প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে এ কথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।
(তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১৩ দফা, পৃষ্ঠা-১৪, লেখক- মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক)
------------------------------------------------------------------------------------
প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের তাদের প্রচলিত তাবলীগকে যে জন্য নবীওয়ালা কাজ বলতে চায়, সেটা হলো- তারা মনে করে যে, নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণ যেভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, তারাও বুঝি সেভাবেই ইসলামের দাওয়াত দেয়। কিন্তু হাক্বীক্বতে এ দু’য়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। কারণ নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণ সকলেই মা’রিফাতে পূর্ণ হয়ে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং তা দেয়া হয়েছে কাফিরদেরকে। সে কারণে বলা হয় যে, সকল নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের তাছাউফ এক, কিন্তু শরীয়ত আলাদা। কিন্তু প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের প্রায় সবাই একেবারেই তাছাউফ শুণ্য হয়ে তাদের ৬ উছূলভিত্তিক দাওয়াত দেয়। যে দাওয়াতটা মূখ্যতঃ মুসলমানদেরকে দেয়া হয়।
কাজেই প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত যা করে, তা মুসলমানদেরকে সাধারণ তা’লীম-তালক্বীন দেয়া ব্যতীত কিছুই নয়।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে আরো কথা এসে যায়, সেটা হচ্ছে এই যে, মাদ্রাসা-মক্তবে কিতাবী দর্স ও তা’লীম দেয়া, মসজিদে, জনসমাবেশে ওয়াজ-নছীহত করা, দ্বীনি ইল্মের জন্য কিতাব প্রনয়ণ করা সর্বোপরি, পীরানে তরীক্বত, আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ তাঁদের খান্কা শরীফে ও দরগায় এই ইল্মে তাছাউফ ও ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা দেয়া কি তাহলে নবীওয়ালা কাজ নয়? তবে কি এটি শয়তানওয়ালা কাজ? (নাঊযুবিল্লাহ্ মিন যালিক) কোন ব্যক্তি যদি এরূপ আক্বীদা পোষণ করে, তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে কুফরীতে নিপতিত হবে।
উল্লেখ্য, যদিও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা সুরতান নবীওয়ালা কাজ বলে দাবী করে, কিন্তু হাক্বীক্বতান তারা নবীওয়ালা কাজ করেনা। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“নিশ্চয়ই আলিমগণ নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয়ই নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি বরং তাঁরা ইল্মে দ্বীন রেখে গিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে পূর্ণ অংশ (বিরাট সফলতা) লাভ করলো।” (আহ্মদ, তিরমিযী)
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
“ইল্ম দু’প্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বালবী ইল্ম (ইল্মে তাছাউফ), যা উপকারী ইল্ম। অপরটি হচ্ছে- জবানি ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ), যা আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে বান্দার প্রতি দলীল স্বরূপ।” (দারেমী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত)
মিশকাত শরীফের শারেহ, হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিরকাত শরীফে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, মালেকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
“যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত। আর যে তাছাউফ করে অর্থাৎ মা’রিফাত চর্চা করে অথচ ইল্মে ফিক্বাহ শিক্ষা করে না অর্থাৎ শরীয়ত মানে না বা অস্বীকার করে, সে যিন্দিক বা কাফিরের অন্তর্ভূক্ত। আর যে উভয়টাই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অর্থাৎ সেই নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা হক্কানী আলিম।”
উল্লেখ্য যে, যিনি ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফ হাছিল করেছেন, তিনিই হচ্ছেন নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী। যাঁরা নবী আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালামগণের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী, তাঁদের পক্ষেই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ পূর্ণভাবে করা সম্ভব। অথচ প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের উছূলের মধ্যে তাছাউফ-এর কোন শিক্ষাই নেই, শুধুমাত্র ইল্মে ফিক্বাহ্র শিক্ষা যৎসামান্যই রয়েছে। তাহলে কি করে প্রচলিত ৬ উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের পক্ষে হাক্বীক্বতান নবীওয়ালা কাজ করে দাবী করা সম্ভব?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, তাদের এই বক্তব্য মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর, যার থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ভ্রান্ত আক্বীদা ও তার খন্ডন (২)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ ভোর ৫:৩৭