আপনি হয়তো সুস্থ আছেন। শারীরিক কোন অসুস্থতা নেই আপনার। পেশাগত ক্ষেত্রে প্রচন্ড মানসিক চাপ আপনি উপেক্ষা করে হয়তো ভালোই আছেন। সব মিলিয়ে সুস্থবোধ করছেন।
সুস্থ থাকা আর সুস্থবোধ করা দুটোকেই এক অর্থ মনে করা যায় । কিন্তু চিকিৎসকরা এর মধ্যেও একটি পার্থক্য খুঁজে পান। আপনি সুস্থবোধ করছেন বলেই যে সুস্থ , অসুস্থ নয় আসলে এমনটা নয়। আপনি সুস্থ বোধ করছেন ঠিকই কিন্তু সেই বোধের আড়ালে গোপনে শরীরে বাসা বেঁধে আছে হয়তো কোন অসুখ।
নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপে হয়তো আমি বড় কোন শারীরিক হুমকি থেকে আগাম বার্তা পেতে পারেন। সেই মোতাবেক আপনি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবেন। খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে পারবেন , নিয়ন্ত্রণ আনতে পারবেন।
আমাদের অফিসে দুধ চা দেয়া হয় না , লাল চা সেটাও চিনি ছাড়া। চিনি দেয়া নিষেধ। অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে বয়ামে চিনি কিনে রাখে। আমিও রাখতাম। এখন আর রাখি না। অফিসে চিনি ছাড়া দুয়েক কাপ লাল চা খাই।
আমার চা/কফি প্রীতি আগের মতো দেয়। বাসায় মাসে বড়োজোর দুইদিন চা/কফি খাই। একসময় দিনে দশবারো কাপ চা খেতাম , সাথে সিগারেট। চায়ের সাথে সিগারেটের ব্যাপারটা ছিল অন্যরকম। ২০১৪ সালে সিগারেট ছেড়েছি।
এখনো দুধ চা খেলে মাঝে মাঝে সিগারেটের নেশা উঠে। অদ্ভুত ব্যাপার।
বেশ কয়েক বছর ধরেই আমার বুকে সমস্যা হয়। সিঁড়ি ভাঙলে বুকে ধরে আসে। গা ঘেমে যায়। দুর্বল লাগে। কিছুক্ষন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। একটু হাঁটলেও মাঝে মাঝে বুক ধরে আসে , ব্যাথা করে। তবে প্রতিদিন এমন হয় না।
মেডিক্যাল টেস্ট করিয়েছিলাম ২০১৪ তে। জেনারেল ফ্যাটিক ছাড়া সমস্যা ধরা পড়ে ছিল না।
গতবছর হার্টের ইকো করিয়েছিলাম। সামান্য একটা সমস্যা ধরা পড়েছিল। এইবার পুনরায় ইকো করলে বিস্তারিত জানা যাবে।
আমার ছেলের বই সাড়ে চার বছর। ওর ছয় মাস পর পর ইকো করতে হয়। গতকাল টেস্ট করানো হলে। এই টেষ্টের দুঃচিন্তায় ঈদটা আনন্দে কাটেনি। প্রতি মুহূর্তে ওর অসুস্থতার কথা মনে হতো। কয়েকদিন ধরে দৌড়ালে লাফালাফি করলে ডাক ধড়ফড়ের কথা খুব বলতো। বুকে কান দিয়ে শুনতে বলতো। আশ্বস্ত করতাম - কিছু হবে না এ, ভয় পেয়েও না , মাম খেয়ে চুপ করে থাকো।
মাম খেয়ে নিহাল আবার লাফালাফি করতো। ও ইদানিং লাফালাফির চেয়ে বসে কাজ করে বেশি। ছবি আঁকতে খুব পছন্দ করে , দারুন ছবি আঁকে , রং করে। লেখা লেখি করে। গুনগুন করে গান গায়। ওর ফিজিক্যাল এক্টিভিটিজ ভালো।
গতকাল ডাক্তার ইকো করলো। রিপোর্ট গতবারের মতোই। জটিলতা বাড়ে নি।
ওর একটা ভাল্বের রক্ত নালী সরু হয়ে যাচ্ছে। এবং ওই ভাল্বে লিকেজ আছে। সরু ভাল্বের কারণে জটিলতা সৃষ্টি হলে 'বেলুন সার্জারি'র মাধ্যমে কিছুটা প্রসারিত করা যেত কিন্তু ভাল্বের লিকেজের কারণে খুব বেশি প্রসারিত করা যাবে না।
ভবিষ্যতে ওর একটা ভাল্ব বদলানো ছাড়া কোন চিকিতসা নাই। ৬ মাস পর পর টেস্ট করতে হয় পরিস্থিতি বোঝার জন্য। একটা নির্দিষ্ট বয়স পর ভাল্ব বদলানো পুনরায় ভাল্ব পরিবর্তন করা লাগবে না। কিন্তু করালে আবার ভাল্ব পরিবর্তন করা লাগবে। ৬ মাস পর পর ইকো করতে হয় ওর ভাল্বের পরিস্থিতি বোঝার জন্য।
গতবারের মত ডাক্তারের রুম থেকে বের হচ্ছি। ছেলেটা বলল , আমি তো সাইকেল চালাতে পারবো। না?
আমি বললাম , হ্যা পারব।
গতবার সাইকেল কিনে দেয়ার কথা ছিল। কেনা হয় নি। ছেলেটার ঠিক মনে আছে। সাইকেল নিয়েও নিশ্চয় কল্পনা করে। সেই কল্পনা নিশ্চয় ভীষণ সুখকর , স্বপ্নিল। হতেই পারে।
ছবি : নিহাল
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:০০