বাংলায় ইসলাম ধর্মের বিকাশ যেভাবে হয়েছিল, তা অনুধাবন করলে বোঝা যাবে কিভাবে এ ব্যাপারটি দেশভাগে সীমানা নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
অবিভক্ত বাংলা।
প্রথমেই দেখা যাক বাংলায় ইসলাম ধর্ম বিকাশের পর্যায়কাল।
৯০০-১৭০০ সালের মধ্যে ৫৯ জন প্রখ্যাত পীর দরবেশ এদেশে আসেন যাদের নাম দলিল দস্তাবেজ ইতিহাসে পাওয়া গেছে,। তার মধ্যে ১২০০ সালে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন শুরুর আগে আসেন মাত্র তিনজন বিখ্যাত পীর। ১৩,১৪,১৫,১৬শতকে এদেশে আসেন যথাক্রমে ১৫%,৩৬%,১৮%,২৩% পীর দরবেশ। ১৭ ও ১৮ শতকে আসেন মাত্র ৩%।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সুলতানি আমল (১৩৩৮-১৫৩৮ বা ১৪-১৫শতক) ছিল পীরদরবেশ আগমনের স্বর্ণযুগ। বাংলায় এই পীরদরবেশ আগমনকে যদি ইসলাম ধর্ম প্রচারের একটি মাপকাঠি হিসেবে নিই, তাহলে বলতে হয়, এই বাংলায় পীরদের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের সূচনা হয় মুসলিম শাসকদের শাসন শুরুর আগেই, ৯০০-১০০০সালে (যদিও আরব বণিকদের মাধ্যমে আরও আগে, তবে বিস্তারের ক্ষেত্রে এর প্রভাব ছিল অল্প)। তারপর সুলতানি আমলে এর দ্রুত প্রচার হতে থাকে এবং নবাবি আমলের শুরুতে ১৭০০সালে ইসলাম ধর্ম প্রচার স্তিমিত হয়। ততদিনে বাংলার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ১৭শতকের শুরুতে সুবাদারি শাসনের মাধ্যমে বাংলার মোগল শাসন সূচনা ঘটে। উপরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, এ সময়ে যে শুধু পীরদরবেশ আগমন কমে গিয়েছিল।
একইসাথে মোগল আমলে বাংলায় মসজিদ নির্মাণের সংখ্যাও কমে যায়। সুলতানি ও আফগান আমল ১৬শতক অর্থাৎ ১৫০০-১৫৯৯সাল জুড়ে ৭৩টি মসজিদ নির্মিত হলেও মোগল আমল ১৬০০০-১৬৫০সালে তৈরি হয় ২৪টি এবং ১৬৫০-১৬৯৯সালে তৈরি হয় মাত্র ৮টি মসজিদ। অর্থাৎ সুলতানি আমলের তুলনায় দুই গুণ কম মসজিদ সারা বাংলায় তৈরি হয়েছিল।
এখানে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আসতে পারে, মোগলরা মুসলিম শাসক হয়েও এদেশে ইসলাম ধর্ম বিকাশেও অবদান রাখেনি? উত্তর হ্যাঁ। মোগলরা প্রশাসন থেকে ধর্মকে আলাদা রাখার নীতি পালন করেছে। সুলতানি আমলে যেখানে পীরদের জমি অনায়াসে প্রদান করা হত, মোগল আমলে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এর কারণ, মোগল কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত সুবাদারদের একটি নির্দিষ্ট রাজস্ব প্রতিবছর মোগল রাজাদের পাঠাতে হত। কাজেই রাজস্ব আদায়ে কড়া নীতির জন্য এভাবে জমিপ্রদান বন্ধ করা হয়। মোগল আমলে এদেশে রাস্তঘাটের অনেক উন্নতি হয়, তবে এতে দিল্লিতে রাজস্ব পাঠানো ও ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিই মুখ্য ছিল। মোগলরা কখনোই বাংলার সাথে আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করেনি, তারা বাংলাকে দিল্লিকেন্দ্রিক মোগল শাসনের একটি উপনিবেশে পরিণত করেছিল মাত্র।
মজার ব্যাপার হল, মোগলদের এই ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কারণে বাংলায় মন্দির নির্মাণের সংখ্যা মসজিদের চেয়ে বেড়ে যায়। স্থানীয় হিন্দু জমিদাররা উৎসাহে মন্দির নির্মাণে অর্থ দান করেন যা ছিল তাদের সামাজিক মর্যাদার সূচক। সুলতানি আমলের ১৬শতকে মাত্র ৭টি মন্দির নির্মিত হয়েছিল কিন্তু মোগল সুবাদারি আমলে ১৭শতকে এসে তৈরি হয় ৭৪টি। এ সংখ্যা আরো বেড়ে যায় ১৮শতকে, ইংরেজরা আসার আগ পর্যন্ত তৈরি হয় ১৩৮টি। ১৬শতকে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের সুদূরপ্রসারি প্রভাব ও মোগল মুসলিম শাসকদের উদারনীতি হিন্দু ধর্মে আনে নবজোয়ার, যা ইংরেজ শাসন শুরু আগেই ঘটেছিল।
কিন্তু ইসলাম ধর্মের বিকাশ থেমে থাকেনি। পীরদরবেশ আগমনের মাধ্যে এই ধর্ম বিকাশের যে ধারা সেটা চলতে থাকল। আর ইসলাম ধর্মের এই ক্রমশ বিকাশ বাংলা অঞ্চলে তাদের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি করতে থাকল।
এবার দেখা যাক বাংলার জনসংখ্যার মধ্যে কয় শতাংশ ছিল মুসলিম ও হিন্দু বা সেই জনমিতি কীভাবে দেশভাগে ভূমিকা রেখেছে
বাংলায় মুসলিমদের ধর্মগ্রহণের প্রক্রিয়া ছিল দীর্ঘদিনের। দীর্ঘ কয়েক শতকের প্রক্রিয়ায় বাংলায় ইসলাম ধর্ম অনুসারি মানুষের সংখ্যা হিন্দুদের সমান হয়। ১৩৪৬সালে এখানে ইবনে বতুতা ঘুরে বলেছেন, এদেশ ছিল 'মুসলমান রাজত্বের অধীনে বিধর্মী' লোকদের আবাস। এর প্রায় পৌনে দুইশ বছর পর ১৫১৪সালে পর্তুগিজ ভ্রমণকারি বারবোসাও এদেশ ঘুরে বলেছেন একই কথা, তার ভাষায় এখানকার 'মুসলমান রাজা হিন্দুদের দ্বারা অধ্যুষিত একটি দেশ অধিকারে রেখেছেন'।
কাজেই তাদের বর্ণনা থেকে এটা পরিষ্কার, বাংলায় মুসলিম শাসন অব্যাহত ও সুফি দরবেশ দ্বারা ইসলাম প্রচার চলতে থাকলেও ইসলাম ধর্মের প্রাধান্য খুব দ্রুত তৈরি হয়নি। ভারতবর্ষের লোকগণনা থেকেও বোঝা যায়, ১৫০০সালের আগে সারা বাংলায় জনসংখ্যা বিচারে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। অথচ ততদিনে মুসলিম শাসনের ৩০০ বছর ও মুসলিম সুফি আগমনের ৫০০-৬০০বছর হয়ে গেছে!
সক্রিয়ভাবে ইসলাম ধর্ম প্রচারকাল মোটামুটিভাবে বলা যায় ১১০০-১৬০০সাল। এভাবে প্রায় ৫০০বছর ধর্ম প্রচারের পর ১৬০০সালে বাংলার কিছু কিছু অঞ্চলে (উত্তর ও পূর্ব) অবশেষে মুসলমানদের প্রাধান্য তৈরি হয়। পক্ষান্তরে বাংলার রাঢ় বা পশ্চিম অঞ্চলে বৈষ্ণববাদের প্রভাব থাকায় সেখানে তৈরি হয় হিন্দু প্রাধান্য। এখানে আরেকটা কারণ বলা হয়ে থাকে। বাংলার পূর্বাঞ্চল নদনদিবেষ্টিত থাকায় এখানে ধর্মপ্রচারক সুফিদের যোগাযোগ সহজ ছিল। তদুপরি এখানে গ্রামসংগঠনের ভূমিকা ছিল কম, কারণ বাংলা অঞ্চল ভারতবর্ষের একটি প্রান্তিক এলাকায় অবস্থিত। তাই কেউ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে এখানে জবাবদিহিতার ভয় ছিল অল্প। পক্ষান্তরে পশ্চিম অঞ্চলে নদনদি অপেক্ষাকৃত কম, যোগাযোগও তাই অপেক্ষাকৃত কঠিন । তার ওপর বিহার এলাকা সংলগ্ন হওয়ায় এখানে গ্রামসংগঠনের প্রভাব বেশি ছিল। কাজেই এখানে নতুন ধর্ম ইসলাম তেমনভাবে বিস্তার লাভ করেনি। ১৮৯১সালের পর অর্থাৎ উনিশ শতকের শেষে, সারা বাংলার হিসাবে মুসলিমরা সর্বপ্রথম সংখ্যাগুরু হয়ে ওঠে। তখন বাংলায় জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি, মানে প্রায় দুই কোটির কাছাকাছি হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা ছিল।
ভৌগলিক ও রাজনৈতিক এই প্রভাবকগুলো বাংলার ধর্মীয় পরিবর্তনের মানচিত্র তৈরি করেছে। পরবর্তিতে দেশভাগের সময় পূর্ব-পশ্চিম দুপাশে রেখে যে বাংলা ভাগ করা হল, এই মানচিত্র সেই বিভক্তিকে করেছে সহজ।
এখন দেখি হিন্দু ও মুসলিমদের অর্থনৈতিক অবস্থা কীভাবে দেশভাগে ভূমিকা রেখেছে
হিন্দুমুসলিমদের অর্থনৈতিক বৈষম্য দেশভাগে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। এবার দেখা যাক এই বৈষম্য তৈরি হবার কারণ কি।
মুসলিম শাসনামলেও কিন্তু বাংলার স্থানীয় মুসলমানদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল করুণ। তার মানে, ইংরেজ শাসনেই বাংলায় মুসলিমরা অর্থনৈতিকভাবে গরিব ছিল তা নয়, বরং তা অনেক আগে থেকেই চলে আসছিল। ইংরেজদের পদক্ষেপ মুসলিমদের আরো গরিব হওয়া ও সমাজের ধনী হিন্দুদের আরো ধনী হওয়া ত্বরাণ্বিত করেছিল মাত্র।
ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম যারা গ্রহণ করছিল, তারা ছিল মূলত দরিদ্র এবং বংশপরম্পরায় তাদের এই অর্থনৈতিক অবস্থার তেমন হেরফের হয়নি। এর কারণও ছিল।
মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম (১৫০০-১৫৫১) লিখেছেন, ইসলামে ধর্মান্তরিত মুসলিমরা ছিল অচ্ছুৎ, তারা 'গরসাল' নামে পরিচিত ছিল ও তারা রাতে অন্ধ সেজে ভিক্ষা করে বেচে থাকত।
মুসলিমদের মাঝেও আশরাফ আতরাফ শ্রেনীবিভাগ ছিল, আতরাফ ছিল দরিদ্র মুসলিমরা আর আশরাফ ছিল ধনী, বিদেশ আগত মুসলিমরা, যদিও তারা সংখ্যায় ছিল খুব কম। সাদিক ইস্পাহানি নামে একজন মোগল কর্মচারির দিনলিপির বরাতে জানা যায়, এ সময়ে (১৭শতক) আশরাফ মুসলিমদের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাদের সঙ্গে গ্রামবাসি গরিব মুসলিমদের সৌহার্দ্য ছিল না, কারণ ছিল প্রকট অর্থনৈতিক বৈষম্য। হিন্দু থেকে যারা মুসলিম হতেন তাদের আতরাফ হিসেবে গণ্য করা হত।
মুসলমান আগমনের শুরুতে বাংলায় শাসনকাজ চলত স্থানীয় রাজা বা ভূস্বামিদের মাধ্যমে, যারা সুলতানকে রাজস্ব দিতেন। তখন এই ভূস্বামিদের মধ্যে সবাই ছিলেন হিন্দু। এই অবস্থা নবাবি আমলে কিছুটা পরিবর্তন হয়। ১৬শতকের শেষের দিকে, বাংলায় ইসলাম বিস্তারের সক্রিয় ৪০০ বছরের মাথায় দেখা গেল কিছু সংখ্যক ভূস্বামিদের মধ্যে মুসলিমরা অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বাংলার বিখ্যাত বার ভূঁইয়াদের ধর্ম যাচাই করলে তা বোঝা যায়। ১৬ জন ভূস্বামিদের মধ্যে ৬জন ছিলেন মুসলমান, যাদের মধ্যে অনেকেই সুলতানি আমল থেকে প্রতিষ্ঠিত ও বঙ্গদেশের বাইরে থেকে এসেছেন। কাজেই দেখা যায়, ইংরেজ আমলের অনেক আগে থেকেই বাংলার মুসলিমদের মধ্যে অল্প সংখ্যক লোকের অংশগ্রহণ শাসনকাজে সীমাবদ্ধ ছিল।
বাংলার উচুতলা, মানে যারা মুসলিম সুলতানদের সহযোগি ছিলেন তারা বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় শ্রেষ্ঠ সুলতানি শাসক আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমল (১৪৯৪-১৫১৯), তার প্রধানমন্ত্রী, দেহরক্ষী, সচিব, চিকিৎসক সবাই ছিলেন হিন্দু।
এই ধারা অব্যাহত ছিল নবাবি আমল পর্যন্ত। শেষ নবাব সিরাজউদ্দউলা এর সময়েও প্রধান সেনাপতি কিংবা রাজন্যবর্গের মধ্যে ছিল হিন্দু উপস্থিতি যেমনঃ রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, মোহনলাল, জগৎশেঠ প্রমুখ। ব্যবসাবাণিজ্যে হিন্দুদের স্পষ্ট প্রাধান্য ছিল। আর দরিদ্র ও অশিক্ষিত হওয়ায় স্বভাবতই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাংলার মুসলিমদের ভূমিকা ছিল শোষিতের, শাসকের নয়।
মূলকথাঃ
ঐতিহাসিকভাবেই বাংলার শিক্ষিত ও ধনী অংশে হিন্দুদের প্রাধান্য ছিল আর তা চলে আসছিল অনেক বছর ধরেই। বলা যায়, এটা ছিল এমন একটি ধারা যা অনেকটা বংশপরম্পরার মত। প্রাচীনবাংলার দিকে যদি তাকাই, পাল আমলে বাংলার রাজা বৌদ্ধ হলেও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হিন্দু। তারপর, সেন আমলে বল্লালসেনের কল্যাণে হিন্দুদের মধ্যে কৌলিন্যপ্রথা আরো প্রকট হয়, হিন্দু বিধিবিধান একটি নিয়মের মধ্যে এসে কঠোরভাবে পালিত হতে থাকে। তারপর মধ্যযুগে চৈতন্যদেবের আত্মপ্রকাশ ও মোগল শাসকদের ধর্মে হস্তক্ষেপ না করার নীতি হিন্দুদের প্রাধান্য আরো নিশ্চিত করে। সুতরাং, শিক্ষাদীক্ষা ও ব্যবসায় তারা অনেক আগে থেকেই অগ্রসর।
(এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন। তা হল, বাংলার মুসলমানরাই যে শুধু গরিব ছিল তা নয়। বাংলার অধিকাংশ হিন্দুরাও ছিল গরিব ও কৃষক, জেলে। তারা কামার কুমোর শীল মুচি তাতি এরকম বিভিন্ন বৃত্তিতে নিযুক্ত ছিল। তাদের সংখ্যাও অনেক ছিল, সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারছি না, কেউ জানলে জানাবেন। কিন্তু পার্থক্য হল, সমাজের উচুশ্রেণীতে হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব যত বেশি ছিল, সে তুলনায় মুসলিমদের ছিল খুবই কম।)
পড়াশুনা, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদিতে রাজসভার পৃষ্ঠপোষণা পেলে এর ভিন্ন চিত্র আসতো কিনা বলা কঠিন। তবে পৃষ্ঠপোষণা পেলে যে মুসলিমরা ভাল করতে পারে, মধ্যযুগের সুলতানি আমল তার প্রমাণ। মধ্যযুগে অনেক মুসলিম কবি (কবি শাহ মুহম্মদ সগীর-সুলতান আজম শাহ, কবি পরাগল খান-সুলতান আলাউদিন হুসেন শাহ) সুলতানদের রাজসভা আলোকিত করেছেন।
'ঝামেলা' সৃষ্টি হয় তখনই যখন বাংলায় ধীরে ধীরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি হতে থাকে। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা বৈষম্যের ভিত্তিতে তাদের হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে একত্র করেছিল।
এক ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার কারণে এই মুসলিমরা কিন্তু সমাজের উন্নতস্রোতে মিশে যেতে পারে নি। সেটা হতে পারে, মূলত দরিদ্র মানুষের ইসলামগ্রহণ ও বংশপরম্পরায়া তাদের গরিব থেকে যাওয়া, তারপর তাদের প্রতি এক ধরণের ধনীদের অচ্ছুত মনোভাব এবং মুসলমানদের সুযোগগ্রহণের অভাব ইত্যাদি।
ভৌগোলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণে সমাজে এই গরিবদের সংখ্যা বা মুসলিমদের সংখ্যা মধ্যযুগ থেকে ক্রমশ বাড়তে থাকল। বাংলার পুবদিকে হল তাদের প্রাধান্য পক্ষান্তরে বাংলার পশ্চিমে তারা হল গৌন। এক হাজার বছরেরও আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের যে প্রক্রিয়া এ অঞ্চলে শুরু হয় তা থেকে সৃষ্ট মুসলিমদের সংখ্যাই পরবর্তীতে দেশভাগের সীমানা নির্ধারণ করল, আর তা হয়েছিল মুসলিম এবং হিন্দুদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার স্বার্থেই। তবে সংখ্যাই যে একমাত্র প্রভাবক তা নয়, নিঃসন্দেহে আরো কিছু কারণ রয়েছে, যা আগের লেখায় বর্ণিত।
কৃতজ্ঞতাঃ
হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি, গোলাম মুরশিদ।
বাংলাদেশের সত্ত্বার অন্বেষা, আকবর আলি খান।
গুগল।