© সুরঞ্জন আহমেদ
কাব্যের মোহে নাকি প্রেমে
ডুবেছিলাম
জানা নাই,
হয়তো মোহে পড়েছিলাম।
তা নাহলে কাব্যের সমাপ্তি ঘটতো না
অল্পতেই
দমে যেত না,
নিবিড় পরিচর্যার আড়ালেও।
মর্ডান নাহয় পোষ্ট-মর্ডান
কোনটাতেই ঠাঁই হইনায়,
হয়তো রয়ে গেছি
ঘুণধরা পরিত্যক্ত মাচায়।
নিজকে আগলে রেখেছি
সুবোধের অন্তরায়,
বুক উঁচু করে এগোয়নি
নগ্নতার সভ্যতায়।
নিজেকে নিজে
জানার চেষ্টাও করিনি কোনদিন,
বেঁচে থাকার মাহাত্ম্য
উপলব্ধি করার সময়
এসেছিল কিনা
ভাবেনি।
কিসের জন্য বাঁচতে এত সংগ্রাম
স্বপ্ন দেখার জন্য
স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য_???
তবে ফিরে এসো____
__________________এক____________________
স্বপ্নের প্রহেলিকা
গূঢ়ার্থ সময়গুলো খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে আসে
যখন
কবির আধ্যাত্মিক ভাবনার গভীরে ছেদ পড়ে,
হাজারো কাব্যিকতার পাণ্ডুলিপিতে গড়াগড়ি খাই শব্দের ভারে
তখন
কবির ভবঘুরে মন শুয়োপোকার মত লুকোচুরি করে ঘাড়ে।
কতো নিষ্ঠুর লাগে রাত্রির নিস্তব্ধ গভীরতায়
যখন
মুখোশের আড়ালের মানুষগুলো কুকুরে পরিণত হয়ে যায়,
কবিরা রাতের আঁধারে স্বপ্নের প্রহেলিকায় ডুবে থাকে
তখন
রাজ্যের আণ্ডিলরা নিস্পাপ প্রসূনের উপর লেলিয়ে থাকে।
কি হবে শতসহস্র শব্দের হাজারো পাতার ভাঁজে ভাঁজে
কাব্য গেঁথে।
ধুসর পাণ্ডুলিপিটা পড়ে থাকবে মরচে ধরা টেবিলের উপর
নিথর হয়ে।
তবুও কবির আত্মবিশ্বাস কোন একদিন জেগে উঠবে
নতুন ভোর নতুন ঊষান দিগন্ত জুড়ে,
কুকুরগুলো ফাঁসির দড়িতে ঝুলে থাকবে
ক্রমে ক্রমে একেকটি দিন জুড়ে।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা হাঁকিয়ে বেড়াবে
গোটা শহর থেকে শহরান্তরে
প্রহেলিকার কাঁটা ভেঙে,
কবি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়বে একসময়
ক্লান্তিকর জীবনের অবসান ঘটিয়ে
আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলে।
___________________দুই ___________________
কাদের জন্য যুদ্ধ করেছি
জড়বস্তু ব্যালট পেপার
হায়েনাদের হাতে রাতজুড়ে ধর্ষিত হয়
কতিপয় দলকানাদের হাতে সেই ধর্ষিতারা
একে একে আবার ধর্ষিত হয়।
একটি অশুভ ছায়ার শৃঙ্গ ধীরেধীরে পুনর্জন্ম নে
একটি অসভ্য উন্মাদ নেতৃত্বের হাতে সঁপে দে।
রক্তস্নাত পবিত্র ভূমির বুকে
হিংস্ররা আবার জন্ম নে।
ডেকে আনে আগ্নেয়গিরির গর্জন
ডেকে আনে মৃত্যুপুরীর ধ্বংসস্তূপ
ডেকে আনে পশুত্বের লোলুপদৃষ্টি
ডেকে আনে শকুনির তাণ্ডব।
সেইসব হায়েনারা চুষেনে
রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র
আর
জনতার স্বাধীনতা।
স্বর্গীয় ভূমির পূত আত্মারা
গর্জে উঠে কেঁদে উঠে।
নিঃস্ব হয়ে দেখে থাকে জন্মভূমি
ভাবে
কাদের জন্য যুদ্ধ করেছি।
_________________তিন____________________
ভাঙাচোরা স্বপ্ন
নির্ঘুম রাত প্রহরী আমি এক ব্যর্থ কিশোর
গুমোট তিমির অন্দরে ডুবে থাকা সব স্বপ্ন,
সবি আশার দেনাপাওনা নীলাভ গভীরে প্রোথিত হয়ে
একচ্ছত্র হারিয়ে যাওয়ার শূন্যতার অনুভবে মগ্ন।
নাহি প্রেম নাহি আলোকছটা সতেজ হৃদয়ের খোরাকে
কিংবা উন্মাদনা স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠা সদ্য কিশোর,
আকাশ সম অধিকারের দেদারসে আকুলতার আর্জি
সকলের তরে, কিন্তু সবি বাঁধা-বিপত্তির রাজ্য অলসপুর।
_________________চার_____________________
বিদীর্ণ মন
আকাশটা আজ একলা হয়ে আছে।
তা শুধু আমার জন্যেই
জানিনা কেন এমন হলো,
পৃথিবীটা কত নিষ্ঠুর।
আচ্ছা শুধু কি আমার জন্যই।।
কত পথ চেয়ে বসে আছি
জীবন অববাহিকতায়
তবুও শেষ হয় না আমার চাহনি,
কেন আমার জন্য এত নিষ্ঠুর হয়ে আছে
প্রকৃতির রহস্যময়ী আবডালের গহীনে।
জীবন বড়ই অস্থির।
কোন এক অশুভ ঘুণাক্ষরে
আলসে সময় শেষ হয়ে আসে,
নাকি আমি উম্মাদ হয়ে গেছি
নিষ্ঠুর পৃথিবীর রঙ্গিন হাওয়ায় ভেসে।
আজ আকাশটা একলা হয়ে আছে
আমার মন বিদীর্ণ যান্ত্রিকতায়।
জীবন এখানেই শেষ, নাকি আরো বাকি
জানো কি তোমরা কত নিষ্ঠুর এ পৃথিবী।
শুধু আমার জন্যই।
_________________পাঁচ _____________________
কাকতাড়ুয়া
কেউ ভাবেনি আমাদের নিয়ে
আমরা ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্তর হচ্ছি
কেউ ভাবেনি, আমরা কোথায় গিয়ে ঠাঁই নিচ্ছি।
প্রকৃতির প্রবীণরা সবাই আজ বোবা হয়ে গেছে
আমরা কি করি তাদের ভাবনায় আসেনা
তাহারা আমাদের চাক্ষুষ ভুলে গেছে।
প্রকৃতির রঙে যখন মেতে উঠি সারা গাঁয়ে
শান্ত নিভৃত পুকুরের জল ঘোলা হয়ে আসে
আমাদের উৎপাতে, তখন কেউ দেখেনা
সবাই বাকহীন নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়া।
অপর ধর্মের দর্শনে গেলেই যেন
তাদের টনক নড়ে, মাথার উপর পাহাড় ভেঙে পড়ে।
আমাদের নবীনদের মগজটাকে তাহারা গিলে খাচ্ছে
সাম্যবোধ চুবিয়ে।
__________________ছয়___________________
ছুটির ঘণ্টা
শরাব সেই কবে ফুরিয়ে গেছে
কোটরে ভরে গেছে বিড়ির ছাইয়ে
ছড়িয়ে আছে ধূসর মিশ্রিত গন্ধে
নির্বিকার লজ্জিত দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে
শতসহস্র দিনের একজন নিরব দর্শক সেজে।
অতঃপর...
জেগে উঠেছে লুকিয়ে থাকা পশুত্ব
কাম বাসনার ক্ষুধার্ত নিষ্ঠুর শিকারির,
ঝাঁপিয়ে পড়েছে শান্ত শিকারের উপর
নিস্তব্ধ নিশিত সাক্ষী হাহাকার ফুলির।
অবশেষে...
নাহি পৌঁছে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের ধারে
সীমাহীন বাঁধা সময়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
মরুর বুকে তৃষ্ণার্ত পথিক হয়ে
স্বপ্নের জাল বুনে ছুটিরঘণ্টা বেজে উঠবে।
_________________সাত______________________
বাইসাইকেল
সাহেবি মিয়ার হাতে জ্বলন্ত বিড়ি
মুখে বিড়ির বর্ণহীন গোলক ধোঁয়া,
কুচ কুচে কালো শুকনো ওষ্ঠদ্বয়
ধীরেধীরে নিচ্ছে মুখে বিড়ির ছোঁয়া।
অতঃপর,
আমার দু'হাতে তাঁহার শুভ্র দু'হাত
আমার দু'পায়ে তাঁহার শ্রান্ত দু'পায়ো,
আমার শুষ্ক মসৃণ শরীরে উপর
তাঁহার ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত ঘর্মাক্ত দেহো।
অবশেষে,
ছুটছে তীব্র বেগে
যেতে হবে অতিসত্বর
সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
__________________আট_____________________
স্মৃতির ছায়া
আছি এখনো অপেক্ষায় শরৎ এর নীড়ে
প্রহর গুনি তুমি আসবে ফিরে,
শুভ্র কাশের বুকে।
অপলক তাকিয়ে থাকতাম দূর নীলিমায়
কিংবা হারিয়ে যেতাম মেঘের ভেলায়,
আজো খুঁজে ফিরি তোমায়।
শত লগ্ন যাচ্ছে ফুরিয়ে
শ্যামল গোধূলির বুকে
অপেক্ষায় আমি নিষ্ঠুর এপারে।
কথা দিয়েছিলে তুমি আসবে পূর্ণিমারাতে
কই পেরেছো এসে আমাকে দেখাতে
তুমি ভালো থেকো ও পাড়েতে।
____________________নয়___________________
দেয়ালের ওপাশে
যেতে হবে আমাকে দেয়ালের ওপাশে
লাল রঙের শাড়ি পড়ে যেতে হবে,
কপালে সিঁদুর হবে লাল টুকটুকে
ওষ্ঠদ্বয় ভরে যাবে গোলাপি লিপিস্টিকে।
যেতে হবে আমাকে পর্দার আড়ালে
কেশরের ফাঁকেফাঁকে বেণি গেঁথে,
কানে দুল গলায় মালা পড়ে
দেহে ছড়াতে হবে চম্পার সুগন্ধে।
অতঃপর..!
গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যায় ওপাড়ে ভিড়া
এখানেই আমার সাজের দেওনা পাওনা,
নিজেকে সবার চাইতে সুসজ্জিত দেখানো
খদ্দরের নিকট নিত্যনৈমিত্তিক চাওয়া।
হঠাৎ..!
কেউ এসে দরজার ওপাশে নিয়ে গেল
আমাকে ভোগ করার জন্য, একটি রাত্রি
মৃদু রঙিন আলো ছড়িয়ে আছে চারপাশ
এইতো শুরু হবে, দিবারাত্রির সমাপ্তি।
অবশেষে..!
দেয়ালের ওপাশে পড়ে আছে খাটে
অর্ধমৃত দেহ, এক রাত্রির ইতিহাস।
প্রতিদিনকার মতো একটি ভোর হবে
দিনের জন্য ক্ষণিক পরিত্রাণ, রাত্রির নিঃশ্বাস।
পৃথিবী নিস্তব্ধ আমাদের জন্য, হয়ত
এর মাঝে এ আরেক কুঁড়ে পৃথিবী
মুক্তি পাবো, রুপক্ষয় হয়ে আসছে
স্বপ্নের দুয়ারে আশার জাল বুনি।
__________________দশ ____________________
তাহারা
চিন্তিত কিংবা আনন্দিত
তাহার মাঝে আমি বন্দিত।
আমি ভাবি, তাহারা চাহে কি
পারি না তা, তাহাদের মত
একটু হাসি কিংবা একটু কান্না
আমি, ভবঘুরে আছি মনঃশত।
তাহারা, জানি না আমাকে চাহে কিনা
আমি, তাহাদের ডাকে কিংবা নিজিচ্ছায়
অপেক্ষায়ামি- জাগরণে না হয় শয়নে।
তাহাদের ছলে আমি মাতাল
আমি দিশেহারা, তাহাদের বলে
আমি উন্মাদ, তাহাদের রঙে-ঢঙে...!
আমি তাহাতে হারিয়ে যায়
হারিয়ে যায় ঘুমে গানে
সময় শেষ হয়ে আসে আমায়
স্বপ্নে, আলসে, তাহাদের টানে......!
_______________এগারো ____________________
নিষ্ঠুর রাত্রি
নিষ্ঠুর নিয়নে নিশিবেলার ইতি ঘটে
ভোরের ঘোরে নিজেকে বেখাপ্পা লাগে,
প্রতিদিন প্রতিনিশি ওষ্ঠ থেকে পদমে
দেহ বিরামহীন নষ্টার হস্তে মুখে।
পাশবিকতা, জর্জরিত নিষ্পেষিত আমার ক্ষত
পড়েথাকা তেতলানো রক্ত জবার মত।
জানিনা এথেকে নিস্তার পাব কিনা
উত্তাল ঝড়ে যেন মিশে গেছে
আমার অস্তিত্ব আর আমার জীবন
পরিত্রাণ, কোন দিনও মিলবেনা বেঁচে থাকতে।
তবুও আশায় বসে থাকি হতাশায়
যৌবনের খাঁচা থেকে মুক্তি পাব
নীলিমায় মনের পঙখীরা ডানা মেলবে
আমার ধুলোমাখা ঘুড়ির দেখা পাব।
___________________বারো____________________
দেহ
আমি অত ভাষার চাষা নই
আমি অত স্বপ্নের রঙধনু নই।
নিগূঢ় নিশিতে নিবারণ শয়নে মরণ
জেগেছি ভোরে দেখেছি আলোর নাচন।
ভাবতাম পিচঢালা রোডে পদপিষ্ট হতাম
তাহলে বৃত্তে বন্দী না থাকতাম।
নিথর নিস্তেজ দেহ পড়ে থাকতো
স্বপ্ন গুলো শান্তে ঘুমাতে পারতো।
দেহ উল্লাস স্তিমিত প্রগাঢ় ভান
আত্মার আজ সুখশান্তি বহমান।
_________________তেরো____________________
শূন্যতা____
তবে, ফিরে এসো ____________
✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑✑
এখানেই কবিতার সমাপ্তি শুধু নই। সমাপ্তি কবিতার যাত্রাও।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৪০