somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা। ) B-)B-)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন থেকেই ভাবছি ইলেকট্রনিক্স এর উপরে বাংলায় কিছু লিখব। কিন্তু পড়াশোনার চাপে আর নানান কাজের জন্য সময়ই হয়ে ওঠেনা। তবে এর মাঝেও টুকটাক লেখার চেষ্টা করি।

এই লেখাটা লেখার আগে মনে হল, ইলেকট্রনিক্স এর বেসিক বা মূল বিষয় দিয়ে শুরু করি। আজগুবি প্রোজেক্ট না ঘেঁটে আগে ভিত্তি শক্ত হওয়া দরকার। এটাই ভাল হবে।

আগেই বলে রাখছি, এই ব্লগে এই বিষয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান রাখেন এমনও অনেকে আছেন। আশা করি তারা ভুলত্রুটি শুধরে দেয়ার চেস্টা করবেন। আমি খুবই সাধারন একজন ছাত্র। তবে নিজের অর্জিত সামান্য জ্ঞানটুকু অন্যের মাঝেও ছড়াতে চেষ্টা করি। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

সংক্ষেপে, ইলেকট্রনিক্স হল এমন একটা বিষয় যেখানে ইলেকট্রন এর উপরে নানা ধরনের কার্যকলাপ ঘটানো হয় ও কোন ডিভাইস এর ভেতরে এর প্রবাহের দিক ও পরিমান নিয়ন্ত্রন করা হয়। সাধারনত সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহি পদার্থের তৈরি ডিভাইসগুলি দিয়েই এ কাজ করা হয়। সাথে সহকারী হিসাবে পরিবাহী পদার্থের তৈরি ডিভাইসও থাকতে পারে।

কিন্তু ডিভাইস গুলিকে কার্যক্ষম করতে হলে এদেরকে অবশ্যই যথাযথ নিয়ম অনুসারে কোন ইলেকট্রনিক সার্কিট বা বর্তনীতে সংযুক্ত করতে হয়। বর্তনী হল কিছু তড়িৎ যন্ত্রাংশের সমন্বয় যা দিয়ে তড়িৎ সম্বন্ধীয় নির্দিষ্ট কোন কাজ করা যায়।

একটি তড়িৎ বর্তনী অসংখ্য যন্ত্রাংশের দ্বারা গঠিত হতে পারে। এই যন্ত্রাংশ গুলি অনেক রকমের হয়। নিচে বহুল ব্যাবহৃত যন্ত্রাংশগুলার নাম দেয়া হলঃ

১। রোধক বা রেজিস্টর
২। ধারক বা ক্যাপাসিটর
৩। আবেশক বা ইন্ডাক্টর
৪। ডায়োড
৫। ট্রানজিস্টর
৬। ট্রান্সফরমার
ইত্যাদি। এছাড়াও ব্যাটারি, সুইচ, তার, বাল্ব এবং আরও অনেক কিছু থাকতে পারে।

উপরে উল্লিখিত প্রত্যেক যন্ত্রাংশেরই প্রকারভেদ আছে। সার্কিট শিখতে হলে প্রথমে যন্ত্রাংশের ধর্ম, কাজ ও ব্যবহার জানতে হবে। এই যন্ত্রাংশ বা পার্টসগুলি নিয়ে সামনের পোস্টগুলাতে এক এক করে লিখব ইনশাআল্লাহ।

তবে তার আগে ইলেকট্রিক ভোল্টেজ বা তড়িৎ বিভব আর ইলেকট্রিক কারেন্ট বা তড়িৎ প্রবাহ নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। কেননা, এগুলোই হল সেই ব্যাপারগুলি যা কোন সার্কিটে ঘটে থাকে এবং এই ব্যাপারগুলি কেই সার্কিটের বিভিন্ন পার্টস দিয়ে কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রন করা হয়।

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এদের উৎপত্তি কিভাবে? এটা জানতে হলে পদার্থের পরমাণু লেভেলে নাড়াচাড়া করতে হবে। জানতে হবে চার্জ বা আধান কি? স্কুলে থাকতেই আমরা জেনেছি পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হল পরমাণু। এর আকার গোলকীয়। কেন্দ্রে থাকে প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে গঠিত নিউক্লিয়াস আর তার চারদিকে ইলেকট্রন ঘোরাফেরা করে।

এই প্রোটন, নিউট্রন আর ইলেকট্রন হল মৌলিক কণা। আর এদের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্মকেই বলে আধান বা চার্জ। ইলেকট্রনের চার্জ হল নেগেটিভ বা ঋণাত্মক, প্রোটনের চার্জ হল পজিটিভ বা ধনাত্মক আর নিউট্রনের কোন চার্জ থাকেনা বা সোজা কথায় এটি নিষ্ক্রিয়।

এখন প্রশ্ন হতে পারে এর ধর্ম কি? গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারটি হল,
সমধর্মী চার্জ একে অপরকে বিকর্ষণ করে কিন্তু বিপরীতধর্মী চার্জ একে অপরকে আকর্ষণ করে। সুতরাং,
পজিটিভ চার্জ পজিটিভ চার্জ => বিকর্ষণ
নেগেটিভ চার্জ নেগেটিভ চার্জ => বিকর্ষণ
নেগেটিভ চার্জ পজিটিভ চার্জ => আকর্ষণ

চার্জকে কিন্তু কোন পরিবাহী পদার্থের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করাও সম্ভব। পরিবাহী হল সেইসব পদার্থ যারা চার্জের প্রবাহে খুব নগণ্য পরিমানে বাধা দেয়; যেমনঃ যেকোনো ধাতু, গ্রাফাইট কার্বন, লবনের জলীয় দ্রবন ইতাদি।

তড়িৎ বর্তনীতে পরিবাহী হিসেবে সাধারনত ধাতু ব্যাবহার করা হয়; বিশেষ করে তামা এবং অ্যালুমিনিয়াম, কারন এরা সবচেয়ে ভাল এবং সস্তা পরিবাহী। অর্ধ পরিবাহী নিয়ে পরে কোন পোস্টে আলোচনা করব।

আগেই বলেছি, চার্জকে কোন পরিবাহীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত করা যায়। কিন্তু একটা ব্যাপার আছে। চার্জ বলতে তো ইলেকট্রন আর প্রোটন উভয়ের চার্জ বুঝাচ্ছে আর এরা পরমাণুতে আবদ্ধ থাকে। কিন্তু প্রোটন নিউক্লিয়াসে অনেক শক্তভাবে আটকানো থাকে আর এটি পরমাণুর স্থির অংশ। প্রোটনকে সরাতে গেলে প্রচুর শক্তি লাগে; রীতিমত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। তাই এর প্রবাহ সম্ভব না।

তবে ইলেকট্রনকে হাল্কাভাবে আটকানো থাকে; একে অনেক কম শক্তি প্রয়োগ করেই পরিবাহি পদার্থের পরমাণু থেকে ছুটিয়ে দেয়া যায়। তাই সার্কিটে ইলেকট্রনের প্রবাহ তথা ঋণাত্মক চার্জের প্রবাহ ঘটানো হয়। আর একেই বলে ইলেকট্রিক কারেন্ট বা তড়িৎ প্রবাহ। এর একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার।

আবার পরমাণুতে সমান পরিমানে ইলেকট্রন আর প্রোটন থাকে তাই তা নিষ্ক্রিয়। তবে কোনভাবে কোন পরমাণুতে ইলেকট্রন এর পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে (যদি বাইরে থেকে ঢোকানো হয় )তখন ঋণাত্মক চার্জ এর আধিক্য হয়। পরমাণুটিকে তখন ঋণাত্মক আধানে আহিত বা নেগেটিভলি চার্জড বলা হয়। একই ভাবে ইলেকট্রন স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে (যদি বের করে নেয়া হয়) ধনাত্মক চার্জ এর আধিক্য হয়। পরমাণুটিকে তখন ধনাত্মক আধানে আহিত বা পজিটিভলি চার্জড বলা হয়।

তড়িৎ প্রবাহের সময় যেহেতু চার্জ স্থানান্তরিত হচ্ছে, তাই চার্জের প্রবাহও এক রকম কাজ। কিন্তু মনে রাখা দরকার কোন কাজই শক্তি ছাড়া হয়না। সুতরাং, অবশ্যই এ কাজে শক্তি ব্যয় করতে হবে। এই প্রয়োজনীয় শক্তিকেই বলা হয় তড়িৎ বিভব বা ইলেকট্রিক ভোল্টেজ। আমরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্রে যে ব্যাটারি ব্যাবহার করি তাই এই শক্তি যোগান দেয়। বিভবের একক হল ভোল্ট।

তাহলে আমরা বলতে পারি যে, কোন তড়িৎ ব্যবস্থায় বা ইলেকট্রিকাল সিস্টেমে ভোল্টেজ হল কারন আর কারেন্ট হল ফলাফল। আর পার্টসগুলা হল এদের নিয়ন্ত্রক।

আজ এতটুকুই। সামনের পোস্টে রোধক নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। এতক্ষন ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যের ঘরে করুন। আমার জ্ঞানের ভেতরে আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।


ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪১
২৫টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×