এক .
শান্তা পাড়ার গলি দিয়ে হেটে স্কুল থেকে ফিরছে , ওর পিছু পিছু তুষার আর লিমন নামের দুই ছোকড়া আসছে ;
-শান্তা কই যাও ?
শান্তা কিছু না বলে এগিয়ে যাচ্ছে
-বল্লানাতো কই যাও ?
শান্তা চোখ গরম করে তাকায় - স্কুল ড্রেস পড়ে কি আমি বিয়ে খেতে যাচ্ছি ?
তুষার বলে, না তাও শিওর হয়ে নিলাম ।
তুষার আর লিমন এবার শান্তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে ।
লিমন বলে, ওই তুষার তোর ফোন নাম্বারটা দে তো ।
-কস কি দোস্ত , আমার নাম্বার তোর কাছে নাই ?
তাও আবার ক, মুখস্থ করে রাখি ।
০১৭............
আবার বল
০১৭......
আবার বল
ভাল কইরা শোন যেন অন্তরে গাইথা যায় ০১৭............
শান্তা দ্রুত হেটে গলির অন্য মোড়ে চলে যাচ্ছিলো। ওকে শুনিয়ে তুষার বলে, রাতে যেন মিসকল পাই ।
রাতে মা ঘুমিয়ে পড়লে লুকিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে মায়ের ফোন থেকে সত্যি সত্যিই ঐ নাম্বারে মিসকল দেয় শান্তা। নিজের পরিচয় না দিয়ে রং নাম্বার বলে কথা চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু দুদিন পরেই কথায় কথায় তুষার বুঝে যায় এটা শান্তা। আর কথায় কথায় শান্তাও গলে যায়।
স্কুল থেকে যাওয়া আসার সময় দূরত্ব রেখে হেটে হেটে ইশারায় কথা বলা, রাতে ফিসফিস করে মায়ের ফোনে চুরি করে কথা , তুষারের শান্তাদের বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকা; শান্তার বারান্দা দিয়ে ইশারা দেয়া, এভাবে ভালই যাচ্ছিলো দিন।
একদিন পাড়ার মুদি দোকানি শান্তার বাবার কাছে বিচার দেয়, বলে আপনার ছোট মেয়েটাকে রোজই দেখি ভ্যাগাবন্ড তুষারের সাথে কথা বলতে। ঐ ছেলেতো ভাল না, দুইবার ম্যট্রিক ফেল করে এখন সারাদিন খারাপ পোলাপানের সাথে মিশে।
সেদিন বাবার হাতে খুব মার খায় শান্তা । মা তার ফোন মাথার কাছে নিয়ে ঘুমায়। তারপর থেকে কথা বলা বন্ধ। শান্তার বড় ভাইয়ের এলাকায় খুব দাপট। সে তুষারকে ডেকে একদিন ঝাড়ি দিতেই তুষারও চুপ। দুইদিন কান্নাকাটি করার পর শান্তার এসএসসি পরিক্ষার সময় চলে আসে, সে সব ভুলে পড়ালেখায় ব্যাস্ত হয়ে যায়।
দুই .
কলেজ থেকে ফেরার পথে পড়ার দোকান থেকে ফোনে টাকা ফ্লেক্সি করছে এশা। পকেট মানি বাচিয়ে এই দোকান থেকে রোজ দশ টাকা ফোনে ভরে সে। কদিন ধরে লিমনকে এই দোকানের আশে পাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। লিমনকে উকিঝুকি দিতে দেখে এশা নাম্বার লেখা বন্ধ করে কার্ড কিনে বাসায় চলে যায়। গেলে কি হবে লিমন তো তিন চার দিনের চেষ্টায় ঠিকি নাম্বার ম্যানেজ করে ফেলেছে।
কিন্তু এশাকে যতবারই ফোন দেয় সে গালাগালি করে ফোন রেখে দেয়। কিছুতেই আলাপ জমানো যাচ্ছেনা, এদিকে লিমনও হাল ছাড়ার পাত্র না। একদিন কলেজ টাইমে ফোন দেয়, এক ছেলে ফোন ধরে , এটা নিশ্চই সেই ফাস্টবয় সজিব, পাশের পাড়ায় থাকে। সামনা সামনি চোখের দিকে তাকায় কথা কইতে পারে না, শালা আজকে চান্সে গালি দিয়ে দিলো।
ধুর দেশে কি মেয়ের অভাব আছে নাকি। টাকার মধ্যে নিজের নাম্বার লিখে তার নিচে ‘তোমার অপেক্ষায়’ লিখে সেই টাকা এক পিচ্চি কে দিয়ে ফুচকা আনতে পাঠায়।
তিন.
- হ্যালো সোহাগ,তুমি আমাকে মিথ্যা বলেছ কেন? তুমি আদমজী কলেজে পড় ? ওখান থেকেতো দুইবার টেস্টে ফেল করার পর তোমাকে সেই কবেই বের করে দিয়েছে। তুমিতো সারা জীবন মূর্খই থেকে যাবা। তুমি কোন আক্কেলে আমাকে প্রোপোজ করতে গিয়েছিলা ? তুমি জানো না আমি কেমন স্টুডেন্ট ? জানোনা আমার ভাই মেডিকেলে পড়ে ?
- নিশি আমার কথাটা একটু শোন প্লিজ, তোমাকে ভালবাসি বলেই তো এসব বলেছি। এভ্রিথিং ইজ ফেরার ইন লাভ এন্ড ওয়ার।
- ইশ, ফেল্টু আবার ইংলিশ বলতে আসছে। আমার এক বান্ধবী তোমাদের বাড়ীওয়ালা, ও তোমাকে আমার স্কুলের সামনে দাড়াতে দেখে সব বলে দিয়েছে আমাকে। তোমার মা-বাবা খুব ভাল মানুষ, ভাই বোনেরাও লেখাপড়ায় ভাল। তোমার জন্য উনাদের সবার কাছে কথা শুনতে হয়। আর তুমি নাকি সিগারেট খাও ? এর জন্যইতো তোমার ঠোট এতো কালো।
- জান আমার কথা শোন, আমি ভাল হয়ে যাবো, তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে বোঝে না। আমাকে আর একটা সুযোগ দাও প্লিজ।
- লজ্জা থাকলে ইন্টার পাস করে আমার সামনে আসবা, নাহলে না।
চার বছর পর ।
শান্তা ল পড়ছে, ছয় মাস হল বিয়ে হয়েছে। বরের গাড়ীতে প্রায় দিনই বাপের বাড়ি আসে। তাকে এখন আর চেনাই যায় না, কথাবার্তা হাটাচলা সব কিছুতেই উকিল উকিল ভাব।
তুষারের আর লেখাপড়া হয় না। গত বছর জমি বেঁচে বিদেশ গিয়েছিলো , চার মাস পর ফিরে এসেছে। এখন চায়ের দোকান, পাড়ার দলীয় অফিসে বসে আড্ডা দেয়। ঘুরে ফিরে খায়।
শান্তার আসতে যেতে গাড়ীর কাচের ভিতর দিয়ে তুষারকে মাঝে মাঝে দেখা গেলেও , দুজনেই না দেখার ভান করে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
এশা মেডিকেলে পড়ে , প্রচন্ড ব্যস্ত লাইফ। লিমন নামে যে কেউ কখনো তাকে ডিস্টার্ব করতো এটা এখন তার মনেই নাই।
লিমন নেশার জগতে ডুবে যায়। বছরে বেশিভাগ সময় রিহ্যাবে থাকে।
সোহাগ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে পাশাপাশি টুকটাক ব্যবসা করে। সে ইন্টার পাস করে দেখিয়েই দিলো। নিশি অনার্স পড়ছে সাথে এলাকার কোচিংএ পড়ায়। পালিয়ে বিয়ে করে খুব একটা খারাপ নেই ওরা।দুজনেই আয় করে, পাশাপাশি সোহাগের বড় ভাই ওদের টাকাপয়সা দিয়ে হেল্প করে মাঝেমাঝে। প্রথমে বাসা থেকে মেনে নেয়নি, এখন সবকিছু মোটামোটি স্বাভাবিক।
একদিন দুপুরে বাপের বাড়ীর বারান্দায় চুল শুকাচ্ছে শান্তা। বাইরে তাকাতেই চোখে পড়ে তুষার নিচতালার ক্লাস টেন পড়ুয়া মেয়েটাকে বলছে – তোমারে এতো আশা নিয়া ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠাইলাম এক্সেপ্ট করলানা কেন ? আমি কিন্তু এক্টিভ লাইকার। সব সময় লাইক কমেন্ট করে এক্টীভ থাকি । বুঝলা না, বালিকা বুঝলা না। কেউওই আমারে বুঝলো না। শালার সব মাইয়্যাই নিষ্ঠুর।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৮