দুপুর ৩টা
১২ মার্চ ২০১৮
ক্লাস শেষে মোবাইল ডাটা অন করতেই টুংটাং শব্দে নোটিফিকেশন আসতে শুরু করলো। নেপালের ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে ল্যান্ডিংয়ের সময় ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের প্লেন ক্র্যাশ! প্লেনে যাত্রী ছিলো ৭১ জন! ৭১টা তাজা প্রাণ! পুরো খবরটা শেষ করতে পারি নি। কাঁপা হাতে নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দোয়া করছিলাম যেন যাত্রীরা বেঁচে যান। কিন্তু না, কিছুক্ষণ পর আবার যখন কৌতুহলবশত আপডেট নিতে ঢুকলাম তখন থেকেই বাড়ছিলো হু হু নিহতের সংখ্যা!
২০০৯ সালের কথা মনে পড়ছিল। নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করা ইউএস এয়ারলাইনসের ১৫৪৯ বিমানটির মতো আরেকটি অবিস্মরণীয় ঘটনা দেখার অপেক্ষায় বসে ছিলাম। কিন্তু না, ক্যাপ্টেন সালেনবার্গারের মতো নায়ক হতে পারেন নি আবিদ সুলতান কিংবা পৃথুলা রশিদরা। তবে তাঁদের চেষ্টার কমতি ছিলো না। তাঁদের ভুল ছিলো জিততে না পারা। ওদেশে যেখানে হাডসনের ঘটনা নিয়ে 'Sully' নামে হলিউডে সিনেমা বানাচ্ছে, প্রতিবছর স্মৃতিচারণ করছে সেখানে আমরা নিজদেরকেই টেনে নিচে নামাচ্ছি।
ভুয়া খবর শেয়ার দেওয়া দিয়ে শুরু। কেউ বেঁচে আছেন, কেউ বেঁচে নেই, কেউ সুস্থ আছেন তা না জেনে ঘরে বসেই সাংবাদিক বনে গেলো সবাই। কিছুক্ষণ পরই দুইদিন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি আর ডিসকভারি চ্যানেলে দেখার অভিজ্ঞতা নিয়েই সবাই সংবাদিক থেকে হয়ে গেলো এয়ারক্র্যাশ স্পেশালিস্ট। নিজেদের টেনে হিঁচড়ে আরো নিচে নামালাম কো পাইলট হিসেবে পৃথুলা রশীদকে দিয়ে। নারী কেন পাইলট হবে? তার জন্যই এ দূর্ঘটনা হয়েছে বলেও দোষ চাপিয়ে দিলাম। কেউ পাইলট আবার কেউ নেপালের এয়ার ট্র্যাফিককে গালাগালি করে মন শান্ত(!) করলাম।
এটাই আমাদের আসল চেহারা। ভালোমানুষের মুখোশ পরে থাকা লোকজনদের মুখোশ খসে পড়ার একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে নেপাল দুর্ঘটনা। এ সমাজ তোমাদের সম্মান দিতে তো নারাজ, বরং নোংরামি করতেও দ্বিধা করছে না।ওপারে ভালো থেকো তোমরা। পারলে আমাদের ক্ষমা করো।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৯