somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইয়িদ রফিকুল হক
আমি মানুষ। আমি ত্বরীকতপন্থী-মুসলমান। আমি মানুষ বলে আমার ভুলত্রুটি হতেই পারে। বইপড়তে আমার ভালো লাগে। সাহিত্য ভালোবাসি। লেখালেখি আমার খুব শখের বিষয়। বাংলাদেশরাষ্ট্র ও গণমানুষের জন্য আমি লেখনিশক্তিধারণ করেছি।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটক: “কভি নেহি ‘জয়-বাংলা’ বলতা” (প্রথম পর্ব)

০৪ ঠা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নাটক: “কভি নেহি ‘জয়-বাংলা’ বলতা” (প্রথম পর্ব)
সাইয়িদ রফিকুল হক

দৃশ্য---১

[সময়: নভেম্বর, ১৯৭১। স্থান: বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত-অঞ্চল উত্তরবঙ্গের একসময়কার প্রবেশদ্বারখ্যাত ‘নগরবাড়ি-ঘাট’। জিলা: পাবনা।
পাকবাহিনীর টর্চার-সেল। একটি মাঝারি-আকৃতির ঘর। দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে পা উপরের দিকে আর মাথা নিচের দিকে করে অমানুষিক-কায়দায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর তাদের শরীরের বিভিন্নস্থানে সীমাহীন-নির্যাতনের চিহ্ন। তাদের সামনে ছড়ি হাতে পায়চারী করছে এক পাঞ্জাবি-মিলিটারি। আর সে ক্যাপ্টেন পদবীধারী।]

ক্যাপ্টেন: তুমলোগ বাঙালি সব গাদ্দার হ্যায়!
প্রথম মুক্তিযোদ্ধা: বাঙালি গাদ্দার নেহি। বাঙালি কভি নেহি গাদ্দার। গাদ্দার তোর চোদ্দোগোষ্ঠী। আর গাদ্দার তোদের বাপ জিন্না, আইয়ুব, ইয়াহিয়া, ভুট্টো। তোদের সব বাপই গাদ্দার। আর গাদ্দার সব পাকিস্তানী।

(কথাটা শোনামাত্র উত্তেজিত ক্যাপ্টেন ছড়ি চালালো প্রথম মুক্তিযোদ্ধার শরীরে।)
ক্যাপ্টেন: (পায়চারী থামিয়ে, দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধার সামনে এসে উদ্ধতমূর্তিতে) কভি নেহি ‘জয়-বাংলা’ বলতা! বল গাদ্দার, কভি নেহি বলতা ‘জয়-বাংলা’!

দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা: (কষ্টের মধ্যেও ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে) কেন রে গাদ্দারের বাচ্চা গাদ্দার! ‘জয়-বাংলা’ শুনলি বুঝি তোদের আব্বাহুজুর জিন্নার কবরে আজাব হবি? আর তোর বাপ জিন্নার কবরেও বুঝি মুক্তিবাহিনী ঢুকে যাবি?

(ক্যাপ্টেন এবার আরও উত্তেজিত হয়ে আর রাগে একেবারে বেসামাল হয়ে দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধার শরীরের বিভিন্নস্থানে সপাং-সপাং ছড়ি চালাতে থাকে।)

প্রথম মুক্তিযোদ্ধা: (ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে) ক্যাপ্টেন সাব, আমাগরে মারলে বুঝি আপনার জিন্না বাপের কবরের আজাব মাফ হবি! নাকি তার রুহের মাগফিরাতের জন্যি আমাগরে মারতিছেন?
ক্যাপ্টেন: (তার সামনে এসে দাঁত-মুখ খিচিয়ে) চুপ রহো বাঞ্চত! তুমলোগ বাঙালি সব গাদ্দার হ্যায়!
প্রথম মুক্তিযোদ্ধা: আরে, আমরা কীসের গাদ্দার? আমরা তো এই দেশের মানুষের ন্যায্য-অধিকার চাই। আর এখন, আমরা মানুষ তোমাদের মতো কুত্তার সঙ্গে থাকতে না পেরে স্বাধীনতা চাইছি। এই কি আমাদের অপরাধ? আরে, গাদ্দার তো তোদের বাপ জিন্না, গাদ্দার আইয়ুব খান, গাদ্দার ইয়াহিয়া খান, গাদ্দার…।

(কথাটা শেষ করার আগেই ক্যাপ্টেন প্রথম মুক্তিযোদ্ধার পিঠে জলন্ত-সিগারেট চেপে ধরলো। আর অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।)

ক্যাপ্টেন: (আরেকটি সিগারেট ধরাতে-ধরাতে) শালা, বাঙালি গাদ্দার! শালা মালাউনকা বাচ্চা!
দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা: নেহি, নেহি, মালাউন আমরা নেহি। মালাউন তোদের বাপ জিন্না। আরও মালাউন তোদের দ্বিতীয় বাপ আইয়ুব খান, আরও মালাউন তোদের তৃতীয় বাপ ইয়াহিয়া খান, আরও মালাউন তোদের চতুর্থ বাপ টিক্কা কসাই খান, আরও মালাউন…।

(এবার হাতের জলন্ত-সিগারেটটা ক্যাপ্টেন দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধার পিঠে চেপে ধরলো।)

দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা: (ভীষণ যন্ত্রণায় কোঁকাতে-কোঁকাতে) জয়-বাংলা! জয়-বাংলা! জয়-বাংলা!

(পাকি-ক্যাপ্টেন দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধার মুখে বুট দিয়ে লাথি মারলো।)

ক্যাপ্টেন: (উত্তেজিত হয়ে) ‘জয়-বাংলা’ মাত কর। কভি নেহি বলতা ‘জয়-বাংলা’।
প্রথম মুক্তিযোদ্ধা: কেন ‘জয়-বাংলা’ বলবো না? ‘জয়-বাংলা’ শুনলে বুঝি তোদের সেনাপতি জেনারেল নিয়াজী-টিক্কা কসাইসহ পাকিস্তানীআর্মির পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যায়। অলরেডি তোদের আরেক আব্বাহুজুর নিয়াজীতো কয়েকবার পায়খানা করে ফেলেছে। (গন্ধ নাকে আসার ভান করে) ওয়াক থু! ওয়াক থু! থুথু!
ক্যাপ্টেন: (ভয়ানক উত্তেজিত হয়ে প্রথম মুক্তিযোদ্ধার উপর হাতের ছড়ি দ্রুত চালাতে-চালাতে) শালা গাদ্দার বাঙালি, তুমলোগ সব নিকাল যাও। তুমলোগ সব গাদ্দার হ্যায়!
প্রথম মুক্তিযোদ্ধা: (মার খেতে-খেতে) তা আমরা নিকাল যাবো! কিন্তু তোরা কোন জাহান্নামে যাবি? তোদের বাপ জিন্নার জাহান্নামে? নাকি সরাসরি হাবিয়া দোজখে? নাকি তোদের আদি-আসল বাপ ইবলিশ শয়তানের সঙ্গে সবাই একসঙ্গে জাহান্নামে যাবি?

(প্রথম মুক্তিযোদ্ধাকে আরও বেদম প্রহার করতে থাকে ক্যাপ্টেন।)


(চলবে)

সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০৪/০৫/২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×