----------------------------------------------------------
প্রথম পর্বঃ
ঢাকা টু কেওক্রাডং ভায়া বগা লেক (ছবি ব্লগ)-১
Click This Link
--------------------------------------------------------------------
মাঝখানে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে। সময় পাচ্ছিলাম না। আজ আবার লিখতে ইচ্ছে হলঃ
০২/০৫/২০১৪ (২য় দিন) -
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো কিছুটা আশঙ্কা নিয়ে। বৃষ্টি হচ্ছে, যদিও মুশলধারে নয়। তবুও শঙ্কা কাটছিল না। কিছুক্ষন পর চান্দের গাড়ির ড্রাইভার ফোন দিল, আমরা রেডি কিনা জানার জন্য। বৃষ্টি নিয়ে আমাদের শঙ্কার কথা শুনে হেসেই উড়িয়ে দিল," আরে বৃষ্টিতেই তো মজা"।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই শুরু করলাম আমাদের দ্বিতীয় দিনের যাত্রা। আজকের প্রথম গন্তব্য নীলগিরি।
নীলগিরি-পথে.......
ঐ যে দূরে সাংগু নদী..........
বর্ষাকাল না হলেও যাত্রা পথে আমাদের বেশ কয়েকবার মেঘের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মেঘ ধরার চেষ্টা করেছিলাম। পারলাম না। উপলব্ধি করলাম মেঘ ধরা যায় না।
পিক-৬৯, বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পথ
কিছু বলার নাই..............
অবশেষে নীলগিরিতে----
এটাই নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র। গ্যারন্টি দিয়ে বলতে পারি নীলগিরি আপনাকে মুগ্ধ করবেই......
আমাদের চান্দের গাড়ির পাইলট এর সাথে......
আর এক টুকরো ভালোলাগা....
মন না চাইলেও একসময় বিদায় জানাতেই হল নীলগিরিকে। আরও বড় সপ্নের পথে আমাদের যাত্রা যে এখনও বাকি। যাত্রা শুরু করলাম বগালেক-এর উদ্দেশ্যে।
পথিমধ্যে দেখে নিলাম এক কালের বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চিম্বুক--
চিম্বুক হাইওয়ে রেস্টহাউস।
চিম্বুকের দুরবস্থা দেখে তার অতীত ঐতিহ্য কল্পনা করতে কষ্টই হল। যাই হোক চিম্বুকের অবস্থা বা দূরবস্থা নিয়ে চিন্তা করার সময় আমাদের কোথায় । আমরাতো চলেছি স্বপ্ন যাত্রায় "বগালেক"।
ওয়াই জাংশন..। বাম দিকে রুমা আর ডান দিকে নীলগিরি যাবার পথ..
এক সময় পৌঁছে গেলাম রুমা বাজারে। রুমা থানার অন্তর্গত মোটামুটি বড় একটি বাজার। এটাই বগালেক যাত্রার গেটওয়ে। বগালেক যাত্রার জন্য এখান থেকে গাইড ঠিক করতে হয় আর স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হয়।
রুমা বাজার থেকে তোলা সাংগু নদী..
রুমা বাজার সেনা ক্যাম্পে......
পাহাড়, নদী, বন-জঙ্গল সব পেড়িয়ে আমরা এগিয়ে চললাম বগালেকের উদ্দেশ্যে। বুকের মধ্যে অনেক রোমাঞ্চ। একসময় চোখের সামনে অবগুন্ঠিত হল সমুদ্র সমতল থেকে ২৭০০ ফুট উচুতে আশ্চর্য এক জলাধার, অনেক অপেক্ষার 'বগালেক'। একরাশ মুগ্ধতা চোখে নিয়ে কিছুক্ষণ নির্বাক তাকিয়ে রইলাম শুধু।--
বগালেকে আমাদের আস্তানা জুটলো সিয়াম দিদির কটেজে--
বগালেকে আমাদের আস্তানা...
অপেক্ষার প্রহর শেষে আর তর সইছিল না। কটেজে ব্যাগ রেখে, কাপড় চেঞ্জ করে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লাম লেকের স্বচ্ছ পানিতে।
লেকের পানিতে আমরা কজনা..............
লেকে লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি শেষ করে টের পেলাম পেটের মধ্যে ছুঁচো নাচানাচি করছে। সিয়াম দিদি হোটেলেই জুটলো দুপুরের খাবার। মেনু ভাত, আলুভর্তা, ডিম ভাজি, ডাল, লাউয়ের তরকারি আর টমেটোর সালাদ। সাথে মনোরম ঠান্ডা ঝরনার পানি। বলে রাখা ভাল ভাত, আলুভর্তা, ডিম ভাজি, ডাল এখানকার প্রতি বেলার খাবারের কমন মেন্যু।
সিয়াম দিদি। বগালেক ভ্রমণকারীদের কাছে এক কিংবদন্তী চরিত্র। প্রচন্ড বুদ্ধিমতী এ মহিলার আথিতেয়তায় মুগ্ধ হবে না এমন মানুষ বিরল।
বিকেলটা কাটলো লেকের আশেপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করে।
বগালেকে দুটি ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চা। যেই ছবি তুলতে চাইলাম অমনি নাচতে শুরু করল।
এক সময় সন্ধ্যা নামলো, সূর্য গেল পটে-
পাহাড়ে সূর্যাস্ত.........
রাত হল। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে চালু হল জেনারেটর। সবাই ছুটলো মোবাইল আর ক্যামেরার ব্যাটারী চার্জ করতে। বেশ কয়েক গ্রুপ দেখলাম বারবিকিউ-র আয়োজন করেছে।
রাতের খাবার পর পরবর্তী দিনের কর্মসূচী ঠিক করতে বসলাম সবাই মিলে। আলোচ্য বিষয় পরদিন আমরা কেওক্রাডং যাবো কি না। যদিও আমাদের পরিকল্পনায় কেওক্রাডং সেইভাবে ছিল না। কিন্তু এতদূর এসে কেওক্রাডং না দেখেই ফিরে যাবো সেটাও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। যদিও পুরোটা পথ যেতে হবে হেঁটে, তার উপর পরদিন রাতে আমাদের অবশ্যই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। কিছুটা ভিন্ন মত থাকলেও আমাদের ভ্রমণ সঙ্গী ইলিয়াসের দৃঢ়তায় কেওক্রাডং যাত্রার বিষয়ে একমত হলাম আমি, লালন, রোকন, রানা, মুমিত আর ইলিয়াস। বাকিরা বগালেকেই কাটাবে।
সারা শরীরে ওডোমস মেখে ঘুমাতে গেলাম। কাল খুব খুব ভোরে উঠতে হবে। সামনে আর এক স্বপ্ন যাত্রার হাতছানি।
(চলবে...........)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬