ভালো করে নজর করলে দেখা যাবে যে, শাসনব্যবস্থা যাই হোক মুসলমান দেশসমূহের শাসক শ্রেণীর আচরণ একই প্রকৃতির। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সউদী রাজতন্ত্র যা করে অন্যান্য গণতান্ত্রিক মুসলমান দেশসমূহে ক্ষমতাসীনরা কোনো অংশেই তার চেয়ে কম করে না। ওরা ক্ষমতা উপভোগ করার জন্য গণতন্ত্র করে, দেশ ও জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে দায়িত্ব গ্রহণ করতে নয়। চরম এবং পরম লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়া এবং তাতে টিকে থাকা, ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কিংবা অবস্থান স্থায়ী করতে যতটুকু জনহিতকর কাজ না করলেই নয়, তাই করা।
আমরা জানি, রাজতন্ত্রে রাজার ছেলে রাজা হয়, কিন্তু বর্তমান সময় গণতান্ত্রিক মুসলমান দেশসমূহে ওই একই পদ্ধতি। গণতান্ত্রিক এমপি, মন্ত্রীদের সন্তানেরা এমপি, মন্ত্রী হবে, এ যেন তাদের পরিবার সূত্রে প্রাপ্ত গণতান্ত্রিক অধিকার।
সমস্যা ছিল না তাতে যদি তারা সঠিক পবিত্র দ্বীন ইসলাম বুঝতেন, সঠিক দিক-নির্দেশনা পেতেন, জনদরদি হতেন। উপমহাদেশে ৭০০ বছর মোঘল রাজতন্ত্র অনেক ভালো চলেছে বর্তমান সময়ে আমাদের গণতন্ত্রের চেয়ে।
এসব দেশে দেখা যাবে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা এডিবি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানরা সেনাবাহিনীর দুর্গ সমতুল্য অফিস তৈরি করে। এরাই হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতিকে চুষে নেয়ার জন্য বৃহৎ আকৃতির সব ভ্যাক্যুয়াম ক্লিনার। ২০০ বছর এই উপমহাদেশে ইংরেজদের নীলকুঠি যেই কাজটি করেছে, এই একবিংশ শতাব্দীতে ওই সমস্ত সংস্থা ওই একই কাজটি করছে তবে ভিন্নতা রয়েছে সূত্রপাত ও কার্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে।
চোর রবার্ট ক্লাইভ খাতির করেছিল দুর্নীতিবাজ এবং বেঈমান মীর জাফরের সাথে, তার মাধ্যমে ইংরেজরা ব্যবস্থা করেছিল এই উপমহাদেশের সম্পদ ২০০ বছর ধরে লুটে নেয়ার। আর বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বের তথা মুসলমান অধ্যুষিত দেশসমূহের সম্পদ চুষে নেয়ার জন্য তারা স্থান বিশেষে বিভিন্ন ধরনের শাসনব্যবস্থা চালু করেছে, কোথাও রাজতন্ত্র আর কোথাও আবার গণতন্ত্র। তবে মূল চাহিদা হচ্ছে, শাসনব্যবস্থা যাই হোক ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলোকে হতে হবে চরম দুর্নীতিবাজ। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহের মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ প্রতিনিয়ত চুষে নেয়াতে কোনো সমস্যাই নেই। বর্তমান যামানাতে দেশ দখল করার জন্য মীর জাফরের মতো ব্যক্তির প্রয়োজন নেই। দেশ দখল করে কলোনী তৈরি করার প্রয়োজন নেই। দেশীয় জনগণ জানবে যে, তাদের নেতাদের অদক্ষতা এবং দুর্নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতি খারাপ। কিভাবে দুর্নীতিবাজ লোকগুলো ক্ষমতায় যাচ্ছে? কিভাবে দুর্নীতি করছে? কিভাবে দুর্নীতির টাকাটা বণ্টিত হচ্ছে? কিংবা কিভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংস্থাসমূহ এর সাথে জড়িত, তার কিছুই সাধারণ জনগণ বুঝতে পারবে না- এটাই হচ্ছে তৃতীয় বিশ্ব তথা মুসলমান দেশসমূহের জনগোষ্ঠীর দুঃখজনক অধ্যায়। জনৈক জন পার্কিন্স, যে প্রায় ২১ বছর ওই সমস্ত সংস্থার সহযোগিতায় তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতি ধ্বংস করার কাজে নিয়োজিত ছিল। সে একটি বই লিখেছে, যার নাম- ‘Confessions of an Economic Hit Man’ ‘একজন অর্থনীতি ধ্বংসকারীর আত্মস্বীকৃতি।’ অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সে লিপিবদ্ধ করেছে যে, কিভাবে তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতি চুষে নিয়ে তারা ওই দেশসমূহের অর্থনীতি ধ্বংস করতো; যা এখনো চালু আছে এবং ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্তা মুসলমানরা সত্যিকারের নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে না পারবে।
মুসলমানদের নেতৃত্ব কি ধরনের হওয়া উচিত? তা অতি সহজেই উপলব্ধি করা সম্ভব যদি আমরা পবিত্র দ্বীন ইসলামের স্বর্ণযুগের নেতৃত্বের দিকে নজর দেই। পৃথিবীর মানব রচিত কোনো সংবিধান পবিত্র কুরআন শরীফের সমতুল্য হতে পারে না। ঠিক তেমনিভাবে পৃথিবীর কোনো মানবীয় শিক্ষায় শিক্ষিত নেতা পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা, ক্বিয়াস ও তাসাউফ শিক্ষায় শিক্ষিত উনার সমতুল্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে জামাত/শিবির কিংবা হিযবুত তাহরীরের নেতৃত্বের কথা ভাবলে ভুল হবে। ওরা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে সম্পর্কহীন দল। এদের মাধ্যমে মুসলমানরা মুক্তি পাওয়া কিংবা উন্নতি করার চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি। এখনই সময় যামানার মুজাদ্দিদ উনাকে খুঁজে বের করা এবং উনার পতাকাতলে সংঘবদ্ধ হওয়া। মহান আল্লাহ পাক তিনি বর্তমান যামানার মুসলমানদের হিফাজত করুন। (আমীন)