হাত থেকে প্লেট টা পড়েই ভেংগে গেল। রিমা এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখেছে কি-না, না কেউ দেখে নি ভেবে তার আত্মায় যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
-রিমা তুই একটু দেখেশুনে কাজ করতে পারিস না , তোকে আর কতবার বলব বলতো।.
~রিমা কিছুটা আতকে উঠে বলল, হাত ফসকে পড়ে গেছে খালাম্মা ।
-ঠিকে আছে ;যা এখন সামায়ন কে চা-টা দিয়ে আয় ; সকাল সাতটা বেজে গেছে কিন্তু ।
"" সেই প্রথম দেখাতে রীধি কে বিয়ে ...বিয়ের রাতেই অনেকটা অভিমান...আস্তে আস্তে একটু একটু ভাল লাগা .... ওর সাথে আধো আধো কথা ... এখন হয়তো দুজন দুজন কে পছন্দ করলেও মুখ ফুটে কিছু না বলা...শুয়ে শুয়ে ওকে নিয়ে এসব ভাবতেই বেশ ভাল লাগছে....গতরাতে আধো আধো ঘুমের মাঝে রীধি কে নিয়ে আধো আধো স্বপ্ন দেখার ঘোর যেন কাটেই নি এখনো ...
ঘোর কাটলো রিমার কন্ঠ শুনে ... মেয়েটা কিছুদিন ধরে কাজ করছে তবুও ওর শিশুসুলভ আচরন দ্বারা বাড়ির সকলের মন জয় করে নিয়েছে ; যদিও এর মধ্যেই কয়েকটা প্লেট ভেংগেছে.।
দরজা খুলতেই রিমা বলল ভাইজান আপনার চা নেন ....
ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে যেতে আট টা বেজে গেল ... তাড়াতাড়ি করে নাস্তা করছি হঠাৎ মা বলল, সামায়ন বৌ'মা কে আনতে যেতে হবে না ,কবে যাবি কিছু ভেবেছিস ; আজ সাতদিন হয়ে গেল মেয়েটা বাপের বাড়ি আছে।
মা'র কথা শুনে খাবার যেন গলায় আটকে গেল কোন কথা বের হচ্ছেনা মুখ দিয়ে... কিছুটা সময় নিয়ে বললাম, যাবো মা ,কালকেই যাবো রীধি কে আনতে।
....
আজ অফিসের কোন কাজেই ঠিকমত মনোযোগ দিতে পারছি না । রীধি কে আনতে যাবো সেই উত্তেজনায় যেন সময়ই পার হচ্ছেনা । থেকে থেকে ওর কন্ঠের গানটা মনে পড়ছে, মাঝে মাঝে তো নিজেই গাওয়ার চেষ্টা করছি.। যদিও ভাল গাইতে পারি না তবু ওর সাথে সুর মিলিয়ে দুজনে একসাথে গাইতে ইচ্ছে করছে খুব , জানি না পারবো কিনা ওর মতো করে গাইতে।
হঠাৎ ফোনের শব্দে একটু আতকে উঠলাম, আর মনে মনে ভাবলাম পাগল হয়ে গেলাম নাকি, কি সব ভাবছি আজকাল। প্রেমে পড়লে মানুষ মনে হয় এই টাইপের পাগল হয়।
ফোনটা বেজেই যাচ্ছে, খুব বিরক্ত লাগছে ওর শব্দটা। রিসীভ করে হ্যালো বলার পরও কোন উত্তর না পেয়ে আবার বললাম হ্যালোওও.. কে বলছেন। এইবারও কোন উত্তর নেই, কিন্তু বুঝতে আর বাকি রইলো না যে রীধি ফোন করেছে ; ও কোন কথা বলছে না কিন্তু কাদছে। হ্যালো কে, রীধি, কি হয়েছে তুমি কাদছো কেন । ভীষণ কষ্ট লাগছে ও কাদছে ভেবে।
ভারী কন্ঠে কিছুটা উত্তেজিত স্বরে রীধি বলল, আপনি কি আমাকে সত্যি সত্যিই ভুলে গেলেন....জানি আমি আপনার বউ হওয়ার যোগ্য নই, আপনি কখনই স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন না আমাকে কিন্তু তাই বলে একটা মেয়ের জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার অধিকার আপনার নেই ...ও আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কাদতে কাদতে দ্রুত ফোনটা কেটে দিলো ...
চোখের পানি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে খুব, ওর কথাগুলো বার বার হৃদয়ে আঘাত করছে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে, জানি না কি করা উচিৎ এখন। কিন্তু ওকে শুধু একটা কথাই বলতে ইচ্ছা করছে, আর যেই হোক অন্তত তুমি আমাকে ভুল বুঝো না রীধি ।
হাজার চেষ্টা করেও ওর ফোনে কল ঢুকাতে পারলাম না । ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য আমার মন ছটফট করছে। এই প্রথম অনুভব করতে পারছি যে আমি রীধিকে কতটা ভালবাসে ফেলেছি।
অফিস থেকে বাসায় এসে আরো একা লাগছে নিজেকে । এক অনকাংখিত কষ্ট যেন আমাকে ঘিরে রেখেছে এক অচেনা মায়াজালে। রীধির টেনশনে কিছুই ভাল লাগছেনা । ভালবাসার যন্ত্রনা যেন ঠিকঠাক অনুভব করতে পারছি।
বাইরে অনেক বাতাস বইছে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে বৃষ্টি নামবে বোধহয়। বারান্দায় এতো বাতাস যে, দাড়িয়ে থাকা যাচ্ছেনা কিন্তু তারপরও বেশ গরম লাগছে। হঠাৎ বাতাস বন্ধ হয়ে বৃষ্টি শুরু হলো । গ্রীল ধরে দাড়িয়ে চোখটা বন্ধ করে মুখটা বাড়িয়ে দিতেই বৃষ্টির পানি মুখটা ভিজিয়ে দিলো , বৃষ্টির পানির মাঝেই রীধিকে অনুভব করতে পারছি তাই চোখ বন্ধ করে থাকতেই ভাল লাগছে... আর মনে মনে রীধিকে প্রশ্ন করছি, রীধি, তুমি আমায় না বুঝিলে, বুঝবে কে বলতে পারো???
উৎসর্গ : আমার প্রিয় ব্লগার জুন আপু আর মনিরা আপুকে ।
[আপু তাড়াতাড়ি লিখেছি তাই লেখাতে আবেগ সেরকম দিতে পারিনি... ডোন্ট মাইন্ড ]
বাকী পর্বগুলো এখানে : ১ম , ২য় , ৩য় , ৪র্থ