ড. আনোয়ার হোসেন সিএমএম আদালতে এই লিখিত জবানবন্দী দিয়েছেন। সমকালে এটির িকছু অংশ ছাপা হয়েছে। ব্লগারদের জন্য পুরোটাই তুলে দিলাম। কনভার্টারের সমস্যার কারণে অস্পষ্টতা থাকায় আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
মহামান্য আদালত,
আপনার এই বিজ্ঞ আদালতে শপথবাক্য উচ্চারণ করে আমার বক্তব্য পেশ করছি। আমার বক্তব্যের শুরুতেই আমি আমার জাতীয় সঙ্গিতের রচয়িতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পহৃর্বে যে কবিতাটি রচনা করেছিলেন, তার শেষ কয়েকটি চরণ উচ্চারণ করব। মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে তিনি লিখেছিলেন,
“সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালবাসিলাম
সে কখনও করেনা বঞ্চনা”
মহামান্য আদালত,
আপনার সামনে আমি নিঃশঙ্ক চিত্তে কিছু কঠিন সত্য উচ্চারণ করব। কারণ প্রথমত ও প্রধানত সত্য কখনও বঞ্চনা করে না। দ্বিতীয়ত আমি নিঃশঙ্ক, কারণ আমি এমন একটি দেশে জন্মগ্রহণ করেছি যে দেশের জাতির জনক বঙ্গবল্পব্দু শেখ মুজিবুর রহমান ঘাতকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে নিঃশঙ্ক চিত্তে জীবন দিয়েছেন। তৃতীয়ত আমি কর্ণেল আবু তাহের, বীর উত্তমের ভ্রাতা, যিনি ফাঁসির মঞ্চে তাঁর অমর বাণী উচ্চারণ করেছেন, নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর বড় কোন সল্ফঙদ নেই। চতুর্থত নিঃশঙ্ক চিত্তে কঠিন সত্য উচ্চারণ করব এ জন্য যে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে এ দেশের মানুষ জাতির বিবেক বলে মনে করে। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছ থেকে মানুষ সত্য উচ্চারণ তা যতই কঠিন হোক, তা শুনতে আশা করে।
মহামান্য আদালত,
আমি প্রথমেই একটি বিষয় আপনার সুনজরে আনতে চাই। তা হলো আমাদের বিরুদেব্দ আনীত এ মামলা কোন সাধারণ মামলা নয়। এই মামলার এই কাঠগড়ায় আসামী হিসেবে শুধুমাত্র চারজন শিক্ষক ও উপস্টি'ত ১ জন ছাত্র এবং অনুপস্টি'ত ১৪ জন ছাত্র আসামী নয়। আজ এই কাঠগড়ায় আসামী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। কাঠগড়ায় আসামী করা হয়েছে জাতির বিবেককে। আপাতত দৃষিদ্বতে কাগজে কলমে শাহবাগ থানার একজন পুলিশ অফিসার এ মামলার বাদী। কিনস্নু আমরা জানি, দেশবাসী জানে, জাতির বিবেকের বিরুদেব্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদেব্দ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদেব্দ আসল প্রতিপক্ষ কারা। এরা হচ্ছে সেনা গোয়েন্দা সংস্ট'া ডিজিএফআই, তাই এ মামলার চার্জ গঠনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে এ সংস্ট'ার সদস্যরা। শুধু তাই নয়, প্রতিনিয়ত তারা উপস্টি'ত থাকে এই আদালতে। তাই হে মহামান্য বিচারক, আপনার বিজ্ঞ আদালতে কাঠগড়ায় দাড়ানো এই আসামীর বক্তব্য শুধুমাত্র “আমি নির্দোষ এবং শুধু কেন নির্দোষ” এর মধ্যে সীমাবদব্দ থাকবে না।
মহামান্য আদালত,
ইতিহাসে একদিন লেখা হবে, আপনি একটি ঐতিহাসিক মামলায় বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যে মামলায় শুধুমাত্র শিক্ষক কর্তৃক আন্দোলনে ছাত্রদের উস্ট্কানি, তাদের বিক্ষোভ,
২.
ভাংচুর, জরুরী অবস্ট'া ভংগ- ইত্যাদি মহৃল বিষয় নয়। তার থেকে অনেক গভীরে এই মামলার তাৎপর্য। জাতির বিবেককে হেয়-প্রতিপন্ন করা এবং দলিত করাই এ মামলার মহৃল লক্ষ্য। সাড়ে চার মাস ধরে কারাভোগের পর গত ৯ ডিসেল্ফ্বর থেকে আমাদের বিরুদেব্দ এই মামলা শুরু হয়েছে। চার্জ গঠন, স্ট্বাক্ষী যাদের মধ্যে অসহায় চায়ের দোকানদার, ফেরিওয়ালা, ফুলের দোকানের কর্মচারী, পিয়ন, ভীত-সন্পস্ট্প কন্সটেবল- এদের স্ট্বাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আপনি, বিজ্ঞ আইনজীবিবৃন্দ এবং আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন জন ডীন, একজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও একজন ছাত্র অনেক ধৈর্য্যে সবকিছু শুনেছি। তাই আপনার প্রতি বিনীত অনুরোধ এ মামলার মুখ্য আসামী হিসেবে আমার বক্তব্য যদি একটু দীর্ঘও হয়, তবুও তা দয়াকরে শুনবেন। আপনার সু-বিচেনার প্রতি পহৃর্ণ আস্ট'া রেখে বলছি যদি আমার বক্তব্যের কোন অংশ নথিবদব্দ করার প্রয়োজন বোধ নাও করেন তবুও প্রথম থেকে যে ধৈর্য্য আপনি দেখিয়েছেন, সেই একই ধৈর্য্যে আমার বক্তব্য আপনি শুনবেন। কারণ বিনীতভাবে বলছি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্ট্বার্থেই আমি তা বলব। একটি বিচার শুধুমাত্র সাজা ও খালাসের মধ্যে সীমাবদব্দ নয়। প্রতিটি বিচার থেকে আমাদের প্রত্যেকের শিক্ষণীয় আছে।
মহামান্য আদালত,
আমি আজ স্ট্মরণ করছি ঐতিহাসিক আরেকটি মামলার কথা যেটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন আমলে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যনস্নরে অনুষ্ঠিত একটি গোপন মামলা। রাষদ্ব্র বনাম কর্ণেল তাহের গং নামে পরিচিত সেই মামলায় কর্ণেল তাহের, বীরউত্তম সহ ৩৪ জনের মধ্যে আমিও একজন আসামী ছিলাম। কাঁটাতার ঘেরা একটি অপরিসর বেষদ্বনিতে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্ট'ায় আমাদের রাখা হত। তার বাইরে পাঁচ সদস্য বিশিষদ্ব বিশেষ ট্রাইবুনাল ও আমাদের আইনজীবিরা বসতেন। কারাগারের অভ্যনস্নরে উদ্যত অস্ট্প হাতে এই তথাকথিত আদালত প্রহরায় রাখা হয়েছিল আর্মড ব্যাটেলিয়ান। জেনারেল জিয়া সেদিন কর্ণেল তাহের ও মেজর জলিল এই সেক্টর কমান্ডার সহ বাকি সকল মুক্তিযোদব্দার বিরুদেব্দ এই ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেছিলেন ব্রিগেডিয়া ইউসুফ হায়দারকে, যে ব্যক্তিটি ১৯৭১ সালে ঢাকায় অবস্ট'ান করেও মুক্তিযুদেব্দ যোগ দেয় নি, পাকিস্টস্নানিদের পক্ষাবলল্ফ্বন করেছিলেন, সেই গোপন মামলায় কর্ণেল তাহের জবানবন্দি দিয়েছিলেন বার বার ইউসুফ হায়দার কর্তৃক বাধাপ্রাপ্টস্ন হয়েও। আমাদের প্রধান আইনজীবি বাংলার এককালীন মুখ্য মন্পী আতাউর রহমান খান সেদিন বলেছিলেন, বিজ্ঞ আদালত কর্ণেল তাহেরকে বলতে দিন। তিনি এই মামলার মুখ্য আসামী। কি আশ্চর্য, ১৯৭৬ এর সেই গোপন মামলার ৩১ বছর পর আজকের এই মামলায় তারই ভ্রাতা এই আমি মুখ্য আসামী। কর্নেল তাহের সেদিন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ইউসুফ হায়দার যেন জেনারেল জিয়া ও তার ডিজিএফআই-এর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে অবস্ট'ান নেন তার আহ্বান জানিয়েছিলেন। উলেল্গখ করেছিলেন, আর একটি ঐতিহাসিক মামলার কথা। কিউবার বিপল্গবী নেতা ফিদেল ক্যাসেদ্ব্রা, সামরিক স্ট্বৈরশাসক জেনারেল বাতিস্টস্নার মানকাডা দহৃর্গে অভিযান চালিয়েছিলেন। সেই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। জেনারেল বাতিস্টস্না ক্যাসেদ্ব্রার বিরুদেব্দ গোপন বিচার করেছিল। সেই মামলার বিচারকের উদ্দেশ্যে ফিদেল তার উদ্দিপ্টস্ন ভাষণে সেই একই আহ্বান জানিয়েছিলেন যেন তিনি বাতিস্টস্নার রক্তচক্ষুকে
উপেক্ষা করে ন্যায়ের দন্ড উর্ধ্বে তুলে ধরেন। সৌভাগ্য ক্যাসেদ্ব্রার, সৌভাগ্য কিউবার জনগণের। সেই বিচারক সেদিন সত্যের পক্ষ অবলল্ফ্বন করেছিলেন। সসল্ফ্মানে মুক্তি দিয়েছিলেন ক্যাসেদ্ব্রাকে। আর যেদিন ফিদেল ক্যাসেদ্ব্রা ও বিপল্গবী চে’ গুয়েভারার নেতৃত্বে বিপল্গবী বাহিনী বিজয়ীর বেশে হাভানায় প্রবেশ করেছিল, বাতিস্টস্না পলায়ন করেছিল, সেদিন ক্যাসেদ্ব্রা তার প্রথম ডিত্রিক্রতে সেই বিচারককে সল্ফ্মান জানিয়েছিলেন, তাঁকে কিউবার প্রথম সাংবিধানিক রাষদ্ব্রপতি ঘোষণা করে। ফিদেল ক্যাসেদ্ব্রা আজও বেঁচে আছেন শুধুমাত্র ক্যান্সারের বিরুদেব্দ সংগ্রাম করে নয়, বর্তমান পৃথিবীর উগ্র পরাশক্তি মার্কিন শাসনগোষ্ঠীকে সার্থকভাবে মোকাবেলা করে। হে মহান বিপল্গবী ফিদেল, আজ বাংলাদেশের একজন বিবেক বন্দী শিক্ষক আপনাকে স্ট্মরণ করে সাহসে উদ্দিপ্টস্ন হচ্ছে, যে সাহস আপনি ছড়িয়ে দিয়েছেন শুধু সারা ল্যাটিন আমেরিকাতে নয়, খোদ মার্কিন যুক্তরাষদ্ব্র সহ সারা পৃথিবীর তরুণ-তরুণীদের মধ্যে।
মহামান্য আদালত,
দুভার্গ্য কর্ণেল তাহেরের, দুর্ভাগ্য বাংলার দুঃখি মানুষের, ব্রিগেডিয়ার ইউসুফ হায়দার, জেনারেল জিয়া ও তার গোয়েন্দা সংস্ট'ার নির্দেশনার বাইরে যেতে পারেননি। তাহেরও তা বুঝেছিলেন। তাই তার জবানবন্দীতে বলেছিলেন, এ বিচার তো প্রহসন, জিয়ার নির্দেশে বিচারের রায় তো লেখা হয়ে গেছে ডিজিএফআই হেড কোয়ার্টারে। সেদিন আমাদের আইনজীবি, আতাউর রহমান খান, আ্বন্ধুর রউফ, যিনি পরে বিচারপতি হয়েছিলেন, এ্যাডভোকেট জুলমত আলী খান, কে, জেড, আলম, গাজীউল হক সহ অন্যান্য আইনজীবিরা যুক্তি দিয়ে সাজানো প্রহসনের মামলার অসাড়তা প্রমান করেছিলেন। আতাউর রহমান খান বলেছিলেন, “বিজ্ঞ আদালত, রাজা যদি বিনা অপরাধে প্রজাকে হত্যা করে, তবে রাজা এই দৃষদ্বানস্ন স্ট'াপন করে যে, প্রজাও রাজাকে হত্যা করতে পারে”। কিনস্নু বিচারের বাণী সেদিন নিভৃতে কেঁদেছিল। ইউসুফ হায়দার জিয়া কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে দ্রুত পাঠ করে গিয়েছেলেন কার কত বছর সাজা। সবার শেষে তাহেরের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে তাহেরের ভাষায় বেত্রাহত কুকুরের মত দ্রুত আদালতকক্ষ ত্যাগ করেছিলেন। সরকারি পিপি এটিএম আফজাল যিনি পরে প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন, তিনি নিজে কারও মৃত্যুদন্ড চাননি। কারণ তাহের ও তার সহকর্মীদের বিরুদেব্দ যে চার্জ গঠন করা হয়েছিল তাতে মৃত্যুদন্ড দেয়া যায়না। তাহেরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ১০ দিন পরে এক সামরিক অর্ডিন্যান্স দ্বারা পেছন থেকে কার্যকর আইন দ্বারা এই মৃত্যুদন্ডকে বৈধতা দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। রায় ঘোষণার ৭২ ঘন্টার মধ্যে জিয়া তার জীবনদাতা কর্ণেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিলেন। আর সেই হত্যাকান্ডের রায়ে জিয়ার রক্তচক্ষুর কাছে অবনত মস্টস্নকে সই করেছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ও চিফ মার্শাল ল’ এ্যাডমিনিসেদ্ব্রটর সায়েম। ’৭৬-এর ২১ জুলাই রাতে কী অপহৃর্ব মহিমায়, কী গৌরবে, কী সাহসে অকুতভয় তাহের এগিয়ে গিয়েছিলেন ফাঁসির মঞ্চের দিকে। মুক্তিযুদেব্দ ১১ নল্ফ্বর সেক্টরে অধিনায়ক তাহের সল্ফ্মুখ যুদেব্দ তাঁর বাম পা হারিয়েছিলেন। সেদিন সেই রাতে তাহের পরেছিলেন তার নকল পা, পরিধান করেছিলেন তার কাছে সবচেয়ে সুন্দর যে পোশাকটি ছিল সেটি। লাঠি হাতে কারও সাহায্য ছাড়া ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন। ঘাতককে তার পবিত্র দেহ স্টঙর্শ করতে দেননি। ফাঁসির দড়ি পড়াতে দেননি। তিনি চাননি কোন
বাঙ্গালী একজন মুক্তিযোদব্দার গলায় ফাঁসির দড়ি পরিয়ে নিজের হাত কলঙ্কিত করুক। তাই নিজেই গলায় পরেছিলেন ফাঁসির দড়ি। ফাঁসির পহৃর্ব মুহুর্তে উচ্চারণ করেছিলেন তার সেই অমর বানী “নিঃশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর বড় কোন সল্ফঙদ নেই, আমি তার অধিকারী, আমি আমার জাতিকে তা অর্জন করতে ডাক দিয়ে যাই”।
মাহমান্য আদালত,
কি অপরাধ করেছিলাম? গত পহেলা জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শিক্ষকতার ৩৩ বছর পহৃর্ণ হয়েছে। শিক্ষক হয়েও গোপন বিচারে প্রায় পাঁচ বছর কারাগারে কাটিয়েছি। তার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছি। তা সল্ফ্ভব হয়েছিল মুক্তিযুদেব্দর অন্যতম অর্জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৭৩ আদেশের জন্য, যা বঙ্গবল্পব্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিয়েছিলেন জাতির বিবেক হিসেবে আমরা যেন স্ট্বাধীনভাবে সত্য উচ্চারণ করতে পারি। আজ ভাবতেও অবাক লাগে যেখানে বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আরও স্ট্বাধীনতা চাইছে, সেখানে সরকার এবং কিছু তথা কথিত সুশীল সমাজ জাতির বিবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়ত্বশাসনের রক্ষাকবচ ৭৩ আদেশ বাতিল করতে চাইছে। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী করেছি প্রথিতযশা বিজ্ঞানী অধ্যাপক কোজি আসাদার তত্ত্বাবধানে। স্ট্বল্কপ্পতম সময়ে ডিগ্রী লাভ করেছি। কত সৌভাগ্যবান আমি, ১৯৯৫ সালে প্রফেসর আসাদা তার ছাত্র আমাকে ভিসিটিং প্রফেসর হিসাবে আমন্পন করেছেন সেই বিখ্যাত কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৪ সালে মিয়াজাওয়া দ্বীপে তাঁর সল্ফ্মানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রানস্ন থেকে তাঁর প্রাত্তন ছাত্ররা একত্রিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের সেই মেলায় আমিও আমন্পিত হয়ে সল্ফ্মানীত হয়েছি। আমার মনে আছে সেই অনুষ্ঠানের পর অধ্যাপক আসাদা ও আমি একসঙ্গে বেশ কয়েক ঘন্টা কাটিয়েছিলাম ঐরৎড়ংযরসধ চবধপব গঁংবঁস এ। আলোচনা করেছি বিজ্ঞান, দর্শন ও বিশ্ব শানিস্ন নিয়ে। আমেরিকার বিখ্যাত জার্নাল, জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল ক্যামেসিদ্ব্র তে আমার প্রকাশিত গবেষণা পত্রের জন্য ১৯৮৫ সনের জীববিজ্ঞান শাখার শ্রেষ্ঠ গবেষণা পত্রের ইউজিসি পুরস্ট্কার লাভ করেছি। বিদেশে না থেকে দেশে ফিরেছি। পরে আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডিসট্রিংগুয়িসদ্ব প্রফেসর অব পল্গ্যান্ট ফিজিওলজি থমাস কে হজেস এর সাথে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে বন্যা সহনশীল ধান উদ্ভাবনের জন্য জীব বিজ্ঞানের আধুনিকতম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণায় অংশ নিয়েছি। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের গবেষণার এক গুরুত্বপহৃর্ণ আবিস্ট্কার আমেরিকায় পেটেন্ট হয়েছে। ১৯৯৩ সনের জীব বিজ্ঞানে অন্যন্য সাধারণ গবেষণার জন্য বিচারপতি ইব্রাহীম স্ট্বর্ণপদক লাভ করেছি। মহামান্য আদালত, আপনাকে জানাতে চাই যে, কর্ণেল তাহেরের ঐতিহাসিক জবানবন্দীর উপর নির্ভর করে প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফৎ শুলজ তার অসাধারণ পুস্টস্নক, “বাংলাদেশ দি আনফিনিসড রেভ্যুলিউশন- তাহের’স লাসদ্ব টেসদ্বাম্যান্ট” রচনা করেছিলেন। প্রফেসর হজেস আমার কাছ থেকে সেই পুস্টস্নকটির কথা শুনে ইউনিভার্সিটি অব
নটেরডেম এর লাইব্রেরি থেকে তা সংগ্রহ করে পাঠ করেছিলেন। আমি অত্যনস্ন কৃতজ্ঞ যে, প্রফেসর হজেস প্রায় ১৪ বছর পরও তার বাংলাদেশের এই বিজ্ঞানীর কথা ভুলে যাননি। আমেরিকান সোসাইটি অব পল্গান্ট বায়োলজিসদ্ব এর পক্ষ থেকে আমার এবং আমার বন্দী সহকর্মীদের মুক্তি চেয়ে বাংলাদেশের রাষদ্ব্রপতি ও প্রধান উপদেষদ্বার নিকট পত্র পাঠিয়েছেন। অনুরূপ পত্র পাঠান মার্কিন সিনেটর এ্যাডওয়ার্ড কেনেডি যিনি ১৯৭১ সালে নিক্সন-কিসিঞ্জার মার্কিন নীতির বিরুদেব্দ বলিষ্ঠ অবস্ট'ান নিয়ে মুক্তাঞ্চল সফর করেছেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বটগাছটি রোপন করেছিলেন। ২০০৭ সালের অগাসদ্ব মাসে আনস্নর্জাতিক জার্নাল ফুড কন্ট্রোল-এ ফলমুল, শাক-সব্জী ও খাদ্য সামগ্রীতে থেকে যাওয়া বিষাক্ত কীটনাশক সনাক্ত করার এক সহজ পদব্দতি যা আমি ২০০৪ সালে জাপান এ্যাডভান্সড ইনসিদ্বটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে জাপানি বিজ্ঞানীদের সাথে উদ্ভাবন করেছিলাম, তা প্রকাশিত হয়েছে। আমি বিনীতভাবে উপরের কথাগুলো শুধু একারণে উলেল্গখ করছি, যাতে বিজ্ঞ আদালত একজন শিক্ষক ও বিজ্ঞানী হিসেবে আমার সল্ফঙর্কে একটি ধারনা লাভ করতে পারেন। কারন স্ট্বৈরশাসক এবং তাদের স্টস্নাবকেরা অনেক সময় ঢালাওভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই বলে কটাক্ষ করেন যে, আমরা শুধু রাজনীতি করি। মহামান্য আদালত, আমার গায়ে সেনা ইউনিফরম নেই। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ আদেশ আমাকে রাজনীতি বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করতে বাঁধা দেয় না। কিনস্নু ইউনিফরম পরে শুধু দেশে নয় বিদেশেও রাজনীতি করে বেড়াচ্ছেন। ঘোড়াকে আকাশে উড়াচ্ছেন, রাজা মরতে পারেন, তিনি মারা যেতে পারেন- এসব মনস্নব্য করে ভীত-সন্পস্টস্ন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঠেলে দিচ্ছেন। ট্রাসদ্ব ব্যাংকে অনিয়ম করে অসত্য বক্তব্য রেখেছেন, চাকুরীবিধি লংঘন করে তা আপনিও নিশ্চয়ই জানেন। বিজ্ঞ বিচারক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার যে বিভাগ ছিল সেই আইন বিভাগে গত তিন বছর ধরে আমি একজন আমন্পিত বক্তা হিসেবে জেনেটিকস্, ত্রিক্রমিনাল বিহেভিয়ার এন্ড জুরিসপ্রুডেন্স এর উপর বক্তৃতা দিয়ে আসছি। আমার শিক্ষকতার জীবনে কোন একাডেমিক কাজে কোন শৈথিল্য দেখাইনি। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, আপনিও জানেন আমরা শিক্ষকেরা ছাত্রদের পিতা ও অভিভাবকের মত। বিপন্ন ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোকে আমরা কর্তব্য জ্ঞান করি এটা নতুন নয়। ১৯৯০ সালে এরশাদ সামরিক স্ট্বৈরতন্পের বিরুদেব্দ আজকের রাষদ্ব্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন যিনি সেই সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন, তার নেতৃত্বে শুধুমাত্র জরুরী অবস্ট'া ভংগ নয় কারফিউ ভেঙ্গে আমরা শিক্ষকেরা ছাত্র ছাত্রীদের সাথে রাস্টস্নায় নেমে এসেছি। বিগত জোট সরকারের আমলে যখন রাতের অল্পব্দকারে পুলিশ শামসুন্নাহার হলে ঢুকে ছাত্রীদের লাঞ্চিত করেছিল। ১৮ জন ছাত্রী, যার মধ্যে আমার বিভাগের একজন ছাত্রীও ছিল- তাদের গভীর রাতে ধরে নিয়ে রমনা থানার হাজতে ভরেছিল, তখনও বিপন্ন ছাত্রী ও তাদের পাশে আন্দোলনরত ছাত্রদের পুলিশি আত্রক্রমন থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা শিক্ষকেরা রাস্টস্নায় নেমে এসেছিলাম। এমনি ঘটনায় সেই কুখ্যাত পুলিশ অফিসার কহিনহৃরের নির্দেশে সল্ফঙহৃর্ণ বিনা উস্ট্কানিতে পুলিশের লাঠির আঘাতে আমার হাঁটু ভেঙ্গে গিয়েছিল। সাড়ে তিন মাস আমি শয্যাশায়ী ছিলাম। কিনস্নু তখন সেই ঘটনায় তৎকালীন উপাচার্যকে পদত্যাদ করতে হয়েছিল। কোন শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়নি। অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আমার বাসায় এসে আমাকে দেখে গিয়েছিলেন।
আমার সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য দেশের শ্রেষ্ঠ অর্থপেডিক সার্জন অধ্যাপক রুহুল হককে পাঠিয়েছিলেন আমার শয্যা পাশে।
গত ২০ আগসদ্ব খেলার মাঠে আমাদের ছাত্র আত্রক্রানস্ন হয়েছিল সেনা সদস্যের হাতে। তারা অপমানিত হয়েছিল এবং বিক্ষুদব্দ হয়েছিল। এখানে বলে রাখি, খেলার মাঠের পাশে জিমনেসিয়াম, যেখানে ১১ জানুয়ারি থেকে ৪৬ তম ইন্ডিপেনডেন্ট ইনফেন্ট্রি ব্রিগেডের একটি ইউনিট অবস্ট'ান করছিল- সেটি ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক শিক্ষার জন্য ব্যবহূত হত। সকাল থেকে সল্পব্দ্যা পর্যনস্ন বিভিন্ন সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্যতামহৃলকভাবে, একাডেমিক কার্যত্রক্রমের অংশ হিসেবে এখানে আসত। সেখানেই তাদের হাজিরাও নেয়া হত। কিনস্নু সেনাবাহিনী দীর্ঘ আট মাস ধরে সেখানে অবস্ট'ানের কারণে তাদের সে কার্যত্রক্রম বল্পব্দ হয়ে যায়। ২০ আগসেদ্বর ঘটনার প্রায় ১ মাস পহৃর্বে ৪৬ তম ইনফেন্ট্রি ব্রিগেড অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের সাথে আমার দেখা হয়েছিল খেলার মাঠের গ্যালারীর দোতলায় অফিসার্স ফিল্ড মেসে। উপাচার্যসহ ডীন ও আরও কয়েকজন শিক্ষককে মধ্যাহক্র ভোজে তারা আমন্পণ জানিয়েছিলেন। এই সুযোগে আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমকে বলেছিলাম সেনা ক্যাল্ফঙটি সরিয়ে নিতে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীরা জিমনেসিয়াম ব্যবহার করতে পারছিল না বলে তাদের একাডেমিক কর্মসহৃচীতেই অসুবিধা হচ্ছিল। ব্রিগেডিয়ার হাকিম সব শুনে বলেছিলেন, অতি দ্রুত তা তারা সরিয়ে নিবেন। ভোজন পরবর্তী তার বক্তৃতায় তা উলেল্গখও করেছিলেন। কিনস্নু পরিতাপের বিষয় বর্তমান উপাচার্য তার সমাপনী বক্তৃতায় সেনাক্যাল্ফঙ সরাবার কোন প্রয়োজন নেই বলে মত দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই জিমনেসিয়ামটি নিয়ন্পণ কক্ষ হিসেবে ব্যবহূত হত। গত একুশে ফেব্রুয়ারীর প্রাক্কালে আমি উপাচর্যসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাকে বলেছিলাম, তারা যেন সামরিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান কিনস্নু তারা কান দেননি। বাস্টস্নব সত্য হল, জোট সরকারের ত্রিক্রড়ানক এই সব পদাধিকারীদের সেই নৈতিক সাহস ছিল না, সেনা শাসকদের সামনে বাস্টস্নব সমস্যাগুলো তুলে ধরার। উপাচার্য যে সেনাক্যাল্ফঙ অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলতেই সাহস পাবেন না, একথাও আমি মধ্যাহক্র ভোজের দিন ব্রিগেডিয়ার হাকিমকে বলেছিলাম। আমার পরামর্শমত সেনাক্যাল্ফঙটি সময়ে সরিয়ে নিলে ২০ আগসেদ্বর দুঃখজনক ঘটনাও ঘটত না।
মহামান্য আদালত,
সেনা সদস্যদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় ছাত্ররা বিক্ষুদব্দ হয়েছিল। বিক্ষুদব্দ ছাত্রদের উপর আইন শৃগ্ধখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নগ্ন হামলায় বহু ছাত্র আহত হয়েছিল, রক্তাক্ত হয়েছিল। আমিসহ বহু শিক্ষক ছুটে গিয়েছিলেন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমাদের ভারপ্রাপ্টস্ন উপাচার্য অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার সেখানে ঘোষণা করেছিলেন “এখন বিপন্ন ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের একমাত্র কর্তব্য”। পুলিশের হাতে তিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন। এঘটনা থেকেই বোঝা যায়, আইন শৃগ্ধখলা রক্ষাকারী বাহিনী কত বেপোরোয়া আচরণ করেছিল সেদিন। মহামান্য আদালত, অন্যান্য বারের মত ২০ আগসদ্ব এবং তৎপরবর্তী ঘটনায় শিক্ষকেরা ছাত্রদের সাথে কোন বিক্ষোভে অংশ নেননি, রাস্টস্নায় নামেননি। আমরা নানাভাবে চেষদ্বা করেছি পরিস্টি'তি শানস্ন করতে। আমরা ২১ আগসদ্ব শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জরুরী সাধারণ সভা করে সর্বসল্ফ্মত সিদব্দানেস্নর ভিত্তিতে যে প্রস্টস্নাব
সমহৃহ গ্রহণ করেছিলাম, তার কোনটিই সরকার বিরোধী ছিল না। আর প্রস্টস্নাবগুলো আমার বা কোন শিক্ষকের ব্যক্তিগত প্রস্টস্নাব ছিল না। আমরা জরুরী অবস্ট'া প্রত্যাহার চেয়েছি। এটিতো নতুন নয়। ১১ জানুয়ারি সেনা সমর্থিত বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার ১ সপ্টস্নাহের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৯ জন শিক্ষক যৌথ স্ট্বাক্ষরে জরুরী অবস্ট'া অবিলল্ফ্বে প্রত্যাহার করে জনগণের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে ৩ মাসের মধ্যে একটি স্ট্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্টস্নানস্নর করার জন্য পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছিলাম। শিক্ষকদের সেই যৌথ বিবৃতির ১ নল্ফ্বরে স্ট্বাক্ষরকারী ছিলেন প্রবীন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। মহামান্য আদালত, আগসদ্ব ঘটনা তদনেস্ন বিচারপতি হাবিবুর রহামন খানকে প্রধান করে একটি উচ্চ ক্ষমতাসল্ফঙন্ন বিচার বিভাগীয় তদনস্ন কমিটি গঠন করেছিল। বিচারপতি হাবিবুর রহমান শতাধিক গুরুত্বপহৃর্ণ ব্যক্তির স্ট্বাক্ষ গ্রহণ করেছিলেন। আমরা অত্যনস্ন কৃতজ্ঞ যে, কারাবন্দী চার শিক্ষকের স্ট্বাক্ষও তিনি গ্রহণ করেছিলেন। তদনস্ন কমিশনের রিপোর্ট তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষদ্বার কাছে প্রদান করে সর্নিবল্পব্দ অনুরোধ করেছিলেন তদনস্ন রিপোর্টটি যেন অবিলল্ফ্বে প্রকাশ করা হয়। নিতানস্ন পরিতাপের বিষয় সেই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়নি। কেন হলনা, কাদের ইঙ্গিতে হলনা, তা আমরা জানতে চাই, কারণ তার সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্রদের ভাগ্য জড়িত। মাননীয় বিচারপতি একটি সাংবাদিক সল্ফ্বেলনের মাধ্যমে রিপোর্টের মহৃল বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, ২০ আগসেদ্বর ঘটনা আকস্ট্মিক, ২১ আগসেদ্বর ঘটনা স্ট্বতঃস্টম্ফুর্ত, ২২ আগসেদ্বর ক্যাল্ফঙাসের বাইরের ঘটনায় অন্যান্য শক্তির সল্ফঙৃক্ততা থাকতে পারে। শিক্ষক ছাত্রদের বিষয়ে সরকার যেন সর্বোচ্চ ইতিবাচক দৃষিদ্ব দিয়ে বিষয়টি দেখেন তার জন্য প্রধান উপদেষদ্বাকে অনুরোধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন অতি অল্কপ্প সময়ের মধ্যে তার শুভ ফলাফল পাওয়া যাবে। মহামান্য আদালত, আজ আপনার বিজ্ঞ আদালতে দাবী করছি সেই তদনস্ন রিপোর্ট অনতিবিলল্ফ্বে প্রকাশ করা হোক।
মহামান্য আদালত,
আগসেদ্বর ঘটনায় আমরা শিক্ষকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাল্ফঙাসের বাইরে কোন সমাবেশ বা মিছিলে অংশ নেইনি। কিনস্নু আপনি নিজেও তো জানেন, ঢাকার প্রধান সড়কে কতবার কত জঙ্গি মিছিল হয়েছে বর্তমান জরুরী অবস্ট'ায়। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, মামলা হয়নি। অন্যদিকে আমাদের শিক্ষক ছাত্রদের বিরুদেব্দ কেমন বৈষম্যমহৃলক ও প্রতিশোধমহৃলক ব্যবস্ট'া নেয়া হল, তা দেশবাসী জানে। তাই শিক্ষক ছাত্রদের মুক্তির জন্য, মামলা প্রত্যাহারের জন্য কত আবেদন নিবেদন হয়েছে। মহামান্য আদালত, ২২ আগসদ্ব কারফিউ জারির পরদিন ২৩ আগসদ্ব দুপুরে ডিজিএফআই-এর পক্ষ থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন আরও কয়েকজন অফিসারসহ প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী, ডক্টর হারুন-অর-রশিদ ও আমার সাথে আলোচনার জন্য এসেছিলেন। প্রায় তিন ঘন্টা আলোচনা হল, কারফিউ জারির পর থেকে তাদের সাথে আলোচনা চলাকালে যৌথ বাহিনী যেভাবে হলে হলে এবং ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় এবং আজিজ সুপার মার্কেট, যেখানে ছাত্ররা কারফিউর কারনে আশ্রয় নিয়েছিল- তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছিল, সেই
বিষয়গুলো তাদের কাছে তুলে ধরেছি। অনুরোধ করেছি অবিলল্ফ্বে তা বল্পব্দ করতে। তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, আমরা ছাত্র শিক্ষকেরা আনস্নরিক ভাবে চাই সেনাবাহিনী যেন আর ছাত্র-শিক্ষক-জনতার মুখোমুখি না হয়, বিতর্কিত না হয়। আমরা একে অন্যের প্রতিপক্ষ নই। জানিয়েছিলাম, সেনাবাহিনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেন কোনভাবেই ব্যার্থ না হয় কারন তাতে দেশের মহা সর্বনাশ হবে। তারা সল্ফঙুর্ণভাবে আমাদের সাথে একমত হয়ে আরও উচ্চপর্যায়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে ফিরে যান। মহামান্য আদালত, নিতানস্ন পরিতাপের বিষয় ঐদিন অর্থাৎ ২৩ আগসদ্ব রাত ১২টার পর পর যৌথ বাহিনী হানা দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টাওয়ার ভবনে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দাগী দুস্ট্কৃতকারী নই। কিনস্নু সেই গভীর রাতে আমাকে ও আমার সহকর্মী ড. হারুন-অর-রশিদকে গ্রেফতার করা হল, শাহবাগ থানায় নেয়ার নাম করে চোখ বেঁধে নেয়া হল অজ্ঞাত স্ট'ানে, তা আমাকে মনে করিয়ে দিল পাকিস্টস্নানি দখলদার সৈনিকদের আচরণের কথা। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল সেই একই চন্ডনীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে রাতের বেলা বাড়ি ঘেরাও করে গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্পী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবল্পব্দু কন্যা শেখ হাসিনাকে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারাণ সভার সিদব্দানস্নত্রক্রমে ডিজিএফআই-এর রক্তচক্ষু ও হুমকিকে উপেক্ষা করে প্রতিবাদ কর্মসহৃচী পালন করেছি। কারণ এ অপ্রয়োজনীয় গ্রেফতারকে গনতন্প প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবল্পব্দক হিসেবে আমাদের মনে হয়েছে। পরে একই কায়দায় গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তণ প্রধানমন্পী বেগম খালেদা জিয়াকে।
মহামান্য আদালত,
ঐ অজ্ঞাতে স্ট'ানে যেখানে গভীর রাতে আমাকে নেয়া হয়েছিল তা আমার অত্যনস্ন পরিচিত। কারণ ১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়ার শাসন আমলে আমি শিক্ষক থাকাকালে আমাকে গ্রেফতার করে সেখানে সাড়ে তিন মাস রাখা হয়েছিল। এবারে রিমান্ডে রাখা হয়েছে সরকারি হিসাবে ৮ দিন, কিনস্নু বাস্টস্নবে ১২ দিন। ডিজিএফআই-এর ঐ নির্যাতন কেন্দ্রে রিমান্ডে নেয়ার পর যখন আবার কোর্টে হাজির করা হয়, তখন কি ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক বৈকল্যে ভহৃক্তভোগী নিপতিত হয়, মহামান্য আদালত তা আপনারা জানেন। তথ্য আদায়ের নামে সেখানে যা যা করা হয়, তার সবই প্রয়োগ করা হয়েছিল বাংলাদেশের বিবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের প্রতি। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিগ্রীর নির্যাতনমহৃলক জিজ্ঞাসাবাদ- তার সবই চালানো হয়েছিল। চোখ বল্পব্দ অবস্ট'ায় দিন রাতের হিসাব ছিল না। মনে পড়ে কালো কাপড়ের পট্টিতে চোখ বাঁধা অবস্ট'ায় আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন “বলুন বল্গাক হোল কাকে বলে?” আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র নই। তারপরও বলেছিলাম আমার জানামতে মহাকাশে এটি সেই কৃষষ্ণ গহ্বর যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এত বেশি যা এমনকি আপতঃভরহীন, আলোকে পর্যনস্ন শুষে নেয়। তারা বলেছিলেন, আপনি সেই বল্গাক হোলে আছেন। মহামান্য আদালত, এই বল্গাক হোলে শুধুমাত্র চোখ বেঁধে দৃশ্যমান আলো কেড়ে নেয়া হয় না, এখানে হ্যারি পটার উপাখ্যানের আজকাবান দহৃর্গের যে ডিমেন্টর দের কথা বলা হয়েছে, তারা শুষে নেয় মানুষের আত্মাকে। কারাগারে থাকার কারণে পড়বার জন্য আমার মেয়ে দিপান্বিতা আমাকে হ্যারি পটারের উপাখ্যানগুলো পাঠায়। রচয়িতা জে.কে.রওলিং লিখেছেন “ঞযব ফবসবহঃড়ৎং ংঁপশ
ঃযব যড়ঢ়ব ধহফ যধঢ়ঢ়রহবংং. ঞযবু ংঁপশ ঃযব ংড়ঁষচ. বল্গাক হোল-এ তাই তারা করতে চেষদ্বা করেছিল। মহামান্য আদালত, আজ শপথ উচ্চারণ করে আপনাকে এবং দেশবাসীকে জানাচ্ছি, তারা সল্ফঙুর্ণ ব্যার্থ হয়েছিল। তারা আমার আশা-ভরসা-সুখ ও স্ট্বপ্নকে শুষে নিতে পারেনি। পারেনি আমার আত্মাকে শুষে নিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিঃশঙ্ক চিত্ত এই শিক্ষক এই আমি তাদের প্রশ্ন করেছি, একটি স্ট্বাধীন দেশের সেনা গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য আপনারা। কেন এই বিশুদব্দ চিত্তের মানুষটিকে ধরে নিয়ে এসেছেন, যে কোন অন্যায় করেনি। আমাকে হত্যা করতে পারেন কিনস্নু ভাঙ্গতে পারবেন না। আর সেই চেষদ্বাইবা কেন করবেন। আপনাদের তো কর্তব্য হচ্ছে আমার মত নীতি নিষ্ঠ বিশুদব্দ সত্বাকে পরম যত্নে রক্ষা করা। তাদের বলেছি, দেশের গরীব জনসাধারণের পয়সায় আপনাদের পোষা হচ্ছে, কিনস্নু দেশের কোন উপকারটি করেছেন আপনারা। ১৯৭৫-এর ১৫ আগসেদ্বর কালো রাত্রিতে সেনাবাহিনীর ষড়যন্পকারীরা যখন জাতির জনক, দেশের রাষদ্ব্রপতি বঙ্গবল্পব্দুকে হত্যা করেছিল তার পরিবার পরিজনসহ তখন কোথায় ছিল ডিজিএফআই? কারাগারের অভ্যনস্নরে চার জাতীয় নেতাকে সেনা কুচত্রক্রীরা গুলি ও বেয়নেটে যখন নির্মমভাবে হত্যা করল, তখন কোথায় ছিল ডিজিএফআই? জেনারেল জিয়ার নির্দেশে এই গোয়েন্দা সংস্ট'া কর্ণেল তাহের বীর উত্তমকে হত্যা করেছিল বিচারের নামে প্রহসন করে। প্রশ্ন করেছি ২১ আগসদ্ব যখন জোট আমলে প্রকাশ্য দিবালোকে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড ও গুলি চালানো হয়েছিল, তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? জঙ্গিরা বলেছে, তারা শুধু গ্রেনেড ছুড়েছিল, গুলি করেনি। গাড়িতে এসে গুলি করে দ্রুত করা চলে গেল, সে রহস্যতো উদঘাটন আজও হলনা। সেই নৃশংস নারকীয় ঘটনায় অলৌকিক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবল্পব্দু কন্যা। কিনস্নু আইভি রহমানসহ ২৪ জন মানুষ করুণ মৃত্যু বরণ করেছিলেন। তার কোন কুলকিনারা আজও হলনা। তার মহৃল রহস্য কোথায়, তা কি সচেতন নাগরিকরা বোঝেন না? ৬৩ জেলায় একযোগে জঙ্গি বোমা বর্ষণ হল, কোথায় ছিল ডিজিএফআই? বিশ্বাস করুন মহামান্য আদালত, তারা আমার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। বলেছি, আমাকে কেন ধরে এনেছেন? আমিতো সেই পিতা-মাতার সনস্নান যারা তাদের ৭ পুত্র ও ২ কন্যাকে মুক্তিযুদেব্দ পাঠিয়েছিলেন। এদের মধ্যে ৪ জন মুক্তিযুদেব্দ বীরত্বসহৃচক খেতাব লাভ করেছিলেন। কর্ণেন তাহের বীর উত্তম, আবু ইউসুফ বীর বিত্রক্রম, শাখাওয়াত হোসেন বীর প্রতীক এবং ওয়ারেসাত হোসেন বীর প্রতীক। বাংলাদেশে দ্বিতীয় কোন পরিবার নেই, যেখানে আপন চার ভাই যুদেব্দ বীরত্বসহৃচক খেতাব লাভ করেছিলেন। জীবনে জানামতে কোন অন্যায় করিনি, আপনাদের কথিত ষড়যন্পতো দহৃরের কথা।
মাহামান্য আদালত,
কুসুমেও কীট থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষকেরা নৈতিকভাবে অধঃপতিত হয়েছেন, দহৃর্নীতি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমুর্তিকে মলিন করেছেন, তাদের বিরুদেব্দ দৃষদ্বানস্নমহৃলক ব্যবস্ট'া নেয়ার জন্য শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বার বার দাবী করেছি। তারাতো সবাই স্ট্বপদে বহাল শুধু আছেন নয়, তাদের সাথেই আপনাদের দেন-দরবার। সাথে সাথে মাহামান্য আদালত, আমি আপনাকে বলব, দেশে দেশে যুগে যুগে চরম প্রতিত্রিক্রয়ার দহৃর্গেও অশুভ শক্তির পাশাপাশি শুভ শক্তিও আছে। তাই মানব সভ্যতা এখনও টিকে আছে। সেকারনেই মুক্তিযুদব্দ
চলাকালে সুদহৃর পাকিস্টস্নানের কারাগারে ডিমেন্টররা বঙ্গবল্পব্দুকে হত্যা করতে পারে নাই। ডিজিএফআই-এর নির্যাতন কেন্দ্রে তেমন শুভ শুক্তির সল্পব্দান আমি পেয়েছি। মধ্য রাতে কিংবা তারও পরে যারা পরম শ্রদব্দায় ও সল্ফ্ভ্রমে আমার সাথে আলোচনা করেছেন, আমার প্রতি যে নিষ্ঠুর অন্যায় করা হয়েছে, তার জন্য আনস্নরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। জানতে চেয়েছেন দেশের সমস্যা সমাধানে আমার মতামত। আমি তাদের নাম দিয়েছিলাম মধ্যরাতের স্ট্বপ্নচারীগণ। হে স্ট্বপ্নচারীগণ, আমি এই জবানবন্দীতে আমি তোমাদের পরম কৃতজ্ঞতায় স্ট্মরণ করছি। তোমাদের পরিচয় জানি না, কারন আমার চোখ বল্পব
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১২:১০