অন্ধকারে সবুজ আলো নেচে বেড়াচ্ছে চোখের মতন আকার একটা নয় কয়েকটা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে কাঁচের দরজার বাইরে চোখ গেল আর মনে হলো একটা সবুজ আলো যেন ঝিলিক দিল। মনের ভুল মনে করে সিঁড়ির দু ধাপ উঠে আবার ফিরে বাইরে তাকানো। তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। হাত বাড়িয়ে দেয়ালের সুইচ টিপে বড় আলোর বাতি নিভিয়ে আবার বাইরে চোখের দৃষ্টি মেলে দেয়া। প্রথমে কিছুই চোখে পরল না নিকশ অন্ধকার ছাড়া। কয়েক মুহুর্তে উঠোনের গাছপালা ছায়াছায়া দৃষ্টি গোচর হলো।
তার মাঝে সবুজ আলোর নেচে বেড়ান। অনেকগুলো তবে দুটো দুটো আলো পাশাপাশি, চোখের মতন। কৌতুহল বাড়ছে এগুলো কি। হরিণ অথবা বন্য শুয়োর বা অন্য কোন জন্তু। প্রাণীর মতন হেঁটে বেড়াচ্ছে না উড়ে বেড়াচ্ছে ধরা যাচ্ছে না। একটু ভয় করছে। বেকায়দা একটা অবস্থায় দু হাত ভরতি জলের গ্লাস জগ, সিঁড়ির উপরে দাঁড়ানো। ঘুমুতে যাওয়ার আগে পানি নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস চির কালের। সবুজ আলোর নাচন আর ওর মাঝে কাঁচের দরজার ব্যাবধান শুধু ।
আগ্রহ, উৎকণ্ঠা, ভয় কৌতুহলের সংমিশ্রনে পা যেন সেটে গেছে এক জায়গায় আর চোখের দৃষ্টি খোঁজছে সূত্র।
আলোগুলো কাঁচের দরজার বাইরে ভীড় করেছে। ওদেরও কৌতুহল ভরা চোখ একই রকম। দেখতে পেয়েছে ঘরের ভিতর ওকে মনে হলো।
কিন্তু এগুলো কি?
চার পেয়ে কোন জন্তুর মুখ নয়। সাদা সাদা চুলবিহীন মাথা।
ভুত! ধ্যাত..ভুত, প্রেতে কোন জীবনেই আস্থা নাই।
পাশাপাশি তিন জোড়া সবুজ চোখ কাঁচের ওপারে মুখ ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে ঘরের ভিতর, দেখছে।
এতক্ষণ যেন ঘুরছিল খোঁজে পাওয়ার তাড়নায়। এবার পেয়ে গেছে জীবনের খোঁজ যা ওরা খোঁজছিল এতক্ষণ।
দু হাতে জিনিস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কষ্ট তাছাড়া এক ধরনের অস্বস্থিকর পরিবেশ। উপরে উঠে যেতে গিয়ে মনে হলো পা সেটে আছে সিঁড়ির ধাপে, উপরে উঠতে পারছে না। নীচের ঘরে ফিরে গ্লাস জগ টেবিলে রেখে জানালার কাঁচে চোখ রাখতেই দরজার পাশ থেকে সবুজ চোখগুলো জানালায় চলে আসল।
দশটা সবুজ আলো জ্বলছে অন্ধকারের সীমানায় আগে পিছে,উপরে নিচে। মৌ মাছির শব্দের মতন একটা বীন বীন শব্দ আসছে যেন।
সাদা সাদা মাকড়শার পায়ের মতন আঙ্গুল এবার কাঁচের উপর হাত। বিলবিলে একটা শীতল অনুভূতি জড়িয়ে যায় শরীরে কিন্তু আগ্রহ চরম আকার নিয়েছে অচেনা প্রাণীগুলোকে জানার।পৃথিবীর চেনা জানা শোনা কোন প্রাণীর মতনই মনে হচ্ছে না এদের।
ওদের বড় বড় সবুজ চোখগুলোয় যেন এক আবেদন মায়া ভরা।
চোখে চোখে তাকিয়ে থাকতে মনে হলো ওরা যেন বলছে আমাদের ভিতরে আসতে দাও। তোমার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে।
মন্ত্রমুগ্ধের মতন দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে ওদের ভিতরে নিয়ে আসা হলো। খাবার টেবিল ঘিরে বসল ছোট ছোট মানুষের মতন প্রাণীগুলো খুব শান্ত ভাবে। দু চারজন দাঁড়িয়ে থাকল পাশে, বসার চেয়ার ছিল না বলে।
ওদের পরনে এক ধরনের শুভ্র ভারী কাপড় নীলাভ আলোর বিচ্ছুরণে ঘেরা। তার বাইরে বেরিয়ে আছে সাদা মুখ আর শুভ্র হাতের পাতা। সবুজ চোখ মুখের আকৃতির চেয়ে বেশ বড় আর গোলাপী ঠোঁট।
বীনবীনে মৌমাছির মতন শব্দটা ধীরে থেমে একদম নিরব হয়ে গেল চারপাশ।
একটু বড়সর যাকে লীডার মনে হচ্ছে তিনি হঠাৎ পরিস্কার বাংলায় বলে উঠলেন। মানুষের মতনই কন্ঠস্বর তবে কথার শেষে ইকো ধ্বনীর মতন হচ্ছে।
আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত কিন্তু আপনার বাড়ির পুকুরটাতে ল্যাণ্ড করতে হলো আমাদের। আমরা অন্য যে কোন জায়গায় ল্যাণ্ড করতে পারতাম কিন্তু তা আমাদের জন্য নিরাপদ হতো না। আমাদের কোন অসুবিধা হতো না কিন্তু কৌতুহলি জনগন আমাদের নিরাপদে কাজ করতে দিত না। র্নিবিঘ্নে কাজ করার জন্য আপনার জায়গাটা আমাদের পছন্দ হয়েছে।
আপনাকে না বলে আমরা কিছু কাজ করে চলে যেতে পারতাম কিন্তু যেহেতু আপনার জায়গাটা আমরা ব্যবহার করছি তাই আপনাকে জানান দরকার আপনার জায়গায় আমাদের উপস্থিতি। আমরা জানি, আপনার এই বিশাল বাড়ির পুরো জায়গাটা খালি পরে থাকে। এই শীতে আপনিও খুব একটা বাইরে বেরুন না ঘর ছেড়ে।
পুকুরে পানি কম আর শীতে পানি বরফ জমে প্রায় স্কেটিং ফিল্ড হয়ে গেছে এখানে ল্যাণ্ড করা সুবিধা । তাছাড়া এর গভীরতায় আমাদের যানটি নিরাপদে মানুষের চোখের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে পারছি।
জানি আপনি যথেষ্ট সাহসী তারপরও বলি, আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আপনার কোন ক্ষতি করব না। আমরা আপনার জায়গাটা রেন্ট হিসাবে ব্যবহার করছি দিন সাতেকের জন্য। তবে হ্যাঁ আমরা এটা জোড় করে করছি বলতে পারেন। এমনিতে ভাড়া চাইলে আপনি বা আপনার স্বামী হয়তো রাজী হতেন না । এখন যদি আপনি আপত্তি করেন তবে আমারা চলে যাবো। তবে আমাদের থাকতে দিলে আমরা আপনাদের সুবিধাগুলো দেখব এবং যথাযথ মূল্য দিব আপনাদের জায়গা ব্যবহারের জন্য।
বাহ্ বেশ তো মনের মধ্যে এমন একটা কথা বেজে উঠল।
মুখে এতক্ষণে শব্দ করে জিজ্ঞাসা করল। আপনারা কারা, কোথা থেকে এসেছেন?
আমরা ভেনেসিয়ান। শুক্রগ্রহ থেকে এসেছি। পৃথিবীর উপর কিছু গবেষনা করব। আমরা দূর থেকে এতদিন আমাদের গবেষনা করেছি। এবার পৃথিবীর বুকে থেকে কিছু জানতে চাই। নিয়ে যেতে চাই পৃথিবীর কিছু উদ্ভিদ, প্রাণীর স্যাম্পল শুক্রগ্রহে।দেখতে চাই সেখানে তারা কেমন ব্যবহার করে।
ভিতরে একটা মুচকি হাসি আটকে গেল, শুক্রগ্রহের বাসিন্দা ভাড়া নেবে আমার জায়গা। ঠিক জায়গাও নয় পুকুরের ভিতর ওদের প্লেন বা রকেট বা স্পেইস সিপ যা নিয়ে ওরা উড়ে এসেছে পৃথিবীতে সেটা অবতরণ করিয়েছে বলে। কিন্তু ওরা কি ভাবে মূল্য পরিশোধ করবে তাই ভেবে ওর হাসি আসছে। আর পুকুরটা তো এমনি পরে আছে না হয় থাকল ওরা ক'দিন সেখানে। মাছের চাষ করবে ভাবতে ভাবতে হুট করে শীত এসে গেল তাই এ বছর কিছু করাই হয়নি। করা হয়নি পুকুর ঘিরে মনের ভিতর থাকা জাপানি র্গাডেনও।
বেশ একটা এ্যাডভেঞ্চার ভাব হচ্ছে মনে তবে পারিবেশের উপর কোন প্রভাব পরবে কিনা কে জানে। অথবা ওরা যদি পৃথিবীর কোন ক্ষতির কারণ হয়। ভাবনাটা ভাবতেই একটু অসহায় লাগল।
মনে সাহস এনে সরাসরি জানার জন্য জিজ্ঞেস করল, আপনারা পৃথিবীর কোন ক্ষতি করবে না তো?
ধন্যবাদ প্রশ্ন করার জন্য। আপনার মনে আরও যে সব প্রশ্ন আসছে আমি তা সব ধরতে পারছি।
একটু চমকে ভ্যাবাচেকা খেয়ে সবুজ চোখের উপর দৃষ্টি ফেলে জানতে চাইল তাই বুঝি, কি ভাবে?
আপনার শরীরের তরঙ্গ মস্তিস্কের ফ্রিকোয়েন্সি ভাবনার সাথে আমার মাঝে তরঙ্গায়িত হয়ে ছড়িয়ে পরছে। কথা না বলে মনের কথা বোঝার আমাদের এমন একটা ক্ষমতা আছে।
চারপাশে ঘিরে বসে থাকা এতগুলো ভেনেসিয়ান ওর ভাবনার সব জেনে যাচ্ছে! নিজের মনে লজ্জা পেল খানিক আগে মুচকি হেসে ছিল বলে । কিছু তো ভাবারও উপায় নাই দেখি ওরা সব আগেই জেনে যাচ্ছে।
আপনার মাথার সেলগুলো ভাবনা তৈরী করছে বা ভাবছে আমরা তা সহজেই জেনে নিতে পারব।
কথা বলা হচ্ছে একটি বিষয়ে কিন্তু মাথার ভিতর ভাবনা তৈরী হচ্ছে কত বিষয়ে এক সাথে। ওর ভিতরের সব খবর টলটলে জলের মতন ওরা দেখে ফেলছে।
কোন কিছু না ভেবে ওদের কে দেখায় মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করল।
আপনি নিঃশ্চিন্তে থাকুন। আপনার কোন ক্ষতি তো হবেই না বরং আমরা যতদূর সম্ভব আপনার ইচ্ছা পূরণের চেষ্টা করব।
আমাকে কি করতে হবে?
আপনি শুধু চুপচাপ নিজের মতন যেমন দিন কাটাচ্ছিলেন তেমনি থাকবেন। আমাদের বিষয়ে কারো সাথে কিছু বলবেন না।
ঠিক আছে তবে আপনাদের বিষয়ে আমার অনেক কৌতুহল হচ্ছে আপনাদের সম্মন্ধে কিছু জানতে ইচ্ছে করছে। আর আপনাদের স্পেইস সিপটাও ঘুরে দেখতে ইচ্ছা করছে।
আপনারা কি আমাদের মতনই খাওয়া দাওয়া করেন? আর এই আমার ভাষায় কথা বলা কী ভাবে শিখলেন?
আমরা তরল বাষ্পীয় খাবার খাই আর কথা বলা সে তো আপনাদের গবেষনা করে আমরা পেয়েছি। কাছাকাছি আসার পর অটোমেটিক বুঝতে পারছি, বলতেও পারছি।
ঠিক আছে আপনি এখন ঘুমাতে যান। আমরা প্রতিদিন আপনার সাথে দেখা করব। আর যদি আমাদের কাজ আগে শেষ হয়ে যায় তবে সাতদিনের আগেই চলে যাব।
আপনাকে আমাদের সিপে অবশ্যই নিয়ে যাব।
দরজা খুলে আলোগুলো নেচে নেচে বাড়ির পিছনে চলে গেল। ও তাকিয়ে দেখল প্রতিটি আলো মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে।
অন্ধকারে পুকুরে ওদের সিপটা দেখতে পেল না।
দোতলায় এসে শোবার ঘরে না ঢুকে চলে গেল লাইব্রেরী রুমে যেখান থেকে পিছনের পুকুরটা স্পষ্ট চোখে পড়ে।
আজ ভীষণ অন্ধকার কৃষ্ণপক্ষের রাত। বাইরে তাই ছায়াছায়া গাছপালার আভাষ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বাইরের গাছপালার অবস্থান ছায়াছায়া মতন চোখে পরল আর মনে হলো হালকা নীলাভ আলোর ফুলকি যেন জ্বলছে কয়েকটা বাড়ির পেছনে পুকুরের কাছে আর খুব হালকা সাদা আলোর একটা বিচ্ছুরণ গোল হয়ে আছে যেন। যেমন হয় বরফ জমা জলে চাঁদের আলো পরলে।
অনেক্ষণ তাকানোর পর অন্ধকার চোখ সয়ে যাওয়ার পর বেশ বোঝা যাচ্ছে এবার ।
বাড়িটা উত্তর আমেরিকার নর্থপুলের কাছাকাছি শুনসান এক বিরান এলাকায় বিশাল জায়গা জুড়ে।
প্রতিবেশীরা অনেক দূরে তারপরও কারো নজরে এলে কি হবে।
তবে সময়টা ক্রিসমাসের সবার বাড়ি ঘিরে নানা রকম আলোর মালা জ্বলছে। এমন কিছুই ভাবতে পারে প্রতিবেশীরা। তারপরও অতি কৌতুহলি হয়ে কেউ যদি চলে আসে তা হলে কেমন হবে? ভাবনাটা ভাবতে ভাবতে শুনতে পেল স্বামীর কণ্ঠস্বর- তুমি কি আজ ঘুমাবে না?
উত্তর না দিয়েই তাড়াতাড়ি শোয়ার ঘরে চলে এলো ।
সারাদিনের অফিস ক্লান্ত মানুষটার এক প্রহরের ঘুম হয়ে গেছে এর মাঝে।
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আবারও বলল -কি আজ এত দেরী করছো যে।
বলব কি এখন একবার ভেবে নিয়ে মন পরিবর্তন করল, থাক কাল সকালে কি হয় দেখা যাক।
কিছুই না বলে বিছানায় উঠে এলো, -এই তো এলাম।
স্বামী বেচারা খুব ভোরে কাজে বেড়িয়ে যায় শীতের সকালে প্রায় অন্ধকার থাকতেই। অনেকটা দূরে যেতে হয় ওকে অফিসে। তাই সকালে চারপাশে নজর দেয়ার সময় থাকে না।
ও সাধারণত ঘুমিয়ে থাকে সকালে উঠে না। কিন্তু আজ উঠে পরল। স্বামী একটু অবাক হয়ে জানতে চাইল -কি উঠে পড়লে যে আজ।
-কাল রাতে দেরী করে এলাম তোমার সাথে কথা হলো না তাই ভাবলাম তোমাকে একটু চা করে দেই আজ সকালে আর দিনের খবরা খবর নেই।
-বাহ আজ বড় শুভদিন মনে হচ্ছে
-তাই শুভ সকাল শুভ দিন। হালকা হেসে ও চা বানাতে চলে গেল। তুমি তৈরী হয়ে আসো
চায়ের পানি ও টোষ্টারে টোষ্ট তুলে দিয়ে বাইরে নজর দিল। অন্য রকম কিছু চোখে পরে কিনা দেখতে।
ভোরের আলোয় প্রতিদিনের মতনই সব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
স্বামীকে বিদায় জানিয়ে পূব আকাশের দিকে চোখ ফিরাল। জ্বলজ্বলে শুকতারাটা চোখে পরল ওর।
ঐ তারার প্রাণী তার বাড়িতে মেহমান। কাল রাতে ওদের সাথে দেখা হলো ভাবনাটা ভাবতেই কেমন শিহরণ জাগল শরীরে। কি আশ্চর্য অবাক করা ব্যাপার। ও তো রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যেতে পারে। এই খবরটা যদি মিড়িয়ায় জানায়। নাসার বিজ্ঞানীরা হামলে পরবে ওর বাড়িতে। ক্যামেরা আর ফ্লাসের ঝলকানিতে ওর বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠবে । পৃথিবীর প্রথম মানবী সে যার সাথে ভেনেসিয়ানরা কথা বলেছে।
ভাবনাগুলো ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ। শীতল বাতাস শরীর ঘিরে ধরেছে সে খেয়ালও নাই।
-শুভ সকাল"
কথাটা শুনে ফিরে তাকাল, ভেনেসিয়ানদের একজন ওর সামনে দাঁড়িয়ে।
-শুভ সকাল কেমন কাটল রাত পৃথিবীর বুকে?
-ভালো বেশ ভালো?
-তোমাদের কি এমনি ভাবে রাতদিন হয়?
-হয় তবে আমাদের সূর্যটা উঠে পশ্চিম দিকে আর তোমাদের পৃথিবীটা আমাদের চাঁদ।
-ঐ তারাটা দেখছো ওটা তোমাদের বাড়ি।
সবুজ চোখের আলোটা একটু ম্লান সকাল বেলা তবে ঠোঁটের গোলাপী রঙ অনেক গাঢ় দেখাচ্ছে। হাসির আভাস ছড়িয়ে বলল, -জানি আর এও জানি তুমি কি ভাবছিলে।
-ছি ছি কি বলছো, আমি কিছু মিন করিনি কিন্তু ভাবনা টা তো এসে যাবেই নয় কি? আমরা তো এমনই ভাবতে অভ্যস্থ।
-তা ঠিক তবে তুমি তোমার স্বামীকেও কিছু বলোনি।
-না সে নিজেই জানুক বা তোমরা জানাও।
-তাই আমরা জানাব।
-তা তোমরা সারাদিন কি আমার বাড়িতেই থাকবে?
-না আমরা সবাই কাজে বেড়িয়ে পরেছি। রাতের অন্ধকারে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট যান নিয়ে চলে গেছে অনেকে।
-ওহ্ তাই নাকি?
-তবে তারা সবাই জঙ্গল বা বিরান ভূমিতে গিয়েছে, মানুষের মাঝে নয়।
-তোমরা কতজন এসেছো?
-চার শত ।
-তোমরা পৃথিবীর কোথায় কোথায় যাবে।
-সবগুলো মহাদেশে আর যত বেশী দেশ আমরা দেখতে পারব ততই ভালো -সেই চেষ্টা করব।
-তোমাদের দেশ গুলো কি আমাদের মতন?
-নাহ পৃথিবীটা বড় বিচিত্র।দেশ আর মানুষ অনেক ভিন্ন রকম।আমাদের একটাই দেশ আর এক রকম সব ভেনেসিয়ান।
একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ওর বেশ জোড়ে সরে আহা এমন যদি পৃথিবীটা একটা দেশ হতো আর সব মানুষ শুধুই পৃথিবীর মানুষ হতো তা হলে কি যে ভালো হতো। যে যখন খুশি সেখানে চলে যেত।
-আমরা ইচ্ছে করলে এমন করে দিতে পারি।
-দাও না তবে
-হঠাৎ করে পৃথিবীর মানুষের একটা সময় লোপ পেয়ে যাবে তবে। হঠাৎ করে খানিকটা এলোমেলো অবস্থায় পরে যাবে অনেকে।
-কেমন সেটা?
-এই ধরো, যারা সকালে উঠে কাজে যায়, পাস পোর্ট ভিষা দেয়ার জন্য নেয়ার জন্য। বর্ডার চেকিং, ইমিগ্রেসন সিষ্টেম, লইয়ার সোস্যালওয়ার্কার প্রেসিডেণ্ট, মন্ত্রি বিভিন্ন দেশের, বা আর্মি এরা সব মনে করতে পারবে না ওরা কি করত। অনেক অনেক কাজ আর পৃথিবীর বুকে থাকবে না।
-বেশ হয় এমন কাজ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো।
-আমরা সব ভুলিয়ে দিতে পারি ইচ্ছে করলে।
-তোমরা ভুলিয়ে দিতে পারো কিন্তু মনে করিয়ে দিতে পার না?
-তাও পারি,
-তাহলে বেশ হয়।
এমন সময় ফোনটা বাজতে থাকল। -আমি ফোনটা ধরতে যাচ্ছি।
-ঠিক আছে পরে আবার আসব কথা হবে।
দরজা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ভিতরে এলো।এতক্ষণে টের পেলো ঠাণ্ডায় হাত পা জমে যাচ্ছে।
ফোনের রিসিভার তুলে নিয়ে কথা বলতে বলতে বিছানায় এসে ঢুকল।
-ঘুমিয়ে পরেছো
-না ঘুমাইনি
-কি করছো
-সকাল দেখছিলাম, তুমি পৌঁছেছো?
-হ্যাঁ, একটা কথা জানানোর জন্য তোমাকে ফোন করলাম।
-কি কোন অসুবিধা হয়েছে পথে?
-না গো, গাড়িটা একটু ট্রাবল দিচ্ছিল ক’দিন। আজ অবাক কাণ্ড কিছুই টের পেলাম না। ভাবছিলাম মেরামত করতে নিয়ে যাব আজ কিন্তু এত স্মুথ চলল মনে হলো যেন নতুন গাড়ি চালাচ্ছি।
-তাই নাকি, রাস্তা কেমন ছিল?
-এদিকে অনেক তুষারপাত হয়েছে আজ। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম কখন জানি গাড়ি থেমে যায় কিন্তু গাড়ি অসাধারণ চলল।
-বাহ্ দারুণ তো। বলার সাথে মনে হলো, ওরা কিছু করেছে অবশ্যই। মনে মনে একটা ভালোলাগার ঢেউ খেলে গেলো কিন্তু মুখে বলল, ঠিক আছে ফিরে আসো আজ দিনটা দেখো কোন অসুবিধা হলে কাল নিয়ে যেও ঠিক করাতে মেকানিকসের কাছে।
কথা বলা শেষ করে ও ঘুমিয়ে পরল বড় আরামে।
চলবে.........
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৩৬