somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে...

১৯ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেদিন ছিলো আমার এক ছোট্ট পরীর জন্মদিন। মানুষের জন্মদিন হলে নাহয় কথা ছিলো। পরী বলে কথা। ;) পরীদের জন্মদিনের অনুষ্ঠান কেমন হয় তাতো জীবনে দেখিনি। তাই মনের মাঝে বড় শখ হতে লাগলো পরী রাজ্যে যেয়ে পরী-কন্যার হেপি বার্থডে পালন দেখে আসি। :) যেই ভাবা সেই কাজ। কিছু গিফট বগলে করে আল্লাহের নাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
যাচ্ছি--- যাচ্ছি--- যাচ্ছি--- পথ মনে হয় আর ফুরোয় না। হঠাৎ দেখি একটা মা তার ছানাকে ঘুম পাড়ানি গান শুনাচ্ছে। দেখে মনে হলো বোধহয় পরী-মা আর ছানা।

পরী-মার হাতে বাতি দেখে কত কাকুতি মিনতি করলাম," বাতিটা একটু দেও না গো, যাবার পথে ফিরিয়ে দিয়ে যাবো"। কিন্তু এমন পাষানি, /:) ফিরেও যদি তাকাতো। কি আর করা আধো আলো আধো আধারে ঠোক্কর খেতে খেতে চলতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি এক পুচকি দারুন ভাবুক হয়ে আকাশের উপরে তাকিয়ে আছে।

কাছে গিয়ে বললাম, "পুচকুরানি কটকটানি মরবো আমি দেখবে তুমি, কি দেখো গো"?
ওমা! এও দেখি ফিরেও চায়না। :| এরা বোধহয় কানে শোনেনা। বয়রা। X( থাক! দেখি সামনে আর কাওকে পাই কিনা। হঠাৎ দেখি সামনে এক নদী। আমি তো আবার নদীর পোকা। নদী দেখলেই বুকের ভিতর খলবল করে ওঠা। তখন কিন্তু মোটেই খলবলাইনি। মাথায় চিন্তা, কি করে নদী পার হবো? নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে একটি মিষ্টি সাদা পরী বসে আছে। কি বিষন্ন তার বসার ভংগি। দেখেই মন খারাপ হয়ে গেলো। /:) এর তো মন খারাপ। এতো আরো শুনবে না।

সাদাপরীর পাশে গিয়ে দাড়ালাম, পানিতে পায়ের পাতা ভিজিয়ে কিছুক্ষন হাটলাম। মনে আশা, হয়তো নৌকা পেয়ে যাবো। কিন্তু কই? নৌকা তো দূরে থাক, একটা পাখীও নজরে পড়লোনা। খেয়াল করে দেখলাম, আরে! এটাতো সেই "পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁু তার, ঢালু তার পাড়ি" কবিতার নদীর মতই শান্ত। তাই বিসমিল্লাহ! বলে হেটেই পার হলাম। হাটতে হাটতে একেবারে ঝুপ করে যেনো আমার সামনে এক বাগান এলো। চারিদিকে কি সুন্দর সবুজ গাছ-পালা, ফুল। মনটা খুশীতে ভরে গেলো। এই তো চলে এসেছি আমার পরীমনির বাড়ি। :)

ফুল বাগানে পানি দিচ্ছিলো এই পরীমনিটা। দৌড়ে গেলাম তার কাছে। "সোনামনি তোমার নাম কি গো"? "তুমি কি আমার পরীমনিকে চিনো? আজ যে তার জন্মদিন"। নাহ! এও আমার দিকে ফিরে তাকালো না। /:) কষ্টে আমার তখন বুক ফেটে যাচ্ছিলো। দু-চোখে কিছুই দেখছিলাম না, অঝোর ধারায় অশ্রু পড়ছিলো। :(( তবুও হনহন করে হাটা দিলাম। হঠাৎ মাথার উপর নরম নরম কি যেন পড়লো। হাত দিয়ে দেখি ফুল। মুখ তুলে দেখি, ফুলের বুকে বসে আছে এক লালপরী।

আমার চোখে চোখ পড়তেই ফিক করে হেসে ফেল্লো। হাসি দেখে ভরসা পেলাম। বললাম, "ওগো লালপরী, আমার পরীমনিটা কোথায় গো, বলোনা পিলিজজজজজজজজজ!!! আমার কথায় লক্ষী পরীটার বোধ হয় মায়া হলো। হাতটা সামনে বাড়িয়ে দেখিয়ে দিলো। সামনে। আমি তো পড়িমড়ি করে ছুট...... থমকে গেলাম, আরে, এটা নাকি আমার পরীসোনা?

ছুটে গেলাম কাছে। এক্সকিউজ মি ! হ্যালো! এই যে! নাহ! কোন কিছুতেই কাজ হলোনা। সে কিছুতেই আমার দিকে তাকালো না। হাত ঝুকিয়ে নিচের ফুল গুলির দিকে ঝুকেই থাকলো। মেজাজ গেলো গরম হয়ে। X(( আরে! মর জ্বালা! তুই এই ভাবে ঝুকে থাকলে কি ফুল নিতে পারবি? আসন থেকে না নেমেই সব পেয়ে ফেলতে চাস? না? নে, ধর! ফুল কুড়িয়ে ধরিয়ে দিলেম গাধা পরীর হাতে। দু পা যেতেই দেখি আর এক ছানাপরী ফুলের মাঝে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। আমায় দেখে ফিকফিক করে হাসি উপহার দিলেন।

ছানাপরীটা বসে বসে ফুল চিবোতে থাকলো। আমি সামনের দিকে পা বাড়ালাম। কখন যে দেখা পাবো কে জানে। হটাৎ নজর গেলো গাছের তলে। ওটা কে? গোলাপি পরী?

কি সুন্দর জামা! মাথায় আবার সাদা ফুলও গোজা। বাব্বাহ! ঝুপ করে বসে পড়লাম তার পাশে। গোলাপি পরীটা ঘাড় ফিরিয়ে আমায় দেখলো। আমি তখন ঝোলা থেকে মিষ্টি বের করেছি।

নাও গো সোনামনিটা, মিষ্টি খাও। আজ না তোমার জন্মদিন? খপ করে লাড্ডু মুখে পুরে চোখে দুষ্টুমির হাসি ভরিয়ে মাথা নেড়ে মানা করলো। যাক বাবা! এ অন্তত ইশারায় হলেও কিছু সাহায্য করবে। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কথা শুরু করবো, এমন সময় গোলাপি পরী ফট করে ঝোলা থেকে মোমবাতিগুলো বের করে নিলো।

আহাহা!!! করো কি! করো কি!?? বলতে বলতেই খপ করে আইসক্রিমটাও বের করে নিলো।

ইশশ!!! তুমি কি আইসক্রিমটুকু খাবে? মাথা নেড়ে বারন করলো সে। চোখে মুখে দুষ্টুমি ফুটে বের হচ্ছে তার। তাহলে? আইসক্রিম না খেলে নষ্ট করলে কেনো? দেখোতো, :| আমি সেই কত্তদুরের পৃথিবী থেকে আমার সোনাপাখীটার জন্য এগুলো নিয়ে এলাম। তোমাকে তো মিষ্টি দিয়ে দিলাম। আইসক্রিম আমার সোনাপাখী অনেক ভালোবাসে। তুমি সেটা খেলেও না, চটকে নষ্ট করলে। খপ করে দুষ্টুটা লুকিয়ে রাখা ফুলটা তুলে নিলো।

নাআআআআআআ, আর্তনাদ করে উঠলাম যেন আমি। এ ফুল তুমি নিয়োনা। এটা তো আমার পরীমনির সব চেয়ে প্রিয় ফুল। দিলোনা সে। /:) দু হাতে ছিড়ে কুটি কুটি করলো পাপড়িগুলো।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ফিস ফিস করে ডাকলাম। "কোথায় তুমি পরীমনি? আমি কেনো তোমায় খুঁজে পাচ্ছিনা? আমি হারিয়ে গিয়েছি"। মানসচোক্ষে দেখতে পাচ্ছিলাম জানালার সামনে বসে আছে সে। কিন্তু আমায় দেখতে পাচ্ছেনা।

আমার চিৎকার তার চারপাশে ঘুরে ঘুরে বেরাতে লাগলো। "হারিয়ে গেছি আমি" হারিয়ে গেছি আমি"

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৫৭
৬৪টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনু গল্পঃ ব্যর্থ বাসনার দাহ

লিখেছেন সামিয়া, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮

ছবিঃনেট

খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবে না, কোনো টিউশনি করাবে না, ফোন করে সব student-কে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে।

নাবিল আসছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক জিয়ার দেশে না ফেরার কারণ।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:০৪


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর কেটে গেলেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কি দু’জন ভারতীয়র আচরণ দিয়ে পুরো ভারতকে বিচার করব?

লিখেছেন প্রগতি বিশ্বাস, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৬

সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের মঞ্চে রাজনীতির খেলা: জনগণের বেদনা ও শাসকের বিজয়গাথা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৮


দীর্ঘ তিন বছরের কূটনৈতিক আলোচনার পর ৬ মে ভারত ও যুক্তরাজ্য একটি ঐতিহাসিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষর করে, যা উভয় দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×