শিরোনামহীন (২)
কোলে তুলে নিতেই বাচ্চার চিৎকার যেন বার বার মনে করে দিতে লাগল তার অসহাত্বের কথা। বৃদ্ধা সোনামিয়াকে বল্ল 'তোর বউরে ডাইক্কা আন'। সোনামিয়ার বউ সাথে করে তার ১২ বছরের ছেলে সহ এসে নবজাতক কে কোলে তুলে নিল, এদিকে ছেলের বউয়ের দাফন কাফনের ব্যবস্তা বৃদ্ধা আর সোনা মিয়া দু-জন মিলেই সম্পন্ন করল।
সন্ধ্যা হয়ে এল, বাচ্চাটা কিছুক্ষন পর পর থেমে থেমে আবার কান্না শুরু করে। কান্না শুরুর সাথে সাথে সোনামিয়ার বউ তার মুখে তুলা ভিজিয়ে মধু দিয়ে দেয়। কিন্তু বার বার মধু খেয়ে খেয়ে তো আর চলছেনা, দুধের ব্যবস্তাও টো করতে হবে, কিন্তু এই এলাকায় একটা গরুও নাই, মানুষজন ও তেমন নাই। গ্রাম জুড়ে কেবল আছে ৭/৮ জন মানুষ। কি করার আছে? সোনা মিয়া পাশের গ্রামে দুধের খবর নিতে গেছে, দেখা যাক, কিছু তো একটা করতে হবে।
বৃদ্ধা পায়চারী করতে থাকে আর বির বির করে বলতে থাকে 'একটা ব্যাবস্তা তো হইব ই, আল্লাহ্ দুনিয়ায় রিজিকের কোন অভাব নাই' কিন্তু অনেক সময় হয়ে গেল, এখন তো প্রায় মধ্যরাত সোনামিয়া তো এলনা, সেই সন্ধ্যায় বেরিয়েছিল। অস্ত্বির হয়ে সোনামিয়ার বউ বৃদ্ধাকে বলতে থাকে 'চাচা মেলা রাইত হইছে, চারিদিকে গুলির শব্দ আর কনু মিয়ার বাফে তো অখনও আইতাছেনা' । বৃদ্ধা বল্ল 'চিন্তা কইরনা আইয়া পরব। মনে অয় ব্যবস্তা করতে দেরি অইতাচে'। রাত গড়িয়ে সকাল, সকাল হয়ে গেল, দরজা ধাক্কানোর শব্দ শুনা গেল, দরজা খুলতেই সোনামিয়া কে দেখা গেল, সাথে ২২ বছরের একটা মেয়ে। সোনামিয়ার বউ বল্ল 'এত দেরি করছেন কেন, দুধের ব্যবস্তা অইচে ?, আর এনি কেডা ?' সোনামিয়া কোন কথার উত্তর না দিয়ে বল্ল বাবুডারে ইনার কোলে দও। মহিলা বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে তাকে স্তন্য পান করাতে থাকল।
সোনামিয়া বৃদ্ধার কাছে গিয়ে বল্ল 'চাচা , দেরী হইয়া গেছে.. গরুর ব্যবস্তা করতে পারিনাই। আর উত্তর পাড়ার মজিদ বাইয়ের লগে দেখা হইছিল, ওনার বইনের নাকি ৭/৮ দিন আগে একটা মরাবাচ্চা হইছে, ওনি আমারে তাইনের বইনের বাড়িতে লইয়্যা গেছিল। চিন্তা কইরা দেকলাম আমাগুর বাবুর লাইগ্যা এর চাইতে ভালা ব্যবস্তা আর হইতে পারে না, অখন বাবুডারে হে দুধ খাওয়াইতাছে।'
বৃদ্ধা সোনামিয়ার কাধেঁ হাত রেখে কেদেঁ দিয়ে বল্ল ....
(চলবে)