সেদিন সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো। সারাদিন বাসায় কাটালাম তবুও
একবারও জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে দেখতে ছুঁয়ে দিলাম না! বৃষ্টির কোন গান শুনলাম না। সন্ধ্যা থেকে খুব অস্থির লাগতে শুরু করলো। ইদানিং আমার এই 'অস্হির' লাগাটা খুব বেড়ে গিয়েছে!
তিন ঘন্টা হয়ে গিয়েছে এখনও যোগাযোগ করছে না। কোনো কল মিসকল, কিংবা এসএমএস দেয়নি। আমিও এর কোনটাই করছিনা কারণ
আমি দেখতে চাই ও কতক্ষণ আমাকে ছাড়া থাকতে পারে! কিন্তু এভাবে
অভিমান করে আমিও থাকতে পারছি না। সবকিছু খুব অসহ্য লাগতে থাকলো। বের হয়ে সিঁড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়ালাম। খুব ঝড়ো ঝড়ো বৃষ্টি হলে যেমন হয় তেমনি সবকিছু ভিজে চকচক করছে, মৃদু বাতাশ বইছে, সে বাতাশও ভেজা ভেজা। মনে মনে ভাবলাম, বাহ্ আজকের সন্ধ্যাটা তো খুব সুন্দর! কিন্তু আমার এমন অসহ্য লাগছে কেনো!?
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবতে ভাবতে আরও খারাপ লাগছিলো তাই নিচে নেমে হাঁটতে হাঁটতে গান শুনতে শুরু করলাম, "এসো হাত ধরো, চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে..." গানের কথা আরও মন খারাপ করে দিল। ওর কাছে না থাকাটা খুব বেশী অনুভব করতে থাকলাম। মনে মনে বললাম, ইশ...এখন যদি তুমি থাকতে তোমার হাতে হাত রেখে ভেজা রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটতে হাঁতে দু'জনে হারিয়ে যেতাম...আজ রাতটা হত চন্দ্রমানব আর চন্দ্রমানবীর হারিয়ে যাওয়ার রাত...
হাঁটতে হাঁটতে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বিষন্ন চোখজোড়া চকচক করে উঠলো। ইশ...কি সুন্দর চাঁদ! পাশে ছোট্ট একটা তারা। আমার মন ভালো হয়ে গেলো। মনে হলো ঐ চাঁদটা হচ্ছে ও, আর ঐ ছোট্ট তারাটা হলো আমাদের ছোট্ট বাবুটা, আমরা তিনজন হাত ধরাধরি করে হাঁটছি। চোখ বন্ধ করে ফিস ফিস করে বললাম, তুমিও কি আমাকে এভাবে অনুভব করছো?...মোবাইল এর ভাইব্রেশান এ চমকে উঠলাম। কল দিয়েছে ভেবে মন ভীষণ ভালো হয়ে গেলো। এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়লো! কিন্তু মোবাইল হাতে নিয়েই আশাভঙ্গ হল। কিছুই নাই।
এটা আমার একটা মানসিক রোগ! প্রায়ই ভাইব্রেশান হচ্ছে ভেবে ছুটে গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি কিছুই নাই। আবার যখন সবকিছুই এসে ভরে থাকে তখন দেখা যায় আমি অন্যঘরে থাকায় দেখিনি। অন্যদিকে ও চিন্তায় অস্থির! এভাবে অস্থির হয়ে আবার আমার সাথে রাগও করে!!! মনে মনে বলে উঠি...আমি জানি তুমি কল দিবেনা। কারণ এখন যে আমি তোমাকে অনেক বেশী কাছে পেতে চাইছি! এখন কি আর ভালবাসার অভিকর্ষণ তোমাকে টানছে না?
অবশেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিরতে শুরু করলাম। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ চোখ আটকে ধরলো। মূহুর্তেই অজ্ঞাত একটা ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো। কে বুঝে উঠার সাথে সাথেই সেটা চলে গেলো। হাত ধরে বললাম,
~আপনি? এত তাড়াতাড়ি ফিরেছেন যে!
-তোমাকে খুব মিস করছিলাম তাই বলে একটু আগে চলে আসলাম। কিন্তু তোমাকে তো ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। ভয় কি পেয়েছো? হার্টবিট কি বেড়েছে একটু-আধটু?
~হু বেড়েছে। একটু-আধটু না অনেক ভয় পেয়েছি। এমনিই সন্ধ্যাবেলা তার উপর এভাবে হঠাৎ করে ধরেছো ভয় তো পাবোই।
-কই হার্টবিট দেখি...
~পরে দেখেন।আগে বলেন এভাবে আর কখনও ভয় দেখাবেন না।
-Okay। কিন্তু তুমি রাতের বেলা বাইরে কি করো?
~রাত কই মাত্র সন্ধ্যা হলো...
-তারপরও রাতে বাইরে এসো না। আমার ভালো লাগে নাই।
~কেন? ভালো না লাগার কি হলো? বাসার সামনেই তো...
এভাবে কথা কাটাকাটি করতে করতে আমরা বাসার দিকে রওনা হই। প্রেম-ভালোবাসা-ঝগড়া-প্রেম-ভালবাসা...এইতো চলছে জীবন!
~কোথায় যাচ্ছেন? উপরে যাচ্ছেন কেনো?
-ছাদে চল। আজকে তোমাকে নিয়ে চাঁদ দেখবো। আজকে যখন প্রথম চাঁদের দিকে চোখ পড়েছিলো তখন থেকেই তোমাকে খুব বেশী মিস করছিলাম। ভাবছিলাম, তুমিও কি আমাকে এভাবে অনুভব করছো? তাই তো তাড়াতাড়ি চলে আসলাম।
করছিলাম না আবার! আমি মুখ টিপে হাসি...
~আচ্ছা চলেন। কি হল আবার দাঁড়িয়ে রইলেন কেনো? কি হয়েছে? এমন আমতা আমতা করছেন কেনো?
-খুব চা খেতে ইচ্ছা করছে একটু চা বানিয়ে খাওয়াবা?
~না। আপনাকে না বলেছি রাতের বেলা No চা!
-রাত কই? মাত্র সন্ধ্যা হলো...
~
- Okay চা বানাতে হবে না। চল ছাদে চল। কই তুমি আবার কই যাচ্ছো?
~চা বানাতে।
-মানা করলে যে?
~কথা না বলে আপনি হাত-মুখ ধুয়ে নেন।
-
চা নিয়ে ছাদে গিয়ে দেখি ছাদের একদম কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের ছাদটা রেলিং হীন। আমার আত্মা চমকে উঠলো। এ্যাক্রোফোবিয়ায় আক্রান্তদের মতো চিৎকার শুরু করলাম!
~আপনি কি করছেন??? ওইখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? পড়ে যাবেন তো...এদিকে আসেন। পড়ে যাবেন...
-আরে পড়বো না...
~এদিকে আসেন আপনি। প্লিয...
আমাকে ভয় পেতে দেখে ও আমকে পেয়ে বসলো।ফাযলামী ভরা গলায় বললো,
-তুমি করে বলো। নাহলে আসছি না...
আমি ওর নাম ধরেই ডুকরে কেঁদে উঠে বললাম,
~ ....এদিকে এসো...
মুহুর্তেই ওর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। ছুটে এলো আমার কাছে।
-একি তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? এত্তো ভয় পেয়েছো! আরে আমি তো ফাযলামী করছিলাম!
~...
-কেঁদো না প্লিয।আমি স্যরি। কাঁন্না থামাও, এভাবে কেঁদো না...প্লিয আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
ও আমার চোখের জল মুছে দিলো অধরের ছোঁয়ায়। ওর ছোঁয়ায় পূর্ণ পূর্ণ হয়ে থাকার আশায় আমার আরও অনেক বেশী কাঁদতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আমার ছন্নছাড়া হাসি সে সুখ পেতে দেয়না। আমি হেসে ফেলি,
~ হিহিহি...আপনি তো চোখের পানি খেয়ে ফেললেন। হিহিহি...
-হেহে...তোমার হাসির জন্য সবই খেতে পারি।
~যাহ্!
-সত্যি...
~এইবার দয়া করে চা খেতে চলেন । চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ছাদের একটা কোণে আমরা দু'জন বসি...ও সিগারেট খায়না কিন্তু ধরিয়ে পাশে রাখলো। কারণ বৃষ্টির দিনে আমার কাছে সিগারেটের মতো জঘন্য জিনিসের গন্ধও ভাল লাগে। স্যাঁতস্যাঁতে ছাদের সোঁদা গন্ধ, বৃষ্টির গন্ধ আর সাথে সিগারেটের কড়া গন্ধ...অনন্য নেশাময়...
-তোমার হাতটা একটু ধরতে পারি?
~না
-কেনো?
লক্ষী সোনা চাঁদের কণা হাতটি আমার ধরতে মানা...
ও মন খারাপ করে। আমারও মন খারাপ লাগে। তুমি কি কিছুই বুঝোনা? কি হয় নিজে থেকেই আমার হাতটা ধরলে? জীঙ্গাসা করতে হয়?
আমিই ওর হাত চেপে ধরে অভিমানী সুরে বলি,
~আপনি নিজ থেকে ধরতে পারেন না?
-জোড় করে ধরলে যদি মামলা ঠুকে দাও!
~আজব তো! ...কোথায় শিখেন এসব!
-একি একটা কাপ কেনো? তুমি চা খাবে না?
~হ্যাঁ এইতো।এটাই দু'জনের। নাও...
-বাব্বা! আজকে চা খাওয়ায় দিচ্ছো!!! তুমি ঠিক আছো তো? ব্যাপাড়টা কি?
~কোন ব্যাপাড় নেই। ইশ...আজকে জোরে বৃষ্টি হলে ভালো হত না? দু'জনে ভিজতে পারতাম। জোরে বৃষ্টিই হয়না।
-সুইজারল্যান্ডে যাব। সুইজারল্যান্ডে পাহাড় আর বৃষ্টি। গ্রামের দিকে কেউ নাই।
~গিয়েছিলেন নাকি?
-না ছবিতে দেখেছি আর গল্প শুনেছি। একবার ট্রানজীট ছিলো, এয়ারপোর্টটা পাহাড়ে ঘেড়া ছিলো, অনেক সুন্দর।
~তারপর?
-তারপর কি। গিয়ে দু'জনা বৃষ্টিতে ভিজবো আর...
আমি ওর কথা শুনি আর মনে মনে হাসি। অনেক আগে সুইজারল্যান্ডে শুট করা একটা ছবি দেখে আমি জায়গাটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তখন ভাবতাম বিয়ে হলে সুইজারল্যান্ডে যাব হানিমুন করতে! পরে অবশ্য পছন্দটা বদলে গিয়েছিলো। তারপরও আজকে শুনে অন্যরকম ভালো লাগছে। কখনও কখনও মনে হয় আমার যা কিছু চাওয়া না চাইতেই তুমি তা আমাকে এনে দাও, দিবে। এ জন্যই বোধহয় তোমাকে এতটা ভালবেসেছি...
আমি ওর বুকে হেলান দিয়ে আকাশের চাঁদ দেখি। ভেজা, ঠান্ডা বাতাশ আমদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়...যেন আমাদের দু'জনকে একসাথে মিশিয়ে দেবার পায়তারা করছে...ওর বাহুডোড়ের উন্ষতায় মনে হয় যেন পৃথিবীর সব সুখ আমাকে ঘিরে রেখেছে। আমি ওর বুকের আরও গহীনে নিজেকে লুকাই।
-আজকে তোমাকে অন্যরকম লাগছে। আরও বেশি সুন্দর লাগছে। টিপটাও দাঁরুণ হয়েছে। চা বানাতে গিয়ে টিপ দিয়ে এলে! আজকে হঠাৎ টিপ পরেছো কেনো?
~ইচ্ছা হলো তাই
-এমনি নাকি কোনো বিশেষ কারণ?
~এমনি
-ওহ
~বলেনতো এই টিপটার রং কি?
-নীল রং
~হয়নাই
-নাকি বেগুনী
~বেগুনী
- লাল টিপ পরতে...
~লাল টিপ পরলে কি আরও সুন্দর লাগতো?
-লক্ষী মেয়ে তোমাকে এমনিতেই পরীর মতো অনেক অনেক সুন্দর লাগছে...
~ইশ ঢং!
-সত্যি।
~জানি... :!>
ও আমার চুলে তিনটা সাদা ফুল গুজে দেয়। ভালবাসার মাধুর্যে ফুলগুলো আরও বেশী নেশাময়,আকুল গন্ধ ছড়ায়...
~আমি তো এমনি টিপ দিয়েছি আর আপনি যে আজকে হঠাৎ ফুল এনেছেন! এমনি নাকি কোনো বিশেষ কারণ?
-এমনি তুমি পছন্দ করো তাই ইচ্ছে হলো নিয়ে এলাম। তোমার চুল গুলোও যা না...বড়ই সোন্দর্য ।
আমার খোলা চুলে ও হাত বুলায়, এলো চুলের আড়ালে মুখ গুঁজে...ফুলগুলোও বুঝি অভিগামী মুহুর্তগুলোর গভীরতা বুঝতে উঠে ভয়ে চুল গড়িয়ে পালায়...
~আপনি খান তো...ঠান্ডা হয়ে যাবে।
-খাচ্ছি
...৩৬৭, ৩৬৬,৩৬৫...
~ইশ...কি করেন?
-Shhh...হিসেব মিলাচ্ছি
~তুমি কিন্তু ভুল হিসেব কষছো। আরও বেশি হবার কথা।
-তাই নাকি!
~হু..উহু...হিহিহি...
আজন্ম সলজ্জ সাধের স্বাধে মাতোয়ারা আমাদের হাসি মৃদু বাতাশে ভেসে যায়...চায়ের কাপে চাঁদ ভাসে...সে চাঁদটাও একসময় লজ্জায় মেঘের আঁচলের ঘোমটা টানে!
**************************************************************************************
সেদিনটা কোন বিশেষ দিন ছিলো না। তবে আজ আমার জন্য দিনটা বিশেষ...ঘুড়েফিরে ঐ দিনটায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। বিছানার চাদর বদলে তখনকার চাদরটা বিছালাম আর কি কি তখন কেমন ছিলো তেমন করতে চাইলাম। কিন্তু চাইলেই কি ফিরে যাওয়া যায়! না গিয়ে নতুন রূপে সাজানো যায়। কিন্তু একা একা সম্ভব নয়। যাহোক, বিশেষ দিনটার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসা...অনেক অঈপ্সিত সুখ তুমি আমাকে দিয়েছো...ধন্যবাদ তোমাকে। আর তোমার জন্য কল্পনার তিনটা সাদা ফুল...ফুলগুলোর ঋতু শেষ তাই এখন আর রোজ বাসায় ফিরার পথে তোমার জন্য আনতে পারি না...
✶⋆❤●.HaPpy MaGIcal AnNIvErSarY.●❤⋆✶
আমার ভালোলাগার দুটো গান...
তুমি আসবে বলে
তোমারে লেগেছে
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৫:১২