আমি কি ভুল শুনলাম নাকি সত্যিই এটা বললো!!! আবার শুনলাম। নাহ্, কোথাও কোনো ভুল নেই সত্যি বললো, "আগামী ৭ দিনের মধ্য আমার মৃত্যু হবে!"
ঘটনাটা শুরু হয়েছিলো এভাবে:
১ নভেম্বর, সোমবার, ২০১০ দুপুর ১২টা ৪৭ এর দিকে আমার রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় খাটের উপর রাখা মোবাইলের দিকে চোখ পড়লো। মনে হলো কল এসেছে! ভাবলাম যদি ও কল দেয়। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি সত্যিই ১২টা ৪৬ মিসকল এসেছে কিন্তু আননোন নাম্বার! আমার মনে হচ্ছিলো ওর কল তাই মোবাইল হাতে নিয়ে বসে রইলাম পরের কল এর অপেক্ষায়। ১২টা ১টার দিকে ওর কলই আসে আর যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে এখন নিশ্চয় একবার কল করবে...আবার রিং হওয়া মাত্রই রিসিইভ করবো। ১২টা ৪৮ এ আবার কল আসলো কিন্তু আননোন নাম্বার দেখে শেষ পর্যন্ত আর রিসিইভ করলাম না। ভাবলাম ও হলে ভয়েস ম্যাসেজ দিবে। তারপর নাহয় শিইওর হয়ে কল রিসিইভ করবো। একটু পর সত্যিই ভয়েস ম্যাসেজ আসলো। খুবই ভালো লাগতে থাকলো যাকে আশা করছিলাম সে ই কল দিয়েছে তাহলে! অনেক আগ্রহ নিয়ে ম্যাসেজ শুনতে শুরু করলাম। প্রায়ই এমন হতো হঠাৎ মনে হতো ও কল কিংবা এসএমএস দিয়েছে সত্যিই দেখা যেত ও দিয়েছে। প্রকৃতি মাঝে মাঝে পরিবর্তন পছন্দ করে । কিন্তু এখন করলো না। ও কল দেয় নি. . .
ম্যাসেজ শুনে আমার ভ্রু কুচঁকে গেলো। কেউ একজন খেক খেক করে হাসছে! এটা কোন হাসি হলো! আবার মূহু্র্তের জন্য ভাবলাম হাসছে নাকি কাঁদছে!?! কে??? আমি হতভম্ব হয়ে গিয়ে ভাবতে লাগলাম কে হতে পারে যে এভাবে হাসছে? কন্ঠ তো অপরিচীত! রং নাম্বার নাকি?
অবশেষে হাসতে হাসতে বলে উঠলো আমি নাকি আগামী ৭ দিনের মধ্য মারা যাব!!!
What the....আমি কি ভুল শুনলাম নাকি সত্যিই এটা বললো!!! আবার শুনলাম। নাহ্, কোথাও কোনো ভুল নেই সত্যি বললো, "আগামী ৭ দিনের মধ্য আমার মৃত্যু হবে!"
মেজাজটা বিগড়ে গেলো। একে তো যে কল আশা করেছিলাম সেটা আসে নাই তার উপর এই ধরনের বিরক্তিকর কথাবার্তা! মানুষের কি খেয়ে কাজ নেই? শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে অন্যদের কল বিরক্ত করে! ওহ ভুলেই তো গিয়েছিলাম এখন তো মোবাইল কোম্পানিগুলার গ্রাহক সেবার তুলোনা হয় না! দু'দিন পর পর এটা ফ্রী ঐটা ফ্রী!!!
প্রথমে মেজাজ বিগড়ে গেলেও একটু পর ভাবতে লাগলাম সত্যিই যদি কোন এন্জেল এসে আমাকে এই কথাটা বলত এগুলো আমার শেষ সাত দিন তাহলে কি হত? প্রথমেই আফসোস করতাম কেনো ৭দিন ১৪/১৫ দিন কেনো না! অন্ত্যত ১৩ই নভেম্বর পর্যন্ত আমার বাঁচা দরকার নাহলে একটা বিশেষ দিন সেলিইব্রেট করতে পারবো না। আবার ভাবলাম একা একা কিভাবে সেলিইব্রেট করবো? একা একা তো কোনো কিছু সেলিইব্রেট করা যায় না। করলেও করে লাভ কি?
তারপর ভাবলাম মৃত্যু হলে সেটা কিভাবে হবে? উমম...আমার ধারণা সড়ক দুর্ঘটনা হবে। একা রাস্তা পাড় হওয়াটা আমার জন্য সবসময়ই কঠিন! পাড় হবার সময় প্রায়দিনই ধাক্কা খাবার উপক্রম হয়। এইতো গত বৃহস্পতিবার আর একটু হলেই গাড়ীর নিচে চাপা পড়ছিলাম! অন্যমন্স্কভাবে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নিজেকে রাস্তার একদম মাঝে আবিষ্কার করলাম; অপরদিকে সবুজবাতি জ্বলছে, সমানে গাড়ী ধেয়ে আসছে... তারপর? একটু দাঁড়িয়ে থেকে দে দৌড়...হা! হা! বাসায় ফিরেও ঘটনাটা নিয়ে হাসাহাসি করলাম। এখন মনে হচ্ছে সেদিন তো গাড়ীর নিচে পড়লেও পড়তে পারতাম! আবার গত দুদিন ধরে এখন পর্যন্ত ভয়ানক মাথা ব্যাথা। ঘুমাতেও পারি না। একদিন ঔষুধ পর্যন্ত খেলাম। তারপরও কমলো না। মনে হচ্ছিলো, এখনও হচ্ছে মাথা ব্যাথাতেই বোধহয় মারা যাব!
তারপর সত্যিই মরে গেলে কি হবে ভাবতে ভাবতে এক এক করে মনে হতে লাগলো...একজনকে কাছ থেকে দেখার খুব ইচ্ছা তার সাথে দেখা হবে না। এ জীবনে একদিনের জন্য হলেও দুটো স্হানে ভূমিকা পালন করার ইচ্ছে ছিলো সেটা হবে না। এমন অনেককিছু। এটা-ওটা কত কিছুই করা হবে না!
একটা নাটকের কথা মনে পড়লো যেখানে একটা এন্জেল এসে ছেলেটাকে বলে ওর বউটা আগামী সাতদিনের মধ্য মারা যাবে। তারপর থেকে ছেলেটা জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে যেন ওর বউটার শেষ সাত দিন খুব ভালোভাবে আনন্দে কাটে। অপরদিকে মেয়েটাকে হারাবে সেই ব্যাথাটা ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। চিন্তা করতে করতে একসময় এন্জেলটাকে বলে মেয়েটা যেন বেঁচে থাকে বিনিময়ে সে নিজের জীবন দিতে রাজি। সাতদিনের মাথায় জ্বর এসে ছেলেটা মারা যায়।
আমি যদি সত্যিই সাত দিনের মধ্য মারা যেতাম তাহলে সেটা জানলে কে কি করত ভাবার চেষ্টা করলাম। আমি নিজে জানলে শেষ সময়টুকু আমার বাবা-মার সাথে কাটাতাম। তবে কাউকে কিছু বলতাম না। যেমন এই ঘটনাটাও যদি আমার মা কে বলি সে পারলে আমাকে সাতদিন বাবলর্যাপ দিয়ে মুড়ে রাখবে! তাই কিছু বলিনি। অবশ্যই যাকে দেখার খুব ইচ্ছা তাকে দুর থেকে একবার দেখে আসতাম। উমম...আর কি করতাম? আমার অবস্থা ঠিক এমনি হত। এত অল্প সময়ে কি রেখে কি করবো ভেবে পেতাম না!
যদিও এমন প্রশ্ন করা উচিৎ না তবুও না করে পারছি না। আপনারা কেউ যদি জানতে পারেন আগামী সাত দিন হলো আপনার জীবনের শেষ সাত দিন তাহলে কে কি করতেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৬:২২