"...................ও নদী তুমি বইছ কেন, তুমি কি জান না....
তোমার তীরে বাস করে শত জনপদ, বুকে নিয়ে শত বেদনা.....!"
নদী মাতৃক আমাদের এই দেশ....সুজলা সুফলা বাংলাদেশ। শিরা উপশিরা, রক্ত-কনিকার মতন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কত শত নদী। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, বুড়িগঙ্গা, শীতালক্ষা আরো কত কি!নদী দুরন্ত! বয়ে চলে নিজ খেয়ালে। কখনো শান্ত, আবার কখনো বা উত্তাল। ভেঙ্গে চুরে দেয় দু'কুল। আবার সেই দুরন্ত নদীর বুকেই পাল তুলে ভেসে বেড়ায় দুরন্ত নৌকা, ঢেউ কেটে চলে যায় লঞ্চ, স্টীমার, প্রমোদ-তরী!
ঢাকার সদরঘাট থেকে চাঁদপুরের মোহনপুর............এই পথে চার চারটা নদীর অবস্থান। বুড়িগঙ্গা, শীতালক্ষা, পদ্মা আর মেঘনা। আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা রহস্যময় ভ্রমণ ছিল এই পথে.......বোগদাদিয়া ৯ এ করে!
যমুনার উপর দিয়ে যখন বাড়ি যাই মন ভরে নদীর ছবি তুলতে পারি না .......বড় আফসোস করি উথাল-পাথাল ঢেউ আর ধূ ধূ সাদা বালু-চর দেখে! এবার পরানটা জুড়ায়ে ছবি তুলেছি চারটা নদীর


১...বুড়িগঙ্গার কালো পানি.....হাইস্পীড জেটি ঘাটে :
২....নাও বাইয়া যায়:
৩...লঞ্চ বানানো হচ্ছে:
৪...নদী থেকে বালু উত্তোলন:
৫..দূর গেরামের মিনার

৬..আমগো পিকনিকের বেলুনডা
৭.. ও নদী তুই থুক্কু ও নাও তুই যাস কোথা রে .....
৮..চর মোহিনী:
৯..মোহিনীর চরে আমাদের বোগদাদিয়া:
১০...ধূ ধূ চরে সবুজের ছোয়া:
১১...ধূ ধূ বালু চর:
১২..চিক চিক করে বালি:
১৩..এই সবুজে হারিয়ে যেতে নেই মানা

১৪..মেঘনা পারের জীবিকা:
১৫..মেঘনার জলে বিরহী সূর্যের আত্মাহুতী:
১৬..সূর্যস্নানে সেই নৌকাটি

..................................................................................................
গত ১১ ফেব্রুয়ারীর (২০১২) কথা। এবারে ডিপার্টমেন্টের পিকনিক স্পট ঠিক হয়েছিল : নৌ বিহার! নদীর আর কি দেখব, এমন একটা ভাব নিয়ে ভোর বেলায় উঠে অপরাজেয় বাংলার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।(ভার্সিটি লাইফে নাকি নৌবিহার এক বারই আসে!)
সেখান থেকে সবাই হাঁটতে হাঁটতে শাহবাগ.....বিহঙ্গে উঠে সদরঘাট। ভাবই অন্যরকম! প্রতিবার যেখানে অপরাজেয় বাংলা থেকেই বাসে উঠে সোজা গন্তব্য......এবার সেখানে হাঁটো, বাসে উঠো, আবার হাঁটো, তারপরে জেটিঘাটে ঢুকে লঞ্চে উঠো! জীবনে কোন বার লঞ্চে উঠি নি। এই প্রথমবারের মতন রোমাঞ্চকর একটা ভ্রমণ! উঠেই সোজা ছাদে! তর তর করে আন্দামান খ্যাত বুড়িগঙ্গার কালো পানি চিরে চলতে লাগল এম ভি বোগদাদিয়া ৯। প্রায় ৩০০ জন যাত্রী...! ছাত্র-ছাত্রী আর শিক্ষক!
আগে থেকেই আমাদের জন্যে ঘোষণা ছিল, এবার নাকি নবাবী খানা-পিনা হবে! তো সকালের নাস্তা খেতে গিয়ে দেখি নবাবী নবাবী ভাব আছে। অন্যবারে যেখানে নাস্তা দেয় পাউরুটি-ডিম আর ফ্রুটস, এবারে দিল মুরগী-খিচুরী!
নিচতলায় হচ্ছিল রান্না-বান্না আর দোতলায় হচ্ছিল নাচা-নাচি, আর ছাদে হচ্ছিল আড্ডাবাজি! আমি ছাদেই ছিলাম......হঠাৎ কার ডাকে যেন দোতলায় চলে এলাম। এসে যা দেখলাম তাতে তো চোখ হয়ে গেল ছানা-বড়া! রক মিউজিকের তালে তালে পোলা-পান ভালই লাফ-ঝাপ করছে! দর্শক হয়ে থাকতে থাকতে হাজির হয়ে গেল আসল জায়গাটা! ঢাবির স্যারেরাও যে কম যায় না তার প্রমাণ হাতে নাতে পেলাম! এক স্যার তো তার কণ্ঠে "রূপ সাগরে ঝলক মারিয়া" পুরা স্টেজ ফাটায়ে দিল!
নাচ-গান, নানান রকমের প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকতে থাকতেই লঞ্চ এসে চর মোহিনীতে ভিড়ল।
চর মোহিনী। লোকে বলে, এখানে নাকি মোহিনী নামের এক দেবীর রাজত্ব। কত বার যে মোহিনী দেবী এই জনপদ গিলে খেয়েছে তার ইয়ত্বা নেই! এখনো নাকি মোহিনী দেবী এই চরের মোহনীয় বাঁকগুলোতে লুকিয়ে আছে । তার মোহে পড়েই এখনো লোকে ছুটে যায় এই রহস্যময় চরে।
আমরা নেমে পড়লাম রহস্যময় এই চরে। একদিকে রান্না হচ্ছিল, আরেকদিকে রহস্যের সন্ধানে ঘুরাঘুরি, আরেকদিকে প্রতিযোগিতার রঙ্গমঞ্চ! কোথাও কোন ঘর-বাড়ি নেই...ধূ ধূ চর আর ধান-ক্ষেত! কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা টাইপের এলাকা। যতদূর চোখ যায় মেঘনার উপকূল। সৈকতের বেলাভূমির মতন।ফাঁকে ফাঁকে আবার মোহিনী দেবীর চোরাবালিও আছে

রহস্য খুঁজতে খুঁজতে ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করতে শুরু করল সবার, কিন্তু রান্না আর শেষ হয় না। সান্তনা স্বরূপ কোত্থেকে এক চানাচুর ওয়ালা চলে এল!
অবশেষে খাবারের দেখা মিলল। খাবার নিয়ে আর চর মোহিনীতে বসতে পারলাম না। চলে গেলাম কেবিনে। আস্ত রোস্ট, পোলাও, কিসের যেন একটা কাবাব আর ড্রিংকস। খাওয়া শেষে আবার মোহিনী! এবার গন্তব্য দূরের কাশবন( কাছে গিয়া দেখি কাশবন মরে হয়েছে ছন-বন

বোগদাদিয়া হুইসেল দিচ্ছে...তার মানে ফিরতে হবে! দৌড়...দৌড়..দৌড়! লঞ্চ ছাড়ল ঢাকার পানে। আবারো নাচ-গান, আড্ডা! সূয্যি মামার আত্মাহুতিটা দেখতে ছাদেই ছিলাম। আত্মাহুতি দিল আর আমি তার বিরহে দোতলায় চলে এলাম! নাচানাচি চলতে চলতে রাত ৯টায় বোগদাদিয়া ঘাটে ভিড়ল। রোমাঞ্চকর রহস্যময় লঞ্চ ভ্রমনের ইতি হলো।