কত প্রকারে মাস্তিষ্কের ব্যবহার করতে হয় এখন। আগে শুধুই হাতে লেখতাম, শব্দ হাতের টানে ফুটে উঠত অনেক সময় চিন্তার বাইরে। এখন নানা রকমের কীবোর্ডে এক বাংলা শব্দ ভিন্ন ভাবে লিখি। ইংরেজি অক্ষরগুলো দিয়ে।
ইংরেজির জন্য একটাই অক্ষর একই ভাবে লেখতে হয়। অথচ বাংলা লেখার জন্য কত রকম ভাবে এই ইংরেজি অক্ষরগুলো ব্যবহার করতে হয়। একটা বাংলা অক্ষরের জন্য দুটো অথবা তিনটিও কী ব্যবহার করতে হয়। শিফট চাপলে এক অক্ষর বের হয়, না চাপলে অন্য। যুক্ত অক্ষর কার সাথে কার সম্পর্কে তৈরী, মনে না থাকলেও অসুবিধা ছিল না আগে, হাতের টানে চলে আসত। এখন সঠিক ভাবে মনে রাখতে হয় সবার সম্পর্ক। ।অনেক সময় এক অক্ষরের জায়গায় আরেক অক্ষর হয়ে যায় দ্রুত লেখার সময়। সাঁতার শেখা বা গাড়ি চালানোর মতন কীবোর্ডের বিভিন্ন প্রযুক্তি সেট হয়ে যায় লেখার জন্য। অথচ একটা হলেই চলত। তবে অন্য বিষয়ে মনদেয়া যেত।
বিজয়ে এক কিবোর্ড । অভ্রর এক কিবোর্ড/ ইউনিকোডে এক রকম এবং আরো অনেক আছে ভিন্ন ভিন্ন রকম নিয়ে নিজেদের মতন। যুক্ত অক্ষর গুলোকে একেক নিয়মের লেখায় ভিন্ন কী চাপ দিয়ে লিখতে হয়। অনেক সময় ফোনের লেখা এক রকম। কম্পিউটারের লেখা এক রকম। অনেক সময় ফোন তার নিজস্ব পছন্দে স্মৃতিতে থাকা শব্দ ধারন করে ফেলে। পাঁচ ছয় অথবা তার চেয়েও বেশী সময় ধরে যে শব্দ সঠিক ভাবে লিখলাম সেটা না হয়ে অন্য কিছু ফোনের ইচ্ছা মতন যোগ হয়ে যায়। আমি ঠিক লিখেছি ভেবে পোষ্ট দিয়ে বাক্যের শ্রী দেখে নিজেই বুঝতে পারি না অর্থ কি দাঁড়াল এবং কেনো এমন হলো এতবার ঠিক করে লেখার পরও। কেন যে ফোন এমন ঘাড়তেড়ামি করে নিজের পছন্দের শব্দ যোগ করে আমার লেখার বারোটা বাজায়! রোবট রোবটই।
তবে মাঝে মাঝে নিজে পার্রদশী হয়ে উঠছি বলে বেশ আপ্লুত হই । কত কী শিখে ফেললাম এই প্রযুক্তির। কিন্তু মনে হয় এত জটিল বিষয়টি সমস্যা তৈরি করছে।
বাংলা লিপিও আবার নানা রঙের ঠিক নানা প্রজাতির শংকর বাঙালির মতনই। দলিয় বিষয়টি এখানে ভালোভাবে লক্ষণীও। এক পত্রিকার লিপি অন্য পত্রিকা ব্যবহার করেন না। এক জনের লেখা অনলাইনে দেখা গেলে অন্য জনের লেখা দেখার জন্য নতুন একটি প্রোগ্রাম নামাতে হয়। আমারটা পড়ার জন্য আমার সব নিয়ম মানতে হবে। এমনই একটা ভাব। যেমন বিদেশে ভাষা শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য নিজস্ব শহীদমিনার তৈরি করে ফেলেন প্রতিটি দল। তেমনি এক বাংলা লেখার জন্য অনুসরন করতে হয নানা রকমের পদ্ধতি। অথচ এক ভাষা এক শব্দ এক বর্ণ এক ভাবে লেখার ব্যবস্থা করলে কত সহজ হতো বিষয়টা। এক ইংরেজি অক্ষর ব্যবহার করে নানান জাতি কিন্তু তাদের ভাষায় লেখা লিখছে।
অনেকে যারা বাংলিশ লিখেন অর্থাৎ ইংরেজি হরফে বাংলা লিখেন, বলে তাদের শাপসাপান্ত করেন নিজেরা বাংলা লিখছেন বলে ধন্য হয়ে যান, তাদের ভাবতে হবে সব সুবিধা এখনও সবাই পায় না। কিন্তু মনের ভাবটি তারা প্রকাশ করতে চান। তাই ওভাবে লিখছেন। অর্ন্তজালে যখন প্রথম লেখার সুযোগ আসে। তখন আমিও বাংলিশে অনেক লেখা লিখেছি, বাংলায় লেখাটি অনলাইনে আসেনা বলে। এবং প্রক্রিয়াটি অকারণ জটিল। সহজ একটি বাংলা লেখা সর্বক্ষেত্রে চালু করার জন্য যারা কাজ করবেন তাদের সরকারি ভাবে কিছু সুবিধা দেয়া হোক কাজ করার জন্য। সবাই নিজের মতন যেটা পেয়েছেন তা দিয়ে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একটা সময় হয়তো নিজের লেখা নিজেকেই দেখতে হবে ।
বাংলা লেখার নানা রকম পদ্ধতির সাথে আবার যোগ হয়েছে নানা রকম বানান রীতি পরিবর্তন। যে বানান শিখে বড় হয়েছি। হাতের টানে লিখতে পারতাম। তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে এখন। কোথায় রস্ব ইকার আর কোথা দীর্ঘ ইকার দিব অনেক সময় থতমত খাই। জানা শব্দও ভুলে যাই। আর নানা রকম ভাবে লেখার ফলে ভুল করেও ভুল হয়ে যায়, ভুল করতে না চাইলেও।
ভাবনা প্রকাশ করাটাই জরুরী যখন আমি ভাবি। তখন অনেক মানুষ সঠিক বানান পরীক্ষা করতে বসেন। অথচ আজকাল দেখি, বানান তো দূরের কথা, বাক্য গঠন সঠিক হয়নি সে লেখার কত শেয়ার কত প্রচার।
এক পক্ষ যখন বানান নিয়ে বসে আছেন ভাবনার মূল্য না দিয়ে। অন্য দিকে বিশাল জন সংখ্যা ভুল বাক্যের প্রশংসা করে যাচ্ছেন খুশি মনে।
পালি, সংস্কৃত, হিন্দী উর্দূ, ফারসি, আরবী, ল্যাটিন, ইংরেজি কোন দেশের শব্দ নাই বাংলা ভাষায়। সঠিক খাঁটি বাংলা শব্দ বাংলা ভাষায় আছে, আবার যা আছে তাও আমরা কত আর ব্যবহার করি। বাংলা ভাষায় এখন আমরা থালা বাটি পেয়ালা পিরিচ বলি না। কেদারা, চারপায়া কি জিনিস জানি না।
প্রসঙ্গক্রমে লেখার পাশাপাশি বলার বিষয়টাও এসে যায়। কে কিভাবে কথা বলবেন সেটা তার পূর্ণ অধিকার। আঞ্চলিকতার আদর যতটা খুশি তিনি তার কথায় মাখাতে পারেন, আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু তিনি যখন গণমাধ্যমে জনগণের সামনে কথা বলবেন তখন কিন্তু তার শব্দ উচ্চারণটি সুন্দর সাবলীল বাংলা উচ্চারণ হলেই মানায় ভালো। এ প্রসঙ্গে শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, প্রচার যন্ত্রের কথকদের খুবই বেশী যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন সঠিক ভাষায় উচ্চারণ এবং সঠিক প্রচলিত বাংলা শব্দের ব্যবহারে।
বিজয়ের লেখা আবার অন লাইনে দিলে মনে হয় গ্রীক বা ল্যাটিন বা অন্য কোন ভাষা অথবা কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আঁকিবুকি। অর্থ কিছু বোঝার উপায় থাকে না। বোঝার জন্য সে লেখা ঠিকঠাক করে ইউনিকোডে বদল করলে আকার ইকার, যুক্তঅক্ষর উল্টোপাল্টা হয়ে আবার বেহাল দশা হয়ে যায়। নতুন করে আবার লেখা লাগে।
যদি সব লেখা ইউনিকোডে লিখে ফেলি তখন আবার সমস্যা ছাপানোর সময় পুরো লেখা বিজয়ে পূণরায় লিখতে হয়।
ইংলিশের বানান ভুলের প্রোগ্রমটা বাংলা লেখার সব বানান ভুল ধরে লাল দাগে রাঙিয়ে দেয়। বাংলা লেখা ভুল ধরে ঠিক করার বাংলা প্রোগ্রাম কবে আবিস্কৃত হবে?
যদিও এখন কিছু বাংলা বানান চেক করার প্রোগ্রাম পাওয়া যায় অর্ন্তজালে। কিন্তু তাতে সব বানান নেই তাছাড়া একটা শব্দ একবার করে পরীক্ষা করায় সময় অনেক লাগে।
কম্পিউটারে কোম্পজ করে খুব মজা । কাটাকাটি করতে হলে কাগজের লেখা বিশ্রী হয়ে যায় আবার নতুন করে পুরো লেখা লিখতে হয় দিস্তার পর দিস্তা কাগজ বাতিল করে, সে ঝামেলা মুক্ত। কিন্তু বাংলা লেখার জন্য। আনুসাঙ্গিক অন্য অসুবিধাগুলো এখনও কালক্ষেপন করে দেয়। বানান চেক আর বিজয়ের লেখা সরাসরি অনলাইনে দেয়ার ব্যবস্থা হলে অনেকটা সময় বাঁচানো যেত।
প্রযুক্তির সাথে তবু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলা যে কোন শব্দ লিখে গুগলে সার্চ দিলে এখন তার উপর অনেক গুলো লেখা পাওয়া যায়। যা দেখতে ভালো লাগে। তবে মন খারাপও হয়ে যায় ভুল লেখা, ভুল তথ্যের ইতিহাসের সাথে অরুচিকর পর্নো লেখার ছড়াছড়ি দেখে।
ভালো লেখা উইকিপিডিয়াগুলো অসম্পূর্ণ তথ্যে বাংলায়। কিন্তু অজস্র চটি লেখায় ভরপুর গুগলের লিংক গুলো। মানুষের আগ্রহ যে এসবে অনেক বেশী খুব বেশী দেখা হয় সে জন্য ভালো লেখার তথ্য সমৃদ্ধ লেখার চেয়ে এই পর্নো লেখাগুলো বেশী সামনে আসে। বাংলা ভাষার জন্য এখানে আবার পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ভাগ করাটা জটিল। তবে সরকার এই কাজটি করতে পারেন। লিংক আপলোডের অঞ্চল নির্ধারণের মাধ্যমে যদি সম্ভব হয়।
অর্ন্তজালে সব কিছু সঠিক এ ধারনায় যদি কেউ অনলাইনের ভুল লেখা গুলোর সহযোগিতা নেয় তবে সমস্যা অনেকদূর যাবে। বাংলাদেশের ইতিহাস চূড়ান্ত ভুলে লেখাগুলো সত্য প্রমাণিত করার জন্য এক সময় সরকার পক্ষ থেকেও ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। এবং সে ভাবে অনেক দূর এগিয়ে ছিল। সে সব তথ্য এখনও আছে। নতুন করে এসব ভুল নামিয়ে সঠিক ইতহাস কিন্তু সরকারী ভাবে করারও কোন উদ্যোগ নাই। কিছু ব্যাক্তি প্রচেষ্টা দেখা যায়। প্রযুক্তির এই দিকটাকে অবহেলা করার উপায় নাই। দিনে দিনে এক সময় প্রযুক্তির অর্ন্তজাল নির্ভরতা বাড়বে। তাই এখনই সময় সুষ্ঠ ভাবে তথ্য প্রচার করার। যেহেতু সবারই সুযোগ আছে অর্ন্তজাল ব্যবহার করার তাই ব্যক্তি পছন্দের বিষয়ে ভরে উঠছে, এসব বন্ধ করা কঠিন তবে এদের প্রচারে চোখ রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এবং সঠিক একটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সাইট থাকা দরকার যেখানে সুস্থ সুন্দর সঠিক ইতিহাস, সঠিক বাংলা ভাষা ব্যবহারের তথ্য, শিল্প সাহিত্যে, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, অগ্রগতির খবর পাওয়া যাবে।
এছাড়া যারা নিজেদের বা তাদের পছন্দের বা চেনা জানা লেখকদের লেখা দিয়ে সাহিত্যের ওয়েব গুলো ভরে রাখেন। তারাই সেখানে থেকে যাচ্ছেন ইতিহাসের প্রতীক হয়ে। অন্যরা ভালো লিখেও সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না। পরিচয় না থাকার জন্য বা নিজেকে প্রচার করতে পারছেন না বলে। আজ কাল খুঁজে নেয়া বিষয়টা খুব সহজ হয়েছে। কিন্তু খুঁজে কি পাওয়া যাচ্ছে সে বিষয়টা কঠিন। আসলের চেয়ে নকলের জয়জয়কার অনেক বেশী।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:২১