শরদিন্দু বন্দোপাদ্ধায়ের ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজের “বহি-পতঙ্গ” নামক গল্পের কাহিনীকে অবলম্বন করে পরিচালক “অরিন্দম শীল” তৈরি করেছেন “হর হর ব্যোমকেশ”।
পুলিশ কর্মকর্তা ও বন্ধু পাণ্ডে সাহেবের নিমন্ত্রনে স্ত্রী সত্যবতী ও বন্ধু অজিতকে নিয়ে বানারাস বেড়াতে যায় ব্যোমকেশ। ঘটনাক্রমে বিহারের জমিদার দীপনারায়ন সিং-এর বাসায় দাওয়াত খেতে গেলে শুরু হয় একের পর এক দুর্ঘটনা। এর মাঝেই হঠাৎ খুন হয়ে যান জমিদার মশাই। ব্যোমকেশকে মধুচন্দ্রিমা রেখেই জড়িয়ে পড়তে হয় তদন্ত কাজে। বাকি গল্পটা সিনেমা দেখে জেনে নেয়াটাই ভালো হবে!
এর আগে ২০১০, ১২ এবং ১৫ সালে ব্যোমকেশের “আদিম রিপু”, “চিত্র চোর” ও “বেনীসংহার” গল্প তিনটি নিয়ে ছবি তৈরি করেন গায়ক এবং পরিচালক “অঞ্জন দত্ত”। সেখানে তিনি ব্যোমকেশের চরিত্রে আবীর চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আসেন। আর গল্পের বাকি দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য “সত্যবতী” আর “অজিত” চরিত্রের জন্য মনোনীত করেন “উষসী চক্রবর্তী” আর (সব্যসাচীর, তপসে)“শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়”-কে। এর বাইরেও কিছু দিন আগে ব্যোমকেশের প্রথম গল্প “সত্যান্বেষী” নিয়ে হিন্দিতে “ব্যোমকেশ বক্সী” নামে আরো একটি ছবি মুক্তি পায় যাতে অভিনয় করেন “সুশান্ত রাজপুত”। এই ছবি গুলিও ভালো হয়েছে।
বর্তমান ছবির পরিচালক অরিন্দম শীল ব্যোমকেশের জায়গায় আবীরকে অপরিবর্তিত রাখলেও পরিবর্তন এনেছেন বাকি দুই প্রধান চরিত্রে। তিনি এই দুই জায়গায় এনেছেন যথাক্রমে “ঋত্বিক চক্রবর্তী” ও “সোহিনী সরকার”-কে। তবে পাঠক এবং দর্শক হিসেবে বলবো, অঞ্জন দত্তের, অজিত অর্থাৎ “শ্বাশত” এই চরিত্রে বেশী মানানসই ছিল। অপরদিকে শরদিন্দুর বর্ণনায় আমরা সত্যবতীর যে রুপ দেখতে পাই অর্থাৎ শ্যামলা, সাধারন, লাবণ্যময়ী একটা মেয়ে। সেই হিসেবে বর্তমান নায়িকা “সোহিনী” পুরপুরি লেটার মার্ক পায়। সিনেমায় জমিদারের স্ত্রী “শকুন্তলার” ভূমিকায় “নুসরাত জাহান” অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
সত্যজিৎ রায় ফেলুদাকে তৈরি করেছিলেন “সউমিত্রকে” কল্পনা করে (ফিল্ম বানানোর কথা মাথায় রেখে)। কিন্তু শরদিন্দুর বেলায় তা হয়নি। তার এক সাক্ষাতকারে পড়েছিলাম তিনি নিজেকে কল্পনা করেই ব্যোমকেশকে তৈরি করেছেন। কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে তিনি আজ থেকে প্রায় ৮৪ বছর আগে (৭ই আষাঢ় ১৩৩৯) তার প্রথম প্রকাশিত লেখা “পথের কাটা”-তে ব্যোমকেশের যে বর্ণনা দিয়েছেন আবীরের সাথে তা হুবুহু মিলে যায় !
“হর হর ব্যোমকেশের” শিল্পী নির্বাচন, ক্যামেরা, এডিটিং, লোকেশন এক কথায় দুর্দান্ত। ছবির কস্টিউম ও মেকআপ আর্টিস্টদের অবশ্যই প্রশংসা করতে হয়। সেট ডিজাইন গুলিও চমৎকার ছিল। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সাথে নাচের কোরিওগ্রাফিটা অপূর্ব। সবগুলি চরিত্রই সুন্দর অভিনয় করেছে।
আসলে, ব্যোমকেশ বক্সী হচ্ছে এমন একটা গোয়েন্দা সিরিজ যার মাধ্যমে লেখক একটা সময়ের গল্প বলে গেছেন। শরদিন্দুর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুন হোল তার ভাষা। এতো সহজ সাবলীল যেন প্রতিটা কথাই চোখের সামনে ভেসে উঠে। সাধু এবং চলিত ভাষার মিশ্রনে তিনি এমন এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন যা একান্তই তার নিজস্ব। তার বেক্তিত্তের মতই স্বচ্ছ, পরিমিত ও সুন্দর।
ব্যোমকেশের একজন প্রথম শ্রেণীর ভক্ত হিসেবে চাওয়া থাকবে পরবর্তী সিনেমার কাহিনী যেন “দুর্গ রহস্য” গল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। একটা পুরনাঙ্গ সিনেমা তৈরির যাবতীয় রসদ এই গল্পটার মধ্যে আছে।
সবশেষে, যারা ডিটেকটিভ মুভি পছন্দ করেন অথচ এখনও “হর হর ব্যোমকেশ” দেখেননি, তাদের ছবিটি দেখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অবশ্যই ভালো লাগবে…
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ সকাল ১১:০৩