অল্প একটু পরই ভোর হবে। আযান হবে, পাঁচ দশ মিনিট পর পর কাছের কিম্বা দূরের কোন মসজিদের। চারিদিক থেকে মোরগ এর ডাক ভেসে আসবে। সালাত, সালাত বলে চিনা-পরিচিত মুরব্বিরা ডাকবে।
তাহাজ্জুদ পড়ে, কুরআন শরীফ নিয়ে বসেছি। পাশের রুমে আম্মু তাহাজ্জুদ আদায় করে মোনাজাত ধরেছে। চুপ চুপ কান্না আম্মুর। তাঁর সন্তানদির জন্য কান্না। এরা যেন মানুষের মতো মানুষ হউক। পথে ঘাটে বিপদ-আপদে উপরওয়ালা যেন রক্ষা করে। প্রতিদিন মায়ের এই শেষ রাতের নিঃশব্দে কাঁন্নাটা অদ্ভুত লাগে।
মায়ের মোনাজাত শেষ করে এসে বলে। "বাবাজান নামাযের সময় কাছে চলে আসতেছে। তাড়াতাড়ি মসজিদে গিয়ে সুন্নাত আদায় করে নিস। যা বাবা, দেখেশুনে যাস, কুকুরের পাশ ঘেঁষে যাস না। নামাজ পড়ে এসে সুরা ইয়াসিন পড়ে নিস। "
মায়ের এমন ভালোবাসাটা খুব ভালো লাগে। মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতো। বড় হয়ে ভালো একটা হুজুর হবে। দ্বীন'হারা মানুষদের ইসলামের দাওয়াত দিবে। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করবে। মসজিদের সেবক হবে। আরো অনেক অনেক স্বপ্ন দেখতো আম্মু।
হ্যাঁ! এসব আম্মুর স্বপ্নএ থেকে গেলো। এই সাত বছরে নিজের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আম্মু যা যা চাইতো আমাকে নিয়ে। তা আর হলো না। বয়স যখন ষোলোতে, নিজেকে নিজের মতো করে নিয়েছি। চার দেয়ালের গন্ডি পেরিয়ে অনেক অজানা কে জেনেছি। দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষাটা শেষ করে নিজেকে আরো মডিফাই করেছি। ভালো খারাপ কি হয়ছি সেটা বলবনা কিন্তু পারিবারিক মতাদর্শ টারে ইগনোর করা শিখেছি।
এখন সেই পনেরো বয়স টা আর নাই। শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ, কুরআন পড়া টাও বাদ গেছে। এখন তো মসজিদেই যাই না। এই ধর্মকর্ম বাদ দিয়ে দিছি। শেষ কবে জুম্মা টা আদায় করছি মনে নাই।
ঘর ছেড়েছি দুই টা বছর পেরোল। সাথে ছেড়েছি মায়ের ঈশ্বর কেও। মা-ইতো আমার ঈশ্বর। কিন্তু কজনে ঈশ্বরের স্বপ্ন পূরণ করে। তাদের মাঝে আমিও একজন। ধীরে ধীরে এই ঈশ্বরের অবাধ্য হতে চলেছি।
বাইশের মাঝামাঝি চলতেছে এখন। শহুরে ব্যাচেলরে থাকি। নিঃসঙ্গ। যদিও রুমমেট একজন আছে। তারপর এই শহুরে শিকড় ছাড়া থাকা টা নিজেকে ভিষণ একা লাগে। সারারাত ড্রাগসে সপ্তাহে একবার ব্রোথেলে নিজেকে এখন আবিষ্কার করি। মাঝেমাঝে নিজেকে নিয়ে ভাবলে অদ্ভুত খারাপ লাগে।
আর এখন ভাবি যে তখন আমাকে, আমাদের নিয়ে উপরওয়ালার কাছে চাইত মা। এখনো কি চাই নাকি অভিশাপ দে। মায়েরা কি তাঁর অবাধ্য সন্তানদের জন্যে অভিশাপ দে.....?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৫:০৮