কুরআনে সুরা আল-ফাতিহায় আল্লাহ আমাদের الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ [সিরাত্বোল্ মুস্তাকিম্] তথা সরল পথ চাইতে বলেছেন।
صِرَاطٌ সিরাত্ মানে পথ, পন্থা, রাস্তা। مُسْتَقِيمٌ মুস্তাকিম্ মানে সহজ, সরল, সোজা, الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ [সিরাত্বোল্ মুস্তাকিম্] মানে সহজ পথ, সরল পথ, সোজা পথ।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ
আমাদেরকে সরল-সঠিক সঠিক পথ দেখান। তাদের পথ, যাদেরকে আপনি অনুগ্রহ দান করেছেন। আল-ফাতিহা আয়াত ৬-৭
➡কোনটি সরল পথ?
আল্লাহ্ বলেন,
➡হে আদমের সন্তানেরা, আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দেইনি? তোমরা শয়তানের এবাদত করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু আর আমারই এবাদত কর, এটাই সরল পথ।সুরা ইয়াসীন আয়াত ৬০-৬১।
আরও দেখুনঃআল কোরআন- আয্-যুখরুফ আয়াত ৬৪, আলে‘ইমরান আয়াত ৫১, সুরা মারইয়াম আয়াত ৩৬, আয্-যুখরুফ আয়াত ৬১।
➡ কিভাবে সরল পথ পাব?
আল্লাহ্ বলেন ,
নিশ্চয়ই এই কুরআন সেই দিকে পথ দেখায় যা সবচেয়ে সরল আর যে মুমিনগণ সৎকাজ করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয়, নিশ্চয়ই তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। সুরা আল-ইস্রা, ১৭/৯। আরও দেখুন- সুরা আলে‘ইমরান, ৩/১০১
➡নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে একটি উজ্জল নূর (জ্যোতি) ও একটি স্পষ্ট কিতাব এসেছে। তা দিয়ে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন, যারা তাঁর সন্তুষ্টির অম্বেষণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করেন আর তাদেরকে সরল-সঠিক পথের দিকে পরিচালিত করেন।সুরা আল-মায়িদাহ, ৫/১৫-১৬
➡সুতরাং আল্লাহ যাকে সঠিক পথ দেখাতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে প্রশস্ত করে দেন, এবং যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার বক্ষকে সঙ্গীর্ণ-সঙ্কুচিত করে দেন, যেন সে আকাশের মধ্যে আরোহণ করছে, এইভাবেই যারা ইমান আনে না তাদেরকে আল্লাহ অপবিত্র রাখেন। আর এই পথ হল তোমার রবের সরল পথ; আমি আয়াত সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেছি সেইসব লোকদের জন্য যারা উপদেশ গ্রহন করে। তাদের জন্যেই তাদের রবের নিকটে রয়েছে শান্তির আবাস এবং তিনি তাদের অভিভাবক, তাদের আমলের (কর্মের) কারণে। আল-আন‘আম, ৬/১২৫-১২৭
➡ যাদেরকে আল্লাহ সরল পথে পরিচালিত করেছেন
আল্লাহ্ বলেন , নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিলেন এক উম্মত, একনিষ্ট আল্লাহর অনুগত এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি তাঁর (আল্লাহর) অনুগ্রহের প্রতি শোকরকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন ও সরল পথে পরিচালিত করেছিলেন। আমি তাঁকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করেছি আর নিশ্চয়ই পরকালেও সে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত। আন্-নাহ্ল, ১৬/১২০-১২২
➡ যারা ঈমান এনেছে ও নিজ ঈমান যুলূম দ্বারা মিশ্রিত করে নাই, তাদের জন্যেই রয়েছে নিরাপত্তা আর তারাই সরল পথপ্রাপ্ত। আমি এই দলীল, যা ইব্রাহীমকে দিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের মোকাবিলায়; আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উঁচু করি; নিশ্চয় আপনার রব প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। এবং আমি তাঁকে (ইব্রাহীমকে) দান করেছি ইসহাক এবং এয়াকুব; প্রত্যেককেই আমি পথ দেখিয়েছি আর এর পূর্বে আমি নূহকেও পথ দেখিয়েছি এবং তাঁর বংশধরদের মধ্য হতে দাউদ, সুলাইমান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারুনকে আর এই ভাবেই আমি (মুহসেনিন) নেকলোকদেরকে প্রতিদান দেই। আর যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলিয়াসকে; প্রত্যেকেই নেকলোকদেরকে অন্তর্ভুক্ত। আর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা’, ইউনুস, লূতকে এবং প্রত্যেককেই আমি সারা বিশ্বের লোকদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। আর তাদের পিতৃপুরুষ, তাদের বংশধর আর তাদের ভ্রাতাদের মধ্য হতে আর আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি ও তাদেরকে সরল পথের দিকে পরিচালিত করেছি। এটি আল্লাহর পথ; তিনি যাকে ইচ্ছা তার বান্দাদের মধ্য হতে এই সরল পথে পরিচালিত করেন; আর তারাও যদি শিরক করত, যা আমলসমূহ (কর্মসমূহ) তারা করেছিল, তা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যেত। আল-আন‘আম, ৬/৮২-৮৮
আরও দেখুন আল কোরআনে- আস-সাফফাত, ৩৭/১১৮। আল-আন‘আম, ৬/১৬১। ইয়া-সীন, ৩৬/৩-৪। আয-যুখ্রুফ, ৪৩/৪৩। হূদ, ১১/৫৬। আল-ফাত্হ, ৪৮/১-২। আল-ফাত্হ, ৪৮/২০
➡ যাদের আল্লাহ সরল পথ দেখাবেন
আল্লাহ্ বলেন , আর অবশ্যই আমি তাদেরকেই সরল পথে পরিচালিত করি, যারা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে অতঃপর তারা থাকবে ঐসব লোকদের সাথে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, (তারা হল) নবীগন, সত্যবাদীগণ, শহীদগন ও সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে; আর সাথী হিসেবে তারা কতইনা উত্তম! এটাই হল আল্লাহর অনুগ্রহ আর আল্লাহর জ্ঞানই যথেষ্ট। আন-নিসা, ৪/৬৮-৭০
➡অতঃপর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাকে আঁকড়ে ধরেছে তিনি অবশ্যই তাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহে প্রবেশ করাবেন এবং তাঁর দিকে সরল পথ দেখাবেন। আন-নিসা, ৪/১৭৫
➡ আর এটা এ জন্যে যে, যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তারা যেন জানে, এটা আপনার রবের পক্ষ থেকে সত্য, অতঃপর তারা যেন এতে বিশ্বাস আনে ও তাদের অন্তরসমূহ যেন এর প্রতি অনুগত হয় আর নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসকারীদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। আল-হাজ্জ, ২২/৫৪
➡ সরল পথ পাবার দু‘আ
আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন, যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়। আল-ফাতিহা, ১/৬-৭
➡ আল্লাহর দেওয়া উপমা
আর আল্লাহ উপমা পেশ করেছেন, দু’জন ব্যক্তি, তাদের একজন বোবা, যে কোন কিছুর উপর ক্ষমতা রাখে না এবং সে তার অভিভাবকের উপর বোঝা। তাকে যেখানেই পাঠানো হয়, কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সে আর ঐ ব্যক্তি কি সমান, যে ন্যায়ের আদেশ করে এবং রয়েছে সরল পথের উপর? আন্-নাহ্ল, ১৬/৭৬
যে ব্যক্তি উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে, সেই কি পথপ্রাপ্ত, নাকি সেই ব্যক্তি পথপ্রাপ্ত, যে সোজা হয়ে সরল পথে চলে? আল-মুল্ক আয়াত ২২
বইটি কিনতে চাইলে( রকমারিতে) >> Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:৫১