শেষাংশ
ঘুম থেকে জেগে দেখল চারপাশে ঝলমলে রোদ। সকাল গড়িয়ে গেছে।
নীচে নেমে এলো পরিপাটি হয়ে। পরিজ আর চা পান করে নেমে এলো ঘরের বাইরে। শুনসান চারপাশ যেমন থাকে প্রতিদিন। কোথাও কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। মৃদুমন্দ হাওয়ায় শব্দ উঠছে শুকনা ডালে, ঝরে পরা পাতায়। বড্ড মায়াময় একটা দিন অলস রোদের আলো মেখে শুয়ে আছে।
সামনে, বাগানের দিকে হেঁটে এলো রোজকার মতন। পেছনে বাগানের দিকে যাবে কি না ভাবছে। ওদের কাউকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। এমন সময় একজন ওর পাশে এসে দাঁড়াল যেন ভূঁই ফূঁড়ে উঠে এলো।
-হ্যালো ম্যাম,
-ওহ হাই কেমন আছো কেমন লাগছে পৃথিবীতে?
-ভালো খুব ভালো
-আমি তোমাদের খুঁজছিলাম আমি কি ওদিকে যেতে পারি?
-হ্যাঁ আসো আমার সাথে, তোমাকে নেয়ার জন্য লীডার আমাকে পাঠালেন।
পাশের ভেনেসিয়ানের সাথে নিজের বাড়ির পিছনে, পুকুরের দিকে যেতে যেতে বলল -আমার একটু অসুবিধা হচ্ছে।
সবুজ বড়বড় চোখ আরও বড় করে মিনতি মাখিয়ে জানতে চাইলে, -বলো কি অসুবিধা?
-তোমাদের নারী পুরুষের প্রভেদ বা দুজনের মধ্যে কোন পার্থক্য বুঝতে পারছি না।
মৃদু হাসির রেখা দেখা দিল গোলাপী ঠোঁটের প্রান্তে -ওহ্ এই ব্যাপার। আমি ভেবেছিলাম অনেক বড় কোন সমস্যা।
আমাদের পার্থক্যটা তেমন নয় তবে তোমাদের প্রাণীদের যেমন একই রকম লাগে দেখতে কিন্তু পরখ করলে আলাদা চেনা যায় তেমনি আমাদেরকে ভালো করে দেখলে চিনতে পারবে।
তাছাড়া পৃথিবীর আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমরা বিচিত্র কাপড় পরে ঢেকে রেখেছি নিজেদের, মুখ শুধু দেখতে পাচ্ছো।
-তোমরা সবাই কি সিপের ভিতর?
না কয়েকজন আছি এখন বাকি সবাই চলে গেছে কাজে।
কি কাজ করছে ওরা, ভাবনাটা এসে গেল ওর মনে।
পুকুরের মাঝে একটা ডিমের খোসার মতন সাদা গোল বল যেন বসে আছে।
ও কাছে পৌঁছাতে না পৌঁছাতে কয়েকজন লাইন দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়াল।
-হ্যালো ম্যাম, হ্যালো ম্যাম, সমস্বরে সবাই ওকে অভিবাদন জানাচ্ছে।
ও হেসে বলল,- হ্যালো সবাই ভালো? পৃথিবীতে রাত্রি যাপন ভালো হয়েছে।
একজন বলল, -খুব ভালো হয়েছে।সিপের ভিতরে আসেন, লীডার আপনার সাথে কথা বলবেন।
সিপের ভিতরে যাবে যদি ওকে নিয়ে উড়ে যায় অথবা আটকে রাখে; ভাবনাটা এসে গেল আবচেতন ভাবে। যদিও ওরা খুব ভালো ব্যবহার করছে তবু একটু ভয় লাগল অচেনা প্রাণীর যানের ভিতর যেতে।
বড়গোছের লীডার কাল রাতে যিনি কথা বলেছিলেন তিনি এগিয়ে আসলেন দরজার কাছে, তাকে বেশ চেনা মনে হলো।
-ইতস্তত করার কিছু নাই আসুন, কোন ক্ষতি হবে না।
সবুজ চোখে চোখ রেখে স্মিত হেসে ভিতরে পা বাড়াল।
অদ্ভুত সুন্দর সাজানো এক ঘর নীলাভ আলোর। নরম সোফার মতন কাউচ দেখিয়ে ওকে বসতে বলল। সামনে কাঁচের স্বচ্ছ টেবিল।
বাতাস খানিক ভারী যেন ভিতরে গভীর এবং শীতল।
-আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত আন্তরিক ভাবে। জানি আপনার অস্বস্থি হচ্ছে আমরা এখানে থাকায়। যা খুব স্বাভাবিক। তবে আপনাকে নিশ্চিন্ত করছি আপনার কোন ক্ষতি আমাদের দ্বারা হবে না।
আমরা আপনার কিছু উপকার করে যাব।
-না তা দরকার হবে না। তবে সব কিছু একটু নতুন আর অস্বাভাবিক এটা বলতেই হবে। পৃথিবীর মানুষ আপনাদের কথা জেনে গেলে কি হবে। এমন নানান ভাবনা এসে যাচ্ছে।
-ভাববেন না আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
-মানুষদের তো আপনারা চিনেন না। ওরা খুব বেশী নির্মম।
-আমরা ঐ সব অবস্থা কাটিয়ে এসেছি তাই জানি আপনি যা বলছেন।
-এমন মারা মারি কাটাকাটি আপনাদেরও আছে?
-ছিল প্রায় হাজার বছর আগে এখন কেউ ও ভাবে ভাবে না।
-হাজার বছর! তাহলে জানেন কেমন করে?
-ইতিহাস পড়ে। যখন সবাই নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো তখন থেকে অন্যের ক্ষতি করার র্দূভিসন্ধী করা বাদ দিল। সবাই মন দিল আমাদের দেশটাকে উন্নত থেকে উন্নততর করতে, একটু খানি উন্নতি মানে সবার জন্য অনেকখানি সুবিধা।
-তাই তো অন্যের ক্ষতি কেন করবে, নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকো।ভালো কাজ করার কি শেষ আছে কোনো।
আহা পৃথিবীটা যদি অমন হতো। হিংসা দরিদ্রতা মুক্ত সুন্দর ভালোবাসার জায়গা।
কিন্তু কি ভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হলো ভালো থাকার বিষয়টা?
-আমাদের বিজ্ঞানীরা এক ধরনের তরঙ্গ আবিষ্কার করে, যা দিয়ে চিকিৎসা করা হয় দুষ্ট চিন্তা ভাবনা।
-বাহ্
-নির্মূল হয়ে যায় কয়েক বছর পর অনেক রকম র্দূভিসন্ধীর দুষ্টবুদ্ধির চিন্তা ভেনাসিয়ানদের মন মগজ থেকে।
-বাহ আমাদের পৃথিবীতে এমন করা যায় না?
-যাবে না কেন? তবে সকালে যেমন বলেছে আমাদের এক বিজ্ঞানী আপনাকে, মানুষের একটা সময় লোপ পেয়ে যাবে।
-উনি তবে বিজ্ঞানী । -হ্যাঁ আমরা যারা এখানে এসেছি সবাই বিজ্ঞানী এবং গবেষক বিভিন্ন বিষয়ের।
যা বলছিলাম, মানুষদের মাঝে আমাদের মতন সমব্যবস্থা করতে খানিক অসুবিধা এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি। কারণ মানুষদের মাঝে অনেক কিছুর অনেক রকম ব্যাবধান ধনী দরিদ্র, শিক্ষা, পরিবেশ,খাবার ইত্যাদি। এছাড়া মানুষের খাবার খেয়ে বাঁচতে হয় সে জন্য টাকা আয় করতে হয়। কেউ ভালো আয় করে কেউ কম। তার উপর ভিত্তি করে গড়ছে সমাজ।
-হ্যাঁ সব কিছুর উপর প্রধান প্রয়োজন খাদ্যের জন্যই ছুটছে মানুষ আয় করতে তার উপর ভিত্তি করে আনুসাঙ্গিক অন্য প্রয়োজন আসছে।যে ভাবে পারে নিজেদের জীবন গড়ছে।
ঠিক তাই আপনার সাথে কথা বলে মানুষের মনো জগতের একটা ধারণা করছি।
- সব মানুষের মন কিন্তু এক রকম নয়।
- তা জানি
আপনি কিছু মনে করিয়ে দিতে বলছিলেন সকাল বেলা সেটা কি বিষয়ে।
প্রশ্নটা শুনে থমকে গেল খানিক বর্তমান ভাবনা থেকে ফিরে গেলো অতীতে। ফিরে গেলো সুদূর নিজের বাংলাদেশে। সেখান থেকে অনেককাল আগের যুদ্ধ সময়ে।
আর ভাবনার সুতা ধরে ফিরে এলো বর্তমান সময়ের চাওয়ায়। কোথায় যেন বিশাল একটা জট লেগে আছে সব। বোঝা যাচ্ছে কিন্তু খোলা যাচ্ছে না। আইনের এত মারপ্যাচের দরকার কি যুদ্ধাপরাধীর বিচার আবার কি ওদের ধরে সব ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে হবে প্রকাশ্যে আর সব সম্পত্তির মালিকানা দেয়া হবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে যেখান থেকে দেশের সকল মুক্তি যোদ্ধাদের সাহায্য করা হবে।
খানিক ভেবে নিয়ে ভেনেসিয়ান সবুজ চোখের লীডারের চোখের দিকে তাকাল। এক মূহুর্ত থেমে থেকে বলল, -অনেক আগের ঘটনা কিন্তু রেশ এখনও চলছে। আর বেশ লম্বা কাহিণী সব ঠিকঠাক ভাবে বলতে সময় লাগবে।
-হাত তুলে ওকে থামিয়ে দিয়ে লীডার বলল, বুঝে গেছি, আপনার চাওয়া কি?
-ওদের যে সাঙ্গ পাঙ্গরা ভুল বিষয়টাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে আছে তাদের মাথায় আসুক তারা ভুল করছে।
-ঠিক হয়ে যাবে এদের মাথাটা ফাঁকা করে দিতে হবে ভালোর জন্য।
ওর মুখের হাসি উপচে উঠে ঝলকে পরল নিজেকে সামলাতে পারল না। হেসে উঠল অট্টহাসি।
লীডারও যোগ দিলেন ওর হাসিতে, পাশে থেকে অন্য যারা কাজ করছিল সবার মাঝে একটা হাসির রোল উঠল।
হাসতে হাসতে সে মুখে হাত চাপা দিয়ে নিজেকে থামাতে চেষ্টা করছে,
কিন্তু যখনই ভাবছে, কারো মনে থাকবে না তারা কেন জেহাদ করছিল, মারামারির আয়োজন বাদ দিয়ে এক এক জন ফাঁকা মাথায় বলদের মতন বসে আছে। নেতা দুচারজন ওদের দিয়ে সন্ত্রাসী কাজ করাতে চাইছে কিন্তু কেউ ওদের কথা শুনছে না, নড়ছে না, কোন হামলা মারামারি হচ্ছে না।গাড়িতে প্রেট্রল বোমা মেরে মানুষ পুড়ানো হচ্ছে না।
রাজাকারের বিচার এগিয়ে যাচ্ছে সুষ্ঠ মতন। ওর ভাবনায় ছেদ পরল, লীডারের কথায়।
-আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন, এই ব্যাপারটায় আপনার চাওয়াটা আমি ধরে ফেলেছি। এখনই আমি একদল বিজ্ঞানী টিমকে আরো সব বিষয় গুলো বুঝে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে দিচ্ছি।
বিচারের রায়ের আগেই সারাদেশের মানুষ হাসতে শুরু করে দিবে আপনার মতন।
সবুজ একচোখ টিপে বেশ একটা ইঙ্গীত করলেন লীডার।
নিজের জন্য কিছু নয় তবে দেশের জন্য কিছু চাইতে পেরে অনাবিল আনন্দে মন ভরে উঠল ওর। শরীর যেন হালকা হয়ে গেছে। কি যে ভালোলাগছে।
ইস কবে সে হাসির দিনটা আসবে।
-খুব তাড়াতাড়ি আসবে।
চোখ নাচিয়ে ও সায় দিল আনন্দে।
-আমাদের গাড়িটা কি আপনারা আপডেট করেছেন?
-জ্বী বলা হয়নি রাতে দেখলাম খুব খারাপ অবস্থা কি করে ঐ গাড়ি চালাচ্ছেন আপনারা ভেবে আশ্চর্য হলাম। যে কোন সময় একটা দূর্ঘটনা হতে পারতো তাই জিজ্ঞাসা বাদের অপেক্ষা করলাম না।
কথা শুনে শিউরে উঠল সে, মুখে বলল,-অনেক ধন্যবাদ আমার স্বামী আজ মেকানিকের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তবে ও খুব অবাক হয়েছে গাড়ির কণ্ডিসনে।
-আমরা আপনাদের বাড়ি ঘর আর আসেপাশের জমিতে মেরামতের কিছু কাজ করে দিব যা আপনার স্বামী করতেন।
-না না সেকি ও আস্তে আস্তে করে নিবে।
-উনি করবেন জানি কিন্তু আমরা তা দ্রুত করে দিব।
-খুব শিঘ্র্ই আপনাদের বাড়িতে অনেক লোকজন আসবে।
-কেন?
-আমরা আছি বলে
-সে কি
-হ্যাঁ
আমরা যে পৃথিবীতে আছি আর আপনার বাড়িতে আছি। যাওয়ার আগে নাসার বিজ্ঞানীদের জানিয়ে যাব। ওদের সাথে একটা যোগাযোগ রাখতে হবে।
আমরা চাই ভেনাস আর আর্থ দুটো দেশের বন্ধুত্ব ।
-বাহ দারুণ হবে তো। আমরা কি ভেনাসে বেড়াতে যেতে পারি?
-তা পারবেন। আর আপনি তো আমাদের বিশেষ অতিথি হবেন পৃথিবীর সাথে ভেনাসের যোগাযোগের সম্মেলনের দিন।
-ওখানে যেতে কোন পাসপোর্ট ভিষা..
-আরে দূর ও সবের কোন প্রচলণ আমাদের নাই শুধু সময় নষ্ট। পৃথিবী থেকে বিষয়টা উঠিয়ে দিতে হবে।
-ঠিক খুব ভালো হবে তা হলে। কিন্তু বাড়িতে কাজ করার আগে আমার স্বামীর সাথে আপনাদের কথা বলে নিতে হবে।
-কাল ছুটির দিন উনি বাসায় থাকবেন, কাল কথা বলে নিব আমরা।
ছয়টা দিন দেখতে দেখতে যেন উড়ে চলে গেল। পরিচয় হওয়ার পরে থেকে স্বামী ওদের সাথে লেগে থাকল। ছুটির দুটো দিন শেষে বাকি তিন দিন অফিস না গিয়ে ওদের সাথে কাটাল। ওর আবার কৌতুহল অনেক বেশী সব কিছু জানার। ভেনেসিয়ানদের কাছ থেকে জ্ঞান আরোহণে ব্যাস্ত থাকল।
দুদিনে ওর জমিতে বড় বড় পিলার গুলো দাঁড়িয়ে যেতে দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে দু' চারবার ফোন করল। যা করার কথা ছিল তিন মাস পরে প্রতিবেশীরা জানত। একজন তো জানতেই চাইল কি ব্যাপার আলাদিনের প্রদীপ পেয়ে গেছো নাকি?
আর ঘরের ভিতর যা রেনোভেশন হলো তা এখনও কারো চোখে পরেনি।
ছোট ছোট ভেনেসিয়ানরা কি ভাবে এতো কাজ করে ফেলে।
ওরা শুধু শুনে নেয় কোথায় কি হবে রাতের আধাঁর পেরুলে সব তৈরী চাওয়ার চেয়েও সুন্দর নিখঁত ভাবে। ঘুম থেকে জেগে উঠে গত পাঁচ দিন ধরে যেন স্বপ্ন জগতে প্রবেশ করা হয়।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখে দুজন ভেনেসিয়ান ছুটতে ছুটতে এসে বলল, -তাড়াতাড়ি আসেন আমাদের সাথে। দেখেন কারা এসেছে। এই মাত্র আমাদের বাহন পৌঁছেছে।
ছুটতে ছুটতে বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখে,ছোট প্লেনের মতন বাহন থেকে কোন সুদূরের দেশ থেকে বাড়ির সব লোকজন বের হচ্ছে।
চোখে জল এসে গেল খুশিতে। একি করে সম্ভব!
স্বপ্ন নয় তো?
অবস্থার সাথে চলতে চলতে বুঝল কিছুই স্বপ্ন নয় সব বাস্তব।
তবে বাড়ির লোকজন ঠিক বুঝতে পারছে না ওরা এখানেই ছিল না অন্য কোথাও। তবে দেখা হয়ে খুব খুশি সবাই।
সবাইকে ঘরে নিয়ে এসে বসিয়ে খাবার দাবার দিয়ে সিপে গিয়ে লীডারকে বলল, -ওদের ম্যামরী লস করে দিলে হবে না। ওদের জানাতে হবে কি ভাবে ওরা এখানে এলো। আর এখানে থাকবে না আবার দেশে ফিরে যাবে সেটা ওদের ইচ্ছায় ঠিক করা হবে।
সায় দিয়ে বললেন- আচ্ছা তাই হবে।
ঘরে এসে ঢুকতে না ঢুকতে ফোন বেজে উঠল ।
ব্যাস্ত পায়ে রিসিভার উঠিয়ে -হ্যালো বলতেই একজন ভারী কণ্ঠের মানুষ বললেন -আমি নাসার বিজ্ঞানী আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
-জ্বী বলুন,
-আমরা একটা বার্তা পেয়েছি, ভীন গ্রহের কিছু প্রাণী আপনার বাড়িতে অবস্থান করছেন, তাদের সাথে দেখা করার জন্য আমরা আপনার বাড়িতে আসতে চাই।
কি জবাব দিবে ভেবে চোখ ফিরিয়ে দেখল একজন ভেনেসিয়ান ওর পাশে দাঁড়িয়ে অনুমতি দেয়ার জন্য ইঙ্গিত করছে।
সে ভাবেই বলল, -আসুন।
প্রাইভেট প্লেন দশ বারোখানা এসে থামল ওদের পেছনের জমিতে। যার ভিতরে নাসার বিজ্ঞানী, রির্সাস কর্মি, পৃথিবী ব্যাপী আরো সব বিখ্যাত বিজ্ঞানী, টিভি সাংবাদিক, পত্রিকা সাংবাদিক বাড়ি ভর্তি হয়ে উঠল।
ফ্ল্যাসের আলো ক্যামেরায় ছবি ধারণ করছে ঝলমল করছে সারক্ষণ। ওর বাড়ির খবর সরাসরি প্রচার হচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে। হৈ চৈ পরে গেলো পৃথিবী ব্যাপী।
সাতদিন ব্যাপী ভেনিসিয়ানরা অবস্থান করেছে ওর বাড়িতে এ খবর জেনে পরিচিত আধা পরিচিত অস্থির হয়ে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। অপরিচিতরাও কথা বলার জন্য ব্যাস্ত ওর সাথে। রাতারাতি এমন বিখ্যাত হয়ে উঠল যা সে কখনও চায় নাই। কিন্তু এখন আর ফিরানোর কোন উপায় নাই ওর নাম পৃথিবীর বুকে লেখা হয়ে থাকবে। ভেনেসিয়ানদের সাথে পরিচিত প্রথম মানবী হিসাবে।
পরদিন ওরা চলে গেল। ওদের আসাটা ছিল চুপিচুপি কিন্তু যাওয়াটা হলো মহা সমারোহে। টেলিভিশনের স্ক্রিনে লেগে রইল ওদের যাওয়ার খবর পৃথিবী জুড়ে।
বাড়ি ভর্তি আত্মিয় নিয়ে বেশ সুখে হৈ চৈ আনন্দে কাটছে দিন।
এমন সময় টিভিতে আসল খবর,রাজাকার গোলাম আযমের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে যোদ্ধাপরাধীর বিচারের।
উকিল সাহেবের প্রশ্ন শুনে, আসামীর কাটগড়ায় দাঁড়িয়ে, গোলাম আযম গড়গড় করে আদ্যাপান্ত বৃত্তান্ত ব্যাখ্যা বিশাদে বর্ণনা করে যাচ্ছে নয় মাসের যুদ্ধ সময়ে কোথায় কিভাবে কেমন করে কাকে ধরে এনেছে, নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে। নির্মম সে গা শিউরে উঠা বর্ণনা একের পর এক আপন মনে নিজের তাগিদে যেন বলে যাচ্ছে। যা কোনদিন মানুষ জানেনি, জানার কোন সুযোগও আর ছিল না তা নিজে থেকেই প্রকাশ করে দিচ্ছে। স্মৃতির প্রতিটি দিনক্ষণ জ্যান্ত। সাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই এই বক্তব্য শোনার পর তারপরও সে নিজেই বলে দিচ্ছে, কারা কারা চাক্ষুস দেখেছে তার অপকর্ম। স্বীকার করছে সে তার দোষ। তার শাস্তি চাওয়া বাঙলার জনগণের প্রাণের দাবী মেনে বিচারক যেন তাকে ফাঁসির আদেশ দেন তাই বারবার অনুরোধ করছে।
একের পর এক সব রাজাকারের বিচার শেষ হলো। নির্বিঘ্নে। পালিয়ে থাকা বাচ্চু রাজাকার নিজে এসে ধরা দিল আর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা অপরাধীরাও একে একে ফিরে গিয়ে নিজেদের দোষ জানাল আদালতে।
ওদের অবস্থা হয়েছে নিজেদের অপরাধ নিজেদের পাগল করে তুলেছে, যেন মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল।
বিচার শেষে হাসির শব্দ ছড়িয়ে পরছে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবী জুড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৫৯