প্রেম! নাম শুনলেই মনে হয়, “আহ! মধু”। এর কারন হয়তো এই যে সত্যিকারের প্রেম বলতে যা বোঝায় আমি নিজে সেটা এখনো করিনি। সেই সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য কোনটাই হইনি এখনো। তাই আমি প্রেমের মর্ম তেমন বুঝি না। তবে আশেপাশের মানুষদের চুটিয়ে প্রেম করতে দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, “কি আছে এতে?” কি জানি? কয়দিন আগে রাস্তায় দেখলাম এক মা তার ছেলেকে বকা দিচ্ছেন এই বলে, “সারাদিন যদি ফোনে প্রেম করিস তাহলে পড়বি কখন? তোর লজ্জা করে না এই রেজাল্ট নিয়ে আবার কথা বলিস?” সেদিন আমার হঠাৎ মনে হল, আসলেই তো! কোনটা করার বেশি লাভজনক? পড়াশোনা নাকি প্রেম? আমি জানি প্রেম-ভালবাসা এবং পড়াশোনা কোনটাই লাভের জন্য করা হয় না, করা উচিৎ না। তাই সেই ভাবনা বাদ দিলাম। নতুন করে চিন্তা করলাম, প্রেম এবং পড়াশোনার মধ্যে কোনটা করা সহজ এবং কম বিপদজনক? নানান মানুষ, নানান মত। অনেকেই বলবেন প্রেম করা সহজ। আবার অনেকে বলবেন পড়াশোনা করা সহজ। তবে যদি প্রশ্ন করি কোনটা করা কম বিপদজনক? ৯৯% মানুষই উত্তর দিবেন, “পড়াশোনা”। এই টপিকের একটু ময়নাতদন্ত করা যাক।

প্রথমত, যারা আমার মত নন, মানে যারা “ভবিষ্যৎ” নিয়ে যতটা না ভাবেন তার চেয়ে বেশি “ভবিষ্যতের সাফল্য” নিয়ে বেশি ভাবেন, তাদের আমি এবং অনেকেই বলেন “Career Oriented”। আপনাদের জন্য অবশ্যই পড়াশোনা বেশি জরুরী। ভবিষ্যতে ইন্টার্ভিউ বোর্ডে আপনাকে আপনার প্রেম বিষয়ে খুব বেশি হলে ২টা প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হবে বলে ধারনা করা যায়। তাও আবার প্রশ্নগুলো এমন, “প্রেম করেন?” এবং “আজ পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছেন?” ব্যস! এইটুকুই। বলা বাহুল্য, এই ২টা প্রশ্নের সদুত্তর আপনাকে আপনার ক্যারিয়ারের পথে খুব সামান্যর চেয়েও সামান্য এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই, ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড মানুষদের জন্য প্রেম করা অনেকটা “হুদাই সময় নষ্ট” এর মত। আপনারা ভাই পড়ালেখায় মনোযোগ দেন।

দ্বিতীয়ত, পরকীয়া খুব খারাপ জিনিস হলেও পড়াশোনার রাজ্যে এই কাজ আপনার জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারে। একটু উপমা ব্যবহার করি। ধরুন আপনি ফিজিক্সে গ্রাজুয়েশন করেছেন। মানে আপনি ফিজিক্সকে বিয়ে করেছেন। তাই আপনি বিবাহিত। বিয়ের পর আপনি যদি আপনার স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন নারীর সাথে সম্পর্ক রাখেন তাহলে সেটা পরকীয়া এবং এর জন্য আপনাকে অনেক বদনামি হতে হবে। কিন্তু আপনি ফিজিক্স গ্রাজুয়েট হয়েও যদি বাংলা সাহিত্যের বই পড়তে ভালবাসেন এবং প্রতিনিয়ত সেটা চর্চা করেন তাহলে কি কেউ আপনাকে কিছু বলবে? কেউ কি বলবে কেন পদার্থবিজ্ঞান রেখে বাংলা সাহিত্যচর্চা করছেন? বলবে না। বরং আপনাকে অনেকেই এর জন্য বাহবা দিবে। হয়তো কোনদিন আপনার বাংলা সাহিত্যের কোন বই প্রকাশিত হবে, আপনাকে দশে চিনবে। মানে দাঁড়াচ্ছে আপনি বিয়ে করেছেন ফিজিক্সকে আর প্রেম করছেন বাংলার সাথে। শুধু বাংলা কেন? আপনি যা মন চায় তাই পড়তে পারেন। আপনাকে কেউ কিছু বলবে না। আপনার যত ইচ্ছা তত প্রেম আপনি পড়াশোনার রাজ্যে করতে পারেন। মানুষ আপনার প্রশংসাই করবে, বদনাম নয়। বোঝা গেলোতো? নিঃসংকোচে তাই চালিয়ে যান আপনার পরকীয়া।

আবার, রাত্রিযাপনের ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারবেন (আজকাল অবশ্য প্রেমিকাদের সাথেও অনেকে রাত্রিযাপন করেন। সেই দিকে আমি না হয় না-ই গেলাম)? ভুলেও না। কিন্তু পড়াশোনার রাজ্যে আপনি রাতের পর রাত কাটিয়ে দিতে পারবেন যেকোনো বইয়ের সাথে। আপনি ফিজিক্সে গ্রাজুয়েট বলে কখনই ফিজিক্স বই আপনাকে বলবে না, “তুমি গত রাতে রসায়ন বইয়ের সাথে কি করছিলে?” আপনি ইচ্ছামত রসায়নের রস আস্বাদন করতে পারবেন। ব্যাপারটা অসাধারণ না?

তৃতীয়ত, আপনি চাইলেই পড়াশোনার রাজ্যে ধর্মান্তরিত হতে পারেন (এই টপিকটা প্রেমের সাথে সম্পর্কিত নয়)। আপনার বাবা-মা আপনাকে ত্যাজ্য করবে না। আবারো উপমায় আসি। আপনি মাধ্যমিক পাশ করেছেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। কিন্তু আপনার বিজ্ঞান পড়তে ভালো লাগছে না। আপনি চাইলেই উচ্চমাধ্যমিকে কমার্স অথবা আর্টস নিতে পারেন। ব্যাপারটা অনেকটা ধর্ম পরিবর্তনের মতই নয় কি? এই রাজ্যে ধর্মান্তর প্রযোজ্য। আপনার যা ইচ্ছা আপনি পড়বেন। যখন ইচ্ছা আপনার রুচি পরিবর্তন করবেন। কেউ কিচ্ছু বলবে না। ব্যপারটা আমার কাছে বেশ মজার লাগে। নিজের রুচি আপনি নিজের ইচ্ছায় পরিবর্তন করতে পারবেন। আপনাকে ভাবতে হবে না “পাছে লোকে কিছু বলে”। তাই, আপনি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে শুচিবায়ুগ্রস্থ হলে আপনার ইচ্ছা মত রুচি পরিবর্তন করুন।

এই ছিল আমার ময়নাতদন্ত। এইবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন কোনটা বেশি করে করবেন। প্রেম নাকি লেখাপড়া? আপনার জীবন সুন্দর হোক। ধৈর্য ধরে আজাইরা বকবক পড়ার জন্য ধন্যবাদ।



[বি.দ্র. এই লেখাটি “পড়ুয়া” জাত এবং “প্রেমিক” জাত কাউকে ছোট বা বড় করার উদ্দেশ্যে লিখা হয়নি। লেখকের উদ্দেশ্য ছিল পাঠককে একটু আনন্দ দেয়া। উদ্দেশ্য ছিল একটি রম্য প্রবন্ধ টাইপের কিছু রচনা করা। লেখক কতটুকু সার্থক সেটা পাঠক মূল্যায়ন করবেন। আর যারা মূল্যায়ন করতে চান না তাদের জন্য একটা অনুরোধ, দয়া করে এই “ফাইজলামি মার্কা” লিখাটা লিখার জন্য লেখককে আঁতেল সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন না। শুধুই মজা করার জন্য এই লেখা। তবে, কেউ যদি নিজ দায়িত্বে এই লেখা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহন করে নিজের জীবনকে পরিবর্তিত করতে চান(!) তাহলেও লেখকের কোন আপত্তি নেই।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৩০