somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিডিয়ার ভাষা-সংস্কৃতি ও সেন্সরশীপ

১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘...আরেকটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হলো আমার ক্ষমাপ্রার্থনা বিষয়ে। আমি আগেই বলেছি ২০ আগস্ট ছাত্ররা লাঞ্ছিত, অপমানিত ও রক্তাক্ত হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনচেতা এই ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মমর্যাদায় কঠিন আঘাত করা হয়েছিল। তাই বিক্ষুব্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভ করেছে তারা। ইউনিফরমধারী সেনাসদস্য লাঞ্ছিত হয়েছেন। একটি সেনাযান ভস্মিভুত হয়েছে। সেগুলো কারা করেছে তা আমি জানি না। তারপরও ছাত্র বিক্ষোভের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তা হয়েছে, তাই ছাত্রদের অভিভাবক হিসেবে সম্মানিত জোয়ান থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান পর্যন- সকলের কাছে আন-রিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলাম। সেনাবাহিনীর আহত মর্যাদাবোধের যেন দ্রুত নিরাময় হয়। রিমান্ডে থাকাকালে আমি নিজে প্রস-াব করেছিলাম এ বিষয়ে আমি কোর্টে বলব। তারা অবাক হয়েছিলেন। আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে আমার কথাগুলো বললে সেনাবাহিনীর বড় উপকার হবে। সারাদেশে সেনাসদস্যরা তা শুনতে পাবে। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। আমি শর্ত দিয়েছিলাম, আমার মত করে আমাকে বলতে দিতে হবে। তারা কথা দিয়েছিলেন তারা তা রক্ষা করবেন। ... আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছিল। আমার সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছিল। আমার সেই উক্তি “সেনাসদস্যদের মত শিক্ষক-ছাত্র-নাগরিক-সকলের আত্মমর্যাদা আছে, আর কখনও যেন তাতে আঘাত করা না হয়”- তা প্রচার করা হয়নি। ...’
(১৬ জানুয়ারি আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনের দেয়া দীর্ঘ জবানবন্দী থেকে।)


আদালতে দাঁড়িয়ে ড. আনোয়ার হোসেনের দেয়া এই জবানবন্দী থেকে অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। যে অংশটি আমি উদ্ধৃত করেছি, তা থেকে যে বিষয়টি সবচেয়ে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, তিনি আদালতের বাইরে মিডিয়ার সামনে একটি বিষয়ে কথা বলেছিলেন। কিন' মিডিয়া সেই কথাটি পুরোপুরি প্রচার বা প্রকাশ করেনি। করেছে খণ্ডিতভাবে। ড. আনোয়ার হোসেন এই কাজটির জন্য সরাসরি মিডিয়াকে দায়ী করেননি। তিনি বলেছেন, তার সম্পূর্ণ বক্তব্য প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছিলো। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, ড. আনোয়ার হোসেন এ অভিযোগ করেননি যে, তার বক্তব্য মিডিয়া খণ্ডিত করে প্রচার করেছে। তার অভিযোগের সারমর্ম হলো, তার বক্তব্যটি এমন খণ্ডিত করতে কোনো একটি মহল মিডিয়াকে বাধ্য করেছিলো। যারা এমনটি করেছিলো বলে ড. আনোয়ারের ধারণা, তাদের উদ্দেশ্যটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে যদি আমরা খেয়াল করি যে খণ্ডিত বক্তব্যটি প্রচারের পর এর কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিলো। আমরা দেখেছি, মিডিয়াগুলো ড. আনোয়ারের সেই খণ্ডিত বক্তব্য ঢালাও প্রচারের পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সব আলোচনাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ মিলেছিলো।
ড. আনোয়ারের অভিযোগ আমলে নিলে এক এগারোর পর থেকে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতি নির্ধারকরা জরুরি অবস'ার পরেও দেশের মিডিয়াগুলোকে স্বাধীন বলে জাহির করার যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন, সেটি কিন' প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। আমজনতা প্রতিদিনের খবরের কাগজ পড়ে কিংবা স্যাটেলাইট চ্যানেলের সুবাদে যে খবর শুনে কিছুটা আশ্বস- থাকার অনুশীলন করতেন, সেই মিডিয়া যে অদৃশ্য ইশারায় নিয়ন্ত্রিত, সেটিও ঢাবি অধ্যাপকের এই বক্তব্যে উঠে আসে। গণতন্ত্রের বিপরীত মেরুর যাত্রাকারীদের শাসনামলে আমরা দেখেছি, মিডিয়ার ওপর সেন্সরশীপ আরোপ। সেই সেন্সরশীপ দু’টি বিষয়ে সীমাবদ্ধ ছিলো, এক, সরকারের বিরুদ্ধের কিছু প্রকাশ না করা এবং দুই, সরকারের স'তি গীতি সম্বলিত সংবাদ বেশি বেশি প্রচার করা। ড. আনোয়ার মিডিয়ার ওপর যে বাধার কথা বলেছেন, তা সরাসরি এমন মধ্যযুগীয় মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ কৌশলের মধ্যে পড়ে না। আগের আমলে সত্যটাকে চাপা দিয়ে তার বিপরীতে মিথ্যা তুলে আনা ছিলো কৌশল। হাল জামানায় (ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার মিডিয়া কৌশল সফলতা পাবার পর থেকে) কৌশলটি আরো ভয়াবহ। আপনাকে সত্য চেপে মিথ্যা প্রকাশ করতে হবে না। আপনাকে প্রকাশ করতে হবে অর্ধসত্য। এটি ভয়াবহ এই কারণে যে, কিছু চেপে রাখলে তা প্রচার প্রায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত। কিন' আধাসত্যের সেই অর্ধেকে যারা সন'ষ্ট হন, তারা আর ভেতরে অলিগলি ঘুরে মরতে চান না।
সারাবিশ্বে আমাদের মিডিয়াগুলো যে সেন্সরশীপের আধুনিক কৌশলে চলছে, তা নিয়ে আলোচনা অনেকই হয়েছে। এর দু’টি দিক রয়েছে। প্রথম দিকটিতে যে সেন্সরশীপ আরোপ করা হয় আক্ষরিক অর্থেই তা মেনে চলার চর্চা শুরু হয়। দ্বিতীয় দিকে, এই যে চর্চাটি শুরু হলো, তা সংবাদকর্মীদের আত্মনিয়ন্ত্রিত (সেল্ফ সেন্সরড) হতে শেখায়। সেন্সরশীপের আধুনিক কৌশলে লাইন বাই লাইন সেন্সর করতে হয় না। ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো করে একটি ইস্যু বা বিষয়ে একবার দৃষ্টিভঙ্গী দেখিয়ে দিলেই হলো, সংবাদকর্মীরা এরপর থেকে ওই ইস্যুতে কাজ করতে গেলে নিজে থেকেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে রাখেন। এর ফলটা হয় সুদূরপ্রসারী। আত্মনিয়ন্ত্রণকারী সেই সংবাদকর্মী দিনে দিনে বিদ্যমান ব্যবস'ার সঙ্গে চমৎকার করে মানিয়ে নিয়ে নিয়ন্ত্রিত সংবাদ পরিবেশনের কলাকৌশল রপ্ত করে ফেলেন। ফলে তার কাজের অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার প্রবণতাটিও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে, আরো কুশলী হয়ে ওঠে। তখন দেখার দৃষ্টিটাও অনেকটা সাদামাটা হয়ে আসে। আমাদের দেশে আমরা প্রতিটা দশকে দেখেছি, এই কারণেই সংবাদকর্মে মিডিয়াওয়ালারা তারুণ্যের স্ফূরণ চেয়েছেন। তরুণরা অনভিজ্ঞ হবার কারণে দেখার ধরণটা অনেক বেশি আনকোড়া। সেই আনকোড়া দৃষ্টিভঙ্গীকে আবার একটু মানিয়ে নেবার মতো করে তোলার জন্য সেই অভিজ্ঞরাও কাজে হাত লাগান। এইটা আমাদের মিডিয়ার বাস-বতা।
মিডিয়ার এই বাস-বতা আমরা বাইরে থেকে ছুঁতে পারি না। কাজেই মিডিয়া আমাদের সামনে যা তুলে ধরে তা প্রকৃত অর্থে কখনোই সম্পূর্ণ বাস-বতা হয় না। তা সম্ভবও নয়। কিন' সেন্সরশীপজনিত যে সমস্যাগুলো আলোচিত হয় তার শুরুটাও কিন' এখান থেকেই। আমরা নিজেরা বাস-বতায় বসবাস করলেও আমাদের সেই বাস-বতাগুলো লেখার অক্ষরে বা তুলির আঁচড়ে অথবা ক্যামেরার লেন্সে সরাসরি এসে হাজির হয় না। আমরা পাই, বাস-বতার প্রতিচ্ছায়া। এই প্রতিচ্ছায়া উঠে আসার প্রক্রিয়াটা হলো আমাদের সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা কিছু সংকেত ব্যবস'া যা ভাষার সহযোগিতা নিয়ে একযোগে আমাদের উপলব্ধির জগতে আবির্ভুত হয়। আমাদের উপলব্ধির সেই জগতটিও বিনির্মিত, নিজের সংস্কৃতির নিত্যবসবাসে। উপলব্ধির জগতটি বিনির্মাণ এবং সেই জগতটিকে বহন করে নিয়ে যাওয়াটাই কিন' মিডিয়াগুলোর কর্ম। আধুনিক মিডিয়ায় এই বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন, প্রশ্ন আসতেই পারে, মিডিয়া যদি বাস-বতা উপস'াপন করতে না পারে তাহলে কী উপস'াপন করে? মিডিয়া আসলে আপনার-আমার প্রতিদিনের বসবাসের বাস-বতা প্রদর্শন করে না। বাস-বতার কিছু অংশ উঠে আসে বটে, কিন' তা অবশ্যই মিডিয়া চরিত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত বাস-বতাগুলোকে কাটছাট করে। তারমানে আপনার-আমার বাস-বতার ওপর কখনো প্রলেপ লাগিয়ে কখনো বাস-বতা থেকে কিছুটা আস-রণ তুলে তা মিডিয়া চরিত্রের কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা বানানো হয় এবং তা প্রকাশ করা হয়। মিডিয়ার এই কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা হতে পারে নিজের নীতিনির্ধারকদের ঐকানি-ক আগ্রহে আবার হতে পারে বাইরের নীতিনির্ধারকদের চাপের মুখে। কিন' সবখানেই উদ্দেশ্য এক, কিছু একটা থেকে নজর অন্যখানে সরানো। মিডিয়া এমন খণ্ডিত এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমাদের উপলব্ধির জগত তৈরি করে। এমন সুনিপুণ অভিযানে শুধু আমাদের উপলব্ধির জগত তৈরিই শেষ কথা নয়, এই উপলব্ধির মাধ্যমে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনুশীলনগুলোকে পুণর্গঠন এবং ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সমষ্টিক পরিচয় নির্ধারণও তার অন্যতম বড় অভিপ্রায়। এমন অভিপ্রায় বাস-বায়ণের জন্য শুধু অক্ষর আর বাক্যে বিন্যস- ভাষা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন ভাষার সহযোগিতায় গড়ে তোলা সংকেতব্যবস'া। কাজেই মিডিয়ার এই অভিযান কেবল সংবাদ বা ছবি সম্পাদনের মধ্য দিয়েই চলে না, তা ছড়িয়ে পড়ে কাগজের অঙ্গবিন্যাস (মেকআপ), সংবাদের গুরুত্বারোপ প্রভৃতিতে। সেই সঙ্গে এসব কিছুর বিকাশে জরুরি হয়ে ওঠে গোলটেবিল বৈঠক, সুশীল সমাজ, প্রগতিশীল সমাজদের উপসি'তি ও তাদেরকে গ্রহণযোগ্য আউটলুক দেয়া।
এই সবকিছু একীভূত হয়ে মিডিয়ার এক নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি তৈরি করে। যে ভাষা-সংস্কৃতি আপাতদৃষ্টিতে সাহসী, উদ্যমী, অনুসন্ধিৎসু, শ্লীল এবং মার্জিত। কিন' ভেতরে ভেতরে ভীষণরকম অমার্জিত, একগুঁয়ে ও উদ্যমহীন। সেই ভাষা-সংস্কৃতিই আমাদেরকে বাধ্য করে মিডিয়ার কাঙ্ক্ষিত উপলব্ধির জগতে পা রেখে সেই স্রোতে বয়ে যেতে। সেই ভাষা-সংস্কৃতি দিয়ে তৈরি উপলব্ধিই আমাদের বলে দেয় প্রগতিশীল মানে হলো, মিস্টার এক্স মিস্টার ওয়াই। প্রগতিশীলতার ধারণাটিকে ছকবদ্ধ ছবকে আটকে ফেলার কারণে আমরা প্রগতিশীল বললেই আসলে সংজ্ঞার চেয়েও আগে কিছু মানুষকে বুঝে উঠি। ঠিক যেমনটি আমরা ‘মৌলবাদী’ বললেই দাড়ি-টুপিওয়ালা খুঁজতে শুরু করি। আমাদের উপলব্ধি মিডিয়া তার ভাষা-সংস্কৃতি ব্যবস'ার মধ্য দিয়ে এমন করেই তৈরি করে রেখেছে যে, মৌলবাদী মানেটা যাই হোক, আমাদের কাছে তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দাড়ি-টুপি থাকা। দু’টি ক্ষেত্রেই বাস-বতা কিন' ভিন্ন। মিস্টার এক্স মিস্টার ওয়াই ব্যক্তি হিসেবে নয়, তাদের কাজটাই যে আসলে প্রগতিশীলতার নমুনা, তা আমরা ভুলে যাই মিডিয়ার কল্যাণে। আর দাড়ি-টুপি থাকলেই যে মৌলবাদী নয় তাও আমরা ভুলে যাই একই কারণে। এই অভিন্ন কারণেই ‘সন্ত্রাসী’ বললে আমরা কেবল ভীষণ চেহারার এক সশস্ত্র ব্যক্তিকে খুঁজি। মিডিয়াগুলো ভাষা-সংস্কৃতি এমনভাবেই নির্মাণ করেছে যে, এমপি সালাহউদ্দিনের কথা উঠলেই আমরা তার দৌড়ের চেহারা তৈরি করে ফেলি নিজের অজ্ঞাতেই। নাদিম মোস-ফার নাম শুনলেই সোনার মুকুটের ছবি পাশে ভাসে। তো, এইসব বিষয়াদি কিন' মিডিয়ার পরম কাঙ্ক্ষিত বলেই দিনে দিনে তা লাই পায়। এখন বোঝার বিষয় হলো এই বিষয়গুলো কী কারণে মিডিয়ার কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠলো? কে তাকে কাঙ্ক্ষিত বানালো? শুধু কি সরকারি ক্ষমতা খাটিয়ে সেন্সরশীপ আরোপ করলেই মিডিয়া এমন কাঙ্ক্ষিত বাস-বতার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়? তা তো নয়, বিষয়টি শুধু এই একখানে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দাবিকৃত এই ‘মুক্ত’ মিডিয়া ড. আনোয়ারের ভাষ্যে কেবল এই এক প্রসঙ্গে এবং একটি প্রেক্ষাপটে কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা উৎপাদন করেনি। এর নজির আমরা আগেও দেখেছি। পুঁজির পাহারাদার হিসেবে আধুনিক রাষ্ট্রের অন-র্গত যেসকল প্রতিষ্ঠান গত কয়েক দশকে বিপুল ক্ষমতা অর্জন করেছে, মিডিয়া তার মধ্যে অন্যতম। পুঁজি রক্ষা এবং তার নিরাপদ বাজার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন নিরাপদ উপলব্ধির আয়োজন। মিডিয়া মূলতঃ কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা আমাদেরকে উপহার দিয়ে সেই আয়োজনই সম্পন্ন করে চলে প্রতিনিয়ত।
তাহলে মিডিয়া কি জনগণের বিরুদ্ধের কোনো প্রতিষ্ঠান? তার ভাষা-সংস্কৃতি যে উপলব্ধি তৈরি করে তা কি আমজনতার কাজে লাগে না? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে চলুন আমার লেখাটির প্রথম পর্বে ফিরে যাই। ড. আনোয়ার হোসেনের যে খণ্ডিত বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচার বা প্রকাশ হয়েছিলো, তার কিছুটা প্রভাব তো পড়েছিলোই। কিন' তারপরেও সন্দিহান মানুষের অভাব পড়েনি, যারা ধারণা করেছিলেন, হয়তো চাপে পড়ে ড. আনোয়ারকে দিয়ে এ ধরণের কথা বলিয়ে নেয়া হয়েছে। মিডিয়ার কাঙ্ক্ষিত এই বাস-বতা বিনির্মাণের পরেও সবাই এমন ধন্দে পড়লেন কেনো? এর কারণটিও পরিষ্কার। মিডিয়া কোনো একটি চাপে হয়তো বক্তব্য খণ্ডিত করেছে কিন' সেই মিডিয়াওয়ালারাই দিনে দিনে ড. আনোয়ার হোসেনকে এমনভাবে কায়দা করে হাজির করেছেন যে, প্রশ্ন উঠেছে। এবং শেষমেশ কিন' ড. আনোয়ার হোসেনও সেই উপলব্ধিকেই সমর্থন করেছেন। মিডিয়া নিজের অসি-ত্বের স্বার্থে তো বটেই এবং কখনো কখনো নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্যও কাজ করে। সেই কাজটিও কিন' মিডিয়া সেই একই প্রক্রিয়ায় করে চলে। নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা হাজির করে উপলব্ধি তৈরি করে। মিডিয়া যদি ইচ্ছে করতো, তাহলে পারতো, ‘ক্রসফায়ার’কে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে, যখন ওই শব্দটি উচ্চারিত হলেই মনে হতো, যে মারা পড়েছে সে অবশ্যই সন্ত্রাসী। মিডিয়া কিন' এখানে অন্যরকম উপলব্ধির সুযোগ তৈরি করেছে নানান কৌশলে; কখনো কথিত ক্রসফায়ার বলে, কখনো শব্দটির ওপর কোট (‘’) ব্যবহার করে আবার কখনো নানা জনের লেখা ছাপিয়ে। ফলে ক্রসফায়ারটিও যে কখনো প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে সেই উপলব্ধিই মিডিয়া আমাদের তৈরি করেছে। মিডিয়ার এমন বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির চেষ্টা তার নিজের স্বার্থেই প্রয়োজন। এবং আমাদের সমাজে মিডিয়া মানুষের জন্য যতোটুকু করছে, তার সবটুকুই কেবল এই জায়গাটিকে কেন্দ্র করেই। মিডিয়া শুধু এই কাজটি করেই ক্ষান- হচ্ছে না, রাতদিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, পাঠকদের একটা অভ্যস'তার কেন্দ্র তৈরি করতে। সেই কেন্দ্রটা এতোটাই চৌম্বকীয় যে, সকাল বেলা চায়ের টেবিলে খবরের কাগজ না হলে চলে না, এমন বিষয়ে তা আর সীমাবদ্ধ নেই। এখন তা গড়িয়েছে ব্র্যান্ডের প্রশ্নে। উমুক জন সকালবেলা প্রথম আলো না হলে স্বসি- পান না। তমুক জন সমকাল, যুগান-র, ইত্তেফাক বা ডেইলি স্টার না পড়লে স্বসি- পান না। মিডিয়াগুলো এভাবে অভ্যস'তার মাধ্যমেই তাদের তাবৎ ভাষা-সংস্কৃতি আরোপের মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত বাস-বতাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে এবং তা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
লেখা শুরু করেছিলাম, সেন্সরশীপ নিয়ে। শেষ করি সেখানেই ফিরে। কাঙ্ক্ষিত বাস-বতা বিনির্মাণ করতে গিয়ে মিডিয়াগুলো আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে যে ধরণের পরিবর্তন সূচিত করতে ইন্ধন যোগায়, সেন্সরশীপগুলো স্বাভাবিকভাবে তাদের মাধ্যমেই আরোপিত হয়। কাজেই কোনো বিশেষ সময় বা প্রেক্ষাপট বিবেচ্য নয়, মিডিয়া চরিত্র যদি পুঁজির পাহারাদারের ভূমিকা থেকে সরে না আসে তাহলে সব সময়ই এই সেন্সরশীপ আসবে। নানা রূপে, নানা অবয়বে। কখনো সরাসরি, কখনো পরোক্ষে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ২:৫৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×