১. রূপনগর। ইমদাদুল হক মিলন।
বিক্রমপুরের পটভূমিকায় লেখা তাঁর ট্রেডমার্ক গল্প, লেখনির গুণে প্রাণবন্ত। চরিত্রগুলোর মুখে বিক্রমপুরী ভাষা আর প্রকৃতি-সমাজ বর্ণনায় গ্রামগুলো এতই বাস্তব, মনে হয় এখন যদি গোয়ালিমান্দ্রা বাজার, মেদিনীমণ্ডল গ্রাম, কাজির পাগলা স্কুল- এসব স্থানে যেতে পারি তবে এই বইয়ের ভবঘুরে নেপাল, ভুমিহীন ওবাদ আর তার বউ লালী- এদের খুঁজে পাবো।
২. রানুভানু। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
ষাটোর্ধ্ব রবীন্দ্রনাথ আর দশের কোঠা পেরুনো কিশোরী রানুর আখ্যান। কিভাবে রবীন্দ্রনাথ তার কবিগুরু তকমা থেকে রানুর কাছে হয়ে উঠলেন সাধারণ একজন ভানুদাদা, তার কৌতূহলী বর্ণনা। এ কি দুই অসম বয়সী হৃদয়ের আবেগ নাকি ভালোবাসা? তখনকার সমাজ কিভাবে মেনে নিল এই অনুরাগপর্ব? দুজনের মনের দশাই বা কি? গানের ছন্দের মত বলে গেছেন সুনীল।
৩. শ্রেষ্ঠ গল্প। ইমদাদুল হক মিলন।
চারটা গল্প পড়েছি, সাধারণ ঘটনা অথচ হৃদয়াবেগে কী অপূর্ব! 'গাহে অচিন পাখি'তে লেখক অন্ত্যজ একজনের একটানা যে কাহিনি বলেছেন, তা এক বসায় পড়ে ফেলার মত। ব্রিটেনের বাঙালি ডায়াস্পোরার লেখক মনিকা আলি বলছেন, সাহিত্যের কাজ তুচ্ছ ও সাধারণ জিনিসকেও মহৎ আর অসাধারণ করে তোলা। তাতে লেখক সম্পূর্ণ সার্থক।
৪. জাপানযাত্রী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
যেন জাপান ভ্রমণ বর্ণনাই শুধু নয়, রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন। সেই ব্যতিক্রমী দর্শন থেকে পুব ও পশ্চিমের সেতুবন্ধনকারী জাপানি মনস্তত্ত্বকে লেখক মিলিয়েছেন বাঙালি সত্তার সাথে। সংস্কৃতি, সাহিত্য, চিত্রকলা ও জীবনযাত্রায় জাপানের বিশেষত্ব কী এবং কেন, তার চমকপ্রদ বর্ণনা।
৫. অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি। আকবর আলি খান।
লেখক যদিও সাবেক সরকারি আমলা, অর্থনীতিতে পড়াশোনা, তবু সাম্প্রতিককালে তার লেখার বস্তু, বিচিত্র বিষয়ের গবেষণা। প্রথম শতপৃষ্ঠায় অসাধারণ দক্ষতায় লেখক বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কিছু ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক হাইপোথিসিস তুলে ধরেছেন। বর্তমান বাংলাদেশে পলিটিকাল ইন্সটেবিলিটি যে দৈবাৎ কোন ঘটনা নয়, বরং চিরায়ত কিছু পরিণতির পরম্পরা, সেটাই উঠে এসেছে।
৬. বাংলার ধর্ম দর্শন। রায়হান রাইন সম্পাদিত।
ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলের তুলনায় বাংলায় কেন ভিন্নতর ধর্মের বিকাশ ও দর্শনের রূপান্তর ঘটলো? সেসব ধর্মের সমন্বয় ও মিশ খেয়ে কিভাবে বিভিন্ন ব্যতিক্রমধর্মী দর্শনের উদ্ভব হলো? যেমনটা দেখা যায়, বৌদ্ধ ধর্ম, নাথ ধর্ম, বাউল দর্শন এবং বঙ্গীয় সুফিবাদে। তার বর্ণনা নানা খণ্ড খণ্ড প্রবন্ধে।
৭. বাংলা ভাষার উদ্ভব ও অন্যান্য। গোলাম মুরশিদ।
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের একই ভাষা বাংলা। অথচ আগামি কয়েক শতক পর শুধু উচ্চারণের ধরণে নয়, লেখার প্রকাশ ও রীতিতেও যে ভিন্ন হয় পড়বে, তা কিন্তু এখনই অনুমান করা যায়। এরকম কিছু আর্টিকেলের পাশাপাশি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাভাষা সম্পর্কে অনেকগুলো চমৎকার লেখায় লেখক তার মতবাদ বর্ণিত করেছেন।
৮. অন্য বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথ। ৫০পেজ। তিতাশ চৌধুরী।
৯. রবীন্দ্রনাথের অনুজ্জ্বল অঞ্চল। ৪০পেজ।আবদুশ শাকুর।
কাদম্বরী-রবি, ওকাম্পো-রবি এই দুই সম্পর্ক নিয়ে জানতে পক্ষে ও সমালোচনার দৃষ্টিতে লেখা কিছু প্রবন্ধসংকলন পড়লাম। কতটা মিথ, কতটা বাস্তব- তার পুরোটা হয়তো কখনোই জানা হবে না। এসবের চেয়ে হয়তো কবির 'পূরবী' কাব্যগ্রন্থ, বড়গল্প 'নষ্টনীড়' আর তার গান-চিঠিই হয়তো বেশি সত্যসাক্ষ্য দেবে।
১০. পায়ের তলায় সর্ষে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ পর্বের প্রবন্ধগুলো কেবল পড়েছি, কারণ একটাই, আপন জন্মভূমি সম্পর্কে লেখকের অনুভূতি কি আগের মতই সজীব? দেশভাগের পর পশ্চিমে প্রত্যাবাসিত অনেক লেখকের তুলনায়, মনে হয়, তাঁর কথা-লেখাতেই হৃদ্যতার টান সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে। সুনীলের অনেক লেখা ও সাক্ষাৎকারে তা স্পষ্ট।
১১. পারস্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তাঁর সর্বশেষ বিদেশভ্রমণ। এ লেখায় পাওয়া যায় দেশ,কাল,ধর্মের উর্ধ্বে নিজেকে শতগুণে আন্তর্জাতিক করে তোলা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে। ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের গণ্ডি কীভাবে মানুষকে সংকীর্ণ করে তোলে- এই দর্শন ছাড়াও আছে পারস্যের ধু ধু প্রকৃতির বর্ননা, আছে 'হতেম যদি আরব বেদুইন'দের জীবনযাত্রা।