আগষ্ট মাসের প্রথম রোববার .....এবার ৭ ই আগষ্ট ..বন্ধু দিবস । বন্ধুত্ব.......জিনিসটাই অন্যরকম। পরিবারের বাইরে একটা জগত । ভাললাগার...হৃদয়ের গভীরতার এক হাতছানি । দীর্ঘ জীবনের পথ পরিক্রমায় মানুষ অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব করে থাকে । কিন্তু সব বন্ধু তো আর টিকে থাকে না ...মহাকালের অতল গর্ভে হারিয়ে যায় ।
জীবনের বেশ কয়েকটা ধাপ পার করে এসেছি । কৈশোরটা হারিয়ে গেছে আমার......সেই সাথে হারিয়ে গেছে আমার কৈশোরের বন্ধুবেলা......হারিয়ে গেছে আমার কৈশোরের বন্ধুগুলো ।
ছোট্টবেলায়....যখনও স্কুলে ভর্তি হইনি তখন আমার বান্ধবী ছিল বাবলি । আমাদের বাসার পাশে ওর নানুবাড়ি । নানুবাড়িতেই বেশি থাকত । একসাথে ঘুরতাম, খেলতাম...সারাটাদিন একসাথেই কাটাতাম । ওদের বাড়িতে একটা বড়ই গাছ ছিল । ও গাছে উঠে বড়ই পেড়ে আমাকে এনে দিত । কত কত মজার স্মৃতি ছিল ওর সাথে । আমার সেই বান্ধবী আজ আমার থেকে অনেক দূরে । কতদিন হলো যোগাযোগ নেই ...দেখাও নেই । ও যখন নানুবাড়িতে আসে আমি যে তখন ঢাকায় !
এরপরে.......আসি স্কুল লাইফে । ভর্তি হলাম পাবনা আলিয়ায়....ক্লাস থ্রিতে । আমার শিক্ষা জীবন শুরু হল । দেখা পেলাম এক বান্ধবী হাসির। একই এলাকাতে আমাদের বাসা । একসাথে দু'জন মাদরাসাতে যেতাম । ক্লাস শেষে বাকি সময়টুকু ও আমাদের বাসাতেই থাকত । লেখা-পড়াও দু'জন একসাথে করতাম ।যখন ঈদ আসত তখন সবচেয়ে বেশি মজা করতাম দুজনে । ও ঈদের আগের দিন বিকেলে ঈদের ড্রেস পড়ে ঈদকার্ড নিয়ে আমাদের বাসায় আসত । ঈদকার্ড দেয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগে যেত দুজনের মধ্যে ....কে আগে দিবে ! এরপর ঈদের সকালে একসাথে ঘুরতে বের হতাম। সারাদিন ঘুরে বিকেলে বাসায় ফিরতাম । ক্লাসেও অনেক মজা করতাম। মাদরাসা থেকে একটু দূরে একটা শিউলি গাছ ছিল । ক্লাস শুরুর আগে ফুল কুড়িয়ে এনে মালা গাঁথতাম । এভাবে চলল ক্লাস এইট, নাইন...নাইনে এসে হাসিকে হারাতে হল

এরপরে.....নাইনে উঠে দুইটা বান্ধবী পেয়েছিলাম...ক্লোজ, খুবই ক্লোজ । বৃষ্টি আর শারমিন । বৃষ্টিটার বাসা আমাদের এলাকাতেই ..আর শারমিনের পাশের এলাকাতে ।রিজার্ভড রিক্সা করে মাদরাসায় যেতাম .....আমি আর বৃষ্টি একসাথে । একটু কিছু হলেই আমাদের বাসায় চলে আসত। ওর বোনের বাসার সাথে একটা নার্সারি ছিল । আমাকে ওখান থেকে ফুলগাছ এনে দিত ...একেবারে ফ্রিতে । প্রতিবার আমার বার্থডেতেও ওর থাকা ছিল বাধ্যতামূলক । আর শারমিনটা...ও ছিল অনেক মজার । প্রথম দিন যেদিন পাবনা মহিলা মাদরাসা থেকে আলিয়াতে ভর্তি হয় সেদিন বৃষ্টি ছিল না ।গম্ভীর হয়ে বলেছিল ওরা নাকি ১২০ টা ভাইবোন ! পরের দিন বৃষ্টি এসে হাজির । সেই থেকে গলায় গলায় ভাব । সেই নাইন, টেন, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার....সেকেন্ড ইয়ারে বৃষ্টির বিয়ে হয়ে গেল .....সেদিন অনেক মজা করেছিলাম । এরপর ইন্টার শেষ করে ভার্সিটিতে চলে এলাম । যোগাযোগটা থেকেই গেল । শারমিনটারও বিয়ে হয়ে গেল। বৃষ্টি থাকে নারায়ণগঞ্জ আর শারমিন উত্তরায় । হঠাৎ ...এইতো সেদিন......এ বছরের জানুয়ারীতে বাসা থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম ভোর সাতটার পাবনা এক্সপ্রেসে। বাস যখন পাবনার আতাইকুলায় তখন শুনতে পেলাম ওখানে ছয়টার পবনা এক্সপ্রেস একসিডেন্ট করেছে । কিছুক্ষণ পরে আম্মুর ফোন এল ......স্তব্ধ হয়ে গেলাম । চোখ ফেটে কান্না এল । আমার প্রিয় বান্ধবী বৃষ্টি আর নেই । সে ঐ পাবনা এক্সপ্রেসে করে নারায়ণগঞ্জ ফিরছিল

শারমিনটার সাথে এখনো যোগাযোগ টিকে আছে । আর কৈশোরের সেই একমাত্র বান্ধবী যার সাথে আমার বন্ধুত্ব এখনো হারিয়ে যায়নি ।
ভার্সিটিতে এসে অনেক বন্ধু -বান্ধব পেয়েছি । তবে সবচেয়ে বেশি ক্লোজ (আমার রুমমেট+ ইয়ারমেট+ বান্ধবী) নিপা আর (এক্স বেডমেট+রুমমেট +রড়আপু নাকি বান্ধবী
