somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তামান্না তাবাসসুম
আমি খুব পজেটিভ মানুষ। যা আমাকে পোড়ায় তা নিয়ে মাঝে-সাঝে লিখি। তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে একটা উপস্থিত কবিতা লেখা প্রতিযোগীতায় পুরস্কৃত হওয়ার মধ্য দিয়ে কলম ধরার যাত্রা শুরু

বহুনির্বাচনী পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করলে বিঘ্নিত হবে অনেক শিক্ষার্থীর যথাযথ মেধা যাচাই

২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে প্রশ্ন-ফাঁস ইস্যুকে কেন্দ্র করে বহুনির্বাচনী পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে কথা উঠছে। "সেন্টার ফর এডুকেশনাল রিসার্চ" আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক নিয়ে গবেষনামূলক চমৎকার কিছু কাজ করছে। এ বিষয়ে সেখানকার বেশ কিছু লেখা পড়লাম। পড়ে মনে হলো, একজন ট্রেইনি টিচার হিসেবে আমিও কিছু লিখি।
বহুনির্বাচনী প্রশ্ন বাদ দিলে শিক্ষার্থীদের উপর কেমন প্রভাব পড়তে পারে এ নিয়ে এডুকেশনিস্টদের থিওরির কথাগুলো আমি সহজ ভাবে বলতে চাচ্ছি।

ফেসবুকে ইদানিং একটা কার্টুন চোখে পড়ছে। একজন শিক্ষক ‘বানর,মাছ হাতি,কুকুর এদের সবাইকে বলছে সবার জন্য একটি সমান ন্যায্য পক্ষপাতহীন পরীক্ষা হবে। পরীক্ষার বিষয় -গাছে ওঠা। এখন বোঝাই যাচ্ছে যে, এক্ষেত্রে বানরই প্রথম হবে। তার মানে তো এই না যে মাছ, হাতি এরা অযোগ্য। ঠিক তেমনি একটি ক্লাসে এক একটি বাচ্চার একেক ধরনের স্কিল থাকে। তাই সবাইকে একই পাল্লায় মাপা যায় না।

স্কুলেও তেমনি আমরা যদি আমাদের বাচাদের পরীক্ষা নিতে চাই তা হলেও একই ধরনের প্রশ্নে কখনো সেটা ভ্যালিড হবে না। পরীক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট বিষয় কতটুকু শিখতে, বুঝতে, প্রয়োগ করতে পারল সেটা যাচাই করা। একটি দুই ঘন্টার পরীক্ষা, যেখানে ১০ নাম্বারের ৫ টি প্রশ্ন থাকবে, সেটি কখনো একজন শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কতটুকু জানে তার শতভাগ রেজাল্ট দিতে পারে না। ধরুন, সে বিষয়টি জানে-বুঝে, এ্যাপ্লাই করতে পারবে; কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারছে না। হয়তো বলতে দিলে সে সুন্দর করে বলতে পারতো, বা তাকে একটু হিন্টস দিয়ে দিলে সে জিনিসটা ধরতে পারতো। আবার এমন হতে পারে, কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ধৈর্য্য নিয়ে কোন রচনামূলক প্রশ্ন লিখতে পারে না--তার কন্সান্ট্রেশন কম। কম সময় থেকে তাই সে ছোট প্রশ্ন ভাল লিখতে পারে। কেউ খুটিনাটি তথ্য ভাল মনে রাখতে পারে—তাদের জন্য এক কথায় উত্তর। এর জন্যই আমাদের প্রশ্নপত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন মিলিয়ে মিশিয়ে থাকে, যাতে এক ধরনের স্কিল ভাল না থাকলেও আরেক ধরনের স্কিলের মাধ্যমে নিজের জ্ঞান প্রকাশ করতে পারে। তাই কেউ mcq তে ভালো করে মার্ক তুলে, কেউ আবার লিখিত পরীক্ষায় ভালো মার্ক তোলে।

আমাদের পরীক্ষার উদ্দেশ্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান যাচাই, শুধু মাত্র রাইটিং স্কিল যাচাই না। তাই আমাদের প্রশ্নপত্রে ছোট প্রশ্ন, বড় প্রশ্ন, নৈর্ব্যক্তিক, শূন্যস্থান পূরণ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি সব ধরনের প্রশ্ন থাকে। এভাবে যত ধরনের মিলিয়ে প্রশ্ন থাকবে একটি পরীক্ষায়, সেই পরীক্ষা ততবেশি ভ্যালিড হবে। একজন শিক্ষার্থীর দক্ষতা ততো বেশি যাচাই করা যাবে। শুধুমাত্র একটি লিখিত প্রশ্নই না; আমাদের বিষয় ভিত্তিক প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্ট, ডিবেট কারিকুলামে থাকা উচিত প্রত্যেক বিষয়ের জন্যই। তাহলে সব ধরনের উপায় আরো ভালো করে যাচাই করা যায়।

ক্লাস টেস্ট নেয়ার সময টিচার যদি জিজ্ঞেস করে-তোমরা mcq প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে চাও নাকি বড় প্রশ্নে, দেখবেন অর্ধেক শিক্ষার্থী হাত তুলবে যারা বড় প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে চায় এবং বাকি অর্ধেক ছাত্র-ছাত্রী হাত তুলবে যারা MCQ দিতে চায়। দুই ধরনের ছাত্র-ছাত্রী দুই দিক দিয়ে ভাল। কেউ ছোট ছোট ইনফরমেশন মনে রাখতে পারে আবার কেউ মেইন থিম মনে রাখতে পারে, কিন্তু স্পেসিফিক ইনফরমেশন মনে রাখতে পারে না। দুই গ্রুপ দুই ধরনের , কারো স্কিল কিন্তু ছোট করে দেখার উপায় নাই ।

MCQ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় বিশেষ কিছু সুবিধা আছে। এই যেমন-খাতা দেখার জন্য এক্সপার্ট শিক্ষক প্রয়োজন হয় না,অনেক কম সময়ে কম্পিউটার বা যে কেউ উত্তর মিলিয়ে রেজাল্ট দিয়ে দিতে পারে। তাই এখানে খরচ কম হয়। বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে একই সাথে অনেক কম সময়ে যাচাই করা যায় এবং অনেক বড় একটা সিলেবাসের পরীক্ষা অনেক কম সময়ে নেয়া যায়। এজন্য বিসিএস,বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি,বড় চাকরির পরীক্ষাগুলোর প্রথম ধাপ mcq হয়।

অনেকেই বলে থাকেন যে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মাধ্যমে শুধুমাত্র মুখস্থবিদ্যা যাচাই হয়; আরও গভীর জ্ঞান যাচাই হয়না । কিন্তু বর্তমানে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিতে mcq প্রশ্নেও জ্ঞান ,অনুধাবন, প্রয়োগ এবং উচ্চতর দক্ষতার স্টেজগুলো মেইন্টেইন করা হয়। তাই এই ব্যাপারটি আর থাকছে না।

রচনামূলক প্রশ্ন পড়লে স্টুডেন্টরা শুধু সাজেশনের কিছু প্রশ্ন পড়ে। দুই-একটা চ্যাপ্টার একেবারেই বাদ দিয়ে দেয়। কিন্তু mcq প্রশ্নের ক্ষেত্রে তাকে সবগুলো চ্যাপ্টারই পড়তে হচ্ছে, যেহেতু এখানে অপশন নেই।
এমসিকিউ প্রশ্নে কোন সাজেশন থাকে না। একজন যদি শুরু থেকে লাইন ধরে একটা চ্যাপ্টার-এর সবগুলো mcq প্রশ্ন পড়ে যায়, তাহলে কিন্তু তার ঐ চ্যাপ্টার সম্পর্কে মোটামোটি ভালো ধারনা হয়।

mcq প্রশ্ন করা যতটা সহজ মনে করা হয়; কেউ যদি একটা ভ্যালিড mcq প্রশ্ন করতে চায়, তাহলে কিন্তু এটা অতটা সহজ না। mcq প্রশ্ন কিভাবে করতে হবে তার কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে—যে কোন অপশন দিয়ে রাখলেই হবে না। ডিস্ট্রাক্টার যেগুলো থাকবে সেগুলো যেন অনুমান করে দেয়া না যায় সেটা খেয়াল রাখতে হয়। ধরুন, প্রশ্ন করা হলো- “জাতীয় ফলের নাম কী?” এখন যদি অপশন দেয়া হয়- “ক)কাঁঠাল খ)গোলাপ গ)জবা ঘ) আমলকি”—পরীক্ষার্থী শুরুতেই গোলাপ-জবা বাদ দিয়ে দিবে, কারণ-এই দুইটা ফল না, ফুল। তাহলে তার জন্য আমলকি অথবা কাঁঠাল থেকে একটি করা অনেক সহজ হয়ে গেল। এদিকে আমলকি অতো পপুলার না, আবার কাঁঠাল সাইজে বড়, তাই এক্ষেত্রেও অনুমান করা সহজ। তাই এখানে যদি সবগুলো ফলের নাম থাকত, যেমন- আম, কাঠাল, নারিকেল, পেয়ারা; তাহলে সহজে অনুমান করা যেত না।।
“সবগুলো” “কোনটাই না” “ক এবং খ দুটোই”- টিচাররা আলসেমি করে এই ধরনের ডিস্ট্রাক্টার দিয়ে থাকে। এমন অপশন গুলো সবসময় নিরুৎসাহিত করা হয় ।
টিচার্স ট্রেনিং এর সময় এগুলো সব শেখানো হয়। সমস্যা হচ্ছে, ট্রেনিং-এর সময় সবকিছু শিখে কাজের বেলায় আলসেমি করে সেগুলো এ্যাপ্লাই করতে চান না আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক বা তারা কর্ম ক্ষেত্রে সেরকম সুযোগ সুবিধা , পরিবেশও পান না।
mcq খাতা কাটা অনেক সহজ তাই প্রশ্ন করাটা না হয় একটু সময় নিয়েই করা হলো।

পরীক্ষার হলে দেখাদেখি করে mcq উত্তর মেলানোর ব্যাপারটা কঠিন করার জন্য প্রশ্নপত্রে বিভিন্ন সেটের প্রশ্ন করা, mcq প্রশ্নে ক্রমানুসারে নাম্বার না থাকা (মানে ১,২,৩,৪ এভাবে না দিয়ে বক্স বা স্টার চিহ্ন দেয়া। তাহলে ১ নাম্বার প্রশ্নের উত্তর, ১ নং প্রশ্নের উত্তর, এভাবে মিলাতে পারবে না), কড়া গার্ড দেয়া ইত্যাদি ব্যবস্থা নিতে হবে।
দুর্নীতিমুক্ত পরীক্ষার পরিবেশ আনার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। কিন্তু মাথা ব্যথায় মাথা কেটে ফেলার মত করে mcq প্রশ্ন বাদ দেয়ার পক্ষে আমি নই।


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৩
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×