বহুল পরিচিত পারসোনা বিউটি পার্লার/স্পা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে গোপন ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছে বলে সম্প্রতি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি আর গোপন নেই। ব্লগগুলোর সচেতনতার জন্য এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন ব্লগে প্রতিবাদ হচ্ছে (বিস্তারিত পড়ুন এখানে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ইন্টার্নেটে প্রচারণার চাপে পত্রিকাগুলো দায়সারা গোছের খবর প্রকাশ করে পরোক্ষভাবে পারসোনাকেই সমর্থন দান করেছে! এমনকি কোন কোন পত্রিকা এই পরিস্থিতিতেও পারসোনার হয়ে প্রচারণা করছে (বিস্তারিত – স্পা দেহমনের প্রশান্তির থেরাপী)! মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ খবরটি সেভাবে উঠে না আসায় সাধারণ মানুষ অন্ধকারেই রয়েছে। যারা ইন্টার্নেটে সক্রিয় তাদের অনেকেই আবার তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নৈতিক অবস্থানের কথা বিবেচনা করে সমর্থনদানের বিষয়টি মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়-
১। দেশের বেশীরভাগ মানুষই শুধুমাত্র বাঁচার জন্য লড়াই করছেন। ঘাম ঝরিয়ে, মাথায় বোঝা বহন করে আয়-রোজগার করছেন পরিবারে এক মুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য। পারসোনাদের মত সুন্দর ব্যবসাকারীদের অপকর্মের খবর তাদের বিবেককে শংকিত ও উদ্বেলিত করে না, কেননা শারীরিক সৌন্দর্য্য তাদের কাছে গৌণ। অন্যদিকে যারা পারসোনা বা বিউটি প্রতিষ্ঠানে মানসিক আরাম (এগুলোকে সেবা বলা আমার দৃষ্টিতে অন্যায়) নিয়ে থাকেন, তাদের অনেকে ঘটনাটির সাথে প্রাইভেসি বা ইন্টার্নেটের পর্ণগ্রাফির যোগসূত্রের কথা চিন্তা করে বিবেকের তাড়ণায় সোচ্চার হয়েছেন।
২। ধর্মপ্রাণ সাধারন মানুষ এই ইস্যুতে বিভক্ত। একদল নৈতিকতার কথা চিন্তা করে বেশ সোচ্চার হয়েছেন। কিন্তু এদের বড় অংশ মনে করছেন এটা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই, কেননা ধর্মীয়ভাবে বাহ্যিক সৌন্দর্য্যকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে পারসোনার ঘটনাতে মানসিকভাবে খুশী হয়ে মত প্রকাশ করেন এই ভাবে, "যাও কেন ওখানে? বুঝ এবার ঠেলা।"
৩। দেশের সুশীল সমাজের লোকেরা একেবারেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এর যথেষ্ট কারণও আছে!
সুশীলরা নীরব কেন?
কারণ হচ্ছে সুশীলরা কোন না কোন ভাবে নারী ব্যবসার সাথে জড়িত। সুশীল পরিচালিত মিডিয়াগুলোতে তথাকথিত নারীর অধিকার নিয়ে সুশীলদের বেশ সোচ্চার হতে দেখা যায়। টক শোতে তাদের যুক্তির (কুযুক্তি!) বানে টিভি ভেংগে যাওয়ার দশা হয়! কিন্তু পারসোনার মত ইস্যুতে তারা বিস্ময়করভাবে নীরব! অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে এদের অনেকেই এই নারীর অধিকারের নামে এনজিও ব্যবসার সাথে জড়িত। পশ্চিমা বিশ্ব মুসলিম দেশগুলোতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে তাদের ভাবধারা প্রচার করতে অনেক অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সুশীলরা ঐ টাকায় ভাগ বসাতে সবসময় তৎপর। তারা যদি সত্যি সত্যি নারীকে সন্মান করে, তাহলে পারসোনার মত প্রচণ্ড ন্যাক্কারজনক ইস্যুতে চুপ থাকতে পারে না। অন্যদিকে সুশীল চালিত মিডিয়াতে প্রগতিশীলতার নামে নারীর শারীরিক সৌন্দর্য্যকে পণ্য হিসেবে প্রমোট করা হচ্ছে। মেয়েদের সৌন্দর্য্য নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৩৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। কানিস আলমাস এবং তার মত বিউটিশয়ানদের তথাকথিত 'মেয়েদেরকে সুন্দর বানানো' বাংলাদেশে এই ব্যবসারই অংশ। তাই তারা কানিজ আলমাসকে দৃষ্টিকটুভাবে সমর্থন করছে। প্রথম আলো'র মত সুশীল পত্রিকাগুলো ছেলেদের পায়ের সৌন্দর্য নিয়েও বর্তমানে চিন্তিত! এর সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যও তারা প্রচারণা চালাচ্ছে! পার্লারে গিয়ে ছেলেরা কীভাবে পায়ের যত্ন (স্পা পেডিকিউর, ফুট ম্যাসাজ) নিতে পারেন, সেজন্য টিপস দেয়া হয়। ছবিটি প্রথম আলোর নকশা পাতা (কানিজ আলমাস যেখানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে অভিমত দেন) থেকে নেয়া।
মাসে একবার পেডিকিউর করতে পারেন- ছবি প্রথম আলো
সুশীলদের আসল রূপ জানতে পড়তে পারেন মদপানের ৭০০০ আবেদন লেখাটি। একজন সুশীল মদ সেবনের সরকারী লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করেন এভাবে-
“আমি অসুস্থ। দিনে দু’বেলা মদ খেতে হবে। এ জন্য চাই অনুমতি।“
সমাজে্র রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনৈতিকতা ছড়িয়ে পড়েছে। সবগুলোকে একসাথে মোকাবেলা সম্ভবও নয়। তাছাড়া অনৈতিকতার প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও নৈতিকতাগুলো একসূত্রে গাঁথা। পারসোনার ঘটনাটি মূলত এলিট সমাজের ঘটনা, কিন্তু সুদূরপ্রসারী দিক বিবেচনা করলে এর নেতিবাচক প্রভাব পুরো সমাজের উপর পড়বে। তাই নৈতিকভাবে পারসোনার মত চরম অনৈতিক ইস্যুতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, হতে হবে সক্রিয়, সোচ্চার।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৫৮
১. ০৫ ই অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:২৮ ০
-------------
গণসচেতনতামূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। সুশীল আর আধুনিক সমাজে নাকি নারী-পুরুষের মধ্যে কোনই ব্যবধান নাই। তাহলে নারীদের সৌন্দর্য চর্চার জন্য এত বিউটি পার্লার আর প্রতিবছর ৩৩০ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে কেন তা কোনভাবেই মাথায় আসে না!