নতুন বউয়ের মুখ দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল বিপাশা। চমকে ওঠে নতুন বউ নিতুও। পুরো ঘরের সবাই তা বুঝতে পারে,পরিস্থিতি সামলে নিতে গিয়েও সামলাতে পারেনা কেউই। নিতুর মুখ দিয়ে বের হয়ে যেতে থাকে -ভাবী তুমি !! তাকে খোচা দিয়ে থামিয়ে মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বিপাশা বলে, বাহ্ ভাবী তো খুব সুন্দরী! আপনার বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকার খুব ইচ্ছা ছিলো, বুঝেনইতো কতো দূরের দেশে থাকি, সব মিলিয়ে ঐ দিন আর আসতে পারলাম না। দুই দিন পরে আসলাম।
সারাদিন বিপাশাকে খুব খেয়াল করে দেখছে নিতু। বিপাশা এখন তার চাচাতো জা। স্বামী সন্তাদের দিকে অনেক খেয়াল তার। শশুড় বাড়ির সবার প্রতিই অনেক কেয়ারিং বোঝা যাচ্ছে। এই বিপাশাই কি সেই বিপাশা যে ছিলো জেদী, একগুঁয়ে, আত্মকেন্দ্রিক? আজকের বিপাশার সাথে নিতুর চেনা বিপাশার কোন মিল নেই। অবশ্য তার ভাইয়েরও এমন পরিবর্তন দেখেছে সে। ভাইয়া এখন বউ বলতে অজ্ঞান, বাড়ীর কারো সাথে ঝগড়া হলে বউয়ের পক্ষ নেয়। হয়তো একবার হারিয়েছে বলেই এখন আবার হারানোর ভয় থেকে নিজেদের শুধরে নিয়েছে দুজনেই।
আচ্ছা পরশু যখন ভাইয়্যা এ বাড়িতে আসবে, ওদের দুজনে মনের অবস্থা কি হবে তখন?
বিপাশা নিতুকে এড়িয়ে চলছে বোঝা যায়। অনেকক্ষন অপেক্ষার পর বিপাশাকে একটু একা পাওয়া গেছে। কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে নিতু বলতে থাকে, তুমি চলে আসার পর কত্ত ঘটনা ঘটেছে তুমিতো জানোই না। প্রতি ঈদে তোমাকে এখনো মিস করি, কি সুন্দর করে যে মেহেদী দিয়ে দিতে পারো তুমি। আচ্ছা সেবার ছোট চাচার বিয়েতে আমাকে যে চুল বেধে দিয়েছিলে সেভাবে আবার কাল বেধে দিওতো।
ওর হাত থেকে হাত ছিটকে সরিয়ে নেয় বিপাশা। এই মেয়ে কি বলে এসব! পাগল নাকি?
নিতু বলে তুমি এমন করছো কেন? একটা সম্পর্ক না-ই টিকতে পারে। তোমার উপর আমার কোন রাগ নাই। তোমার আমার কোন ঝগড়াও ছিলোনা। জান তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলো। চাচী কে বকাবকি করতো,বলতো সে নাকি সব অশান্তির মূলে। কিন্তু তারপর নতুন ভাবীকে নিয়ে সে এখন খুব সুখী। ভাইয়া এতোটা বদলে গেছে তুমি ভাবতেও পারবে না।
বিপাশা ফোঁসে ওঠে, এই মেয়ে তুমিকি আমার সংসার ভাঙ্গতে চাও? খবরদার সেই চেষ্টা করবা না। এখানে সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে। সবাই আমার কথাই বিশ্বাস করবে তোমার কথা না।
ছিছিছি, ভাবী তুমি আমাকে এতো ছোট মনের ভাবলে কিভাবে? এখানে কি তোমার শশুড় বাড়ীর কেউ আছে? শুধু তো তুমি আর আমি। তোমাকে তো আসল কথাই বলা হলো না, যে ছেলের সাথে ফোনে কথা বলতে তুমি আমাকে সাহায্য করতে, এর সাথেই কিন্তু আমার বিয়ে হলো। সেই অর্থে তুমিই আমার বিয়ের প্রধান ঘটক।
দেখ নতুন বউ, তোমার উদ্দেশ্য কি? আল্লাহর দোহাই লাগে, এই ঘর থেকে যাও।
সারারাত নিতুর ঘুম হয় না। বিপাশা নিতুর চাচাতো ভাইয়ের বউ ছিলো। ভাইয়া ভাবীর কিছুতেই মিলতো না।বাড়ির কেউ বিপাশাকে তেমন পছন্দ করতো না, বিপাশাও না। কেবল নিতু বাড়ির কারো ব্যপারে নাক গলাতোনা, নিজের মতো থাকতো।তাই হয়তো বিপাশাও ঐ বাড়ীতে একমাত্র নিতুকেই পছন্দ করতো। তার কাছেই সুখদুঃখের কথা, মূলত অভিযোগের কথা বলতে আসতো।ভাবীর সংসার নিয়ে অভিযোগের কথা শুনতে খুব ভালো লাগতো নিতুর।টিনেজ এর স্বাভাবিক আগ্রহও হতে পারে। কলেজ পড়ুয়া কম কথা বলা, সারাদিন বই নিয়ে থাকা নিতুর তেমন কোন বন্ধু ছিলো না। এভাবে কিভাবে জানি প্রায় সমবয়সী ওরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল। কারো সাথে কথা না বলা মেয়েটা বিপাশার সাথে অনেক কথা বলতো। তখন এক ছেলে নিতুকে খুব পছন্দ করতো। নিতুর এতো সাহস ছিলোনা প্রেম করার। বিপাশাই মূলত তাকে উস্কে দেয়, সুযোগ করে দেয়। সে ছেলেটাই আজকে তার বর। কিন্তু তাকেও আজকে বলতে পারছে না, এই হল সেই ভাবী যে না থাকলে আমাদের সম্পর্কটাই হতো না।
ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হলে নিতুর রুমে এসে ঘুমাতো ভাবী। তুমুল ঝগড়ার সময় নিতু সবসময় ভাবীর সাপোর্ট নিতো , এর জন্য চাচীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। জোর করে আর কতোদিন সম্পর্ক ধরে রাখা যায়। ভাইয়া ভাবীর ডিভোর্স হয়ে যায়।
সারা রাত ঘুম হয়না নিতুর। ভোর হতেই বিপাশার ঘরের দিকে পা বাড়ায় নিতু।সে যে কাউকে কিছু বলবে না, সে এখনো তাকে বন্ধুই মনে করে এই আশ্বাস দিতে হবে বিপাশাকে।
শাশুড়ির ঘরের সামনে দিয়ে যেতেই কানে আসে- কি বল এসব, কাল এসে আজই চলে যাবা, কোন অনু্ষ্ঠানে তো থাকতেই পারলা না। নতুন বউকে নিতে তার বাপের বাড়ির কয়জন লোক আসবে। সেই দিনের পরে যাও অন্তত।
না চাচী, আমার আম্মার অসুখ। এতো দিন পর দেশে আসলাম। আম্মাকে দেখার জন্য মন পুড়ছে।
আর আপনাদের নতুন বউ বোধয় তেমন সুবিধারনা। কিসব উলটাপালটা বলে। বিয়ের পরে অনেক সময় সুন্দরি মেয়ে দের জ্বিনে ধরে। যা লম্বা চুল মেয়েটার, চুল খুলে সন্ধায় বারান্দায় গিয়েছিল বোধয় ! আমাকেও কিসব উল্টা পালটা বলছে ।
দরজা থেকে ফিরে আসে নিতু। পরিস্থিতি সবসময় সব বন্ধুত্ব টিকতে দেয় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১০