শিক্ষা
মানুষের অভ্যাস ও আচরণের সুপরিবর্তনই হলো শিক্ষা। অনেকেই স্থায়ী পরিবর্তনের কথা বলেছেন। শিক্ষা একটি জীবন ব্যাপী প্রক্রিয়া। যার কারণে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জনের তাগিদ এসেছে। শিক্ষা একটি জীবন ঘনিষ্ঠ প্রত্যয়। তাই জীবনই হচ্ছে শিক্ষার মূল উপজীব্য। শিক্ষা সব সময়ই ইতিবাচক। এজন্য শিক্ষা গবেষণায় কুশিক্ষা নামে কোন প্রত্যয় নেই। শিক্ষা হচ্ছে আলোময় স্বাধীনতা। মার্তৃগর্ভের অন্ধকার হতে শেষ কবরের অন্ধকার। মাঝখানে আলোর সান্নিধ্য। এই আলোতে শিক্ষা মানুষের জীবনকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়।
Education শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Educatum বা বফঁপধঃরড় হতে এসেছে। এর অর্থ শিক্ষিত করা, শিশুদের সুপ্ত প্রতিভাকে তুলে আনা, টেনে বের করা ইত্যাদি। আবার ধারণা করা হয় এটি ল্যাটিন শব্দ Educatio হতে এসেছে। এর অর্থ শিক্ষন বা শিক্ষা দেয়ার কাজ।
শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিকগণ যে মতামত দিয়েছেন তার কয়েকটি উদাহরণ দেয়া হলো :
১. মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের আবিষ্কারই হলো শিক্ষা- সক্রেটিস।
২. দেহমনের সুষম ও পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনের প্রকৃত মাধুর্য ও চরম সত্যে উপনীত হওয়ার কৌশলই শিক্ষা- এরিস্টটল।
৩. শিশুর নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী দেহমনের পরিপূর্ণ ও সার্বিক বিকাশ সাধনই হলো শিক্ষা- প্লেটো।
৪. সু-অভ্যাস গঠনের নামই হলো শিক্ষা- রুশো।
৫. সুন্দর, বিশ্বস্থ এবং পবিত্র জীবনের উপলব্দিই হলো শিক্ষা- এফ ফ্রয়েবল।
৬. জীবনের প্রস্তুতি নয় জীবনের উপলব্দিই হলো শিক্ষা।
আর শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে মানুষকে শিক্ষা দান পদ্ধতি যা দ্বারা শিক্ষার্থীদের সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী তৈরী করা হবে। শিখন পদ্ধতির বারবার প্রয়োগ করে ভাল গুণাবলীর বিকাশ হবে সেখানে। বর্তমানে সারা দুনিয়াতেই শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজাইন সরকারের ব্যবস্থাপনাতেই হয়ে থাকে। প্রত্যেক দেশেই আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সুনির্দিষ্ট কতগুলো লক্ষ্য থাকে। সংশ্লিষ্ট জাতির সামগ্রীক জীবন দর্শন শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারন করে থাকে। সে অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং সিলেবাস-কারিকুলাম তৈরী হবে।
ইসলামে শিক্ষার ধারণা
ইসলামে শিক্ষা একটি বাধ্যতামূলক ধারণা। দোলনা থেকে কবর এই হচ্ছে শিক্ষার দুটি প্রান্ত সীমা। শিক্ষা অর্থে একটি নির্দিষ্ট পরিভাষা ব্যবহার না করে বেশ কয়েকটি প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়েছে। তরবিয়াহ এসেছে রাবা হতে যার অর্থ বাড়ানো, আধ্যাত্মিক পুষ্টি ইত্যাদি। তাদিব এসেছে আদুবা হতে যা দ্বারা শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া, পরিশুদ্ধ হওয়া, সংস্কৃতিবোধ সম্পন্ন হওয়া বুঝায়। তালিম এসেছে আলিমা হতে যার অর্থ জানা, অবহিত হওয়া, শিখা যা জ্ঞানকে নিশ্চিত করে।
উল্লেখিত তিনটি শব্দ দিয়ে ব্যক্তির উন্নয়ন, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা, জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞানের স্থানান্তর বুঝায়।
ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য ইসলামে শিক্ষা অপরিহার্য। ওহীর প্রথম আয়াতটিই পড় দিয়ে শুরু। এরপর বলা হয়েছে “পড়, আর তোমার প্রভু বড়ই অনুগ্রহশীল। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।” (আলাক, ৯৬ : ৩-৪)। হাদীসে এসেছে, “জ্ঞান অর্জনের জন্য সূদূর চীন দেশে যেতে হলেও যাও।”
রাসূল (সাঃ) এক সময় মুসলিম শিশুদের পাঠদানের বিনিময়ে যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফেরেশতাগণ এবং শয়তান জ্ঞানের পরীক্ষায় আদম (আঃ) এর নিকট ফেল করে। জ্ঞানই তাকে অপরাপর সৃষ্টি হতে শ্রেষ্ঠত্বের জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে। এরশাদ হচ্ছে: “আর তিনি আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম শেখালেন।” (বাকারা-৩১)। যুগে যুগে মানব সমাজে রসূলগণ আল্লাহর বান্দাদের জন্য শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখেন। এ শিক্ষা লাভের মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হতে সক্ষম হয়। আর মানুষ সেই আমানত বহন করার দায়িত্ব গ্রহণ করে যা গ্রহণ করতে আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালা অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা খাঁটি ইবাদত হিসেবে গণ্য। এরশাদ হচ্ছে: “নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং দিবারাত্রির আবর্তনে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। (আল ইমরান : ১৯০-১৯১)
ইসলাম যেমন সার্বজনীন, ইসলাম অনুমোদিত শিক্ষা ব্যবস্থাও তেমনি সার্বজনীন। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার মূল দর্শন ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান- এর আলোকে বিন্যস্ত। ফলে তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাত, খিলাফত, ইখওয়াত, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা, সৎকাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ, সামাজিক বিকাশ, টেকসই উন্নয়ন, প্রকৃতি বিজ্ঞান সবই ইসলামী শিক্ষার উপজীব্য। বিজ্ঞানের যত শাখা অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থায় নির্ণয় করা হয়েছে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থায়ও তা যথাযথ রয়েছে। রসায়ন, জীব, পদার্থ, নৃতত্ত্ব, চিকিৎসা, গণিত, তড়িৎ, যন্ত্র, স্থাপত্য বিদ্যাসহ বিজ্ঞানের সকল শাখার বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মানুষের সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে পরিচালনার জন্য কলা ও সমাজ বিজ্ঞানের আলোচনা ইসলামী শিক্ষায় যথাযর্থ ভাবে আলোচিত হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামীর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ইসলামী শিক্ষায় ইতিহাস বিষয়কে যথাযথভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষা ব্যবস্থা কখনই খন্ডিত বা প্রান্তিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হতে পারে না।
রাসূল (সাঃ)-এর সময় সাফা পর্বতের পাদদেশে দারুল আরকাম হচ্ছে ইসলামের ইতিহাসের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাসূল (সাঃ) নিজেই এখানে শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এ শিক্ষালয়ের ছাত্র ছিলেন হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমর (রাঃ) সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম।
হিযরতের পর মসজিদে নববীর বারান্দায় মাদ্রাসা-ই-সোফফা প্রতিষ্ঠা করে রাসূল (সাঃ) এর পরিচালনা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এর আদলে মদীনায় বিভিন্ন মহল্লয়া মসজিদ ও সংলগ্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়ের অন্যতম ছিল পবিত্র কুরআন, হাদীস, ফারায়েজ, চিকিৎসাবিদ্যা, ইলমুল আনছাব ও তাজবীদ। এছাড়াও শরীর চর্চা, আরবের ঐতিহ্য অনুযায়ী অশ্বারোহন ও সমর বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হতো।
খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে শিক্ষার পরিমন্ডল আরও সম্প্রসারিত হয়।
উমাইয়া ও আব্বাসীয় যুগে শিক্ষার ধারা আনুষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দুনিয়াব্যাপী আলো ছড়ায়। ৮৩০ সালে খলিফা আল মামুনের প্রতিষ্ঠিত বায়তুল হিকমা সমগ্র দুনিয়ার জন্য জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছিল। প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞান আরবীতে এখানেই পাওয়া যায়। নিজামুল মুলক প্রতিষ্ঠিত বাগদাদের নেজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পৃথিবীর সবংশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ছিল। ইউরোপের ছাত্ররা কেউ এখান থেকে পড়ে গেলে চতুপার্শ্বের লোকজন তাকে দেখতে আসত। ইউরোপে আলো জ্বালে এই ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা। গ্রানাডার বিদ্যাপিঠগুলো হতে যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বের হত। আফ্রিকাতেও এই শিক্ষা মানুষকে সভ্যতার দিক দেখিয়েছে। মরক্কোর একটি মসজিদে এক মুসলিম মহিলা ফাতেমা বিনতে ফিররে একটি শিক্ষালয় চালু করেন। পরবর্তীতে এটিই হয় আধুনিক দুনিয়ার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এঙ্ককোরিন।
ভারতীয় উপমহাদেশে সুলতান শিহাব উদ্দিন ঘোরীর (হিজরী ৫৯৭-৬০২) শাসনামলে এ শিক্ষা ব্যবস্থা ছড়িয়ে পড়ে। হিজরী নবম শতকের শেষ দিকে হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রাহঃ)-এর সময়ে ইসলামী শিক্ষা ব্যাপকতা লাভ করে। তিনি তার আল-জুয়উল লতীফ গ্রন্থে সিলেবাসভুক্ত বিষয় গুলো লেখেন : নাহু-কাফিয়া ও শরহে জামী, মানতিক-শরহে শামসিয়্যা ও শরহে মাতালি।
ফালাসাফা- শরহে হিদায়াতুল হিকমাহ। কালাম-শরহে আকাঈদ নাসাফী, হাশিয়ায়ে খেয়ালী শরহে মাওয়াফিক। ফিকহ-শরহে বেকায়া, হিদায়া (সম্পূর্ণ)। উসুলে ফিকহ-মুসামী, তাওযীহ তালবীহ-এর কিয়দংশ।
বালাগাত-মুখতাছার ও মুতাওয়াল। সৌরবিদ্যা ও অংক-কতিপয় পুস্তিকা, চিকিৎসা শাস্ত্র-মুজিজুল কানুন। হাদীস-মিখকাতুল মাসাবীহ, শামায়েলে তিরমিজী এবং সহীহ বুখারী শরীফের কিছু অংশ। তাফসীর-মাদারিক ও বায়যাবী। তাসাউফ-আওয়ারিক, রাসায়েলে নকশবন্দিয়া, শরহে রুবায়িয়্যাতে জামী, মুকাদ্দামায়ে শরহে লুমআত, মুকাদ্দামায়ে নাকদুন নুসূম।
হিজরী দ্বাদশ সনে বিখ্যাত আলেম মোল্লা কুতুব উদ্দীনের সুযোগ্য সাহেব জাদা মোল্লা নিজাম উদ্দীন ফিরিঙ্গি মহালে দরসে নিজামীয়া শিক্ষাক্রম চালু করেন। দরসে নেজামিয়ার পাঠ্যসূচী ছিল:-
সরফ-মীযান, মুনশাইব, সরফে মীর, পাঞ্জেগাঙ্গ যুবদা, ফুসূলে আকবরী, শাফিয়া।
নাহু-নাহুমীর, শরহে মিয়াত আমিল, হিদায়াতুন নাহু, কাফিয়া ও শরহে জামী।
মানতিক-সোগরা কোবরা, ইচ্ছাগুযী, শরহে তাহযীব, কুতুবী, মীর কুতুবী ও সুল্লামুল উলূম।
ফালাসাফা-মায়বুযী, সদরা ও শামছে বাযিগা।
সৌরবিদ্যা ও অংক-খোলাছাতুল হিসাব, তাহরীরে উক্লিদাস, মাকালায়ে উলা, তাশবীহুল আখলাক, রিসালায়ে কুর্শিজিয়্যা, শরহে চিগমুনী বাবে আউয়াল।
বালাগাত-মুখতাসারুল মা’আনী মুতাওয়াল।
ফিকহ-শরহে বিকায়া (প্রথম দুই খন্ড), হিদায়া (শেষ দুই খন্ড) উসূলে ফিকহ- নুরুল আনওয়ার, তাওযীহ তাশবীহ ও মুসাল্লামুস সুবূত।
কালাম-শরহে আকাঈদ নাসাফী, শরহে আকানুদ জালালী, মীর যাহিদ ও শরহে মাওয়াকিফ।
তাফসীর- জালালাইন শরীফ ও বায়যাবী (বাকারা)
হাদীস- মিশকাতুল মাসাবীহ।
উপরোক্ত দুই ধারার সমন্বয় করে ১৮৬৭ সালে ঐতিহাসিক দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয্ যা কওমী মাদ্রাসা হিসেবে পরিচয় লাভ করে। এদিকে বৃটিশ সরকারের উদ্যোগে ১৭৮০ সালে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা
ইংরেজরা এ উপমহাদেশের ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাকে সমূলে উৎখাত করতে না পারলেও তাকে গৌন পর্যায়ে নিয়ে যায়। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও বস্তুবাদের সমন্বয়ে নতুন এক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্ম দেয়। যা হয়ে যায় মূল ধারা। এ শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য সম্পর্কে লর্ড ম্যাকলের উক্তি প্রনিধানযোগ্য : “বর্তমানে আমাদেরকে এমন একটি শ্রেণী গড়ে তুলতে হবে, যারা শাসক ও শাসিতের মধ্যে সংযোগ রক্ষা কারীর কাজ করবে। তারা আকৃতি ও বর্ণে ভারতীয় হবে বটে। কিন্তু রুচী, মতামত, নীতিবোধ ও বুদ্ধির দিক দিয়ে হবে খাঁটি ইংরেজ।” এ শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও নাস্তিকতার বীজ বপন করে দিতো। বৃটিশরা উপমহাদেশ থেকে বিদায় নিলেও তাদের শিক্ষা দর্শন রেখে গেলো। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ এখনো শিক্ষার মূল ধারায় সেই দর্শনই লালন করছে।
অথচ একটি জাতীর সামগ্রীক দর্শনই শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হবে। বিজাতীয় দর্শন শিক্ষার ভিত্তি কখনই হতে পারেনা। দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে বৃটিশ শক্তি বিদায় নেয়ার পাঁচ যুগ পরও সেই গোলামী যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার জোয়াল আমাদের কাঁধে চাপিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষানীতি-২০০৯ এ শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- “এ শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে সেক্যুলার, গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে কাজ করবে।”
বৃটিশদের ভাগ করে শাসন করার নীতি অনুযায়ী যেভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভক্তি এসেছিল সে বহুধা বিভক্ত ব্যবস্থাই এখনো বাংলাদেশে চলছে।
প্রধানত দুইটি ধারায় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্তা বিভক্ত।
১. সাধারণ শিক্ষা; ২. মাদ্রাসা শিক্ষা;
সাধারণ শিক্ষা
দেশের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৫% শিক্ষার্থী স্কুল ও কলেজমুখী। সর্বশেষ শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার স্তর ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত করা হয়েছে। প ম ও ৮ম শ্রেণীতে দুটি সমাপনী পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তথ্য-যোগাযোগ, প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনের ধারণা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু পাঠ্যক্রমে অন্তভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে জাতিকে তথাকথিত বিজ্ঞান মনস্ক করার নামে ধর্মহীন করার আয়োজন করা হয়েছে। এমনিতেই স্কুল গুলোতে ধর্ম শিক্ষা ছিল নামে মাত্র। এখন নবম ও দশম শ্রেণীতে বাধ্যতামূলক ধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ম ও ২য় শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষা নেই। তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার নামে জগাখিচুড়ি কিছু বিষয় পড়ানো হচ্ছে।
এ শিক্ষাধারা যেহেতু আল্লাহ বিমুখ ও ঈমান আকীদা বিবর্জিত দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আদর্শিক জবিন ও জীবন পদ্ধতি লাভ করার প্রশ্নই আসেনা। যার কারণে এদেশের সর্বত্র এমনকি শিক্ষা প্রশাসনও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। একই ভাবে শিক্ষাঙ্গনগুলো সন্ত্রাসের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
এ শিক্ষার সীমিত কারিগরী শিক্ষার বাইরে বেশির ভাগই জীবন বিমুখ শিক্ষা। বিশেষত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষার হাল চরম বিষ্ময়কর। উত্তরপত্র মূল্যায়নে সরকারী নির্দেশনা প্রমাণ করে এ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অর্জন। জিপিএ ৫ এর যে জোয়ার দেখানো হয়েছে তা কোন ক্রমেই শিক্ষার মান উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি নয়। এ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলই তার প্রমাণ।
জগতের রব ও স্রষ্টা মহান আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তা সম্পর্কে এ শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু নিরবই নয়। বরং তা শিক্ষার্থীদের জানতে দিতেও রাজি নয়। যার কারণে জীবনের লক্ষ্য বিবর্জিত এ শিক্ষা ব্যবস্থা লক্ষ্যহীন একটি জাতি নির্মাণ করছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বাজেটের কথা অনেক ফলাও করে প্রচার করা হলেও শিক্ষা এখন আর সর্বোচ্চ বাজেট আইটেম নয়। শিক্ষা খাতে বাজেটের হার বছর বছর কমছে।
শিক্ষা যা দেয়া হচ্ছে তাও পূর্ণাঙ্গ নয়। প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষায় যন্ত্রপাতির অভাব ও অনেক পুরনো জিনিষের ব্যবহার, গবেষনায় বলতে গেলে শূণ্য বরাদ্ধ, শিক্ষক স্বল্পতা কমন বিষয়। আজব ব্যাপার হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফিতে ভ্যাট বসানো হয়েছে।
স্বল্প বেতনের কারণে শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনী, কোচিং বা অন্য পেশায় জড়াচ্ছে। শিক্ষার মূল স্পিরিট এতে ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
এ শিক্ষা ব্যবস্থা এ জাতীর জীবন পদ্ধতি ও সংস্কৃতিকে সত্যিকার অর্থে প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেজন্য জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টিতে পরিপূর্ণভাবে ব্যর্থ এ শিক্ষা ব্যবস্থা।
এ শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিশুদ্ধ ও পরিণত মানুষ তৈরীর কোন কমিটমেন্ট নেই। সে কারণে নেতৃত্ব ও দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে আদৌ কোন সফলতা নেই এ শিক্ষা ব্যবস্থার।
একাদশ শ্রেণীর উপযোগী বিষয়গুলো এখন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে নবম-দশম শ্রেণীতে। নবম-দশম শ্রেণীর উপযোগী বিষয়গুলো চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ৭ম-অষ্টম শ্রেণীতে। ফলে ঞৎধহংভবৎ ড়ভ কহড়ষিবফমব বা জ্ঞানের স্থানান্তর বলতে শিক্ষা গবেষণায় যে বিষয়টির গুরুত্ব দেয়া হয়। তা উপেক্ষিত হয়েছে।
সৃজনশীলতার মূল্য শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি। ব্যবসা, উদ্যোগ, উৎপাদন, প্রশাসন সর্বত্রই এর কদর। এখন সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে এটি খুবই প্রশংসনীয়। মনে রাখতে হবে সৃজনশীল প্রশ্নের অর্থ হচ্ছে যে প্রশ্নটি শিক্ষার্থী এখন পেল এর ধরন আগে কখনো সে দেখেনি। সে ক্ষেত্রে বই আর নোট বাজারে যতই থাকুক সমস্যা নেই। কিন্তু এখন সৃজনশীলতার নামে স্থায়ী যে গঠন দেয়া হয়েছে তাতে পুরাতন পদ্ধতির নতুন রূপই ফুটে উঠেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা
পূর্বেই ঐতিহাসিক বাস্তবতায় আমরা জানি এ দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা দুটি ধারায় বিভক্ত। কওমী মাদ্রাসা ও আলীয়া মাদ্রাসা।
আলীয়া মাদ্রাসার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত ইবতেদায়ী থেকে আলিম পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের অনুবাদসহ ধর্মীয় বিষয়াদি পাঠ্য মৌলিক হলেও সংক্ষিপ্ত। আবার বিষয় বিন্যাস অসামঞ্জস্যপূর্ণ। শিক্ষা দানে ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষক ও দক্ষ শিক্ষকের অভাব, কুরআন ও হাীসের মূলভাষা আরবী ভাষায় অভিজ্ঞ শিক্ষকের স্বল্পতা, শিক্ষার্থীদের আরবী ভাষা শিক্ষায় উদাসীনতা রয়েছে। এমনকি কামিলে উচ্চ ডিগ্রী নিয়েও অনেক শিক্ষার্থী যেমন শুদ্ধভাবে ওহীর ভাষা ভাল ভাবে বলতে পারেন না, তেমনি অনুবাদ করার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেন না। এর কারণ হচ্ছে কারিকুলাম প্রণয়নে ত্রুটি।
আলিম পর্যন্ত মাদ্রাসা বোর্ডের সিলেবাসের আলোকে বাইরের প্রকাশকগণ বই প্রকাশ করে। ফাজিল, কামিল ও অনার্সের ক্ষেত্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী অন্যরা পুস্তক প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে নিজস্ব খেয়াল খুশী মত লেখকগণ মতামত প্রকাশ করেন। অনেক সূক্ষ্ম ও জটিল বিষয় আছে যেগুলো বিশেষজ্ঞ আলেমগণই বলা উচিৎ। এসব বিষয়ে অহেতুক ধর্মীয় বিতর্ক সৃষ্টি করে উম্মাহকে বিভক্ত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে কওমী মাদ্রাসা সমূহে কুরআন ও হাদীসের চর্চা হয় প্রধানত। সরকারী স্বীকৃতিবিহীন কওমী মাদ্রাসাগুলো একাধিক আ লিক বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। বোর্ড গুলোর সিলেবাসে কিছুটা তারতম্য আছে। সরকার ১০১২ সালে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রন ও স্বীকৃতির লক্ষ্যে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং ৭ সদস্য বিশিষ্ট নেসাব ও নেযামে তালীম প্রণয়ন সাব কমিটি গঠন করে। অবশ্য কওমী ধারার অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম কমিশনকে গ্রহণ করেননি কিছু বিতর্কের কারণে। এখন পর্যন্ত কমিশন প্রণীত খসড়া প্রস্তাবনা আলোর মুখ দেখেনি।
এখানে আস সানুবিয়্যা আল উলয়া বা উচ্চ মাধ্যমিক, আল ফাযিল বা স্নাতক এবং আত্তাকর্মীল বা স্নাতকোত্তর পর্যায়গুলো একাডেমিক সময় অনুযায়ী চলমান দুনিয়ার সাথে সমমানের নয়।
বৃটিশ প্রবর্তিত সাধারণ শিক্ষা দর্শনগত দিক থেকে সমচেতনা লালন করলেও গবেষণা ও উন্নয়নে অনেক এগিয়েছে। সে তুলনায় এসব মাদ্রাসা সমূহ উপনিবেশিক সময়ের কারিকুলামও ধরে রাখেনি। কিছু বিষয় একেবারেই বাদ দিয়েছে। সে হিসেবে নতুন ক্ষেত্র বাড়েনি।
তাছাড়া ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও দর্শন হিসেবে উপস্থাপনের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র তৈরী করা হয় নি।
এছাড়া ইংরেজি মাধ্যম বিশেষত ক্যামব্রিজ ও এ্রডেক্সেল কারিকুলামের প্রচুর প্রতিষ্ঠান এদেশে চলছে। এগুলো মূলত প্লে গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত রয়েছে। এদেশীয় প্রেক্ষাপটে এ ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। প্রথমত যাদের অনেক টাকা আছে তারা এখানে পড়া চালিয়ে যেতে পারে। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিক্ষার্থী না ভাল একাডেমিক ইংরেজী জানে না ভাল বাংলা জানে। ইসলামী তাহজীব তামাদ্দুনতো দূরের কথা দেশজ সাধারণ জীবন ধারাও এরা অনুসরণ করতে পারে না। প্রচন্ড পারিবারিক ও সামাজিক মোটিভেশন যারা পায় তাদের কথা আলাদা। তাছাড়া সাধারণ শিক্ষার চেয়ে ঝরে পড়ার হার এখানে বেশি।
কৈফিয়ত ও সুপারিশ
বাংলাদেশের শিখ্ষা ব্যবস্থা আলোচনা করতে গিয়ে শুধু নেতিবাচক কথাগুলো তুলে আনা এ লেখার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো এ অচলায়তন হতে বের হওয়ার উপায় খুঁজা। এই মুহুর্তে চাইলেই সব হয়তো ঠিক হয়ে যাবেনা কিংবা আমুল সংস্কার করা যাবেনা। এজন্য পরিবর্তন কামী শক্তিশালী সরকার প্রয়োজন। আপাতত বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কতিপয় সু-পারিশ পেশ করছি :
১. একজন মুসলিম হিসেবে দৈনন্দিন জীবনের ইসলামী শিক্ষার জন্য স্তরভেদে সাধারণ শিক্ষায় সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির সংযোজন করতে হবে। ১ম শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত এগুলো সাজাতে হবে। ইসলামী শিক্ষার এই সিলেবাস সাজানোর ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আলেমদের সংশ্লিষ্ট থাকা যুক্তিযুক্ত।
২. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইসলামিক স্টাডিজ ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহে এবং ফাজিল, কামিল পর্যায়ে ত্রিশ পারা কোরআন ও সিহাহ সিত্তাহর হাদীসের পূর্ণাঙ্গ এবং ফিকহের বিষয়াদি বৃহৎ কলেবরে সাজানোর ব্যবস্থা করা।
৩. কাওমী ও আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের পিটি আই, বি এড ও এম এড এর মত ট্রেনিং সিস্টেমের আওতায় এনে ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা।
৪. সাধারণ ও মাদ্রাসা সর্বয়স্তরের শিক্ষায় বাজেট বরাদ্ধ বাড়াতে হবে ও শিক্ষকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
৫. সাধারণ শিক্ষায় জাতীর জীবন পদ্ধতি ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে। শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনের সততার আবশ্যকতা এবং আখেরাতের জবাবদিহীতার প্রেষনা মূলক বিষয় সকল স্তরে প্রাসঙ্গিকভাবে আনতে হবে।
৬. ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন মাদ্রাসা শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কওমী মাদ্রাসার সনদের সরকারী স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা আবশ্যক। আলীয়া মাদ্রাসায় আরবী ভাষার প্রয়োগ বাড়াতে হবে।
৭. সর্বস্তরের শিক্ষায় প্রকৃত সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলন করা প্রযোজন। মূল্যায়ন পদ্ধতির ব্যাপক সংস্কার করে শিক্ষা গবেষনার আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন পদ্ধতির অনুসরণ জরুরী। জিপিএ ৫ বা সনদ অর্জনই মূখ্য নয় সর্বস্তরে এই মোটিভেশন চালু করা।
৮. সর্বস্তরের শিক্ষায় জ্ঞানের স্থানান্তর বিষয়টির আলোকে সিলেবাস রিভিউ করা। প্রতিটি শ্রেণীর পাঠ যাতে পূর্ববর্তী শ্রেণীর পাঠের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠে।
৯. শিক্ষার স্বাভাবিক ধারাই হবে নাস্তিকতার বিপরীত। জাতির প্রতি কমিটেড জনশক্তি তৈরী করতে হলে নাস্তিকতার বিনাশ ভাইরাস শিক্ষাঙ্গন হতে তড়াতে হবে।
১০. কারিগরী ধারার উচ্চ শিক্ষা সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। দক্ষ জনশক্তি তৈরীর জন্য সকল শিক্ষার প্রয়োগিক দৃষ্টিভঙ্গী জীবনমুখী করা আবশ্যক