ব্লগখানা নাকি 'অস্থির' হয়ে আছে! গত কয়েক দিন ধরে এমন সব কথাবার্তা ডানা মেলে ব্লগে বিচরণ করছে। কিন্তু আমি তো কোনো অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি না। বরং অস্বাভাবিক স্থির আর মৌন দশা দেখছি, নিঃস্তব্ধতা দেখছি; ঠিক ঝড়ের আগে এমন সুনশান হয়ে পড়ে প্রকৃতি।
যাক গে সে বিষয়, ঝড়ের পূর্বাভাস কানে যাবার পরেও অনেক জেলে নৌকায় করে সাগরে যায়, তাদের করার আর কিছু নেই বলে, জীবিকার বড় বেশি প্রয়োজনে তারা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে। বেশিরভাগই মারা পড়ে, জানার পরেও যায় তারা। প্রিয় সামহয়ার ইন ব্লগ কর্তৃপক্ষ, আমি শিবলী নোমান, আমাদের (এখানে পড়ুন, অধুনা একান্ত আপনাদের হয়ে পড়া) এই ব্লগটার পুরোনো সদস্যদের একজন, এই মর্মে আপনাদের কানে একখানা বার্তা পৌঁছাতে চাই যে, আমাদের ঝড়ের পূর্বাভাস জানার পরেও কিছুই করার নেই। কারণ আমাদের চেতনার প্রয়োজনে, জাতিসত্তার পরিচয়টাকে শক্ত হাতে ধরে রাখার জন্যে, মানবমুক্তির জন্য সবচেয়ে বড় আন্দোলনটির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নিমিত্তে আর সর্বোপরি নিজের সংস্কৃতিকে নিজের বলে পরের প্রজন্মটার কাছেও ছড়িয়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে আমরা সবরকম ঝড় উপেক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। মাননীয় মডারেটর, প্রয়োজন মনে করলে আপনার ব্যান্ডিং ক্যারিশমাকে সেই ঝড় হিসেবে আমাদের ওপর ছোবল দিতে পাঠাতে পারেন। আমি কথা দিলাম, ডিঙি নৌকা আমাদের ডুববে না। আপনার সেই ঝড় তেড়ে-ফুঁড়ে তীরে ভিড়িয়ে নতুন সকাল আমরা দেখবোই।
কীভাবে দেখবো, তাও বলে নিই। সামহয়ার ইন ব্লগ কীভাবে নতুন সকাল দেখেছিলো? এতো অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে মানুষের এতো কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো। আমরা, সেই ঝড় উপেক্ষা করার মানসিকতা নিয়ে যারা নতুন কিছুর জন্য কাঙ্ক্ষিত হয়ে থাকি, তারাই এমনি সব ঝড় উপেক্ষা করে বছরের পর বছর ধরে সামহয়ার ইনকে ডিঙি নৌকা বানিয়ে তীরে ভীড়িয়ে সকাল দেখেছি। এখন সেই সাহস বুকে ধরে সামহয়ার ডিঙি নৌকা থেকে জাহাজ হয়েছে, এখন বোধকরি টাইটানিক হতে যাচ্ছে। কাজেই ডিঙির মাঝিদের অবদান ভুলে যাওয়াতেও কিছুই হয়তো আসবে-যাবে না।
সামহয়ার কি শুধু শুধুই ভুলে গেলো? নাকি তাদের ভোলানো হলো? দীর্ঘদিন ধরে সুচতুর পরিকল্পনার মাঝে এই সাইটটিকে আবদ্ধ করে কারা এটিকে তার স্বাভাবিক গতিপথ থেকে উল্টোপথে নিতে চেয়েছে? সামহয়ার অথরিটি কি সেটিকে চিহ্নিত করেছে? প্রথম দিকে ইসলামী ছাত্র শিবির নামে রাজনৈতিক একটি ছাত্র সংগঠনের নামে নিক তৈরি করে, সেখান থেকে কর্মফিরিস্তি প্রদান। এরপর কিছু ব্লগার নানা নিকে সাইটে এলেন। প্রথমে তারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগকে আক্রমন করলেন। এতে করে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাতে পাঁচে না থাকা অনেকেই সেটিকে সমর্থন জানালেন। এরপর তাদের শেঁকড় শক্ত হলো। বছরখানেক ঘুরতেই তারা আসল চেহারাই বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধকেই বিতর্কিত করে তোলার নানা কসরত এই সাইটটিতেই অব্যাহতভাবে করে গেলো। তাদের বিরোধিতা করা হলো। কেউ কেউ তাদের এইসব কাজে ধৈর্য হারিয়ে গালিগালাজ করে বসলেন। সেই সুযোগটা তারা ছাড়লো না। সামহয়ার পুরো বিষয়টি আদ্যোপান্ত না ভেবেই দুম করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো, যে সিদ্ধান্তে আসলে স্বাধীনতা বিরোধী লেখনি চর্চা লাই পায়।
গালিগালাজের জন্য যদি ব্লগারকে ব্যান করা হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা আজ বিতর্ক তুলছেন, তাদের কী কারণে ব্যান করা হয় না- এ প্রশ্নের জবাব সামহয়ার কর্তৃপক্ষ দেননি এখনো। এই ব্লগের এই চরিত্রের কারণে অনেক আগেই নিয়মিত লেখা বন্ধ করেছি। কিন্তু কোন নীতিমালার কথা তারা বলেন? এই ব্লগে যে নীতিমালার প্রয়োগ ইতিপূর্বে ঘটানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে ঘটানো হবে বলে বোধ হচ্ছে, সেখানে কি স্বাধীনতা বিরোধী লেখনি চর্চাকে নিরুৎসাহিত করার কোনো বিষয় থাকছে? না থাকলে আসলে আমি নিজেই নিজের গায়ে থুথু দিই। এই নপুংসক নীতিমালার অধীনে মাথা মুড়িয়ে এসে দু'লাইন লেখা প্রকাশের জন্য লালায়িত হয়ে এখানে এসেছিলাম বলে। এবং আমি তাদেরকেও আহ্বান জানাই, আমাকে থুথু দিয়ে যাবার জন্য, যাদেরকে আমি এই সাইটটির সন্ধান দিয়েছিলাম, যাদেরকে উৎসাহিত করেছিলাম, এখানে লিখার জন্য। সুতরাং, উজ্জল, শাহেদ, শাহীন, সুজন, সুমন, সাদাত, বাপ্পী, রাসেলসহ আরো যারা আছো, তারা আমাকে থুথু দিয়ে যাও। কারণ সামহয়ার ইন টাইটানিক হতে চায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অস্বীকারকারীদের নিজের গতরে রেখে। আমি অমন টাইটানিকের গায়েও থুথু দিই। বিদায়।