"কুকুর" এই প্রাণীটি আমার কাছে যমের চাইতেও ভীতিকর। কিন্তু আমি যেদিন প্রথম শ্বশুরবাড়িতে এলাম। বিয়ের গাড়ি থেকে নামার পর সেখানে অনেক মানুষের হুড়োহুড়ি, হাসাহাসি বা নানা রকম উচ্চশব্দের বাদ্য-বাজনার কারণে জানতে পারিনি যে এই বাড়িতে আমার এই যমটি আছেন।
বিয়ের পরদিন সাত সকালে সুদূর জার্মান থেকে এক মামা শ্বশুর আর মামী শ্বাশুড়ি ভোরের ফ্লাইটে ঢাকা এলেন। তাদেরকে নতুন বউ দর্শন করাতে আমাকে আনা হলো তাদের সামনে। আমার এক কাজিন ননদ আমাকে একটু সাজিয়ে গুছিয়ে আনলেন তাদের সামনে কারণ নতুন বউদেরকে একটু সাজগোজ ছাড়া কারু দর্শন নিষেধ যেমন একটু কাজল দিতে হবে, টিপ পরতে হবে, গয়না পরতেই হবে এমন নিয়মে ঠিকঠাক করে বসার ঘরে নিয়ে এলেন। আমি উনাদের সামনে এসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে যেই না ঘুরে পাশের সোফায় বসতে যাবো । লম্বা ঘোমটা থাকা সত্বেও এবং মুখ মেঝের দিকে আটকিয়ে রাখার পরেও দেখতে পেলাম ইয়া বড় হুমদোমুখো এক বুলডগ দাঁড়িয়ে আছে ঠিক আমার মেঝেতে ঝুলে থাকা শাড়ির আঁচলের পাশেই। আমি সব ভুলে চিৎকার করে উঠতে গিয়েও অনেক কষ্টে চোখ বুজে, ঢোক গিলে বসে পড়লাম সোফায়।
আর সেই পাঁজি বুলডগ ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মামাশ্বশুর, শ্বাশুড়ির সাথে সাথে আমাকে দর্শন করতে লাগলো। এমন এক দশাধারী কুকুর ঘরের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে আছেন আর আমার নামাজী শ্বাশুড়ির তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই যেন উনি এই বাড়ির আরেক সদস্য এমন ভাবখানা দেখে আমি বেশ অবাক আর তারও চাইতে অনেক বেশি বিরক্ত হলাম। আমার মামা শ্বশুর শ্বাশুড়ি কি বলছিলেন না বলছিলেন তার কিছুই মাথায় ঢুকছিলো না আমার। এই যমের সাথে আমাকে এ বাড়িতে থাকতে হবে ভেবে বেশ কান্নাও পাচ্ছিলো আমার। কি আর করা! বাবা মায়ের উপর বেশ রাগও হচ্ছিলো এটা ভেবে যে বিয়ের আগে এত তাড়াহুড়ো করলেন যে এইখানে যে এই বাড়িতে তার মেয়ের জন্য একখানা যমও বসে আছেন সে খবরও রাখলেন না। সত্যি চোখ ফেটে কান্না আসছিলো আমার। একটা কথা সত্যি , যতই বাবা মায়ের বাধ্যগত সন্তান হই না কেনো, এই যম বাবাজী এখানে আছেন জানলে জন্মে এই বিয়েতে রাজী হতাম না আমি।
সবকিছু চুপচাপ মুখ বুজে মেনে নেওয়াই আমার স্বভাব তবুও আমার বোবা হাসব্যান্ডকে একদিন না বলে পারলাম না, "আচ্ছা এই কুকুরটা বাড়ির মধ্যে সব সময় ঘুরে বেড়ায় । শুনেছি কুকুরের লোম বা লালা যেখানে পড়ে সেখানে নামাজ হয়না, মা তো অনেক নামাজী, বাবাও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন তারপরও ......
আমার বোবা কালা স্বামীর আমার এ কথা শুনে কোনো ভাবলেশের পরিবর্তন হলোনা । তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ নীরবতা পালন করে গেলেন। আমার বেশ মেজাজটা খারাপই হয়েছিলো তবুও কিছু করার নেই তাই চুপ রইলাম।
এই কুকুরটি বাড়ির সকলের প্রিয় হলেও তার আসল মালিক আমার একমাত্র দেবরজী। ইউনিভার্সিটি থেকে যখন উনি ফিরেন তখন মনে হয় যেন এই তার বহু জনমের গার্লফ্রেন্ড তার অদর্শনে অধীর হয়ে ছিলেন। বাড়ির গেইটে তার মোটর সাইকেলের হর্নের শব্দ পেলেই শুরু হয়ে যায় ডগ বাবাজীর লম্ফ ঝম্প হাউ মাউ। আর তার এক এক ডাক আমার বুকের মধ্যে কাঁপুনি ধরায় যেন বাঘ ডাকছে।
আমার দেবরজী তার জন্য আনেন নানারকম খাবার। তিনি যা খান তার থেকে কিছু অংশ ডগবাবাজীকে না দিয়ে তিনি খানই না। এমনকি একদিন আমার শ্বাশুড়ীর এক বান্ধবী এলো পিজ্জা হাটের এক বাক্স পিজা নিয়ে। সেখানে ৬ টুকরা ছিলো । আমরা পাঁচজন মানুষ পাঁচটুকরা আরেক টুকরা নাকি রুমেল মানে আমার দেবরজীর সাধের ডগবাবাজীর জন্য! আমার চোখ আর একটু হলে শুধু আকাশে না মনে হয় স্বর্গেই উঠে যেত। যত সব আদিখ্যেতা । কি আছে বাবা এত নেকামীর। কত মানুষ খেতে পাচ্ছেন না আর ইনারা কিনা ......অবশ্য আরেকটা কথা তারা জানেনা পিজা আমার খুবই প্রিয়। মনে পড়লো ছোটবেলায় পড়া পন্ডিৎ সাহেব ও সেই সাহেবের কুকুরের কথা। কিন্তু এরা তো সেই সাহেবও না আবার এতও কোনো উচ্চবিত্ত পরিবারও না। খুব সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবার তবুও .....
সে যাই হোক, শুধু কি কুকুর? আছেন আরেক বিড়াল। আমার এমনিতেই বিড়ালের লোমে এলার্জী আর এই বিড়াল মাসী সুযোগ পেলেই আমার একটু অসতর্কতার সুযোগে টেবিলের তলা দিয়ে বা সোফার নীচ দিয়ে কই থেকে যেন এসে আমার পায়েই ঘষা দেবে। কি সর্বনাশ, একদিন তো শ্বশুরের সামনেই এক মহা চিৎকার দিয়ে বসেছিলাম। শ্বসুরবাবাজীর সাথে সেদিন তার সামনে সোফাতে বসে বৈকালিক চা পান করছিলাম হঠাৎ শাড়ির তলা দিয়ে আমার পায়ের সাথে বিড়াল মহারাণীর নরম কোমল রেশম রোমের স্পর্শে আমি তো চিল চিৎকারে আর একটু হলে চা টা সবই উলটে ফেলতাম আর কি। উফ এইসব যন্ত্রনা কি সহ্য করার মত? শ্বশুরজী বলেন "কিচ্ছু হবে না বৌমা, ও খুব আদুরে।" গা জ্বলে যায় আমার এ কথা শুনে! এই বিড়ালনী আবার আমার শ্বসুরের বিশেষ প্রিয় । খেতে বসেন যখন পায়ের কাছে বসে থাকে এই বদ বিড়ালনী। এত কাঁটা খায়, মাছ খায় তবুও ননস্টপ ম্যাও ম্যাও এ কান ঝালাপালা করে ছাড়ে। ছোটবেলায় একবার আমাদের বাড়িতে এমনি এক বদবিড়ালকে সুফিয়া বুয়ার পাঁজি ছেলে বস্তায় করে রেইল স্টেশনে ফেলে দিয়ে এসেছিলো। তার যুক্তি ছিলো এত দূরের পথ বিড়ালটা চিনে যেমনি আসতে পারবেনা তেমনি যদি সে ভুল করে কোনো ট্রেইনে উঠেই পড়ে তো একেবারেই তেঁতুলিয়া বা টেকনাফে পৌছে যাবে। মনে মনে আমি সারাটাক্ষনই এই বিড়ালেরও তেমন কিছু ব্যাবস্থা করার নানা রকম প্ল্যান করি কিন্তু এই বাড়িতে বস্তা কোথায় রাখা হয় তাও জানিনা আর সুফিয়া বুয়ার ছেলেটাও এখন কোথায় আছে সেটাও জানা নেই। এসব ব্যাপারে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আবার বিশ্বাস করতে নেই। এরপর বাবার বাড়ি থেকেই এমন কাউকে আনতে হবে যে ....
আরও এক অবাক বিস্ময়, শুনেছি কুকুরে বিড়ালে কোনোদিন মিত্রতা হয়না । কিন্তু এই বাড়িতে সবকিছুই কেমন যেন উলটা। কুকুর যে পাত্রে পানি খায় সেখানে গিয়েই বিড়ালমাসী চুকচুক করে পানি পান করে আসেন । কুকুরটা একচোখ খুলে তা দেখেও না দেখার ভান করে ঘুমিয়ে পড়েন, কোনো উচ্চবাচ্য নেই । মাঝে মাঝে আমার সন্দেহ হয় এরা কি টম এ্যান্ড জেরী দেখে বড় হয়েছে কিনা। আবার ব্যকারণ বই এ পড়েছিলাম বাঘে গরুতে এক ঘাটে পানি খাওয়ার কথা আর এখন চাক্ষুষ দেখলাম কুকুরে বিড়ালে এক বাটিতে পানি খেতে।
এরপর আসি শ্বাশুড়ির কথায়। বাড়িতে আছে বিশাল এক বনেদী এ্যকুরিয়াম। তাতে গোল্ডফিশগুলোর বুড়া হয়ে একেবারে দাঁড়িমোছ হয়ে গেছে। আরও কত রকম যে মাছ। রোজ সকালে শ্বাশুড়ি মা নিজে হাতে একটা কাঁচের বোতল থেকে উনাদেরকে খাদ্য খাওয়ান। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখি। উনি হুইল চেয়ার নিয়ে মাছগুলোর কাছাকাছি যেতেই মাছেদের মাঝে এক চাঞ্চল্য দেখা দেয়। শুনেছিলাম গোল্ডফিশ মেমোরী বলতে মানুষ মেমোরীহীনদেরকে বুঝায়। কিন্তু এই গোল্ডফিশদের তো মনে হয় আমার অনেক মেমোরী। তারা আমার শ্বাশুড়িমাকে খুব ভালোভাবেই মনে রাখেন। অবশ্য এই মাছেদের উপর আমার কোনো রাগ নেই কারন তারাই এ বাড়ির একমাত্র প্রাণী যারা আমাকে কোনোরকম ডিস্টার্ব করেনা। ওরা ওদের মত দিনরাত জলকেলী করে বেড়ায় । কারো প্রতি ওদের কোনো অভিযোগও নেই। শুধু ওদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সাঁতার কেটে যাওয়া দেখে বিস্মিত হই আমি। তবে একটা জিনিস আবিষ্কার করেছি ওরা তাকিয়ে তাকিয়েই রাতে ঘুমায়। কারন রাত হলে ওরা একদম নড়েনা। চুপ করে এক একজন এক একখানে বসে যায়। তাদের সবার আছে আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট বিশ্রামের স্থান।
এবার আসি আমার স্বামীদেবতার কথায়। উনি আবার পশুপ্রেমী না পা্খি প্রেমী। শুনেছি ছোট থেকে নাকি মুরগী থেকে শুরু করে কাক, বক, শকুন, টিয়া সবই পুষেছেন। ভাগ্যিস সেসব এখন আর বেঁচে নেই এ বাড়িতে। তাহলে তো আমার কাজিনরা আমার এক চিড়িয়াখানাতেই বিয়ে হয়েছে বলেই খেপাত নিশ্চয়। যাই হোক আমার স্বামীদেবতার পায়রার সংখ্যা যে কত নিজেও বুঝি জানেননা। আমাদের ছাঁদের তার থেকে শুরু করে ফুলগাছ টব সবখানেই তাদের রাজত্ব। এদের নিয়েও আমার তেমন মাথা ব্যাথা নেই কারণ তারা আছেন তাদের মত শুধু সকালে বিকালে খাবার দেওয়া আর ছাঁদ ঝাড়ু দেওয়া সেতো আর আমার কাজ না!!! তবে ছাদে মেলা কাপড়চোপড়ে উনারা তাদের বর্জাংশ্য ফেলে রাখতে দ্বিধা করেন না। মাঝে মাঝেই হাজেরা বুয়া বা মোমেনা বুয়ারা সেসব দেখে যখন উচ্চস্বরে তাদের গুষ্ঠি উদ্ধার করে সত্যি বলতে আমি মনে মনে এক পৈচাশিক আনন্দ উপভোগ করি। মনে মনে বলি ঠিক হয়েছে আরও আরও চিড়িয়াখানার মালিক হও তোমরা।
একদিন আমি শপিং থেকে ফিরলাম। গেটে নামতেই দেখি আমাদের বাড়ি সংলগ্ন আমগাছের নীচে এক চাঁদরের এক প্রান্ত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আমার শ্বশুর আর বাকী তিনপ্রান্তে হাজেরাবুয়া আর তার নাতী। তারা সবাই গাছের উপরের দিকে তাকিয়ে আছেন আর আমার শ্বশুর মহা চিল্লাপাল্লা করে বলছেন ঐ ঐ দিক না এইদিকে, হ্যাঁ হ্যাঁ এই দিকে, আস্তে নামানোর চেষ্টা কর। ঐ তুই কি এইটারে আম পাইসিস যে খোঁচা দিলেই পড়ে যাবে? এমন নানা কথাবার্তা। উপরে তাকিয়ে দেখি পাশের বাড়ির কাজের ছেলেকে ডাকা হয়েছে কিছু একটা গাছ থেকে নামানোর জন্য। তখন শীতকাল। কাঁচা আম পাকা আম কোনো আমেরই সময় না ।তাহলে গাছ থেকে নামাচ্ছেন কি তারা? আমি খুব কৌতুহলী হয়ে উঁকিঝুকি দিলাম ও তারপর যা জানতে পেলাম সেটা শুনে কিছু বলার ভাষা আর আমার ছিলোনা।
এক অজ্ঞাত পরিচয় বিড়ালের বাচ্চা নাকি আমাদের বাড়ির দুয়ারে এসেছিলো ও আমাদের বুলডগবাবাজীর তাড়া খেয়ে এই আমগাছে উঠেছেন আর ভয়ে নামতেই পারছেন না শুধু মিউ মিউ করে করুন আর্তি জানাচ্ছেন। এখন এই নিস্পাপ বিড়াল শাবকের করুন আর্তিতে তাকে রেসকিউ করার জন্য এই বিশাল বাহিনী নিয়ে আমার শ্বশুরসাহেব তৎপরতা চালাচ্ছেন।ঘন্টাখানেক তৎপরতা শেষে সেই অভিযান সফল হলো ও সেই বিড়াল শাবককে ঘরের মাঝে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হলো। এক বাটি দুধ খেয়ে আর কিছু মাছের কাঁটা পেয়ে এরপর এই নাতিন বিড়াল পরম আদরে আমাদের পায়ে গা ঘসাঘসি শুরু করলেন। মাগো, এক মাসীর জ্বালায় বাঁচিনা আবার আনা হলো তার নাতী। পোড়া কপাল হলে এমনি হয়, যা হয়েছে আমার।
এরপর একদিন আমার স্বামীদেবতা এবং সাথে দেবরজী অফিস থেকে ফেরার পথে এক খাঁচা হাতে বাসায় ঢুকলেন । খাঁচার ভেতর চোখ পড়তেই আমি তিন লাফে পেছনে এলাম। দেখি মহা রাগী এক চিলবাবাজী সেই খাঁচার ভেতর চোখ উলটে উলটে চারিদিকে তাকাচ্ছে। তাকে ড্রইং রুমের টেবিলে এনে রাখা হলো। শুনেছি চিল ওয়াইল্ড এনিমেলস এ্যান্ড বার্ডের আন্ডারে পড়ে। আর সেই চিলকেই আমার ভালোমানুষ স্বামীদেবতা কই থেকে চুরি করে আনলেন! তাহলে কি .... নানা চিন্তা যখন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তখন শ্বশুর সাহেবের কৌতুহল নিবারণে আর আমার বাঁচাল দেবরজীর উত্তরে জানতে পারলাম আজ অফিস থেকে ফেরার পথে আমার স্বামীদেবতার ফোন কলে ইউনিভার্সিটি থেকে ছুটে গিয়ে নাকি আমার দেবরজীকে কাঁটাবন থেকে খাঁচা কিনে নিয়ে যেতে হয়েছে। আমার স্বামীদেবতা ফেরার পথে রাস্তার পাশে এই ডানা ভাঙ্গা চিলটাকে পড়ে থাকতে দেখেন ও কিছু ছোট বাচ্চারা পাখিটাকে খোঁচাচ্ছিলো সেই মর্মান্তিক দৃশ্য আমার পক্ষীপ্রেমী স্বামী সহ্য না করতে পেরে এই অসুস্থ্য অতিথিকে কিছুদিন সেবা শুশ্রুসার জন্য আমাদের বাড়িতে এনেছেন। এরপর শ্বশুরজীর হাঁকডাকে শুরু হলো ফ্রিজ থেকে বেছে বেছে মুরগীর গিলা কলিজাগুলো পাখিকে খানাপিনা করানো ও আমার ইন্জীনীয়ার দেবরজী কি করে যেন এক ড্রপার দিয়ে খাঁচার বাইরে থেকে তাকে পানি খাওয়ানোর উপায় আবিষ্কার করে ফেললেন।কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো পাখির মেজাজ নিয়ে। তার ধারে কাছে কেউ গেলেই হা করে যেন খেয়ে ফেলবে এইভাবেই সে খাঁচার মাঝে নিস্ফল আক্রোশে তেড়ে আসছিলো ও ফুঁসছিলো। কিন্তু শেষমেশ আমার পক্ষীপ্রেমী স্বামী ও পশু, মাছ লতা পাতা দুনিয়ার সবকিছু জীবজন্তু প্রেমী শ্বশুরকূলের লোকজনের নিস্বার্থ ভালোবাসার কাছে সেই হিংস্র পাখিটিকে হার মানতে হলো। এরপর ধীরে ধীরে তার পাখা ভালো হতে শুরু করলো। তাকে খাঁচার বাইরে বের করে আনা হলো তবুও সে তখনও ভালোভাবে উড়তে পারতোনা। কিন্তু তার পাশে গিয়ে কোনো গাছের গুড়িতে যখন আমার স্বামীদেবতা বসতেন সে কিছু বলতো না আর আগের মত রেগে মেগে। বরং সাধু মুনিষ্যির মত চুপচাপ কি যেন ধ্যান করতো। একদিন প্রায় মাস দুয়েক কাটাবার পর সে যেন কোথায় উড়ে চলে গেলো। তার পাখা ভালো হয়ে গিয়েছিলো ও অনাবিল নীল আকাশের বুকে ততদিনে সে আবার উড়তে শিখে গিয়েছিলো।
আমার স্বামীদেবতা দুদিন একটু মন খারাপ করে থাকলেন তারপর বরাবরের মত নির্লিপ্ত বোবা কালা হয়ে তার কাজকর্ম সম্পাদন করে যেতে লাগলেন।
এখানেই শেষ নয় আমার এই পশুপাখিপ্রেমী শ্বশুরবাড়ির পশু ও পাখি প্রেমের আরও বহু গল্প আছে। সময় স্বল্পতায় আর আজ লিখলাম না তবে কখনও সুযোগ আর ইচ্ছা হলে সেসবও ইনশাল্লাহ লিখে ফেলবো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৫২