ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে যে, কিভাবে একটি দেশের সুশৃঙ্খল এক সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ধীরে ধীরে অকার্যকর করা হয়। মেরুদন্ডহীন ও হাঁটুভাঙ্গা সেনাবাহিনী যাতে যুদ্ধক্ষেত্রে সঠিকভাবে সোজা হয়ে দাড়াতে না পারে সে জন্য তার মাথাটিকেও ভারী করে দেয়া হয়। বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন সেনাবাহিনীতে জেনারেলের সংখ্যা ছিলো ২৩ জন। এখন সেই সংখ্যা হয়েছে ৫৫ জন, দ্বিগুনেরও বেশী। সেনা বাহিনীর আনুগত্যতা অর্জন ছাড়াও সেনাবাহিনীকে একটি মাথাভারী প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করার বিষয়টি হচ্ছে ‘র’ প্ররোচিত আরেকটি সুূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। শুধুমাত্র সেনা কল্যাণ সংস্থাতেই একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও একজন ফুল কর্নেল এর স্থানে বর্তমান সরকার হঠাৎ করেই ১জন মেজর জেনারেল, ৮জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও ৯ জন ফুল কর্ণেল এর পোষ্টিং দেয়। এ যেন ছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য প্রস্তুত কফিন এর বুকে শেষ পেরেকটি। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব দেশের সীমান্ত রক্ষা করা আর জনগনের দায়িত্ব সার্বভৌমত্বের মেরুদন্ড সেনাবাহিনীকে দেকভাল করা। আমরা কখনই ভারতের কাছে মাথানত করবোনা, এদেশকে আর একটি সিকিম হতে দিবনা, ভারত আর বর্তমান সরকার যতই চেষ্টা করুক।
মুসলমান দেশ সমুহে এহেন গৃহ যুদ্ধের সময়, ইসলাম বিদ্বেষী প্রতিবেশী একটি দেশ কখনো নেয় জনগণের পক্ষ, কখনো বা নেয় ক্ষমতাশীল দলের পক্ষ। তবে উদ্দেশ্য তাদের সবসময়ই এক ও অভিন্ন, “মুসলমানদের ধ্বংস”। ৭১ সালে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের গণ মানুষের পক্ষে, এবার তারা পক্ষ নিয়েছে আওয়ামীলীগ সরকারের । তবে তাদের উদ্দেশ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। সেই সময় উদ্দেশ্য ছিলো একটি শক্তিশালী মুসলমান দেশকে ভাগ করে, উপমহাদেশে নিজেদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি আর সেই সাথে মুসলমানদের সম্পদের ব্যাপক লুটপাট। আর বর্তমানে তাদের চাহিদা আরো ভয়ঙ্কর, সরাসরি দেশ দখল। আর ঐ দখলের ক্ষেত্রে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার যতই সহযোগিতা করুক প্রধান এবং একমাত্র বাধা হিসেবে তারা ধারণা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। তাই সূক্ষ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধীরে ধীরে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারী দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও সেনা সদস্যদের মধ্য থেকে যারা ভারতকে সবচেয়ে বেশী সহযোগীতা করেছে তারা হচ্ছে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, সেনা প্রধান মইন উ আহমেদ, ডিজিএফআই-এর মেজর জেনারেল মামুন খালেদ ও মেজর জেনারেল রেজা নূর, এরাই হচ্ছে বিডিআর হত্যা কান্ডের মূল বিভীষণের দল।
বিডিআরের এই ব্যাপক সেনাঅফিসার হত্যাতেও ভারত সন্তুষ্ট নয়।
বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের সহযোগিতায় “র” এর পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর উপর পর পর আরো অনেকগুলো খড়গ নেমে আসে। সেনাকুঞ্জে অফিসারদেরকে ডেকে এনে প্রতিবাদী অফিসারদেরকে চিহ্নিত করা হয় এবং দল বেধে তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। তাপস হত্যা চেষ্টার বাহানা করে বের করে দেয়া হয় আরো একদল মেধাবী সেনা অফিসারদেরকে। মেজর জিয়া নামে এক অফিসারকে তো ইলিয়াস আলীর মতো সরাসরি গুম করে দেওয়া হয়। পরবর্র্তীতে “র” এর সহায়তায় বর্তমান সরকার ষ্টিং অপারেশন এর পদ্ধতিতে এক সাজানো সেনাঅভ্যুন্থান এর নাটক মঞ্চস্থ করে, সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলে আরো একদল কঠোর দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শুধু মেরুদন্ডই ভেঙ্গে দেওয়া হয়নি, দুপায়ের হাটু দুটিও গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সবশেষে যে ক্ষতিটা করা হয় তা হয়েছে তা হল, ২/৪জন ব্যাতীত একদল অযোগ্য সেনা অফিসারদের প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করা হয়েছে।
ভবিষ্যতে যে কোন মহাবিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে রণকৌশল বিষয়ক বিদ্যা চর্চা করা হয়, সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে পর্যায়ক্রমে অকার্যকরণের বিষয়টি একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে। মাঠ পর্যায়ে দুটি দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ এখন ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের ঠান্ডা যুদ্ধের পর যুদ্ধবিদ্যার মাত্রিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন পাকিস্তান আর্মির কথাই ধরা যায়। ১৯৭১ সালে তারা যুদ্ধ করেছে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের সাথে। আজ তারা ব্যাপক যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে তাদেরই দেশের জনগণদের (তালেবান) সাথে। গোয়েন্দা কার্যক্রমে মর্মান্তিক ভাবে অদক্ষ মুসলমান দেশগুলোর সেনাবাহিনীকে প্রায়শই দেখা যায় নিজ দেশের মানুষদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকতে।