"++++++++++ ধর্মীয় ব্যাপারটা আপনার দৃষ্টি এড়ায়নি বলে।
জাফর স্যার(তিনি আমার শিক্ষক) যেভাবে ওই কলামে মুসলিমদের অনুশাসনকে শিবিরের আড়ালে আক্রমণ করেছেন,সেগুলো বাদ দিলে কলামটা ভালই ছিলো।কিন্তু তিনি প্রায়ই এই কাজটা করেন,কেন কে জানে।আমরা মুসলিমরাও বোধহয় 'শিবির হয়ে যাবো কিছু বললে'এই ভয়ে চুপ থাকি।
যেমন ধরুন,তিনি যদি '' যে বয়সে তাদের একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরি করার কথা, ষোলোই ডিসেম্বরে স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার কথা, পয়লা বৈশাখে রাজপথে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার কথা.. যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে..'' এই লাইনগুলোর সাথে লিখতেন,'যে বয়সে তাদের গরু খাওয়ার কথা,তারা তখন সেটা করেনা'...তাহলে কিন্তু ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের খারাপ লাগার কথা,তারা নিশ্চয় প্রতিবাদও করতেন..কারণ এটি তাদের অনুশাসন,নয় কি?
তাহলে আমাদের কেন খারাপ লাগেনা?আমাদের অনুশাসনকে আঘাত করলে আমরা কিছুই বলিনা কেন?আমরা ধর্মপ্রাণ নই?কেউ-ই কি নই??তাহলে মুসলিম নামটা সাথে কেন রাখা?গান,প্রভাতফেরী,ফুল,ডেটিং..আমাদের ধর্মের অনুশাসনের বিরোধিতা করছে,এটা মনে করলে শিবির হতে হবে কেন?এগুলো ছাড়া দেশকে ভালবাসা যাবেনা?আর এগুলো না করলেই শিবির হয়ে যেতে হবে??"
কেউ একজন ব্লগ লিখেছিলেন জনাব মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বহুল আলোচিত"তোমরা যারা শিবির করো" নিয়ে,সেখানে এই মন্তব্য করেছিলাম(কাল মনে হয়)।আমি ব্লগ লেখা শুরুও করেছিলাম এই টপিক নিয়ে,ছোট করে লিখেছিলাম,ভাল বাংলা টাইপ জানিনা বলে।যাই হোক,আমি ব্যাক্তিগতভাবে জাফর স্যারের অনেক বইয়ের ভক্ত কৈশোরে ছিলাম,এখনও আছি।সবার সবদিক ভাল হয়না,আমি ধরে নিয়েছি উনারও কিছু সমালোচনা করার মতো ইস্যু আছে।তবে উনার এই আর্টিকেল পড়ার পর কিছু প্রশ্ন,কিছু খটকা মন থেকে এখনও যাচ্ছেনা,তাই আবারও এই বিষয়ে একটু বিশদ লিখতে যাচ্ছি।আর লেখার আরেকটা কারণ হলো(প্রধান কারণ),আমি লক্ষ্য করেছি স্যারের কথার যারা বিরোধীতা করেছেন তারা সবাই বিএনপি/শিবির ঘেঁষা,যেটা খুবই বিরক্তিকর মনে হয়েছে।একই সাথে হতাশাজনকও মনে হয়েছে।
স্যার শিবিরের চরিত্র বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কিছু মুসলিম অনুশাসনের বিরোধিতা করে বসেছেন এবং সেটাই তার শিবির বিরোধী চমৎকার পোষ্টটিকে বাজে করে তুলেছে।উপরের কমেন্টে এইসব অনুশাসনের কথা লিখেছি,তাই আবার সেগুলোর উল্লেখে গেলামনা।কথা হলো এই লাইনগুলোর মাহাত্ম্য তিনি জানতেন,তাহলে কেন এগুলোর অবতারণা?লাইনগুলো ছাড়াই শিবির নামক ভন্ড/বাজে দলটির বহু সমালোচনা তিনি করতে পারতেন।ওদের রগ কাটার কথা বলতে পারতেন,ডেটিং কাপল-দের সাথে তাদের জঘন্য অন্যায় আচরনের বর্ণনা অনেক বিশদভাবে দেয়া যেতো..কিন্তু তা না করে তিনি যেসব বর্ণনা দিলেন তা আমার মতো হাজারো মুসলিমকে কুন্ঠিত হয়ে ভাবতে বাধ্য করলো,'আমিও তো এগুলো ধর্ম পারমিট করেনা মনে করে করিনা!তবে তো লোকে আমাকেও শিবির ভাবে!'এই দুঃখটা দেয়া কি জরুরী ছিলো স্যারের?
কেউ বলতে পারেন বটে,'উনি ধর্মের অত পরোয়া করেননা,তাই তিনি তাঁর মত প্রকাশ করেছেন,সেটা তিনি করতেই পারেন।আফটার অল আমরা বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাসী!'কিন্তু যে মত প্রকাশ সাধারণ মানুষের মনে ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত দেয়,তার প্রয়োজনীয়তা স্যারের মতো নন্দিত ব্যাক্তির কাছে কেন থাকবে?তাহলে কাল শিবিরের কীটেরা যদি অমুসলিমদের ধর্ম/অনুশাসন নিয়ে কিছু বলা শুরু করে,তবে সেটাকেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলা হবে!তখন কি হবে?দেশে রায়ট লেগে যাবেনা?যে ডাইভার্সিফাইড কালচারাল জাতির প্রবক্তাদের একজন বলে স্যারকে পছন্দ করি,সেই দীক্ষার কি হবে?সেই আধুনিক সমাজ মন্ত্রণার কথা তিনি ভুলে গেলেন যেখানে শীবসেনা বা তালেবানের জায়গা নেই,সকল ধর্মের/বিশ্বাসের মানুষের যেখানে নিজ ধর্ম পূর্ণ স্বাধীনতায় পালন করার কথা আর অন্যকে,অন্যের বিশ্বাসকে 'সম্মান'দেবার কথা?তিনি নিজেই নিজের স্বপ্নের/বক্তব্যের বিরোধী হয়ে গেলেননা?
আমি ব্যাক্তিগতভাবে গানকে ইসলামে নিষিদ্ধ মনে করিনা,শহীদ মিনার/প্রভাতফেরীকেও করিনা।তবে এগুলোর পক্ষে/বিপক্ষে বহু যুক্তি বহু স্কলাররা দিয়েছেন,তাই কোনটাকেই ফেলা যায়না।কেউ যদি এগুলোকে নিষিদ্ধ মনে করেন,তবে তার সাথে ঝগড়া করা মূর্থতা।সবাই এক মতে বিশ্বাসী না হলে ধর্ম অশুদ্ধ হযে যায়না।হাদিস(বুখারী,মুসলিম,আবু দাউদ) বলছে:
"If the Hakim (ruler or judge) made his Ijtihad or the extraction of the verdict from original sources of legislation and he reached the correct verdict he will get two rewards. And if he reached the wrong verdict he will only get one reward.”তাহলে দেখুন আপনার/আমার জন্য ব্যাপারটা কতখানি সোজা!আমাদের বুদ্ধিমত্তার এবং তাকওয়ার উপর ভিত্তি করে অন্যের বিশ্বাসের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে প্রখ্যাত স্কলারদের যে কাউকে এসব ব্যাপারে আমরা অনুসরণ করতে পারি।
এখন চলুন দেখি ইসলাম স্যারের উল্লেখিত অনুশাসন নিয়ে কি বলছে:
সহীহ মুসলিম,বুখারী ভল্যুম ২,বই ১৫,নাম্বার ৭০/৭২ হাদিসে বলা হচ্ছে গান নিষিদ্ধ নয়।আবার অন্য হাদিসে বলা হচ্ছে,
Narrated Abu 'Amir (raa) or Abu Malik Al-Ash'ari (raa) that he heard the Prophet (sallallaahu alayhi wa sallam) saying, "From among my followers there will be some people who will consider illegal sexual intercourse, the wearing of silk, the drinking of alcoholic drinks, and the use of musical instruments [ma'aazif] as lawful.(বুখারী, ভল্যুম ৭,বই ৬৯,নাম্বার ৪৯৪)
এখন বলুন,কেউ যদি ধর্মপ্রাণ হোন আর আল্লাহকে ভয় পেয়ে গান-ই না শোনেন,তবে তাকে রবীন্দ্র সংগীত না শোনার জন্যে কি দোষ দেয়া যায় নাকি এটাকে শিবিরের আচরণ বলে তাকে দুঃথ দেযা মানবিক?
এক্ইভাবে শহীদ মিনার/প্রভাতফেরীকে অনেক মুসলিম প্রতীকী মনে করে পছন্দ না-ই করতে পারেন।কিন্তু তার মানে কি তিনি পাকিস্তানের দালাল?দেশকে ঘৃণা করেন??তা কেন হবে?
"O Allah, do not make my grave an idol to be worshipped after me. Allah was very angry with people who took the graves of their Prophets as places of worship".( মালিক ৫৯৩,বুখারী ৩৭৬৫)
আর কিছু উল্লেখ নাই করলাম,শুধু এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে যদি কেউ বলেন আমি শহীদ মিনার/প্রভাতফেরীতে যাবোনা,তাহলে তাকে শিবির চরিত্রের সাথে একাত্ত বলা যাবে কি?তাতে কি এই হাদিসকে অসম্মান করা হবেনা?তিনি তাতে কি দেশদ্রোহী হয়ে যাবেন?
সবশেষে আসুন ডেটিং প্রসঙ্গে,বিয়ে বহিভূর্ত সম্পর্ক প্রসঙ্গে যেখানে কোন দ্বি-মত ইসলামে কোথাও কেউ পাবেননা।কুরআনই বলছে:৫:৫,২৩:৫-৭,২৪:৩০-৩১,৭০:২৯-৩০ আয়াতে।নবীও বলছেন:
"Not one of you should meet a woman alone unless she is accompanied by a relative (mahram)" (Bukhari/Muslim).
তাহলে ছেলে-মেয়েদের'সহজ-স্বাভাবিক ভালো লাগার'স্হান ইসলামে কোথায়?কেউ না মানেন,সেটা তার ব্যাপার,কিন্তু সেটাকে স্যারের মতো ব্যাখ্যা দিয়ে যে কুরআনকে/হাদিসকে ভয় পাচ্ছে তার চরিত্রকে শিবিরের চরিত্রের সাথে মিলিয়ে অপমান করার যৌক্তকিতা কোথায়?
কেউ ডেটিং করছে কিনা সেটার তদারকির দায়িত্ব যেমন শিবিরের নয়,তেমনি ডেটিং-এর এবং বিয়ে বহিভূর্ত সম্পর্ক নিয়ে কারো ধর্ম নিষেধ করলে তার আচরণকে শিবিরের বলে তাকে/তার ধর্মকে অপমান করার অধিকার জনাব মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নয়,কারোরই নয়।আসলে শিবিরের যেমন অধিকার নেই ইসলামের মডারেট হবার নীতির লঙ্ঘন জঘন্যভাবে করে ডেটিং কাপলদের মারধর করার,বাজে কথা বলার,কারো রগ কেটে দেবার,তেমনি স্যারেরও অধিকার নেই ধর্মীয় অনুশাসন নিয়ে এভাবে অর্বাচীনের মতো কথা বলার..দুটোই এক্সট্রিমিজম!দুটোর কোনটারই জায়গা নেই সভ্য সমাজে।
শিবির গণনার বাইরে,তাদেরকে বলার কিছু নেই,বললেও'চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী'!তাই স্যারকে অনুরোধ করবো,বি মডারেট!আপনার লাখো ভক্তকে এক্সট্রিমিজম শেখাবেননা যা দেশকে সবার জন্যে/সকল ধরনের/বিশ্বাসের মানুষের বসবাস যোগ্য না করে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিবে।আপনি আরেকজনের বিশ্বাসকে নিয়ে 'মোকারি' করলে আরেকজন আপনারটা নিয়ে করবে,যা সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারেনা।
নীচের লিংক দেখতে পারেন:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://www.islamhelpline.com/node/5789
http://ibnfarooq.tripod.com/music.htm
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫২