পুরো বছর জুড়ে ছিল নানা রকম দুর্যোগ কখনো বন্যা, কখনো ঝড়, ঠান্ডা, কুয়াশায় ঘেরা অদ্ভুত ধরনের ব্যবহার আবহাওয়ার। গ্রীষ্মকালে সঠিক উত্তাপ ছিল না, বৃষ্টিতে ডুবেছিল দিনগুলো । সেপ্টেম্বরেও মনে হয়েছিল শীত এসে গেছে, রাতের বেলা মাঝে মাঝে মাইনাসের ঘরে চলে যাচ্ছিল তাপমাত্রা
পুরোটা বছরের মধ্যে এই অক্টোবর অদ্ভুত সুন্দর । চারপাশে রঙের মেলা। দূরে তাকালে মনে হয় গাছের মাথায় আগুন লেগেছে,লাল, লাল গাছের সারি, ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি। বিদায় নেওয়ার আগে, কনে বউয়ের সাজে চারপাশ অপূর্ব হয়ে উঠেছে । আগস্টের শেষ দিকে ঠান্ডার জন্য রং লাগা শুরু হয়েছিল গাছে। সেপ্টেম্বরে এত বৃষ্টি হলো,ভাবলাম বুঝি পাতাগুলো ঝরেই যাবে, সময়ের আগে। কিন্তু না
অক্টোবরের এই সময়ও পাতাগুলো জড়িয়ে আছে গাছকে। প্রজাপতির মতো একটা দুটো পাতা ঘুরে ঘুরে নেচে নেচে পরে যাচ্ছে মাটিতে ।এত পাতা গাছে, সবগুলো পাতা ঝরে যাবে, গাছগুলো ন্যাড়া হয়ে সারা শীত জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।
কিন্তু সবগুলো পাতা একসাথে পরছে না। একটা দুটো করে গাছের মায়া কাটিয়ে সরে যাচ্ছে, মাটিতে মাথা রাখছে। কখনো বাতাস এসে হুড়মুড় করে তাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। কি যে মায়াবী লাগে দেখতে, পাতার পিছে পিছে আমিও দৌড়াই ।
লাল রঙের সারি সারি গাছ, লাল রঙের মুকুট মাথায় পরে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল, সন্ধ্যা দুই বেলা সূর্যের লালিম, রক্তিম আভায় আরো অপরুপ হয়ে উঠে প্রকৃতি। যেন একটা রঙের বক্সের ভিতর ঢুকে পরেছে, চারপাশের পৃথিবী। যত দেখি, প্রতিবছর দেখি তাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে, মন ভরে যায় প্রকৃতির নিঃস্বার্থ ভালবাসায়। মা গাছের সাথে বিচ্ছেদ, ছেড়ে চলে যাচ্ছে দূরে। পাতাগুলো বিরহে কখনো ঘুরে ঘুরে উড়ে বাতাসের মাঝে। কখনো টুক করে ঝরে যাবে নিচে। একটার পর একটা পাতা এসে জড়ো হয় মাটিতে।
পাতার আস্তরণ মাড়িয়ে আমি হাঁটি। শুকনো পাতার নূপুর বাজে আর কখনো বাতাসে হুড়মুড়িয়ে উড়ে যায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। আনমনা হয় ভাবি যেন জীবন পরিবর্তনের ছাপ, মানুষের জীবনের মতন। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বসবাস করার যাপিত জীবন। এক আবাস ঘুচিয়ে অন্য আবাসে চলে যাওয়া। কোথায় যেন মিল খুঁজে পাই, মানুষের জীবনের সাথে ।
শুধু রঙ্গিন পাতা নয় গাছে গাছে। মাঠে মাঠে ফসল গুলো পাকা টুস টুসে হয়ে গেছে, ফসল তুলার গান শুনি। হেমন্তের ধান কাটা মাঠের কথা মনে পরে। ন্যাড়ার আগুনে পুড়িয়ে পুড়িয়ে খাব আর যত চাষীদের বিলাবো দুইজনে। যাবে তুমি ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়ে। শিশির ভেজা মাঠে বসে পুড়িয়ে, টাটকা সবজি খাওয়া আর বারবিকিউ করে টার্কি , ভুট্টা, খাওয়ার মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখি না। থ্যাংকস গিভিং পরিবার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন পরিচিতর মধ্যে ভালবাসা বিনিময় ।
কদিন আগে অবিরাম দিনরাত গান গাওয়া, ঝিঝি পোকা কোথায় যেন লুকিয়ে গেল। তাদেরকে এখন আর দেখি না। তেমনি থেমে যাচ্ছে পাখিদের কাকলী। মাঠের ফসল তুলে নেওয়ার পরে, হরিণ পরিবারগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে খাবারের সন্ধানে। গাছের নিচে পড়ে থাকা আপেল গুলো খেতে প্রায়ই আসে দল বেঁধে। আর ফসল তুলা মাঠে নেমে পড়েছে বনতিতির গুলো, দল বেঁধে ফসলের মাঠে পরে থাকা শস্য খুঁজে খুঁজে খায়। কৃষকরা ফসল তুলে নেওয়ার পরে, অনেকটাই রেখে যায় প্রকৃতির প্রাণীদের জন্য ।
কিছু মাঠে দেখি কাশফুলের ছড়াছড়ি। ঝালর দুলিয়ে হাসে। কারোর রং খুব ধবধবে সাদা, আবার বাদামী কত রকমের তাদের আকৃতি। আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে কাশফুল ছিল। কাশফুল গুলো যেন পুকুরের জলে নিজের ছায়া দেখতো নার্সিসাস এর মত। দূর্গা পূজার পরে সরস্বতী পূজা আসলে, প্রতিবেশীরা তখন কাশফুল সংগ্রহ করতে আসতো। কাশফুলের লম্বা ডাটা দিয়ে কলম তৈরি করে সরস্বতীর পাশে রাখা হতো ।
মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে যাই ভিন্ন প্রকৃতিতে নিজস্বতা খুঁজে পেয়ে। প্রকৃতি উজাড় করে ভালোবাসা দেয়। দেশ-বিদেশের কোন পার্থক্য তার মাঝে পাইনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৪৩