তিনি একটা স্কেচ বা ডিজাইন টাইপ করেন এবং পরদিন রাজা সলোমনের কাছে নিয়ে যান। দেখে সলোমন অবাক ! আরেহ এটাই তো সেটা। এটা বানানোর পুরো দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম হিরাম আবিফ। আশা করি তুমি এই গোপন নকশার কথা কাউকেই জানাবে না, এবং আমরা দুজন মিলে স্রষ্টার ইচ্ছা পুরন করবো।
কাজ শুরু হলো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব মুল্যবান নির্মান সামগ্রী নিয়ে আসা হলো, এবং আস্তে আস্তে মন্দিরের মুল কাঠামো একটা দেখার মত জিনিষ হতে শুরু করলো।
একদিন দুই তিনজন অসাধু শ্রমিক বা সহকারীর মাথায় কুবুদ্ধি এলো। ঐ ব্যাটা হিরাম একাই গোপন ডিজাইন টা নিজের কাছে রেখেছে, বানিয়ে একাই পুরো ক্রেডিট নেবে, রাজার বাহাবা নেবে, আর আমরা খেটেও কোন সম্মান ই পাব না। আমাদের ঐ গোপন স্রষ্টা প্রদত্ত নকশা টা চাই। যেভাবেই হোক।
সেদিন রাতে কাজ শেষে হিরাম যখন ফিরছিলেন, তখন প্রথম সহকারী তার পথ আটকে সেই গোপনীয় নকশা সম্পর্কে জানতে চান। হিরাম অস্বিকার করলে সে তার মাথায় আঘাত করে। তবু তিনি দৌড়াতে থাকেন।
সামনেই দ্বিতীয় সহকারী ও একি কাজ করেন। দ্বিতীয় আঘাতে মাটিতে পরে যাওয়া হিরাম কোনরকম হামাগুড়ি দিয়ে সামনে এগুতে গেলেই দেখেন তৃতীয় সহকারী অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে।
সবাই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, অসহায়, মারাত্বক আহত হিরাম ( যিনি ছিলেন একজন বিধবার ছেলে, খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারান) চিৎকার করে উঠেন ” বিধবার ছেলেকে সাহায্য করার জন্য কেউ ই কি নেই? ”
[ গল্পে এখানে মারাত্বক টুইস্ট আছে। ফ্রিম্যাসনারী, সো কলড ইলুমিনাটি, সিক্রেট সোসাইটি সবকিছুর শুরু এই মুহুর্ত থেকে ]
সেরাতে হিরাম খুন হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হলেও নিজের গোপনীয়তা সম্পর্কে একটি শব্দ ও তার মুখ থেকে বের হয়নি। বিশ্বাস ভাংগেন নি তিনি। একটা ওপেন সিক্রেট বলি, প্রতি ফ্রিম্যাসন কে প্রথমদিকেই এটা শেখানো হয়। মরে গেলেও অন্য একজনের গোপনীয়তা কারো কাছেই প্রকাশ করিও না। সিক্রেট কি সেটা মুখ্য ব্যাপার না, সিক্রেট টাকে সিক্রেট রাখা টাই মুল শিক্ষা।
যাইহোক, পরদিন সব জানতে পেরে রাজা সলোমন শাস্তি দেন তিন অপরাধীকে। এবং প্রায় নির্মিত মন্দির ও একসময় সমাপ্ত হয় । এটাই ঐতিহাসিক “টেম্পল অফ সলোমন” । এখানেই রাখা হয় অতি গুরুত্বপুর্ন সেই দশটা পাথর খন্ড ( Ark of the Covenant ) যাতে মোজেস ( এরাবিয়ান মুসলিম উচ্চারন নবী মুসা) লিখে নেন স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত দশটা নির্দেশ।
পরবর্তীতে মন্দির টা রাজা নেবুচাদনেজার এর হাতে একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায় ৫৮৭ BCE তে।
সেইম যায়গায় সম্ভবত ৫৩৫-৫১৬ BCE তে নকশা ঠিক রেখেই দ্বিতীয় মন্দির টা তৈরী করা হয়। এবং যেটা আবার ৭০CE তে রোমান রা ধ্বংস করে ফেলে।
তৃতীয় মন্দির টা আর কখনোই তৈরী করা হয় নাই। তবে ইজ্রায়ালাইট দের কাছে ব্যাপার টা সেই সময় থেকেই গুরুত্বপুর্ন, এবং ব্যাপার টা এমন, পৃথিবীতে বেচে থাকা শেষ ইহুদী হলেও তাকে তা তৈরী করতেই হবে। সেটা যে মুল্যেই হোক, যেভাবেই হোক, যে ক্ষতি করেই হোক।
বর্তমানে ব্যাপার টা রাজনৈতিক, এর সাথে অনেক মানচিত্র, পরবর্তী একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর দর্শন, বিভিন্ন শক্তিশালী দেশ এবং অতিরিক্ত শক্তিশালী সংগঠন জরিত। তো তৃতীয় মন্দির ঠিক ঐখানেই আবার প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা এ ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করতে অপরাগ।
বিঃদ্রঃ মন্দির বলতে উপাসনালয় বোঝানো হয়েছে। কোন স্পেসিফিক ধর্ম না। এইদিকে নামের উচ্চারন গুলোতে আপনাকে বুঝতে হবে যায়গাভেদে শব্দের উচ্চারন বদলে যায়। ইজ্রাইলী রা সলোমন বললে সেটা আরব পর্যন্ত পৌছাতে পৌছাতে সোলায়মান হয়ে যাওয়া অতি স্বাভাবিক। ছোটবেলায় শিখেছি আরবী “আঈন.” এর উচ্চারন আমরা স্বাভাবিক যেভাবে করি, সেটা সঠিক নয়। তো অনেক আরবী শব্দ ও আমরা ভুল ভাবে উচ্চারন করি, যেমন অনেক বিদেশী বাংলা শব্দ ঠিকভাবে উচ্চারন করতে পারেন না। গল্পটার অনেকগুলা সাইড গল্প আছে, পুরাটা একদিন একটা বই এ লিখে দিব, আপনারা কিনবেন, ইত্যাদি ওয়ালা রা কিনবে, কিনে কেয়া কসমেটিক্স এর পক্ষ থেকে উপহার হিসাবে দেবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:০১