somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআন-হাদীছের আলোকে শবে বরাত - পর্ব ১০

০৭ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৫:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

بسم الله الرحمن الرحيم

মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ

হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ২

গত পর্বে আমরা হাদীস শাস্ত্রের কিছু নীতিমালা সম্পর্কে আলোকপাত করেছিলাম।

এ পর্যায়ে সাহাবায়ে কেরাম (রঃ) থেকে শবে বরাত সম্পর্কিত বর্ণিত হাদীছগুলোর মূল বক্তব্য ( متن ) এবং সেগুলোর সূত্র ( سند ) সম্পর্কে আলোচনা পর্যালোচনা আমরা সবিস্তারে উপস্থাপন করছি।

প্রথম হাদীছঃ ( حسن لذاته ) (হাসান লিযাতিহী)

হযরত মু’আয ইবনু জাবাল (রঃ) রসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা শা’বান মাসের পনের তারিখ রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে সকলকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া।

আলোচ্য হাদীছটি

১। ইমাম তাবরানী আল-কাবীরে এবং আল-আওসাতে
২। ইমাম ইবনে হিব্বান সহীহ ইবনে হিব্বানে
৩। ইমাম বায়হাকী শুআবুল ঈমানে
৪। হাফেয আবু নুআইম তার হিলয়া গ্রন্থে
৫। হাফেয হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদে

সংকলন করেছেন।

হাদীছটির সনদ পর্যালোচনাঃ

ইবনে হিব্বানের সূত্রে এই হাদীছে দশজন বর্ণনাকারী রয়েছেনঃ

১। মুহাম্মদ বিন আল মাআফী

তিনি সকলের নিকট নির্ভরযোগ্য।

( দেখুন কিতাবুছ ছেকাত )

২। ইবনে কুতায়বা

তিনি মুহাদ্দিছীনের দৃষ্টিতে ثقه ছিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য।

( দেখুন আল আনসাব )

৩। হিশাম ইবনে খালিদ

তার ব্যাপারে সমকালীন হাদীছ পর্যালোচক শুআইব আল আরনাউত বলেনঃ

“ তিনি নির্ভরযোগ্য, প্রচুর ছিক্বাহ রাবীগণ তাঁর নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন,

ক) আবু আলী আল হায়্যানী
খ) ইমাম যাহাবী

প্রমুখ তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

গ) ইবনে হিব্বান কিতাবুছ ছিক্বাতে বলেন, কোন সমালোচনা আমার জানা নেই। ”

( তাহরীরঃ খ-৪, পৃ-৩৯ )

৪। উতবা বিন হাম্মাদ

এর সম্পর্কে হাদীছ পর্যালোচকগণ বলেছেনঃ

ক) হাফেয বলেনঃ তিনি সত্যবাদী।

খ) আবু আলী নিসাপুরী এবং খতীব বাগদাদী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্য।

গ) ইবনে হিব্বান তাঁকে কিতাবুছ ছিক্বাতে উল্লেখ করেছেন।

ঘ) শুয়াইব আরনাউত তাঁকে ছিক্বাহ বলেছেন।

তাঁর থেকে অসংখ্য ছিকাহ মুহাদ্দিস হাদীছ নিয়েছেন।

( দেখুন তাহরীরঃ খ-২, পৃ-৪২৯ )

৫। আলআওযায়ী

তিনি সর্বসম্মতিক্রমে সুখ্যাত ইমাম ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি।

( দেখুন আল জরহু ওয়াততাদীল )

৬। আব্দুর রহমান ইবনে ছওবান।

তাঁর ব্যাপারে হাদীছ পর্যালোচকদের কিছু সমালোচনা থাকলেও তাঁর ব্যাপারে শায়খ আরনাউত্ব সুস্পষ্টভাষায় বলেন,

“ তিনি সত্যবাদী, তাঁর বর্ণিত হাদীছ গ্রহণযোগ্য কেননা

ক) আবু হাতিম
খ) দুহাইম
গ) আব্দুর রহমান বিন সালেহ আমর বিন আলী

প্রমুখ ثقه ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন।

ঘ) ইবনে হিব্বান তাঁকে কিতাবুছ ছিকাতে উল্লেখ করেছেন।

ঙ) শায়খে বোখারী আলী ইবনিল মাদীনী ইমাম আবু যুরআহ
চ) ইমাম আবু দাউদ আল আজলী
ছ) ইয়াকুব ইবনে শাহীন

প্রমুখ তাঁর হাদীছ গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে “ কোন অসুবিধা নেই ” বলে মন্তব্য করেছেন। ”

( দেখুন তাহরীরঃ পৃ – ২/ ৩১০ )

৭। ছাবেত ইবনে ছওবান

তিনি সর্বসম্মতিক্রমে ছিক্বাহ নির্ভরযোগ্য।

( দেখুন আততাকরীবঃ ৮১১)

৮। ইমাম মাকহূল

তিনি প্রসিদ্ধ ইমাম ও ছিকাহ হওয়ার মধ্যে কারো দ্বিমত নেই।

তাঁর ব্যাপারে ইবনু হাজার বলেনঃ

“ নির্ভরযোগ্য তবে ইরসাল বেশি করতেন। ”

( উস্তাদের নাম বিলুপ্ত করে তার উপরস্ত ব্যক্তি থেকে হাদীছ বর্ণনা করাকে ইরসাল বলে। )

৯। মালেক ইবনে ইখামের

তিনি সর্বসম্মতিক্রমে ছিক্বাহ।

মুআয বিন জাবালের সঙ্গী। তবে রসূলের ইন্তিকালের পর ইসলাম গ্রহণ করেন।

তাঁর ব্যাপারে “ আল-কাশেফ ” গ্রন্থে আছে,

“ তিনি হযরত মুআযের সঙ্গি, সাহাবী নন, নির্ভরযোগ্য। ”

( দেখুন কাশিফঃ ১/২৮১)

১০। হযরত মুআয (রঃ)

রসূল (সঃ) এর বিশিষ্ট ও সুপ্রসিদ্ধ ফক্বীহ সাহাবী।

( দেখুন আততাকরীব)

হাদীছটি সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণের অভিমতঃ

প্রথম অভিমতঃ

হাফিয নুরুদ্দীন আলী ইবনে আবু বকর আল হাইসামী (মৃঃ ৮০৭) তাঁর ‘ মাজমায়ুয যাওয়ায়িদ ’ নামক গ্রন্থে বলেছেন,

“ উক্ত হাদীছটি তাবরানী তাঁর ‘ আল-মুজামুল কাবীর ’ এবং ‘ আওসাত ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। উভয় গ্রন্থে রাবী ছিক্বাহ তথা বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।

( মাজমায়ুয যাওয়ায়িদঃ খ-৮, পৃ-৬৫ )

দ্বিতীয় অভিমতঃ

হাফিয ইবনে রজব আল হাম্বলী (রহঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রঃ) এর বর্ণিত এ হাদীছটি বর্ণনা করার পর বলেন, ইবনু হিব্বান হাদীছটিকে সহীহ (বিশুদ্ধ) আখ্যা দিয়েছেন। আর নির্ভরযোগ্যতার জন্য এটিই যথেষ্ট।

( লাতাইফ আল মারিফঃ ইবনে রজব, ১/২২৪ )

হাদীছ পর্যালোচক আদনান আবদুর রহমান বলেন, উক্ত হাদীছটি ফাযায়িলুল আওক্বাত অধ্যায়ে ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেছেন। আর তার সনদ হাসান।

তৃতীয় অভিমতঃ

আলোচ্য হাদীছ সম্পর্কে তাবরানী রচিত المعجم الكبير আলমু’জামিল কবীর গ্রন্থের মুহাক্কিক এবং বিশিষ্ট হাদীছ পর্যালোচক বলেনঃ

“ শবে বরাতের হাদীছটি বহু সূত্রে বর্ণিত আছে। যারা সূত্রগুলো সম্পর্কে অবগত তাদের নিকট হাদীছটি নিঃসন্দেহে সহীহ বলে পরিগণিত। বিশেষ করে যখন তার কিছু সূত্র حسن لذاته হাসান লিযাতিহী তথা সহীহ, যেমন হযরত মুআয (রঃ) ও হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছের সূত্রগুলো। ”

( দেখুনঃ আলমু’জামুল কবীরের টিকাঃ খঃ ২০, পৃঃ ১০৮ )

উপরোক্ত মন্তব্যের সারমর্ম হলো মু’আয (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত শবে বরাতের হাদীছটি মতনের দিক দিয়ে সহীহ, তবে তার সনদটি হাসান লিযাতিহী।

চতুর্থ অভিমতঃ

আলোচ্য হাদীছটির সূত্র পর্যালোচনা করে সময়কালের বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ নাসিরউদ্দীন আলবানী মন্তব্য করেন এভাবেঃ

“ হাদীছটি মূল মতনের (মূল বক্তব্য) দিক দিয়ে সহীহ। সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় জামাআত থেকে বিভিন্ন সূত্রে হাদীছটি বর্ণিত। যা পরস্পরকে শক্তিশালী করে তোলে। যে সকল সাহাবী থেকে হাদীছটি বর্ণিত তাঁরা হচ্ছেন

ক) মুআ’য ইবনে জাবাল (রঃ)
খ) আবু ছা’লাবাহ (রঃ)
গ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রঃ)
ঘ) আবু মূসা আশআরী (রঃ)
ঙ) আবু হুরায়রা (রঃ)
চ) আবু বকর সিদ্দীক (রঃ)

ছ) হযরত আয়েশা (রঃ)। ”


( সিলসিলাতুল আহাদিসা সহীহাঃ খ-৩, পৃ-১৩৮ )

উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-

সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম।

( সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠা )

পঞ্চম অভিমতঃ

ইমাম শামসুদ্দীন আয যাহাবী (রহঃ) হাদীছটি সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন হাদীছটির সনদে মাকহুল নামক বর্ণনাকারীর সাথে মালিক ইবনু য়ুখামির এর সাক্ষাৎ হয়নি। এ দৃষ্টিকোণে মু’আয ইবনু জাবাল (রঃ) এর হাদীছটি মুনকাতি’।

এ অভিমতের পর্যালোচনাঃ

১।

বস্তুত ইমাম আয-যাহাবীর এই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ সঠিক নয়। কারণ হাদীছটির সনদে সকল বর্ণনাকারীই ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য। তাছাড়া হাদীছটির সমর্থনে আরো হাদীছও পাওয়া যায় বিধায় হাদীছটি নিঃসন্দেহে সহীহ এর স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। যেমনটি দ্বিতীয় অভিমতের হাদীছ পর্যালোচক আদনান আব্দুর রহমান বলেছেন।

২।

উল্লেখ্য, মাকহূল রাবী যে মালেক ইবনু য়ুখামিরের সাক্ষাৎ পাননি যেমনটি যাহাবী বলেছেন তার সঠিক বিবরণটি এরকমঃ

“ আমার ধারণা হলো, মাকহুল আবু মুসলিম খাওলানী মাসরূক এবং মালেক ইবনে য়ুখামিরের সাক্ষাৎ পাননি। ”

বক্তব্যে বুঝা যায়, য়ুখামেরের সাক্ষাৎ না পাওয়া নিছক যাহাবীর ধারণা। তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন। তদুপরি মাকহূল সম্পর্কে এ ধরণের মন্তব্য অন্য হাদীছ পর্যালোচকগণ করেন নি।

উপরন্তু মাকহূল ছিলেন একজন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হাদীছ ও ফিক্বহের ইমাম। এসব কথাকে এক সাথে মিলিয়ে বিবেচনা করলে হাদীছ শাস্ত্রের নীতিমালা অনুযায়ী এমন নিছক ধারণা হাদীছটি সহীহ ও সঠিক হওয়ার বেলায় অন্তরায় হতে পারে না।

৩।

বিষয়টিকে সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন ইমাম ইবনে হাযম তাঁর ‘ আহকাম ’ গ্রন্থে, শায়খ তাহের আল জাযায়েরীর বরাতে। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপঃ

“ মুদাল্লিস দু’প্রকার। প্রথম প্রকারের মুদাল্লিস হাফিয আদিল নির্ভরযোগ্য হাদীছের ইমাম। তিনি কখনো হাদীছের সূত্রে ইরসাল করেছেন আবার কখনো পূর্ণ সূত্র উল্লেখ করেছেন। আবার কখনো সূত্রের কোন রাবীকে বাদ দিয়ে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। এসব কারণে এ প্রকারের মুদাল্লিসের বর্ণিত হাদীছ ক্ষতিকরও নয় এবং অগ্রহণযোগ্যও নয়। কেননা এটা তার দোষ-ত্রুটির অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু তাঁর যেসব হাদীছ (মুরসালান) বর্ণিত হয়েছে এবং সূত্রকে বাদ দেয়ার নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায় একমাত্র তাঁর সেসব হাদীছ অগ্রহণযোগ্য। এবং যে সমস্ত হাদীছের বেলায় কোন রাবী বাদ দেয়ার নিশ্চিত প্রমাণ নেই সেসব হাদীছ অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। অতএব, যেসব সূত্রে রাবী বাদ দেয়ার অকাট্য প্রমাণ নেই সেসকল হাদীছ গ্রহণ করা জরুরী। ”

( দেখুনঃ তওজীহুন নাযারঃ খঃ ২, পৃঃ ৫৭২ )

৪।

সুতরাং ইমাম মাকহূল শাম দেশের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও হাফিয। তাঁর ব্যাপারে হাফেয যাহাবী মন্তব্য করেছেন, “ আমার ধারণা মাকহুল য়ুখামিরের সাক্ষাৎ পাননি। ” শুধু এতটুকু কথার দ্বারা উল্লেখিত নীতিমালা অনুযায়ী আলোচ্য হাদীছটিকে অগ্রহণযোগ্য বলার অবকাশ নেই। বরং সহীহ এবং সঠিকই বলতে হবে।

৫।

সম্ভবত এ কারণেই বর্তমানযুগের কট্টরপন্থী হাদীছ পর্যালোচক নাসির উদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে حديث صحيح “ সহীহ হাদীছ ” বলে মত ব্যক্ত করেছেন।

৬।

ঠিক তাঁরই শিষ্য বর্তমান যুগের খ্যাতিমান হাদীছ পর্যালোচক শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্ব সহীহ ইবনে হিব্বান গ্রন্থের টীকায় এ হাদীছ সম্পর্কে “ হাদীছটি অন্যান্য হাদীছের সমর্থনে সহীহ এবং তার সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য ” বলে মন্তব্য করেছেন।

( দেখুন সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ১২/৪৮১ )

৭।

সঙ্গত কারণে শায়খ আলবানী মূল হাদীছের ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণার পর এভাবে মন্তব্য করেনঃ

“ নির্যাস কথা হলো, এ হাদীছটি তার সকল সূত্রগুলোর বিবেচনায় নিঃসন্দেহে সহীহ বলে সাব্যস্ত হয়। এর তুলনায় কম সংখ্যক সূত্র দ্বারাও হাদীছ সহীহ বলে সাব্যস্ত হয়। যদি কঠিন দুর্বলতা থেকে নিরাপদ থাকে। যেমনটি এ হাদীছের বেলায় রয়েছে। ”

( সিলসিলাতুল আহাদিসাস সহীহাঃ খ-৩, পৃ-১৩৮ )

মোদ্দা কথাঃ

মুআ’য বিন জাবাল (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত আলোচ্য হাদীছটির মূল বক্তব্য متن (মতন) নিঃসন্দেহে সহীহ এর অন্তর্ভুক্ত এবং হাদীছটির বিভিন্ন সূত্র حسن لذاته হাসান লিযাতিহী যা সহীহের অন্তর্ভুক্ত বটে।

যেমনটি মন্তব্য করলেনঃ

শায়খ আলবানী,
শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত,
ইমাম হায়ছামী,
ইমাম তাবরানী,
ইমাম ইবনে হিব্বান,
আদনান আব্দুর রহমান প্রমূখ মনীষী।

আহলে হাদীস/সালাফী ভাইদের কাছে প্রশ্ন ও দাওয়াতঃ

প্রথমত, উপরে বর্ণিত হাদীসটির সনদ নিজে থেকেই হাসান পর্যায়ের এবং মতন সহীহ পর্যায়ের।

দ্বিতীয়ত, হাদীসটির সমর্থনে আরও অনেক হাদীস থাকায় উসূলে হাদীসের নীতিমালা অনুযায়ী এই হাদীসটি সহীহের পর্যায়ে চলে আসে।

অনেক বড় বড় মুহাদ্দিসরাই এই হাদীসের তাহকীক করেছেন এবং একে সহীহ বলেছেন।

অন্যদিকে হাদীসের তাহকিক তথা বিচার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সালাফী/আহলে হাদীছ ভাইরা যার সবচেয়ে বেশি ভক্ত, যার কিতবাদি অনুবাদ করে আপনারা প্রচার করে থাকেন, সময়কালের বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ নাসিরউদ্দীন আলবানীও (রহঃ) শবে বরাতের এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন।

আবার তাঁরই শিষ্য বর্তমান যুগের খ্যাতিমান হাদীছ পর্যালোচক শায়খ শুয়াইব আল আরনাউত্বও এই হাদীসটিকে সহীহ এবং তার সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

তাই আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তাহলে কেন আপনারা বার বার বলেন যে, শবে বরাতের ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই ??

উপরন্ত আপনাদের জ্ঞাতার্থে আরও বলছি, আপনাদের সবচেয়ে বড় গণ্যমান্য ইমাম, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ)ও শবে বরাতের ফজীলত সংক্রান্ত হাদীস গুলোকে তাহকীক করেছনে এবং এর ফযীলতক্ব স্বীকার করেছেন।

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেনঃ

" এ রাতের ফজীলতে বেশ কিছু মারফু হাদীস এবং আছার বর্ণিত আছে যা প্রমাণ করে যে এ রাতটি ফযীলতপূর্ণ। পূর্ববর্তীদের কেউ কেউ এ রাতে বিশেষভাবে সালাত আদায় করতেন। ... ... ... যে মতের উপর আমাদের মাযহাবের বা অন্যান্য মাযহাবের বহু সংখ্যক বরং বেশিরভাগ আলেম রয়েছেন তা হলো এই রাতটি অন্যান্য রাতের উপর ফযীলত রাখে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এর স্পষ্ট কথার মাধ্যমে এটি জানা যায়। আর যেহেতু এ বিষয়ে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং পূর্ববর্তীদের আমল সেসকল হাদীসকে সত্যায়ন করে, এই রাতের কিছু ফযীলত সুনান ও মুসনাদ গ্রন্থসমূহতে উল্লেখিত রয়েছে তবে এ রাত সম্পর্কে কিছু জাল হাদীসও রয়েছে। "

( ইক্তিদাউস-সিরাত আল মুস্তাকীম )

আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যার এ উক্তি দ্বারা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়, তাবেঈন, তাবে তাবেঈন সহ সলফে সালেহীনরা অনেকেই এ রাতকে ফজীলতপূর্ণ হিসেবে রায় দিয়েছেন এবং এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করেছেন।

তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াজীতে বলেন,

" জেনে নাও শাবান মাসের মাঝ রাত সম্পর্কে প্রচুর হাদীস এসেছে যা একত্রে প্রমাণ করে যে বিষয়টির শরয়ী ভিত্তি রয়েছে। "

পরে তিনি একের পর এক বিভিন্ন রেওয়ায়েত উল্লেখ করে শেষে বলেনঃ

" অতএব এই সমস্ত হাদীস একত্রে তার বিরুদ্ধে দলীল যে দাবী করে শাবান মাসের মাঝ রাতের ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদীস প্রমাণিত হয়নি আর আল্লাহই ভাল জানেন। "

( তুহফাতুল আহওয়াজী )

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা এ রাত সম্পর্কে আরও বলেনঃ

" অতএব যদি কোন ব্যক্তি একা একা সালাত আদায় করে তবে তার পক্ষে একদল সালাফকে পাওয়া যাবে এবং তার পক্ষে দলীলও রয়েছে । "

( মাজমুআয়ে ফাতওয়া )

এখন সালাফী বা আহলের হাদীসের ঐসব বন্ধুদের প্রতি দাওয়াত রইল, আপনারা আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ), শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের (রহঃ) অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?

আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

শেষ কথাঃ

যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত।

যদি অন্যান্য রাতের উপর এ রাতের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নাই থাকবে, তবে বিশেষভাবে এই রাতের কথা উল্লেখ করারই বা কি প্রয়োজন ? শুধু এই রাতকে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মাধ্যমেই অন্যান্য রাতের উপর এর বিশেষত্ব প্রমাণিত হয়।

উপরের হাদীস থেকে স্পষ্টতই এটা প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রে আল্লাহ পাক তাঁর বিপুল সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করেন। যে রাত্রে আল্লাহ বিশেষভাবে ক্ষমার ওয়াদা করেছেন, সেই রাতে কাকুতি মিনতি করে তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে হবে এটাই স্বাভাবিক। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা বা যে কোন দোয়া করার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল কোন ভাল আমলের মাধ্যমে দোয়াটিকে শক্ত করা যাতে দ্রুত কবুল হয়। বুখারী শরীফের তিন জন যুবকের কাহিনী হতে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যারা পাহাড়ের গুহাতে আটকা পড়ে গিয়েছিল। পরে একজনের পরামর্শে প্রত্যেকের ভাল আমল উল্লেখ করে দোয়া করলে আল্লাহ তাদের মুক্ত করেন। তাছাড়া অনেক হাদীসেই নফল নামায পড়ে দোয়া করা, কোরআন তিলাওয়াত করে দোয়া করা, জিকির আযকার করে দোয়া করা ইত্যাদির প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং মধ্য শাবানের এই রাতে আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষভাবে ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে সালাত, যিকির, কোরআন তিলাওয়াত করাও প্রমাণিত হয়।

এজন্যই বহু ইমামগণই এ রাতের নফল ইবাদত করাকে মুস্তাহাব বলেছেন এবং নিজেরাও বেশি বেশি ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন। যেমনঃ ইমাম শাফিঈ, ইমাম নববী, ইমাম বাযযার, ইমাম উকায়লী, ইমাম তিরমিযী (রহঃ) সহ আরও অনেকে যার বিবরণ সামনে আরও আসবে ইনশাল্লাহ।

অতএব, যারা এ কথা বলে থাকেন যে, শবে বরাতের কোন ভিত্তি নেই, এর ফযীলত নিয়ে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত নেই, তারা রসূলের (সঃ) হাদীসের নামে মিথ্যাচার করেন এবং উম্মতকে রসূল (সঃ) এর সুন্নত ও নেক আমল থেকে দূরে সরে রাখানোই তাদের মূল উদ্দেশ্য। তাদের এই হীন চক্রান্তকে আমরা ধিক্কার জানাই।

মনে রাখবেন, আল্লাহ পাক মিথ্যাবাদীদের উপর লানত দিয়েছেন। আজও তাই পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি দিয়েই শেষ করবঃ

لَعْنَةَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ

মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিশম্পাত। {সূরা আলে ইমরান-৬১}

তাই আসুন, আমরা শবে বরাত নিয়ে এখনও যারা ভুলের উপর আছি, তারা শবে বরাতের ফযীলত সম্পর্কিত হাদীস গুলোর সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নিয়ে এ ফযীলতপূর্ণ রাতটিতে ইবাদতের মাধ্যমে কাটায় এবং আল্লাহর কাছে নিজের গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি।

( চলবে ইনশাল্লাহ )

( পররর্তী পর্বঃ হাদীছের আলোকে শবে বরাত - ৩ )

৯ম পর্বঃ
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×