প্রচন্ড শীত। সূর্য নেই।
প্রায় দেড় বছর ধরে পুরো পৃথিবী ঢাকা পড়ে আছে শীতের চাদরে, হাড় কাঁপানো শীত। সেই প্রচন্ড শীতের প্রভাবে মারা যাচ্ছে পৃথিবীর মানুষ , মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। শুধুমাত্র বেঁচে আছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাইকিংরা । তারা বিশ্বাস করে , ভয়াবহ সেই শীতও তাদের কাবু করতে পারবে না। হ্যা ঘটনা ঠিক তেমন ই চলছে।
তবে চিন্তার বিষয় হলো, এরপর যে যুগ শুরু হবে, তা কল্পনাতীত , ভয়াবহ ।সেই ভয়ঙ্কর যুগটির নাম ‘পতিতাবৃত্তির যুগ’!
এ যুগে মানবজাতির অবস্থা হবে অতিশয় শোচনীয় । দীর্ঘকালের শীতের প্রকোপে পৃথিবীতে দেখা দেবে চরম খাদ্যসঙ্কট। বেঁচে যাওয়া মানুষেরা খাবারের জন্য একে ওপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে , সেই মরণ লড়াইয়ে মরবে মানুষ। বাপ খুন করবে ছেলেকে , ছেলে বাবাকে , ভাই ভাইকে। তবে সবচেয়ে জঘন্য আর ঘৃণিত ব্যাপার হলো, সেই সময়ে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়বে ইনসেস্ট।
একের পর এক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মানবিক পতন , অপদেবতাদের উত্থান, মৃতদের সেনাবাহিনীর আগমন, দেবতাদের সাথে অপদেবতাদের মরণপণ যুদ্ধ- এই সব নিয়েই ভাইকিংদের 'র্যাগনারক'। নর্স মিথলজি ভয়াবহ 'র্যাগনারক' !
মৃত্যুর পরে মৃত মানুষেরা কি করে ? অপেক্ষা ? কিসের অপেক্ষা ?
ভাইকিং উপকথা বলে , যেদিন থেকে মৃত্যুর শুরু , ঠিক সেইদিন থেকেই মৃত ব্যক্তিরা পৃথিবীর শেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে আছে। তারা সেইদিন জেগে উঠবে। তবে সবাই নয়।
জেগে উঠবে তারা - যারা খারাপ তারা। যারা নরকে ঠাঁই পেয়েছে তারা।সেইদিন জেগে উঠবে নরকবাসীরা। তারা বিশাল এক নৌকা নিয়ে বেঁচে থাকা মানবজাতির বিরুদ্ধে অগ্রসর হবে।
তবে সেটিও কোনো সাধারণ নৌকা হবে না, সেটি মৃত ব্যক্তির নখ দিয়ে বানানো! সেই নৌকা বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় নখ আসতো মৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে। ভাইকিংদের এমন বিশ্বাসের কারণে , কেউ মারা গেলে তার তার হাত-পায়ের নখগুলো কেটে দিতো। এমন কি অতিরিক্ত সতর্কতা স্বরূপ কখনো আবার পুরো নখটিই তুলে ফেলা হতো। এই বিষয়ে ভাইকিংরা ছিলো খুবই সতর্ক। কারণ তারা মনে করতো নৌকা বানানোর জন্য যথেষ্ট নখ পেয়ে যাওয়া মানেই হলো পৃথিবীর শেষ ঘনিয়ে আসা।
হ্রাইম্র নামক এক দানব নৌকাটিকে দেবতাদের সাথে যুদ্ধক্ষেত্রের পথে চালিয়ে নেবে, হাল ধরে থাকবে স্বয়ং ধূর্ত দেবতা লোকি। মুখোমুখি হবে চরম সংঘাত !
পৃথিবীর ভয়াবহ সেই ক্রান্তিকালের নাম 'র্যাগনারক'।
'র্যাগনারক' নিয়ে সামান্য ধারণা পাওয়া গেল। বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। আসুন তার আগে কিছু কুশীলবদের চিনে নেয়া যাক যারা প্রবল অপেক্ষায় বসে আছে পৃথিবীর ক্রান্তিকালের।
ভাইকিংদের উপকথা আর বিশ্বাস মোতাবেক খারাপ দেবতাদের কথা বলা হয়ে থাকে। সেই দেবতারা মানুষদের সবসময় খারাপ কাজে প্ররোচিত করতো। শয়তান যেমন করে। তারা প্রচন্ড শক্তিশালী , ক্ষমতাশালী এমনকি কেউ কেউ এতটাই ভয়াবহ যে, আশেপাশে তাদের উপস্থিতি একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট ছিল। তবে ভাইকিংরা বিশ্বাস করতো খারাপ সে দেবতাদের অনেক আগেই এমন কোনো এক জায়গায় বন্দী করে রাখা হয়েছে যেন তারা কারো কোনো ক্ষতি করতে না পারে। এটাকে সৌভাগ্য বলতে হবে মানবজাতির জন্য ।
ধূর্ত দেবতা লোকি:
দেবালয় অতিষ্ট করে তোলা এক কুখ্যাত দেবতা লোকি। জেনে নেয়া যাক দেবতা লোকির কয়েকটি অপরাধ।
১. ঘোড়ার সাথে সঙ্গম
২. স্বর্গের ভৃত্যদের হত্যা
৩. একদিন একটি ভোজে সে আমন্ত্রিত না হয়েও সেখানে হাজির হয়ে সবকিছু ভন্ডুল করে দেয় ।
৪. দেবতা ওডিনের ছেলে বালডুর কে হত্যা
দেবতারা ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেন না। তাকে ভয়াবহ শাস্তি দেয় দেবতারা।
দেবতারা প্রথমে তার সামনে তার ছেলেকে খুন করে। এরপর ছেলেটির নাড়িভুঁড়ি দিয়েই হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয় লোকিকে। এখানেই শেষ নয় , বেঁধে রাখার পর তার উপর রাখা হয় বিষাক্ত একটি সাপ যার বিষ ফোঁটায় ফোঁটায় পড়তো তার মুখে, অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে সে ।
লোকির স্ত্রী সিগুনা তাকে এই ভয়ানক যন্ত্রণা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। সে লোকির সাথে সাথে গুহায় অবস্থান করে। সেখানে সাপের মুখ থেকে বিষ ধরার জন্য তিনি একটি থালা রেখেছিলেন। থালাটি পূর্ণ হয়ে গেলে, সে থালাটি খালি করতে একটু সময় নিতো । এই মুহুর্তে, লোকির মুখে পুনরায় সাপের বিষ পড়তে থাকে। বিষের যন্ত্রণা এতটাই প্রখর যে লোকি চেঁচিয়ে চিৎকার করে উঠত । ভাইকিংরা বিশ্বাস করে , প্রতিবার লোকি তীব্র যন্ত্রনায় চিৎকার করে আর মোচড়াতে থাকে। এবং লোকির প্রতিটা মোচড়ের সময় পৃথিবী কেঁপে ওঠে।
লোকির স্ত্রী আজীবন চেষ্টা করে যায় যেন তার মুখে সেই বিষ না পড়ে, তবে বারবার ব্যর্থ হয় সে।
পৃথিবীর চরম ক্রান্তিকালে ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। সেই ভূমিকম্পে মুক্তি পাবে ধূর্ত লোকি। হাল ধরবে মানবজাতি আর দেবতাদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়া নৌকার।
ফেনরির : নেকড়ে আকৃতির দেবতা। দেবতা লোকির ছেলে।
মানবজাতির ইতিহাস শুরু হওয়ার আগেই ভালো দেবতারা এই ভয়ঙ্কর ফেনরিরকে বন্দী করে ফেলে দেবতারা , জাদুর তলোয়ার দিয়ে আলাদা ভাবে আটকে রাখে তার দুটো চোয়াল। তবে সে একবার ছাড়া পেলে ধ্বংসের মাতম তুলবে গোটা পৃথিবী জুড়ে । মুখ দিয়ে নির্গত আগুনে ছারখার করবে স্বর্গ মর্ত্য !
পৃথিবীর কোথাও বন্দী করে রাখা হয়েছে তাকে। ধারণা করা হয় মাটির নিচে , শেকলে বন্দী। তাকে মুক্ত করতে হলে দরকার ভূমি ছিন্নভিন্ন , খণ্ডিত হওয়া। আর তাই দরকার ভূমিকম্পের। পৃথিবীর ক্রান্তিকালে যখন সেই ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে তখন শিকল ছিঁড়ে মুক্ত হবে ভয়ঙ্কর ফেনরির।
আচ্ছা , ভূমিকম্প কেন হবে ? এর পিছনে কেউ কি আছে ? প্রশ্নটা মনের মধ্যে আসতেই পারে।
না , আমি কোন আশার বাণী শোনাতে পারছি না। ভূমিকম্প সংগঠন আপনা আপনি হবে না। কুটিল পরিকল্পনা নিয়ে মানবজাতি আর দেবতাদের পিছনে লেগেছে যে খারাপ দেবতারা। ভূমিকম্প সংগঠিত করার জন্য ফেনরির ছেলেরা শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছে।
কল্পনাতীত এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে পৃথিবী , মানবজাতি আর দেবতারা !
মিডগার্ডের সাপ :
পৃথিবীর সূচনা লগ্নে দেবতারা যখন খারাপ দেবতাদের খুঁজছে বন্দী করার জন্য তখন কেউ কেউ অগোচরে চলে গিয়েছিলো। বজ্রের দেবতা থর যখন হন্যে হয়ে খুঁজেছে তখন বিশালাকার দানবীয় সাপ আত্মগোপন করেছিল সমুদ্রের তলদেশে। বিশালাকার এই ভয়ংকর সাপ হচ্ছে মিডগার্ডের সাপ। Jörmungandr নামেও পরিচিত। সাপটি এতটাই বিশাল যে সে অনায়াসে সারা পৃথিবীকে পেঁচিয়ে ধরতে পারে।মিডগার্ডের সাপ উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় আছে ।
পৃথিবী অপেক্ষা করছে চরম ক্রান্তিকালের , সংঘর্ষ আর চরম বিপর্যয়ের।
দেড় বছর ধরে শীতের প্রকোপের কথা বলেছিলাম। একটানা তিনটা শীতকাল। যেটা গ্রেট উইন্টার নামে পরিচিত। এই গ্রেট উইন্টার শেষের পথে। পৃথিবীর প্রায় সকল মানুষ মারা গেছে। বেঁচে আছে ভাইকিংরা। উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় অধীর হয়ে অপেক্ষা করা ফেনরির দুই ছেলে 'স্কল' আর 'হাতি' , ফেনরির কে মুক্ত করতে প্রস্তুত। গ্রেট উইন্টার শেষ হবার সাথে সাথে তারা তাদের পরিকল্পনা মাফিক অগ্রসর হবে। কিন্তু ফেনরিরকে মুক্ত করতে হলে দরকার ভুমিকম্প। যার ফলে ভূপৃষ্ঠ খণ্ডিত হবে , বিচ্ছিন্ন হবে। আর এই ভূমিকম্প সংঘটিত করার জন্য প্রকৃতির সিস্টেমে ধাক্কা দিতে হবে , প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটাতে হবে।
তাই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে ‘স্কল’ সূর্যটাকে গিলে খাবে আর ‘হাতি’ চাঁদ সহ অন্যান্য নক্ষত্রগুলো গিলে নেবে! তখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে গোটা বিশ্বজগত।আকাশ ও বাতাস রক্তে ছড়িয়ে পড়বে ।পৃথিবী ও পাহাড় কাঁপতে শুরু করবে , গাছ উপড়ে পড়বে । ভূপৃষ্ঠ তার সাম্যবস্থা ধরে রাখতে পারবে না।
ভয়াবহ ভূমিকম্প শুরু হয়ে যাবে গোটা পৃথিবী জুড়ে। তখনই শিকল ছিড়ে মুক্তি পাবে ফেনরির। ফেনরির মুক্ত হবার সাথে সাথে মুক্ত হবে দেবতা লোকি ! অতঃপর তারা অগ্রসর হবে দেবতা আর পৃথিবীবাসীদের বিরুদ্ধে।
চারিদিকে বেজে উঠছে বিপর্যয়ের দামামা। ঠিক এই সময় 'র্যাগনারক ' সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করবে তিনটা মোরগ।
তিনটা মোরগ তিনবার ডেকে উঠবে। প্রথমে লাল রঙের মোরগ ‘জালার’ ডাক দিয়ে সতর্ক করবে পৃথিবীর জায়ান্টদের। জায়ান্টরা তখন যুদ্ধসাজ নিবে। এরপর কিছু সময় বাদে 'গোল্ডেন কম্ব' নামের দ্বিতীয় মোরগ দেবতাদের বিশাল প্রাসাদের দরজায় ডেকে উঠবে। সর্বশেষ মোরগ ডেকে উঠবে মৃত নরকবাসীদের জগতে, যেখানে শাসন করছে লোকির কন্যা হেল। সেই ডাকে জেগে উঠবে মৃত নরকবাসীরা । মৃতদের হাত-পায়ের নখ দিয়ে তৈরি ‘নালফার’ নামক সেই জাহাজে চড়ে বসবে তারা।
যুদ্ধের জন্যে ধেয়ে আসবে দেবতা আর পৃথিবীবাসীর দিকে। মৃতদের কমান্ডে থাকবে স্বয়ং লোকি। ছলনাময়ী , ধূর্ত , পাপিষ্ঠ সেই সাথে চরম মাত্রায় প্রতিশোধ পরায়ণ।
মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে মিডগার্ডের সাপ প্রবল বেগে সাঁতার কেটে ভূমিতে উঠে কারণে সমুদ্র চাপ সইতে পারবে না।
অতঃপর সমুদ্র ফুঁসে উঠবে , দেখা দেবে ভয়াবহ বন্যা। ভেসে যাবে সমগ্র পৃথিবী।
না , মিডগার্ডের সাপ এখানেই ক্ষান্ত দেবে না। এরপর সে ছড়িয়ে দেবে তার ভয়াবহ বিষাক্ত বিষ , আকাশ আর সমুদ্রে। পৃথিবীর সমস্ত পানি বিষাক্ত হয়ে যাবে আর আকাশ থেকে ঝরে পড়বে বিষাক্ত বৃষ্টি !
প্রবল বন্যাতেও ভেসে উঠবে লোকি নৌকা। সেইসাথে রাইম নামক এক আইস জায়ান্ট তার বাহিনী নিয়ে লোকির সাথে যোগ দিবে। ধেয়ে আসবে ধ্বংসের দিকে , পৃথিবীর মহা বিপর্যয় সংগঠনে।
পৃথিবীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত প্রধান দেবতা হাইমডাল সদা সতর্ক অবস্থায় নজর রাখেন। কোনো ঘটনাই নজর এড়ায় না। সুউচ্চ টাওয়ার থেকে তিনি দেখতে পেলেন দিগন্ত তোলপাড় করে দিকে ধেয়ে আসছে লোকি , অ্যাসগার্ডের সাপ , ফেনরির জায়ান্ট এবং মৃতদের সেনাবাহিনী। তখন তিনি দেবতাদের সমবেত করার জন্য ‘জালারহর্ন’ নামক শিঙ্গায় ফুঁক দিলেন । দেবতারা এসে জমায়েত হবেন বিশাল হলে। তাদের নেতৃত্ব নিলেন ওডিনের। সমস্ত দেবতা ওডিনের নেতৃত্বে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিলেন । তারা জমায়েত হবে ‘ভিগ্রিয়দ’ নামক এক ময়দানে , মহা যুদ্ধের অপেক্ষায় । সেখানেই হবে চূড়ান্ত সংঘর্ষ । মুখোমুখি দেবতা আর খারাপ দেবতার এবং তার বাহিনী।
দেবতা এবং অপদেবতাদের চূড়ান্ত সংঘাত যখন হতে যাচ্ছে। তখন অতীব ভয়ংকর কিছুই ঘটবে , সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দৃশ্যপট অবলোকন করার মত কোন মানুষ বেঁচে নেই। যুদ্ধপূর্বক বিপর্যয়ে সকল মানুষ মারা দিয়েছে। তবে এই যুদ্ধে কিন্তু দেবতারা মানব জাতির কাছ থেকে সাহায্য পায়।
ওডিন আর ফেনরির মুখোমুখি হলে ফেনরির একেবারে গিলে ফেলে দেবতা ওডিন কে। ওডিনের পুত্র দেবতা ভিদার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে আসে । নিজেদের দেবতা হিসেবে ভাইকিং সমাজের প্রতিটি সদস্যেরই কর্তব্য ছিলো তাদের দেবতাদের সাহায্য করা।
হ্যা , আমি মানব জাতির সাহায্যের কথা বলেছিলাম।
ভিদারের বেলায় মানিবজাতি সাহায্য করেছিল তাকে চামড়া দেয়ার মাধ্যমে। ভাইকিংদের দেয়া এই চামড়াই পরবর্তীতে ভিদারের সেই জাদুকরী জুতা তৈরীতে কাজে লেগেছিল । প্রতিদিনই কাজে যাবার সময় প্রাচীন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মুচিরা কিছু চামড়ার টুকরা ছুড়ে দিতো। এভাবেই দেবতাকে সাহায্য করছে ভেবে মনে শান্তি পেত তারা ।
এই জুতা পায়ে গলিয়েই ফেনরির মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিদার।জাদুকরী এই জুতোয় দিয়ে ভিদার আটকে রাখে ফেনরির নিচের চোয়াল আর হাত দিয়ে উপরের চোয়াল সর্ব শক্তি দিয়ে ধরে রাখে। এরপর সুযোগ বুঝে দু টুকরো করে ফেলে ফেনরির কে।
ফেনরির ইতি ঘটলো এখানেই।
দেবতা থরের প্রারম্ভিক কালের শত্রু মিডগার্ডের সাপ। পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে থর খুঁজে বেড়াচ্ছে মিডগার্ডের সাপ। আর আত্মগোপন করা মিডগার্ডের সাপ এই সুযোগকে আর নষ্ট করতে চাইলো না। মুখোমুখি হলো দুজন।
তুমুল লড়াইয়ের এক পর্যায়ে হাতুড়ির এক আঘাতে সাপটির মাথা থেঁতলে দেবে থর। কিন্তু দেবতা থর বিজয় উল্লাস করতে পারলেন না।তিনি টের পেলেন মৃত্যুর আগে সাপটি তার বিষদাঁত বসিয়ে গেছে শরীরে। মাত্র নয় ধাপ পিছিয়ে যেতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বজ্র দেবতা মহাশক্তিধর থর ।
এদিকে হাইমডাল লড়াই করে লোকির বিরুদ্ধে এবং নর্সের আবহাওয়ার দেবতা ফ্রেয়ার লড়াই করছে জায়ান্ট সার্টার এর বিরুদ্ধে। হাইমডাল এবং লোকি একে অপর কে হত্যা করে।
জায়ান্ট সার্টার যখন মৃত্যুর মুখে তখন মারা যাওয়ার আগে আগুন নিক্ষেপ করবে সে। আগুনে পুড়ে যায় পুরো পৃথিবী । পৃথিবীকে গ্রাস করে নেবে ভয়াবহ সেই আগুন।
সেই আগুন আর যুদ্ধ শেষে বেঁচে ফিরতে পারবে না কেউই, সবাই ঢলে পড়বে মৃত্যুর কোলে!
মৃত্যু পরবর্তী বিচারে লোকির সাথে থাকা সেই মৃতদের সেনাবাহিনী আর নরকে ফিরবে না। শুধু নরক তাদের কাম্য নয়। তারা যাবে নরকের চেয়েও ভয়াবহ একস্থানে, নাম তার নাস্ট্রান্ড - শয়তানদের গ্রেট হল। বিশালাকার সেই হলরুমে বিষাক্ত সব সাপ দিয়ে পরিপূর্ণ থাকবে ।
সাপগুলোর মুখ থেকে বের হবে বিষ। সেই বিষ একসাথে হয়ে মেঘে রূপ নেমে। মেঘ থেকে বৃষ্টির মত ঝরতে থাকবে বিষ। বিষের বৃষ্টি। সেই বিষাক্ত পরিবেশেই অনন্তকাল ধরে থাকতে হবে ধূর্ত দেবতা লোকির অনুসারী মৃতদের সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে।
ভালো মানুষদের স্থান হবে 'গিম্লে' নামক এক জায়গায়। সেখানে তারা পান করার জন্য পাবে অফুরন্ত এবং বিভিন্ন ধরণের বিয়ার।
ওদিকে পৃথিবীর কি হবে? সূর্য তারা নক্ষত্রহীন পৃথিবী কি রয়ে যাবে প্রাণ শূন্য ! বিধ্বস্ত।
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------
পৃথিবী রয়ে যাবে প্রাণ শূন্য ! -- কথাটাতে দাঁড়ি টানা যেত , সমাপ্তি টানা যেত এই পোস্টের । কিন্তু ভাইকিংদের নর্স মিথোলজি যখন দুজন মানব মানবী কে লুকিয়ে থাকতে দেখে তখন লেখাটা আরো একটু বাড়াতে হয়। নতুন করে ভাবতে হয়।
দুজন মানব-মানবী ও ছয়জন দেবতা শেষ দিনের সেই ভয়াবহতার পরেও বেঁচে আছে । এদের মধ্যে দেবতা থর এর সন্তান মোডি আর ম্যাগনি ও ওডিনের সন্তান ভিদার আর ভেলি ।
দুজন মানব - মানবী সেই বিপর্যয়ের পুরোটা সময় একটা বনের ভেতর লুকিয়ে ছিল। জাদুর এক বন।
নবজাতক পৃথিবী আরও একবার সমুদ্র থেকে উঠে আসবে , সবুজ এবং গৌরবময়।
সূর্য নিজের মতোই একটি কন্যা জন্ম দেবে এবং সে সূর্যেকে পুনরায় জাগাবে। অন্ধকার চাদরে ঢাকা পৃথিবীতে ফিরে আসবে আলো। পৃথিবী আবার হেসে উঠবে। প্রজাপতি বসবে ফুলে।বইবে ঝর্ণার জলধারা , বইবে নদী। পৃথিবী বিকশিত হবে পুনরায়।সূর্য আলোয় সমস্ত মন্দ অদৃশ্য হয়ে যাবে ।
সেই বেঁচে থাকা দুজন মানব - মানবী। লিফ নামের সেই পুরুষ ও লিফথ্রাসি নামের নারী । লিফ ( life - জীবন) , লিফথ্রাসি (Lifthrasir- she who springs from life, জীবন থেকে প্রভাবিত)
এই দুজন মানব মানবী ফিরিয়ে আনবে প্রেম , ভালোবাসা। প্রকৃতি ছুটে চলবে অঘোম নিয়মে। মানব ইতিহাসের পুনর্জন্ম হবে , পুনর্জন্ম হবে পৃথিবীর ।
র্যাগনারক - শুধুই কি মহা বিপর্যয় ? নাকি আশার গল্প , সম্ভাবনার গল্প কিংবা পুনর্জন্মের গল্প।
ছবিঃ গুগল
______________________________________________
প্রিয় ব্লগার শের শায়রী ভাইয়ের ভাইকিং বিভীষিকা
পোস্টটা পড়ে 'র্যাগনারক' নিয়ে লেখার ইচ্ছা জেগেছিলো খুব। বিভিন্ন ব্যস্ততা , ঝামেলার কারণে সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আর এই ধরণের লেখায় আমি একেবারেই আনাড়ি। তবুও চেষ্টা করছি।
স্বপ্নবাজ সৌরভ
০৩ রা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২২
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৬