ড্রাগন এভুলেশনের মজার গল্প শোনাই। প্রাচীন সময় থেকেই আমাদের মানুষদের জীবনে ড্রাগন নামক এক অদ্ভুত প্রানীর দেখা যায় যদিও বাস্তবে এমন কোন প্রানীর অস্তীত্ব ছিলো সেরকম কোন প্রমান নেই। থাকার কথাও না। তাহলে এই ড্রাগন দের আমরা পাইলাম কই ? চলেন খুজে দেখি।
ক্লাসিক ড্রাগনের সাথে কোন প্রানীর কম্পেয়ার করলে সবথেকে বেশী মিল পাওয়া যায় সাপের সাথে। আমাদের ইতিহাসে সাপ নিজেও একটা ইম্পর্টেন্ট প্রানী। বাইবেল থেকে শূরু করে প্রাচীন সুমেরিয়ান দের আর্ট, সবখানেই সাপের দেখা পাওয়া যায়। সাপকে আমাদের শত্রু হিসেবে দেখার একটা প্রবনতা থেকেই গেছে।
অনেক আগে ফিরে যাই। কবে থেকে সাপ আমাদের শত্রু? ১০০ মিলিওন বছর থেকে। মানে ৬৫ মিলিওন বছর আগে ডাইনসর রা মারা গেলো, তারপর আমাদের পুর্বপুরুষ ইদুর ধরনের প্রানী বিকশিত হবার সুযোগ পাইলো, তারো বহু আগে থেকেই সাপ আমাদের খেয়ে আসছে। ডাইনসর রা মরে গেলো, কেন তার বহু কারন দেখানো হয়, তবে টিকে থাকলো পুর্বপুরুষ পিচ্চি ইদুর ধরনের প্রানী, এবং এই সেফ পরিবেশেও আমাদের শত্রু সাপ রা টিকে ছিলো । সাপ আমাদের খাচ্ছিলো। যখন আমরা প্রাইমেট, আই মিন বানর ধরনের প্রানী, তখনো বড় সাপেরা আমাদের খাচ্ছিলো। আমাজনে এখনো এনাকোন্ডার বেশ পছন্দ বানর। যাই হোক, আমাদের পুর্বপুরুষ দের ব্রেইন সাপেদের ভয় পায় সেই আমল থেকেই। এটা স্বাভাবিক, যেকোন কার্নিভার বা শিকারী প্রানীকে শিকার ভয় পাবেই।
তো মডার্ন সময়ে বেশ কিছু সাইন্টিফিক এক্সাম করে দেখা যায়, সাপ দেখা মাত্র আমাদের ব্রেইন ভয়াবহ কিছু রিএক্ট করে। বিশেষ করে বিষধর সাপ আমাদের ব্রেইনে মশার আক্রমনের মত রিএকশন এর জন্ম দেয়। হাসবেন না, বুঝিয়ে বলছি, একটা মশা আপনার পিঠে, গালে যেখানে যেয়ে বসুক, নিজের অজান্তেই হাত চলে যায় মাঝে মধ্যে ওটাকে মারতে, হুম্মম ? পায়ের কাছে সাপ দেখলে ওরকম টের পাবার আগেই লাফ দিয়ে উঠবেন আপনি :p
আমাদের এই ভয় টা আদিম। সুধু সাপের প্রতি তা না, আমি তো ড্রাগন নিয়ে লিখছিলাম। আবার চলেন গাছের ডালে বানর বা তারো আগে ইদুর রুপে ফিরে যাই।
আমাদের একেবারে প্রথম শত্রু সাপ গেলো, তারপর থাকলো মাংশাসী পাখি। ধরা যাক ঈগল। বেচারা ইদুর সাইজের পুর্বপুরুষ ই সুধু না, মডার্ন ডে হার্পি ইগল ও বানর ধরে ধরে খায়। আমার কত পুর্বপুরুষ কে খেয়েছে তার কোন হিসেব নাই :/ কার্নিভাল পাখির প্রতি ভয় ও বানর পুর্বপুরুষ দের অন্য স্বাভাবিক। বানর দের আর কে খায় ?
গাছের ডালে উঠে তো সিংহ হায়েনা খায় না। খায় আরেক ধরনের ভয়াবহ প্রানী। চিতা, জাগুয়ার বা এধরনের প্রানী, যারা গাছের ডালে উঠতে পারে। এবং এদের থেকে বাচা বেশ কঠিন বানর দের। এভুলেশন নিয়ে আগে একদিন লেখেছিলাম, বর্তমান সময়েও জাগুয়ার সবথেকে মারাত্বক প্রানী দের একটা। এরা মানুষ সম্পর্কে কোন ধারনাই রাখে না। মডার্ন সিংহ পারতপক্ষে মানুষের ধারে কাছে ভিরবে না, সে চিনে, সে ধারনা রাখে । কিন্তু আমাজনের গহীনে একটা জাগুয়ারের কাছে আপনি একটা বড়সড় বোকা বানর, যে তার এলাকায় ঢুকে পড়েছে। তার স্পিড, নিজেকে লুকানোর বা গাছে উঠার ক্ষমতার কাছে মানুষ বা বানর কোন ম্যাচ ই না। বানর হলে তাও একটু সুযোগ আছে, চিকন কোন ডাল ধরে ঝুলে পড়লে বাচলেও বাচতে পারেন, কিন্তু প্রকৃতির দুর্বলতম প্রানী মানুষ হয়ে ? নো চান্স। ( বন্দুক পিস্তল থাকলে আলাদা কথা, লাগাইতে পারবেন কিনা তার গেরান্টি আমি দিব না ! )
তো, স্টাডি করে দেখা গেছে, এখনো, আফ্রিকায় বা আমাজনে বানর দের মধ্যে একটা বিষয় কমন। ওদের নিজেদের সতর্ক করার উপায় তিন রকম।
১। সাপঃ মাটিতে থাকা যাবে না, গাছে উঠে পড়ো, দূরে পালাও।
২। ইগল বা এয়ার এটাকঃ মাটিতে নেমে এসো, ঝোপ ঝাড়ে লুকাও।
৩। শিকারী ঃ চিতা, জাগুয়ার এগুলো। জান নিয়া পালাও, গাছের সবথেকে চিকন ডালে চলে যাও যেখানে সে যাবে না।
এই তিনরকম ছাড়া আর তেমন কোন মারাত্বক বিপদ বানর দের নাই। আমাদের মানুষ দের ও ছিলো না গাছ থেকে মাটিতে পারমানেন্টলী নেমে আসবার আগ পর্যন্ত।
ওহ আমি তো ড্রাগন নিয়ে লিখছিলাম। গড়ে ২% একটু বেশী ব্রেইন ব্যাবহার করে অভ্যাস্ত যারা তারা এতক্ষনে বুঝে গেছেন আমার পুরো লেখাটার পয়েন্ট।
পয়েন্ট তিন টাকে এক করুন। ইগলের পাখা নিন, বাঘের মারাত্বক থাবা, দাত দিন, সাপের শরীর টা নেন। আমাদের ব্রেইন জিনিয়াস, দারুন একটা সরল উপায় বের করেছিলো ছোটদের কে সতর্ক করার। হাজার হাজার বছর ধরে চলে এসেছিলো গল্পগুলো। ছরিয়ে পড়েছিলো প্রতিটা মহাদেশে । মুল গল্পগুলো সম্ভবত আফ্রিকা থেকে চারদিকে আমাদের পুর্বপুরুষ দের ছরিয়ে পড়ার ও আগের। ১ লক্ষ বছরের পুরনো গল্প, ভাবা যায় !
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৫:৫৫