এলাকার ফেসবুক সেলিব্রেটি তনয়ার বাসার সামনে বিশাল জটলা। বয়সে আমার থেকে বছর চারেকের ছোট হবে, দেখলে ভাইয়া ভাইয়া করে। ফেসবুক সেলিব্রেটী বলার পিছনে কারন আছে, এই বছর দুয়েক আগে আমার কাছ থেকেই আইডি খুলে নিয়া গেছে, আগের আইডি নাকি হ্যাক হয়েছে। এলাকার ইন্টারনেট এক্সপার্ট হিসাবে দুর্নাম থাকায় তখন তার আমার কথা মনে হয়েছিলো, পরে ঘেটে দেখি তার প্রাক্তন প্রেমিকের ইমেইল দিয়ে খোলা ছিলো, সে ফরগেট মেরে আইডি নিয়ে নিয়েছে। তনু আমাকে বলেছে সে ছেলে নাকি মহা বদ, প্রতিশোধ নিতে আইডি খেয়ে মানুষ কে বলে বেরিয়েছে তাকেই খেয়ে দিয়েছে। এই কথাতে আমি সন্দেহ প্রকাশ করতে যেয়েও করি নাই, কি দরকার।
আইডি খুলে দেবার দিন রাত থেকে দেখছি তার বিছনায়, টয়লেটে, ছাদে, বিভিন্ন ভংগীতে সেলফী। আর আছে বিভিন্ন দামী রেস্টুরেন্টে চেক ইন। সরাসরি ডিলেট করে দিলে কেমন হয় ভেবে আনফলো মেরে দিয়েছিলাম দিন তিনেকের মাথায় ই।
দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে যেগে দেখি বাসায় সিগ্রেট নাই, গায়ে এক্টা গেঞ্জি গলিয়ে বের হতেই দেখি এই দৃশ্য। একগাদা ছেলেপেলে রাস্তা বন্ধ করে গোল হয়ে বসেছে। কজনের হাতে প্লাকার্ড, বেশ কজন সাদা একি রকম টিশার্ট পড়া, তাতে একটা ভয়ানক চেহারার মহিলার ছবি, নিচে লেখা " We want Justice"। প্লাকার্ড ব্যানারে দেখা গেলো, "তনয়ার বিচার চাই" "যুবসমাজ এক হউ" ধরনের নানা বানী। চিন্তায় পড়লাম, বা দুশ্চিন্তায়। এলাকার একটা মেয়ে, যে দিনকাল পড়েছে, তার কিছু হইলো নাকি, হায় হায়, শেষ পর্যন্ত রংপুর শহরেও? এমন কিছুর কথা এলাকার মানুষ কোনদিন শোনেনা, এদিকে অপরাধ হয় না বললেই চলে!
সবাই স্লোগান দিচ্ছে, রাস্তা বন্ধ, নাহ, ব্যাপার টা তাহলে মারাত্বক, আম্মু যে বলে, ঘুমালে কেয়ামত হলেও টের পাবি না, কথা সত্য, এলাকায় কিজানি হয়ে গেছে, আমি কিছুই জানি না! আল্লাহ না করুক, রেপ কেস নআ সুইসাইড!
এই গরমে কোট পড়া এক ভদ্রলোক কে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। অন্যগুলো বয়সে আমার থেকে ছোট ই হবে। আমি যেয়ে জিগেস করবো কি, তার আগে উনি ই আমাকে জিগেস করলেন, "ভাই এত দেরী করলেন ক্যান,মা** একবার বারান্দায় বের হইছিলো, এই দেখেন আমার এক পা খালি, স্যান্ডেল ছুরে মারছি"। আমি তব্ধা খেয়ে গেছি কথা শুনে, মানে কি!
কইলাম, ভাই কি হইছে এখানে?
উনি কয় জানেন না আপনি? এই মা** চুত***** আমার থেকে গত ছয়মাসে এক লাখ বেয়াল্লিশ হাজার ট্যাকা লইসে, এস এইট ফোন নিছে, দুবাই থাকি ভাই,গতকাল দেশে আইসি ফেসবুকে খবর দেইখা"
আমি ততক্ষনে স্পিকার হয়ে গেছি, জিগেস করলাম, এইযে পোলাপান, এগুলারে আপনি নিয়া আইছেন?
উনি কইলেন, "নাহ, এগুলা সব তার নাগর, বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন যায়গায় তাগো লগে মা**ইর ইটিশ পিটিশ আছিলো, সবাই ইভেন্ট কইরা আজকে আইসি"।
খোদা, এই লোকের মাথা কি গেছে। মাটিতে বসে থাকা এক ছেলেকে জিগেস করলাম, ভাই ঘটনা কি তোমার? সারাদিন এরা নিজেরা নিজেরা আলোচনা করছে বোঝা গেলো, স্বাভাবিক ভাবেই বললো
" আই চিটাগাং থাই আইছি ভাই, আমার ট্যায়াটুয়া লাগতো না, আই তারে পরান দি ভালুবাসি।, আন্নের ফা ধরি,আন্নেরে ভাই ডাকছি, আন্নে তারে ছারি দেন"
মাথা ঝাকায় ভীর থেকে একটু সাইডে দারিয়ে হ্যাং মাথা খোলার চেষ্টা করতেছি, এক ছেলে আমার দিকে এগিয়ে এলো। তার কাছ থেকে জানা গেলো সে ঢাবির ছাত্র, মাস দুয়েক আগে পরিচয় তনয়ার সাথে, রংপুর এর আগেও কবার এসেছে, দেখাটেখা করে গেছে, ইভেন্ট এ জয়েন করেছে দিন কয়েক আগে, সে এসবের কিছুই জানতো না। ইভেন্ট নাকি মাসখানেক আগে এরেঞ্জ করা হয়েছিলো, উদ্যগতা নাসিম নামে লোকাল এক ছেলে, যে তনয়ার কলেজ লাইফের বয়ফ্রেন্ড।আমাকে জিগেস করলো মেয়েকে চিনি কিনা, ভাবলাম চিনি বললে বিপদ, এলাকায় নতুন এসেছি বলে পাশ কাটাইলাম।
বাসায় এসে বসে আছি, বাইরে থেকে একটু পর পর স্লোগানের শব্দ ভেসে আসছে। মজা না দু:খ লাগতেছে বুঝতেছি না।
- প্রেমিকা সংস্কার আন্দোলন গল্পের ছায়া অবলম্বনে।
- ২০ এপ্রিল, রাত পৌনে চারটা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:০১