কেউ কেউ বলে থাকেন, “Let’s Hate Bangladesh.” এহেন বক্তব্যের হেতু জানতে চাইলে তারা বলেন, “একজন সন্তান তখন তাঁর মাকে অভিশাপ দেয় যখন তাঁর মা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।
তাদের এ অযৌক্তিক বক্তব্যের কারণ হিসেবে তারা বলেন, “যে দেশে একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে দেশপ্রেমিক হিসেবে সম্মান দেয়া হয়, সেই দেশে আমরা বাস করছি। যে দেশের সরকার তাঁর জনগণকে সন্মান দেখাতে জানে না, যে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই চলে দুর্নীতি, যে দেশে চাকরিতে কোটা সৃষ্টি করে দেশের গরীব মেধাবিদের বঞ্চিত করা হয়, যেখানে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের নাম, Least development country এর তালিকায়, অথচ তারপরেও সরকার আমাদের মিথ্যা গল্প শোনায় “বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ” বলে, সেই দেশের কিভাবে উন্নতি হবে? স্বাধীনতার পর আমরা কতটুকু উন্নতি করার কথা আর কতটুকু উন্নতি করেছি ?
তারা গলার রগ ফুলিয়ে আমাদের প্রশ্ন করেন, “এক বার চিন্তা করে দেখুন, আপনি নিজে কি খাচ্ছেন? ফরমালিন। আপনি নিজে কোন দেশী পন্য বেশি ব্যবহার করছেন? আপনি বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল কয়টা দেখেন আর হিন্দি সিরিয়াল কতক্ষন দেখেন? আপনার পরিহিত পোশাকে কি আপনার জাতীয়তা প্রকাশ পাচ্ছে?
এসব প্রশ্নের জবাবে বলছি, ফরমালিন খেলেও আমার মাথাটা এতটা বিগড়ে যায় নি যে নিজের মাকেই ঘৃণা করতে শুরু করব। আর তাই আমি আমার দেশীয় পণ্যই বেশি ব্যবহার করি। আমি আমার দেশের টিভি চ্যানেলই বেশি দেখি। আমি কখনই হিন্দি সিরিয়াল দেখি না কারণ আমার এ যাবতকাল বয়সে কোন হিন্দি সিরিয়ালেরই সামর্থ্য হয় নি আমাকে আকৃষ্ট করবার। আমি আমার দেশীয় পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য এবং গর্ব বোধ করি। আমার প্রিয় পোশাক শাড়ি।
এবারে বক্তারা উপহাস করে বলেন, আপনাকে একলা দিয়ে ত আর দেশ চলবে না!
এসব বক্তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমি জানি আমার একার প্রচেষ্টায় দেশের তেমন কিছু উন্নতি হবে না। তাই ত আমি আপনাকেও আমার সাথে চাইছি। “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে......” কিংবা “বিন্দু বিন্দু বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল......” এসব নিশ্চয় আপনার জানা আছে।
আপনারা ব্যভিচারিণী অপবাদে দেশমাকে অপমান-অশ্রদ্ধা করছেন। আমার বাংলা মা কখনোই এমন অপকর্মে লিপ্ত হয় নি। আপনাদের যুক্তিগুলো সম্পূর্ণ অন্তঃসারশুন্য।
আপনি যেসব যুক্তির উল্লেখ করেছেন সেগুলো সবই একদল নরপশুর ঘৃণ্য অপরাধের তালিকা। আমার বাংলা মাকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে চলেছে ওই সব কুলাঙ্গার শয়তানেরা আর আপনি একে ব্যভিচারের সাথে তুলনা করছেন? মায়ের লজ্জায়-অপমানে ব্যথিত না হয়ে, মায়ের লজ্জা আর অপমানের গ্লানিকে মুছে ফেলার চেষ্টা না করে, প্রতিশোধের চিন্তা না করে, এসব পশুদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে, মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে বরং অকৃতজ্ঞের মত মাতৃধর্ষণের কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করছেন এবং মাকেই উলটো ব্যভিচারিণী হিসেবে দুষছেন? এ যেন ঠিক ধর্ষকের শাস্তির ব্যবস্থা না করে, ধর্ষণের প্রতিকার না করে উলটো ধর্ষিতাকেই দোষারোপ করে লজ্জায় ফেলে দিয়ে তার অপমানের জ্বালা আরও বাড়িয়ে দেয়া। এ কেমন সন্তান আপনি?
আপনার মত যারা মায়ের স্তন্যপানের পর উলটো মাকেই ঘৃণা করে, অভিশাপ দেয়, সেসব কুলাঙ্গারদেরকেই কবি আব্দুল হাকিম বলেছেন, “ শেকড়হীন পরগাছা । আপনাদের জন্যই এই লাইনটি- “সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি ।
আরে আপনি-আমি-আমরা আমাদের মাকে অভিশাপ দেব কি, মায়ের অভিশাপেই ত বরং আমাদের জর্জরিত হওয়া উচিত। কারণ আমরা মায়ের কুলাঙ্গার সন্তান। সমস্ত ব্যর্থতার দায় আমাদের, মায়ের নয়। আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত।
আমাদের মা কাঁদছেন অঝোরে, এত ব্যথা সয়েও তিনি ঠিকই আমাদের তাঁর বুকে আগলে রেখেছেন, এতকিছুর পরেও তিনি আমাদের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন, মাতৃস্নেহে লালন করছেন। তিনি বীরাঙ্গনা, তিনি মহীয়সী। আমরা আমাদের দেশ মাকে নিয়ে গর্ব করি, অহংকার করি, মাকে অভিশাপ দেবার ধৃষ্টতা দেখানোর স্পর্ধা করতে পারি না।
তাই মাতৃভূমিকে নয়, কুলাঙ্গার নরপশুগুলোকে ঘৃণা করুন। পারলে এই পিশাচগুলোর নোংরা থাবা থেকে জননীকে বাঁচানোর চেষ্টা করুন, আর যদি তা নাই পারেন তাহলে অন্তত অবনত মস্তকে মায়ের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করুন, “ মাগো! আমরা তোমার ব্যর্থ সন্তান। সারাজীবন কেবল তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা নিয়েই গেলাম, তোমার জন্য কিছুই করতে পারলাম না, মা। আমাদের ক্ষমা কর মাগো।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৫২