নতুন বাসা ,নতুন অফিস ।কি আনন্দ আকাশে বাতাসে । কিন্ত পরের মাস আসতে না আসতেই এ শহর কেমন যেন সাদা কালো হয়ে গেল
আমার রুমমেট দেশের বাড়ি চলে যাবে , কিন্তু তাকে কাওরান বাঁজার সবজি ফেরত ট্রাকের হেল্পার সাঁজতে হবে ।আমি বললাম প্রস্তুত হ , কঠিন অভিনয় করতে হবে , । সংলাপ যেন মারমার কাট কাট হয় । রুমমেট, প্যান্টের উপর লুঙ্গিপরে, কাঁধে নতুন কেনা ল্যপ্টপ , ঝুলিয়ে বলল ঃ‘ভাই কস্টিউম ঠিক আছে” ? । রাত ৩ টাই আমাকে কাওরান বাঁজার পর্যন্ত যেতে বলল। আমি এক কাপ দুধ চা ২ টা সিগারেটের শর্তে রাজি হলাম ।
পুরো ৩ রুমের বাসাই আমি একা । বড় একা , ।অফিসে সকাল নটার আগে কার্ড পাঞ্চ করতে হবে এটা নিপাতনে সিদ্ধ । মাসে ৩ দিন লেট হলে ১ দিনের বেতন নাকি ম্যাজিক হয়ে যায় । এইচ ,আর আগেই এ কালাম আমাকে পড়াইছে । অতেব সাধু সাবধান ।আমি খুব সাবধান হয়ে সকাল ৭ টা থেকে ৮ টা ১৫ পর্যন্ত , একবার টাইম দেখি আবার একটু ঘুমাই । আবার টাইম ,আবার ঘুম । তার পর ৪৫ মিনিট বিশাল এক যুদ্ধ । দ্যা গ্রেট ব্যটল । কার্ড পাঞ্চ শেষ অফিস অফিসও শেষ । ৯ টাই শুরু ৯ টাই শেষ ।তার পর আবার ২ কিলো মিটার হেটে ,ঘেমে , রেঁধে ,কেঁদে বাসাই ফিরি ।
আজকে আমার প্রাণ ফোয়ারার সুর ছুটেছে,.
দেহের বাঁধ টুটেছে--. মাথার 'পরে খুলে গেছে আকাশের ওই সুনীল ঢাক্না ॥
এমনি করে যায় যদি দিন, যাক না
মন উড়েছে উড়ুক-না রে মেলে দিয়ে গানের পাখ্না ॥
পাখনা মেলতে মেলতে …।। এ মাসের ২ তারিখে পাখনা আমার ভেঙ্গে গেল ।
কাছে মাত্র ১২৬ টাকা । ঘরে চাল শেষ । ৫দিন আগে দুকেজি মিনিকেট চাল কিনেছিলাম ১২০ টাকাই । ভাবলাম তিন তারিখে বেতন পেয়ে বাঁজার করব ।
কিন্তু “মরফি ল” বলে এক রকম “ল”আছে । এ ব্যক্তির বিখ্যত অনেক অদ্ভুত” ল “আছে ।ত ল“এই যে পরিস্থিতিগুলো তৈরী হয়, এটাকে বলে "মরফির ল" যেটাকে সোজা বাংলায় "যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়" অনুযায়ী এ মাসে বেতন ?????।
আমি শুন্য । কাছে কোন টাকা নেই , ঘরে চাল নেই ।উপাই একটাই ; কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদী ঋণ করা ,কিন্তু ঋণের রাজ্যে যা দেখলাম , পর্ণ দেখও এত শিহরন জাগেনি ।
আমি প্রায় সব মিলিয়ে ১৪ জন বসন্তের কাক বাছাই করলাম।ডারউইন আসার আগে এরা সবাই কোকিল ছিল । ।পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলাম । বললাম " আমার ২ হাজার অথবা ১ হাজার হলেও চলবে ।এরা সবাই আমার পুরাতন বন্ধু , হাল নাগাদ বন্ধু ।কলেজ বন্ধু ,ইস্কুল বন্ধু , সিনিয়র ভাই ।জুনিয়র দুলাভাই । টাকা চাইলেই সবাই আমাকে তার সমস্যার গল্প বলে ।
ওরা আমাকে মনোযোগী স্রোতা পেয়ে কুয়াশার গল্প বলে ,মেঘের গল্প বলে ,, কেও সুরাইয়া তারার গল্প বলে ,অনেক বন্ধু আমাকে জিগাই আমার নাম্বার রকেট করা আছে নাকি ।তার পর সে সে আর আমার কল ই রিসিভ করে নি ।
আমি এ রকম হবে কল্পনাই করি নি । ভাবি নি ,আমার ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু ব্রাকেটে ডিপ্লোমা র কাছে ২০০০ টাকা নেই ।অথচ সে গত মাসে নতুন কেনা ৪ টা ফ্লাটের কথা বলে ,সতিই সেদিন আমি খুব খুশি হয়ে ছিলাম ।
ওর মামার চায়নিজ লিফটের ব্যবসা ওকে সামলাতে হয় । ব্যবসা সামলাতে সে প্রায় থাইল্যন্ড যায় ,থাই ম্যাসাজ নাকি অস্কারজয়ী অদ্ভুত এক শিল্প । ও বলে ,আর আমি কল্পনাই হারিয়ে আরও H D মুডে তা দেখতে পায় । আমার HD বন্ধুর কাছে নাকি ২০০০ টাকা নেই ।
তা হলে উপাই ?
প্রথম রোজর দিন ৫ কেজি আলু কিনেছিলাম তার অর্ধেক এখনো অবহেলাই পড়ে আছে ।আপাতত এটাই সম্বল ।বিভিন্ন উপায়ে আমি আলু খেতে লাগলাম। ডিনারে, আলু সিদ্ধ করে তাতে লবন মিশিয়ে খাই ।শেষ রাতে আলু সিদ্ধ করি ,তারপর হাল্কা আচে সে আলু কড়া তেলে ভাজি করে খাই । প্রতি সেহরি তে মা ফোন দিলে বলি ,মা রাখ রাখ ,উঃ আর ৫ মিনিট টাইম আছে খেয়ে ফোন দিচ্ছি ।আমি বিহব্বলের মত অফিস যাই,
রামপুরা টু পান্থপথ আবার রামপুরা । পা চলে না ,মাথা ঘোরে ।দুচোখে ঝাপসা দেখি ।কোন রাতে ক্ষুধাই ঘুমই আসে না ।ঘুম স্বার্থপর । আলফা মিউজিক শুনলে নাকি ঘুম চলে আসে , কিন্তু জয়নুলের কাছে এটা নাকি কোন মিউজিক ই না । পৃথিবী বিখ্যাত সারভাইবাল মুভি দেখি । CastAway ,the way Back ,কোন WAY তে way হয় না । কখনো আমি” দ্যা মারশান “ সিনেমার ক্যপ্টেন । ক্যপ্টেন ম্যথ শুরু করে , দিনে দুই পিচ করে আলু খেলে আড়াই বছর যাবে এখান থেকে আবার হাপ পিচ রেশন করলে আরও তিন মাস । কিন্তু অপেক্ষা ৪ বছরের ।উপাই ? ক্যপ্টেনএর মঙ্গলগ্রহে আলু চাষে বাম্পার ফলন হয় ।সে আলু দেখেই আমি তৃপ্ত । আমার আড়াই কেজি আলু এখনেও শেষ হয়নি ।এটা কি মেগা সিরিয়াল ?।কে জানে । শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন হয়ত জানে,
কিন্তু স্যার প্রায় বলে ।
“এখনতো চারিদিকে রুচির দুর্ভিক্ষ! একটা স্বাধীন দেশে সুচিন্তা আর সুরুচির দুর্ভিক্ষ! এই দুর্ভিক্ষের কোন ছবি হয়না।” এটি বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত একটি উক্তি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২০ ভোর ৫:১৪