আতরাফ মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছি। মদ হারাম, খুব ভয়াবহ কোন বিষয় জেনে বড় হয়েছি। আমার কাছে দৃশ্য টা একেবারেই অন্যরকম। সেদিন জীবনে প্রথম টিভির পর্দার বাইরে কাউকে মাতলামী করতে দেখেছি। এর আগে মাতাল মানে বাংলা সিনেমায় দেখা ভিলেন দের পছন্দের খাবার, খুব আদর যত্ন করে কোন নারীর হাত থেকে তুলে দেয়া পানীয় তে চুমুক দেন ভিলেন, তারপর অস্লীল গান শুরু হয়। কোন একটা ব্যাপার আছে মদ এ ।
আজ মদ নিয়ে লিখবো। মদ বলতে নেশা হয়, এজাতীয় পানীয়।
প্রথম মদ কবে খেয়েছি শুনলে অনেকে হা হয়ে যাবেন শিওর। ক্লাস ৫ এ পড়ি। নাটোরে এক কন্ট্রাক্টর সাহেবের বাসায় আমরা ভাড়া থাকি। বাড়িওয়ালার দুই ছেলে, এক মেয়ে। এক ছেলে সেসময় ৭ এ পড়ে, আরেকটা পিচ্চি। নাম নিচ্ছি না, তবে এতবছর পরেও পিচ্চিটাকে মনে পড়ে, খুদ আদর করতাম, আমাদের বাসায় এসেই পড়ে থাকতো। খেলার মানুষ ছিলাম আমি।
বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক বেশ ভালো লোক ছিলেন। তখনো বুড়িয়ে যান নি, ঘুরে ফিরে বেরান, নিজের কন্ট্রাক্টরি বিজনেস সামলান। ওবাসায় ভাড়া যাবার সপ্তাহখানেক পরে একদিন রাত ১২ টার পড়ে নিচ থেকে কেমন শব্দ আসলো। আমরা থাকি দুইতলায়। নিচে কেউ একজন কিভাবে জানি কথা বলছে, কিজানি হয়েছে। দৌড়ে বারান্দায় যেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি, বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক কে তার একজন সহকারী ধরে বাসায় ঢুকাচ্ছেন, উনি আক্ষরিক অর্থেই মাতাল। টলছেন, এ্যাই, এ্যা কি কি বলছেন।
আতরাফ মুসলিম পরিবারে বড় হয়েছি। মদ হারাম, খুব ভয়াবহ কোন বিষয় জেনে বড় হয়েছি। আমার কাছে দৃশ্য টা একেবারেই অন্যরকম। সেদিন জীবনে প্রথম টিভির পর্দার বাইরে কাউকে মাতলামী করতে দেখেছি। এর আগে মাতাল মানে বাংলা সিনেমায় দেখা ভিলেন দের পছন্দের খাবার, খুব আদর যত্ন করে কোন নারীর হাত থেকে তুলে দেয়া পানীয় তে চুমুক দেন ভিলেন, তারপর অস্লীল গান শুরু হয়। কোন একটা ব্যাপার আছে মদ এ ।
তার কদিন পরের কথা। বাসার ছাদ হয়েছে আমার আস্তানা। গলায় একটা মরটাল কম্ব্যাট এর লকেট ঝুলিয়ে ছাদে শুকাতে দেয়া খড়ি থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করি। কি নেই ওখানে, কয়েকরকম বন্দুক, সিন্দাবাদ, রবিন হুড এর তলোয়ার, আরো নানা রকম খেলার সাথি আমার। ওগুলো নিয়েই দিন কেটে যায় স্কুলের সময় টুকু বাদ দিয়ে। তখনো কোন প্রাইভেট বা কোচিং এ ভর্তি হই নি।
একদিন ছাদের সিড়ি ঘর এ নানা জঞ্জালের নিচে আবিষ্কার করলাম একটা পুরনো ধরনের কাঠের বাক্স। টানাটানি করতেই ঢাকনা খুলে আসলো, ভিতরে কয়েকটা বোতন। এতবছর পরেও এক্সাক্ট মনে আছে, কারন ব্যাপার টা আমার জন্য শকিং ছিলো।
৪ টা বোতলের গায়ে লেখা ছিলো ভদকা, দুটা স্কচ আর আরেকটা জ্যাক ড্যানিয়েলস। ৩ টা বোতল একেবারেই খালি। দুটার তলানীতে একটু করে তরল কিছু আছে। ভদকার একটা বোতলে প্রায় অর্ধেক ই খেয়ে রেখে দেয়া। যায়গা টা কোনরকম স্টোরেজ ছিলো। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক এর চিপার কালেকশন মনে হয়। বিপদে আপদে এখানে এসে গলা ভেজান পরিবারের চোখ এরিয়ে। ভালো !
আমি ছোটমানুষ, গুছিয়ে কোনরকমে ঢেকেঢুকে আগের মত করে রেখে এলাম। মনে একটা কেমন ভয় ও জন্ম নিলো। বাড়িওয়ালা বা কেউ যদি জানে ওটা আমি দেখেছি ! ছাদে পারতপক্ষে যাই ই নি সপ্তাহখানেক।
দিনের শেষে আমি একজন মানুষ। অসম্ভব কিউরিয়াস একটা মানুষ। এই কিউরিসিটি আমাদের গ্রহটার সেরা প্রানী হিসেবে গড়ে তুলেছে। কিউরিসিটির কাছে আমি পরাজিত হইলাম সেবার।
আগের রাতে ঘুম হয়নি ভালো নানা জল্পনা কল্পনায়। পরদিন দুপুরে স্কুল থেকে এসে গোসল খাওয়া সেরে শুয়ে অপেক্ষায় আছি, সবাই কখন ঘুমিয়ে পড়ে। সবাই ঘুমালে বিকেলের আগে আগে ছাদে গেলাম। বুদ্ধি করে পানির বোতল নিতে ভুলিনি। যদি খেয়ে কিছু হয় ! পানি বা কিছু মিষিয়ে খেতে হয় সে তথ্য আমার জানা নেই। গেলাম, বের করলাম গুপ্তধন।
ওরেহ ! ভদকার বোতল থেকে অনেকক্ষানি খাওয়া ! কেউ একজন একয়দিনে একবার এসে খেয়ে গেছে। তাহলে জিনিষ টা নষ্ট হয়ে যায়নি। সে খেয়ে বেচে থাকলে আমার আর কি হবে। লেটস ডু দিস।
গ্লাসে নিলাম। অনেকক্ষন নিজের সাথে যুদ্ধ করে দিলাম জিব্বায় ঢেলে তরল টা।
আমার ছোট থেকেই গন্ধ সেন্স খারাপ। আমি গন্ধ তেমন পাই না। নাকের কোন সেন্স এ সমস্যা আছে। গন্ধ তেমন লাগে নি একটা কটু ভাব ছাড়া।
প্রথম অনুভুতি জিব্বাতেই টের পাইলাম। তরল আগুন ঢেলে দেয়া হলো যেন। তবে জিব্বাটা পুড়ছে না, আমি আগুনের স্বাদ টা পাচ্ছি। খেতে খুব খারাপ রে ভাই ভদকা। খুব খারাপ, অখাদ্য।
গিলে ফেললাম। সাথে সাথে পেট মোচর দিয়ে উঠলো, সব বেরিয়ে আসতে চাইলো। গলা দিয়ে নামার সময় বলে বলে নামলো টের পাইলাম। যেন তরল আগুন টা যেই নালী দিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে যাচ্ছে ভেতরে। পাকস্থলীও জ্বলা শুরু হলো যেন। ভয় পেয়ে ঢকঢক করে আধলিটার মত পানি খেয়ে গ্লাসে থাকা বাকি টুকু ও চালান করে দিলাম পেটে। আবার ঢকঢক করে পানি।
বমি আসছিলো, পেট টেট ঘেটে সব নাড়িভুড়ি ও বেরিয়ে আসতে চাচ্ছিলো। পানি খেয়ে যতটুকু চেক দেয়া যায়। তখনো হিট করে নি তরল টুকু আমাকে। বোতল গুলো আবার গুছিয়ে সিরি ঘরে রেখে আসতে যেয়ে খেয়াল করলাম আমার পা টলছে । যেখানে ফেলতে চাচ্ছি, সেখানে ঠিক পড়ছে না।
রেখে ছাদের এক কোনায় যেয়ে শুইলাম। এর আগেও, কারেন্ট না থাকলে প্রায় ই ছাদে এসে শুয়ে থাকতাম আমি, কোন মাদুর টাইপ কিছু না বিছিয়েই।
শুয়ে অনুভব করলাম পুরো পৃথিবী আমাকে নিজের দিকে টানছে। আমার ওজন অনেক বেড়ে গেছে। শুয়ে থাকতে আরাম ই লাগছিলো। একটু পর পেটে মোচড় দেয়া আবার বাড়লো। একপাশে কাত হয়ে হরহর করে বমি করলাম। সে যায়গা আমার ই পরিষ্কার করতে হয়েছে। প্রভৃতি নাটক শেষ করার আগে সন্ধ্যায় বাড়িওয়ালার মেয়ে ছাদে উঠেছিলেন। উনি বড় মানুষ, ভয়ে ভয়ে ছিলাম, তবে কিছু টের পান নাই। সন্ধ্যায় বাসায় নেমে ব্রাশ ট্রাশ করলাম। সে রাতে ভালো ঘুম হয়েছিলো। .................
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০১