আপনি পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পন করে আপনার জীবনকে আল্লাহর দেয়া কুরআন অনুযায়ী পুনগঠন ও পরিবর্তন না করেন, তাহলে কুরআন পাঠ আপনার কোন উপকারেই আসবে না । কর্মানুষ্ঠানের দৃঢ় ইচ্ছা ও প্রয়াস ব্যতীত হৃদয় ও আত্মার আবেদানুভূতি, কিংবা ভাবের উচ্ছ্বাস অথবা বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধি আপনার কোন কাজেই আসবে না। যদি আপনার কাজের উপর কুরআনের কোন প্রভাব ফুটে না ওঠে এবং কুরআন যে নির্দেশ দিয়েছে আপনি তা প্রতিপালন না করেন এবং যা নিষিদ্ধ করেছে তা বর্জন না করেন, তাহলে আপনি কুরআনের নৈকট্য লাভ করতে পারবেন না।
কুরআনের প্রতিটি পাতায় রয়েছে আত্মনিবেদনের আহবান, পরিবর্তন ও কর্মানুষ্ঠানের ডাক। প্রতিটি স্তরেই পাঠককে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রতিশ্রুতির মুখোমুখি হতে হয়। যারা কুরআনের আহবানে সাড়া দিয়ে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে ব্যর্থ হয়, তাদের কাফির, যালিম ও ফাসিক বলে ঘোষণা করা হয়েছে । দেখুন (সুরা আল-মায়িদা ৫:৪৪-৪৭)।
যাদেরকে কোরআন দেয়া হয়েছে অথচ তারা পড়ে না কিংবা তদনুযায়ী কাজ করে না, তাদেরকে বর্ণনা করা হয়েছে এমন গাধা হিসেবে, যারা ওজন বহন করে কিন্তু তারা জানে না কি বহন করছে ।
➡ রাসূল বলবে, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে।" (আল-ফুরকান ২৫:৩০)
কুরআনকে এড়িয়ে চলা, পরিত্যাগ করা এবং এক পাশে রেখে দেয়ার অর্থ হচ্ছে কুরআন না পড়া, না বুঝ, কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা না করা, এটাকে অপ্রাসংগিক এবং অতীতের বিষয় বলে মনে করা।
কুরআন পাঠ কর, যাতে তুমি নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার সামর্থ্য অর্জন করতে পার। এটা যদি তোমাকে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত না রাখে, তাহলে বুঝতে হবে সত্যিকার অর্থে কুরআন পাঠ করাই হয়নি (তাবরানী)।
কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনার অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আপনার চারপাশের লোকদের নিকট কুরআনের বাণী পৌঁছানো। প্রকৃতপক্ষে যে মুহুর্তে মহানবী (সা) এর উপর প্রথম ওহী নাযিল হলো, তখনই তিনি তা তাঁর লোকদের কাছে পৌঁছানোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য অনুধাবন করেছিলেন। দ্বিতীয় ওহী আসলো এই নির্দেশসহ: জাগো এবং সতর্ক করো (আল-মুদ্দাসসির ৭৪:২)। অত:পর বিভিন্ন পর্যায়ে এটা নবী (সা) এর নিকট পরিস্কার করা হয় যে, কুরআন অন্যকে জানানো, শ্রবণ করানো তাঁর প্রাথমিক দায়িত্ব, তার জীবনের মিশন। দেখুন (আল-আনআম ৬: ১৯, আল-ফুরকান ২৫:১, আল-আনআম ১৯:৯৭, আল-আরাফ ৭:১৫৭)।
আমরা তাঁর অনুসারী হিসেবে, আল্লাহর কিতাবের অধিকারী হিসেবে আমাদের উপরও একই দায়িত্ব ও মিশন অর্পিত হয়েছে। কুরআন পাঠ মানেই হচ্ছে তা অন্যকে জানাতে বাধ্য, কুরআন শোনার অর্থ হচ্ছে অন্যকে শুনাতে হবে। অবশ্যই আমাদের এটা মানবজাতিকে জানাতে হবে এবং কুরআনকে গোপন রাখা যাবে না।
➡"এই আহলে কিতাবদের সেই ওয়াদা স্মরণ করিয়ে দাও, যা আল্লাহ তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। তা এই যে, তোমাদেরকে কিতাবের শিক্ষা ও ভাবধারা লোকদের মধ্যে প্রচার করতে হবে, এটা গোপন করে রাখতে পারবে না। কিন্তু তারা কিতাবকে পিছনের দিকে ফেলে রেখেছে এবং সামান্য মূল্যে তাকে বিক্রয় করেছে, তারা যা করছে, তা কতই না খারাপ কাজ।" (সুরা আল-ইমরান ৩:১৮৭)
যদি আপনার হৃদয়ে এবং হাতে একটি প্রদীপ থাকে, তা অবশ্যই আলো বিচ্ছুরিত করবে। আপনার অন্তরে যদি আগুন থাকে, তা অবশ্যই প্রজ্বলিত হবে। সামান্য দুনিয়াবী স্বার্থে যারা তা করে না, প্রকৃতপক্ষে তারা আগুন দিয়ে তাদের পেট ভর্তি করছে।
➡"বস্তুত যারা আল্লাহর দেয়া কিতাবের আদেশ-নিষেধ গোপন করে এবং সামান্য বৈষয়িক স্বার্থের জন্য তাকে বিসর্জন দেয়, তারা মূলত: নিজেদের পেট আগুনের দ্বারা ভর্তি করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ কখনই তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র বলেও ঘোষণা করবেন না। তাদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে।" (আল-বাকারা ২: ১৭৪) এবং তারা আল্লাহর অভিশপ্ত হওয়ার উপযোগীঃ
➡নিশ্চয় যারা গোপন করে সু-স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও হিদায়াত যা আমি নাযিল করেছি, কিতাবে মানুষের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর, তাদেরকে আল্লাহ লা‘নত করেন এবং লা‘নতকারীগণও তাদেরকে লা‘নত করে। (আল-বাকারা ২:১৫৯)
➡"অবশ্য যারা এই অবাঞ্চিত আচরণ থেকে বিরত হবে ও নিজেদের কর্মনীতির সংশোধণ করে নিবে এবং যা গোপন করেছিলো তা প্রকাশ করতে শুরু করবে, তাদেরকে আমি মাফ করে দিব, প্রকৃতপক্ষে আমি ক্ষমাশীল, তওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু।" (আল-বাকারা ২:১৬০)
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখুন আজকের মুসলমানদের প্রতি তাকিয়ে দেখুন। কেন কোটি কোটি লোক রাত-দিন কুরআন পাঠ সত্ত্বেও আমাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয় না? হয় আমরা কুরআন পড়ি এবং তা বুঝি না, অথবা যদি আমরা বুঝি, তা আমরা গ্রহণ করি না এবং তদনুযায়ী কাজ করি না, অথবা সম্পূর্ণটাই যখন পড়ি এবং অংশ বিশেষ পালন করি ।
আল্লাহ্ বলেন , ➡"তাদের মধ্যে আরেকটি দল আছে, যারা উম্মী, আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই নেই। নিজেদের ভিত্তিহীন আশা-আকাংখা ও ইচ্ছা-বাসনাই তাদের একমাত্র সম্বল এবং অমূলক ধারণা-বিশ্বাস দ্বারা তারা পরিচালিত হয়। তাই সেই সব লোকের ধ্বংস নিশ্চিত, যারা নিজেদেরই হাতে শরীয়তের বিধান রচনা করে এবং তারপর লোকদের বলে যে, এর বিনিময়ে তারা সামান্য স্বার্থ লাভ করবে। বস্তুত: তাদের হাতের এই লিখনই তাদের ধ্বংসের কারণ এবং এর সাহায্যে তারা যা কিছু উপার্জন করে, তা তাদের ধ্বংসের উপকরণ।দেখুন (সুরা আল-বাকারা আয়াতঃ ৭৭-৭৮)
কুরআনের উপর আমরা যত পাণ্ডিত্যই অর্জন করি না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা তা মেনে না চলবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের পূর্ণ অর্থ ও সঠিক তাৎপর্য বুঝতে এবং আবিস্কার করতে আমরা সফল হতে পারবো না।
যখন আপনি নিজেই কুরআনের দাওয়াত দিতে শুরু করবেন মানুষকে আল্লাহর দিকে । দেখবেন বদর ও উহুদ থেকে শুরু করে হুনাইন ও তাবুকের মনযিলও আপনার সামনে এসে যাবে। আপনি আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মুখোমুখি হবেন। মুনাফিক ও ইয়াহুদীদের সাক্ষাতও পাবেন। ইসলামের প্রথম যুগের উৎসর্গিতপ্রাণ মু'মিন থেকে নিয়ে দুর্বল হৃদয়ের মু'মিন পর্যন্ত সবার সাথেই আপনার দেখা হবে।
এই পথে ফুটে উঠবে এক অভিনব দৃশ্য। এর যতগুলো মনযিল অতিক্রম করতে থাকবেন, তার প্রতিটি মনযিলে কুরআনের কিছু আয়াত ও সূরা আপনা-আপনি আপনার সামনে এসে যাবে। আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে।
বইটি কিনতে চাইলে( রকমারিতে) >> Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:১১